নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হার না মানা হা‌রেই অা‌মি পরা‌জিত

ANIKAT KAMAL

ANIKAT KAMAL › বিস্তারিত পোস্টঃ

না রী

২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩৬

প্র‌তি দি‌নের ম‌তো ফজরের নামাজ পড়ে শুয়েছিলাম অা‌মি । বন্ধের দিন, ভাবলাম একটু বেশি সময় ঘুমাবো। চোখে ঘুম নেমে এলো প্রায়। হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে কান পাতলাম। বেশ হৈচৈ শোনা গেলো। আমি যেখানে থাকি তার পাশেই দু'‌তিনটা বা‌ড়ির পর। শব্দগুলো সেখান থেকেই আসছে বুঝতে পারলাম।"আল্লাহগো,আল্লাহগো "আর্তনাদে বিবশ হয়ে আসছিলো ভোরের বাতাস।ভেবেছি হয়তো বড়ো কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেছে । এখানে আমি নতুন, তাই পাশের পরিবেশ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই বললেই চলে। নি‌জের সা‌থেই প্র‌তি‌নিয়ত যুদ্ধ কর‌তে হয় বে‌চেঁ থাকার জন্য। যাই হোক,"আল্লাহগো আমারে বাঁচাও,আমারে বাঁচাও " রাস্তার উপর পড়ে আছে এক নারী আর তার উপর উপুর্যপরি লাথি মেরে যাচ্ছে এক পুরুষ। কোমরে, পিঠে, তলপেটে যেভাবে যেখানটায় পারছে। মেয়েটা শুধু বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। কোন প্রতিবাদ করছেনা।প্রতিবাদ করার মতো সুযোগ তার নেই। তাছাড়া থাকলেও সে করতোনা। বুঝতে পারলাম লোকটি তার স্বামী। কারণ স্বামীর অধিকার আছে স্ত্রীকে পিটানোর আমি জানালার ফাঁক দিয়ে দেখছি, লোকটি তার চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলো প্রায় বিশ গজের মতো। শরীর থেকে তার ওড়না খসে গেলো, পাজামা ছিঁড়ে গেলো, পায়ের অনেকটা কেটে গিয়ে রক্তও গড়িয়ে পড়লো। আমি দেখছি, সে তাকে আবার উঠোনে ফেলে লাথির পর লাথি দিতে থাকলো।মেয়েটা শুধু কেঁদেই যেতে লাগলো। এতে করেও সে ক্ষান্ত হয়নি। পাশের বড়ই গাছ থেকে দৌড়ে গিয়ে ডাল ভেঙে নিয়ে এলো। আমি দেখতে পাচ্ছি আর আমার চোখের কোণ গড়িয়ে জল পড়ছে। মেয়েটার বাদামি জামাটা ফোঁটা ফোঁটা লাল ছাপায় ফুটে উঠলো। অামার এচ্ছ স‌ত্বেও অা‌মি যে‌তে পারলাম মা‌নে হ‌চ্ছে গেলাম না। একবার এরুপ ঘটনায় সাহাড্য কর‌তে গি‌য়ে বরং নি‌জেই চরম ।পমা‌ণিত হ‌য়ে‌ছিলাম । সেই থে‌ক্প্রে‌তিজ্ঞা । এতোক্ষণে দৌড়ে এলো পাশের ঘর থেকে চার পাঁচ জন লোক। তারা লোকটাকে জোর করে টেনে নিয়ে গেলো।আমি অবাক হইনি। এমন আমি আরো অনেক দেখেছি। আমি দেখেছি, স্বামী তার স্ত্রীর চুলের মুঠিতে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে।মাটি থেকে তার পা দুই হাত উপরে। ফেরাতে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু উলটে আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে। তারপর আজ আর আমি যাইনি। যাইনি বললে ভুল হবে। যেতে পারিনি। কারণ আমার বাসা থেকে নেমে রাস্তা পেরিয়ে যেতে তার কাছে অনেকটা সময় লেগে যাবে। তাছাড়া আমাকে শেখানো হয়েছিলো ভদ্রমহিলাদের অন্যের পারিবারিক বিষয়ে নাক গলাতে নেই! আমি তথাকথিত ভদ্রমহিলা হয়েছি কিনা জানিনা কারণ আমি নাক গলিয়েছিলাম। আমি চরমভাবে ঘৃনা করেছিলাম ওই স্বামী নামের কালপিটটিকে।
এভাবে একটা মেয়েকে আঘাত করার কি এমন কারণ হতে পারে, মনের ভিতর তাই বাজছিলো। তখন জেনেছিলাম রান্নায় দেরি হয়েছিলো বলে সেই লোকটা তার স্ত্রীকে চুল বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। আজ এর কারণ কি হতে পারে? হয়তো এমনই কোন ছোটখাটো বিষয়।কারণ বউ পিটাতে কোন কারণ লাগেনা। বউকে মারবে কাটবে তারপর তার প্রয়োজনে আদর করবে। আর আমরাতো জানিই,যে জায়গায় স্বামীর আঘাত পড়ে সেখানটা জান্নাতবাসী হয়। আহারে! কি লোভ আমাদের! কিন্তু কোথাও কি লেখা আছে স্ত্রী অন্যায় করলে তাকে শারীরিক ভাবে আঘাত করতে পারে স্বামী? আমার জানা নেই। আমি জানি শরিয়ত মোতাবেক না চললে তাকে তালাক দেয়া যায় কিন্তু আঘাত করা যায়না। কিন্তু আমরা ধর্মটাকে বিকৃত করে নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কতো নতুন নতুন কথা তৈরি করছি। আর শৈশব থেকেই আমাদের মনে মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে স্বামী পরমেশ্বর! তাই এখানে আমরা বোবা, এখানে আমরা কালা,এখানে আমরা পঙ্গু। এখানে আমরা অনুভুতিহীন,অনুজীব কিংবা পরজীবী।
কিন্তু এই মেয়েটা পরজীবী কিংবা পরগাছা নয়। সে খেটে খায়, সারাদিন রোদে পুড়ে,তার বাদামি শরীর তামাটে হয়ে যায়।জ্বলে বাইরের উনুনে,জ্বলে ঘরের উনুনেও। তথাপি কেনো?

