নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আছির মাহমুদ

আছির মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোহিঙ্গা ইস্যুঃ চাই সঠিক কূটনীতি

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:১৯



আমার এলাকায় দুজন প্রভাবশালী ষণ্ডা থাকেন। দুজনই নানাভাবে এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করে থাকেন।যদিও তারা পরস্পর বৈরীভাবাপন্ন এবং তাদের বিভিন্ন অপকর্মে মদদ দেয় আরও বড় মাপের বিভিন্ন ষণ্ডা। আমি এলাকায় একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। যদিও প্রতিকূল পরিবেশ আমাকে বিভিন্ন সময় কোণঠাসা পরিস্থিতিতে ফেলতে চায়, তাই আমাকে দেখেশুনে অবস্থা বুঝে চলতে হয়। এছাড়া আমার ব্যবসাবাণিজ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার স্বার্থে আমাকেও ঐ ষণ্ডাদ্বয়ের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলতে হয়। এমতাবস্থায় আমার পাশের বাড়ির এক প্রতিবেশীর মধ্যে কিছুদিন থেকে আগ্রাসী মনোভাব পরিলক্ষিত হতে থাকে- যে কিনা নানা কারণে এলাকার দুই ষণ্ডার সাথে ঘনিষ্ঠ। হঠাৎ করে সে তার বাড়ির আঙ্গিনায় বসবাস করা তার গরীব আত্মীয়দের নির্যাতন করে উচ্ছেদ করায় তারা নিরুপায় হয়ে আমার বাড়ির আঙ্গিনায় এসে আশ্রয় নেয়। এমতাবস্থায় আমার কী করা উচিত? করণীয় সম্পর্কে ভাবতে বসে মনে হল যেহেতু আমি রক্তপাত চাই না এবং নিজ বসতভিটা থেকে বিতাড়িত লোকদের হাতে লাঠি তুলে দিয়ে ঐ অবিবেচক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে একটা মারদাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করতে চাই না তাহলে আ্মাকে নিম্ন বর্ণিত পন্থায় অগ্রসর হতে হবে-
১. উৎপীড়ক প্রতিবেশীকে কঠোরভাবে ভৎসনা করে বলতে হবে তোমার লোকজনকে তুমি ফিরিয়ে নিয়ে যাও। এলাকার শান্তি বজায় রাখতে হলে তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে, নতুবা তারা যদি সংগঠিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে কোনো রকম তাণ্ডব চালায় সেটার দায়দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না।
২. এলাকার প্রভাবশালী ষণ্ডা দুটোর কাছে গিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার প্রতিকার চাইতে হবে। জোরালো ভাবে বলতে হবে আমার ছোট ঘরে এত লোক জায়গা দেয়া সম্ভব না। তাদের লোক ফিরিয়ে নিতে বলো অথবা সালিশ ডেকে মিমাংসা করাও। তাদের বুঝাতে হবে, এতে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং খা্রাপ লোকেরা তাদের বিপথে নিয়ে গিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে পারে।
৩. ঐ ষণ্ডাদের বন্ধু ষণ্ডা যারা আমার চেনাজানার মধ্যে আছে তাদের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা এবং একটা জনমত গড়ে তোলা।
৪. এলাকার আর সব বাসিন্দাদের নিয়ে নিজেরাই একটা বিচার ডাকা যেতে পারে, সেখানে ঐ ষণ্ডাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে।
৫. আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা যেতে পারে।

