নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছেলেটা খুব ভুল করেছে শক্ত পাথর ভেঙে..

কাঁচের দেয়াল

আমি...খুব সাধারণ একটা ছেলে,নিরামিষ টাইপ। জন্মেছিলাম কোনো একদিন,এখন মৃত্যুর জন্যে নিজেকে তৈরী করছি। বুকের মধ্যে কোথায় যেন হাহাকার-মৃত্যু চিন্তার হাহাকার। এই হাহাকার আরো বেড়ে যায় জোছনা রাতে। মমতাময়ী জোছনা আর নিভু নিভু কিছু নক্ষত্রের রাতে নিজেকে খুব একা মনে হয়। গভীর একাকিত্ব গ্রাস করে আমাকে। আসলেই তো,আমার তো আসলেই কেউ নেই। আমার মতন অনেক নিরামিষ-মানুষ নিঃসঙ্গ,অনেকটা আকাশ ভরা তারার মতন। অযুত-কোটি তারার মাঝেও প্রতিটা তারার চোখ ভরা গভীর বিষাদ-একাকিত্বের বিষাদ। একদিন সেইখানে ওদের মাঝে চলে যাবো,তাই পৃথিবীতে আর এখন বিষাদ খুঁজি না। নিষ্পাপ শিশুর আদ্রতামাখা হাসিমুখ খুঁজে বেড়াই...এইতো আমি। আরো অনেক বিচিত্র \'আমি\' কে আমি চিনি। সেসব নাহয় অন্য কোনো দিন লিখতে বসব !

কাঁচের দেয়াল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বদলা...

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯

চার চাকার হলুদ রঙা দানবটার শক্তিশালী ইঞ্জিনটা তখনো গর্জন করছে। প্রায় সন্ধ্যা। শ্মশান ঘেঁষা বালুর মাঠটার পাশেই এমন অনেক হলুদ রঙা দানব নিথর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে বেশীরভাগই রাত নামার পর থেকেই বেড়িয়ে পড়বে। কারো পিঠে চাপবে ইট,কারো বালু,কারো রড আবার কারো সিমেন্টের ব্যাগ। স্টিয়ারিং এ হাত রেখে শেষবারের মতো পিক আপে পাড়া দেয় নিতাই। শ্মশানঘাটার নিঃস্তব্ধতা কাটিয়ে আবার চিৎকার করে ওঠে ট্রাকের ভেতরটা। কিছুক্ষণ পর উজ্জ্বল হেডলাইট দুটো নিষ্প্রভ হয়ে আসে। চাবির গোছাটা লুঙ্গিতে বেঁধে ট্রাক থেকে নামে নিতাই। মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে ওর। শার্টের বুকপকেট থেকে একটা বিড়ি ঠোঁটে গেঁথে নেয়। অনেক্ষণ বাদে চাঙ্গা লাগে নিজেকে। দূরে দেখতে পায় আগুনের ফুলকি আকাশের দিকে ছুটে ছুটে যাচ্ছে। কাউকে দাহ করা হচ্ছে শ্মশানে। আহারে ! কে যেন মরলো আবার! বছর দুয়েক আগের কথা মনে পড়ে যায় ওর -ভাবতে ভাবতে বিড়িতে শেষ টান দেয় নিতাই। এরপর ধীরে ধীরে পা বাড়ায় মহাজনের বাড়ির দিকে। চাবিটা বুঝিয়ে দিয়ে গত ৫ দিনের টাকাটাও চেয়ে নেবে বলে স্থির করে ও। দূর থেকে আসা কান্নার শব্দটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়।



রাত ৯টা। বিরামপুর বাজার থেকে বাড়ি ফিরছে নিতাই। ডান হাতে বাজারের ব্যাগ। মুখে ডাবল জর্দা দেয়া পান। মুখ হাসিহাসি। নিতাইয়ের বাঁ হাতে একটা ফুটবল। সদ্য কেনা ফুটবলটা দেখে নীলু অনেক খুশি হবে। নীলু নিতাইয়ের বড়ো আদরের ছেলে,বয়স হবে বছর সাতেক। নীলুর বয়সটা ঠিক মনে নেই নিতাইয়ের। নীলুর মা থাকলে আবার এইসব খুব ভালো মনে রাখতো। কিন্তু সে তো কবেই...

