নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৮৩১আবীর১৯৮৩

৮৩১আবীর১৯৮৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবার যত চিন্তা মেজ ছেলেকে নিয়ে

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯

এক রকম জোর করেই বাবা আমাকে বিদেশের মাটিতে পাঠিয়েছিলেন। আসার দিন বাবার মুখে ছিল বিজয়ের চিহ্ন, আর মায়ের মুখে ছিল অশ্রুসজল স্বান্তনা। বুকে জড়িয়ে যখন ধরেছিলেন তখন বাবা হেসে বলেছিলেন, কোদো না, সাহসী হও। মা কাদতে কাদতে বলেছিলেন, একদম কাদবে না। ছোট ভাই বেদনাক্লিষ্ট হাসি দিয়েছিল, আমি পারিনি। আমরা দুজন ছিলাম বন্ধুর মত। বয়সে প্রায় তিন বছরের ব্যবধান কিন্তু একসাথে এদিক সেদিক ঘুরতাম, আড্ডা দিতাম। সবাই অবাক হত, ইর্ষাও করত।

আজ প্রায় তিন বছর পর, গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে ঢুকরে কেদে উঠলাম, বাবা বলে। কিছুদিন আগে বাবার অপারেশন হয়েছিল দেখতে গিয়েছিলাম, পনের দিনের ছুটি নিয়ে। খুশিতে বাবা কেদেছিলেন।

প্রতিবছর যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দিত, ঘরের মধ্যে বিপরীত দুটো চিত্র দেখা যেত। আমার বড় এবং ছোট ভাই দুজনেই সদা সর্বদা এক থেকে তিনের মধ্যে থাকত আর আমি এক থেকে তিনটা পর্যন্ত বিষয়ে ফেল করে ঘরে ঢুকতাম। অংক, ইংরেজী ফার্স্ট পেপার এবং সেকেন্ড পেপার। বড় এবং ছোট ভাইকে আদর আর আমার জন্য অপেক্ষা করত বকঝকাসহ লম্বা লেকচার।

প্রাইমারি সমাপনীতে অবশ্য আমি ভাল করেছিলাম। আমার পজিশন ছিল ছয় নাম্বারে। বাবা খুশি হয়েছিলেন।এর পর ক্লাস সিক্স থেকে শুরু হল ফেলের অগ্রযাত্রা।

প্রতিবছর প্রথম সাময়িক এবং ২য় সাময়িকে ফেল করতাম। আর বার্ষিকে পাস করে পরের ক্লাসে উঠতাম। আর ফেল করা ছাত্রদের মধ্যে আমি প্রথম হতাম কেননা আমার মোট নাম্বার অনেকটা ক্লাসের ষষ্ঠ, সপ্তম এদের কাছাকাছি হত। এভাবে ক্লাস টেন পর্যন্ত উঠলাম।
বাবা প্রায়ই বলতেন বড় এবং ছোট ছেলেকে নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই। যত চিন্তা মেজ ছেলেকে নিয়ে।

এস এস সির টেস্ট পরীক্ষা ঘনিয়ে এল বাবা মায়ের মুখে আতংক।
মা তো সবসময় দোয়া করতেন আমার পাশের জন্য। সেটা আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক ছিল। যাই হোক টেস্ট পরীক্ষায় অংক, ইংরেজী দুটোতেই পাশ করলাম টেনেটুনে। আর পাশের সাথে ফার্স্টও হলাম মানবিক বিভাগ থেকে।

আমার সহপাঠীদের মধ্যে যারা ভাল ছাত্র ছিল তাদের অনেকেই দোয়া করত যেন আমি অন্তত একটা বিষয়ে ফেল করি।

কেননা মোট নাম্বারে তার আমার পিছে থাকবে এটা নিশ্চিত ছিল। আমি যদি কোন একটা বিষয়ে ফেল করি তবে তাদের রোল নাম্বার আমার আগে হবে এ কারনেই তারা আমার ফেলের জন্য দোআ করত।
টেষ্ট পরীক্ষার পর তাদের বললাম ভাই, এখন তো আর রোল নাম্বারের বিষয় নেই, এতএব আমার জন্য দুআ কর, বদদোয়া করবে না।
এস এস সি পরীক্ষার প্রথম দিন

ফজরের সময় বাবার দোআর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।

বাবা দুআ করছেন" হে আল্লাহ আমার ছেলেটা যেন পরীক্ষায় পাশ করে" আরো অনেক দুআ করলেন।
শোয়া থেকে উঠলাম, উঠে দেখলাম আম্মু জায়নামাজে, তিনিও দুআ করছেন।
যাহোক, ছয় মার্কের জন্য এস এসসিতে স্টার মার্ক পাইনি।


বাবার কঠোররূপটাই বরাবর আমার সামনে থাকত্ । কিন্তু পরে লক্ষ্য করেছি, মূলত বাবা মায়ের থেকে বেশী নরম। কিন্তু আমার বিষয়ে তিনি একটু বেশীই কঠোরভাব দেখাতেন কেননা তিনি মনে করতেন যে আমাকে নরমভাব দেখালে আমি কথা শুনব না। ছোট বেলা থেকেই আমি একটু ঘাড় ত্যাড়া প্রকৃতির।

সম্ভবত জগতের সকল মেজ সন্তানই এরকম। বাবা চাইতেন আমাকে পরিবর্তন করে আমার প্রতি ভালবাসা দেখাতে আর আমি চাইতাম আমার অবস্থাতেই আমাকে বাবা ভালবাসা দেখাক যেমন মা দেখাতেন । আমি আসলে জেদ করে জিততে চাইতাম , যা ছিল প্রকৃতপক্ষে আমার হার।

আজ গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে, হাজার মাইল দূর থেকে শব্দহীনভাবে বাবাকে বললাম, সরি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩

নকি৬৯ বলেছেন: আমিও আপনার দলে...

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪

৮৩১আবীর১৯৮৩ বলেছেন: আপনিও মেজ নাকি ?

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪

৮৩১আবীর১৯৮৩ বলেছেন: আপনিও মেজ নাকি ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.