দৃষ্টি স্থানীয় পর্যায় থেকে সরিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে ফেরালে এখন সহজেই বোঝা যাবে আরাকানে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা এবং তার ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটুকু সফল কূটনীতি চালাতে পেরেছে। রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা শুরু করার পর তারা যখন বাংলাদেশ অভিমুখে আসা শুরু করে তখন আমরা দেখি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এ পর্যন্ত ৪ বার প্রতিবাদ জানানো হয়। অথচ এতবড় একটা মানবিক বিপর্যয় যার কারণে বাংলাদেশ এক দীর্ঘমেয়াদী আর বহুমুখী চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে তখনও আমাদের সরকারপ্রধান একবারও সূচীকে ফোন দিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানান নি এবং এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে বলেননি।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বিভিন্ন ইস্যুতে পরস্পর ফোনালাপ করেন।বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসে শুভেচ্ছা জানাতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সমবেদনা জানাতে এমন কি খেলাধুলায় কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলেও এক রাষ্ট্রপ্রধান আর এক রাষ্ট্রপ্রধানকে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ফোন দিতে দেখি। যতটুকু মনে পড়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত শিরোপা জিতলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোন দেয়। এসব ব্যাপারে যদি ফোন দেয়া যায় তাহলে রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যাপারে কেন অং সান সূচীকে ফোন করে তীব্র প্রতিবাদ করা গেল না? শুধু তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করার কি মানে? মিয়ানমার সবসময়ই দাবী করে আসছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী। ফলে নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ অভিমুখে ঠেলে দেয়ার এই প্রবণতার তীব্র প্রতিবাদ না করা মানেই হচ্ছে তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেয়া। একই সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আর চীনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে এই ঘটনার জন্য তীব্র আপত্তি জানানো দরকার ছিল। আরাকানে রোহিঙ্গা গণহত্যা যেমন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে গন্য করা যায়না, তেমনি বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ শুধুমাত্র বাংলাদেশ মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় বিষয় হিসাবে মনে করার কোনো কারণ নেই। এর ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্ন জড়িত। ভারতকে এই বার্তা দেয়া দরকার ছিল যে জঙ্গি দমনে সরকারের যে সফলতা তা রোহিঙ্গা বিপর্যয়ের কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। এর ফলে এই অঞ্চলে নতুন করে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। জঙ্গি দমনে দায়দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের একারই নয়, আঞ্চলিক প্রতিটি দেশের একটা কর্তব্য আছে। সুতরাং ভারত যেনো কোনোভবে এই ব্যাপারটাতে সমর্থন না করে। চীনকেও একইভাবে বাংলাদেশের হুঁশিয়ারি দেয়ার দরকার ছিল। বাংলাদেশের সাথে চীনের বর্তমান সম্পর্ক যথেষ্ঠ ভাল এবং চীনের এক বিশাল বাজার বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বার্থহানী ঘটে এবং শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এমন কাজে যেন সমর্থন না দেয় তা অনুরোধ করা দরকার ছিল।

মিয়ানমার যা করছে তা খুবই জঘন্য কাজ। বেশীরভাগ সভ্য দেশ ও সভ্য জাতি তাদের এই কাজকে সমর্থন করছে না। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থা্পন করেছে। সব দেশই বাংলদেশের এই উদারতার প্রশংসা করেছে। সুতরাং নৈতিক দিক দিয়ে মিয়ানমার দুর্বল আর বাংলাদেশ সবল অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ সুবিধাজনক পর্যায়ে রয়েছে। চাই কার্যকর কূটনীতির মাধ্যমে জনমত নিজের পক্ষে টেনে আনা। এ প্রেক্ষাপটে বলা যায়, কানাডার পার্লামেন্টে এই হত্যাযজ্ঞের নিন্দা ও বন্ধের দাবী উঠেছে। মালদ্বীপ মিয়ানমারের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ১৫৭ জন সদস্য স্বাক্ষরিত পত্রে তাদের সরকারকে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করা হয়েছে। মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের পাশে আছে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ প্রেরণ করেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের উচিত সর্বাধিক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপে ফেলা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাত ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য সূচী ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেটাও বিবেচনায় নেয়া যায়।

কূটনৈতিক চালে আওয়ামী লীগ সবসময় দক্ষ। অথচ এবার কেনো যেনো তারা নিঃস্পৃহ। অথচ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বছরের পর বছর লালনপালন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর সেটা উচিতও নয়। তাদেরকে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে আমাদের সহায়তা করা উচিত। আর সঠিক কূটনৈতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই তা একমাত্র সম্ভব।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:০৩

নিরাপদ দেশ চাই বলেছেন: রোহিঙ্গা ইস্যূতে বাংলাদেশ সরকার অতীতে বেশ কঠোর ছিল এবং বর্ডারে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করাও হচ্ছিল। দেখতে নির্মম হলেও এটাই ছিল সঠিক পদক্ষেপ। কারন দয়া দাক্ষিন্য দেখাবার পর্যায়ে আমরা নেই। মানবতা দেখানোর দায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য উন্নত বিশ্বের। পরাশক্তিগুলো চাইলে এক মিনিটেই বন্ধ করে দিতে পারে এই গনহত্যা। তাই বাংলাদেশ বর্ডার ওপেন করেই প্রথম ভুল করেছে। একদিকে লাখে লাখে রোহিঙ্গা ঢুকছে এবং অন্যদিকে ভারত ও চীন সরাসরি মিয়ান্মারের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলে দেবার সুযোগ পেয়ে গেছে।

আরাকানের স্যলভ্যশন আর্মি আর কিছুদিন পরে সক্রিয় হবে বাংলাদেশে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহী উপজাতিদের সাথে একত্রিত হবার সম্ভাবনাও আছে। এদেরকে বাইরের দেশ থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা হবে ।বাংলাদেশ আবারো অশান্ত হয়ে যাবার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ''জান্নাতে আবার দেখা হবে'' শ্লোগান দিয়ে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যাবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৪

আছির মাহমুদ বলেছেন: লাখে লাখে রোহিঙ্গাকে সীমান্তে আটকানো সহজ ব্যাপার না। আর ঢুকে পড়ার পর এখন সরকারের তেমন কূটনৈতিক তৎপরতা দেখছি না। সম্ভবত নতুন বাণিজ্যের গন্ধ পেয়েছে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.