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আমি দেখি,মেয়েটাকে কেউ দেখতেও এলোনা! যে যার মতো রান্নাবাড়া নিয়ে ব্যস্ত। খানিক বাদে একটা মেয়ে এলো। তাকে টানাটানি করলো ঘরে নিতে কিন্তু সে গেলোনা।।ওখানে পড়েই বিলাপ করতে থাকলো।
আমি চলে এলাম। কষ্ট হচ্ছিলো। তবুও আমি আবার এসে বিছানায় গা পাতলাম।
ন’টার দিকে উঠে আবার জানালায় চোখ রেখে দেখি মেয়েটা এখনো ওখানেই পড়ে রয়েছে। আর স্বামীটা অন্যদের সাথে বসে সিগারেট ফুঁকছে। তার কালো মুখে হলদে দাঁতের হাসি বিভৎস দেখালো। মেয়েটার কান্না থেমে গেছে। এখন নীরব হয়ে বসে আছে মাটির দিকে তাকিয়ে। মেয়েদের মাটি হতে হয় বলেই হয়তো। অথবা সে হয়তো ভাবছে যে কারণে তিনি আমায় মেরেছেন সেটা না করলেই পারতাম।হয়তোবা ভাবছে, স্বামী যদি একবার এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতো ঘরে! হায়রে নারী,,,,,,,,

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪৭

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: কিছু পুরুষ মনে করে মেয়ে মানে নীচু জাত কিংবা সে আমার বউ আমার সম্পদ ,তাকে ইচ্ছে হলে আঘাত করবো ইচ্ছে হলে ভালো বাসার অভিনয়ে কাছে ডাকবো ।
গ্রামে গেলে দেখা যায় কিছু পুরুষ গালি ছাড়া ব উ এর সাথে কথা বলেনা, কথায় কথায় একটা লাথি মারবো বলে ।
দেখা যায় এইসব মেয়েরা গরীব কিংবা যাওয়ার জায়গা নেই কিংবা লোকলজ্জার ভয় কাজ করে ।
আর কিছু মেয়ে সিক মেন্টালিটি এর বর সারাদিন মারার পর একটু মিষ্টি কথা বললেই ভুলে যায়।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:১১

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: নারী, পর্দা নিয়ে কথা বলে মোশারফ ভাস্তে ঠেলা বুঝেছে। স্ত্রী নির্যাতন নিয়ে আর কত লেখালেখি হবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.