বাড়ি ফিরে নিতাই দেখে নীলু ঘুমিয়ে আছে। আহারে! কখন থেকে যেন ছেলেটা নিতাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে! অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিন নীলু কি খেয়ছে কে জানে! হয়তো খায়নি। বাজারের ব্যাগটা নামিয়ে রাখে নিতাই। থাক,আজ আর রান্না বসাতে হবে না। নীলুকে ছাড়া ও খেতে পারেনা। ফুটবলটা নীলুর মাথার কাছে নিঃশব্দে রেখে শুয়ে পড়ে নিতাই। বাইরে মৃদু চাঁদের আলো। আর দুদিন পরেই পূর্ণিমা। পূর্ণিমা রাতে ওরা দুই বাপ-ব্যাটা মিলে ঘরের উঠোনে শুয়ে থাকে আর জোছনা দেখে। তখন নীলুকে অনেক গল্প শোনাতে হয়। লাল পরী-নীল পরী আর সাদা পরীদের গল্প। নিতাইয়ের সবগুলো গল্পই হয় তার স্ত্রীকে নিয়ে। স্ত্রীর স্মৃতিগুলোই সে পরীর গল্প বলে চালিয়ে দেয় নীলুর কাছে। গল্প শুনতে শুনতে নীলু ঘুমিয়ে পড়ে,নিতাইয়ের চোখ ভিজে ওঠে।



পরদিন সকাল। নীলু শুয়ে আছে। দুহাতে সে ফুটবলটা ধরে বুকে জড়িয়ে রেখেছে। নিতাইয়ের অস্থির লাগছে। কাঁপা হাতে সে নীলুর কপালে জল্পপট্টি দিচ্ছে। সকাল থেকে নীলুর ধুম জ্বর,গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে হঠাৎ হঠাৎ। একটু আগে ডাক্তার বলেছে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় নিয়ে যেতে। কিন্ত আজ আর কাল সারাদেশে হরতাল। কিছু দানব ফুঁসে উঠেছে। ঢাকার রাস্তায় অনেক মারপিট-ভাংচুর আর খুনোখুনি করছে ওরা,শুনেছে সে। নিতাইয়ের কপালে ঘাম,তার হাত কাঁপছে। নীলুর মা ও তো ঠিক এমন করেই... নীলুর কিছু হলে...

আর কিছু ভাবতে পারে না ও। নীলুকে নিয়ে সে রওনা হয় ঢাকার দিকে। যা আছে কপালে..নীলু তখনো বুকে জরিয়ে রেখেছে ফুটবলটা। ফুটবলের একপাশে রক্ত লেগে আছে। নিতাই ছুটছে...



তার ঠিক ১১ ঘন্টা পরের কথা।

নিঃস্তব্ধ রাত,পরিস্কার আকাশ। নিতাই দাঁড়িয়ে আছে শ্মশানে। ওর সামনে একটা চিতা জ্বলছে দাউদাউ করে। নিশ্চুপ রাতের আঁধারে জ্বলন্ত চিতার মটমট আওয়াজ ওর কানে যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে নীলু যেন এখনো চিৎকার করছে-‘বাবা! বাবা!! আমার ফুটবল!’



কি হতে কি হলো নিতাই বুঝতেও পারলো না। নীলুকে নিয়ে অনেক কষ্টে ঢাকায় পৌঁছে,বাস থেকে নেমে একটা রিক্সায় উঠলো নিতাই। গন্তব্য কাছেরই একটা হাসপাতাল। হঠাৎ..কোত্থেকে একদল মানুষ,তাদের চেহারায় ধ্বংসের নেশা,চোখে খুনির দৃষ্টি। সামনে যে কয়েকটা বাস,সিএনজি আর গাড়ি পেলো সব ভাঙতে শুরু করল। কি পৈশাচিক আনন্দ তাদের চোখেমুখে! নীলুকে আঁকড়ে ধরে বসে ছিল ও। হঠাৎ দেখতে পেলো ২-৩ জনের একটা দল ওদের রিক্সার দিকেই এগিয়ে আসছে,হাতে চাপাতি,রড আর বাঁশ। দেখতে দেখেতে ওরা রিক্সাটাও ভাঙতে শুরু করলো। নীলুকে কোলে তুলে নিতাই দ্রুত নেমে গেল রিক্সা থেকে। প্রাণপনে ছুটতে লাগলো সামনের দিকে। চারদিকে হইচই,গোলাগুলি আর ককটেল এর মূহুর্মূহু আর্তনাদ। হঠাৎ নীলুর চিৎকার-‘বাবা! বাবা!! আমার ফুটবল!’

পেছনে ফিরলো নিতাই। একটু দূরেই ফুটবলটা পড়ে আছে। দৌড়ে গেল ও,সেটা কুড়িয়ে নেবার জন্য। নীলুর বড় শখের জিনিস ওটা! তখুনি, নীলুর ছোট্ট শরীরটা ধুপ করে একটা ধাক্কা খেল নিতাইয়ের বুকে। নিতাইয়ের বুক রক্তে ভিজে গেছে। নীলুর দেহটা নিথর...







আজ দিন গিয়ে রাত আসলেই পূর্ণিমা। রাতের আগেই কাজটা শেষ করে নিতাইয়ের ফিরে আসতে হবে ঘরের উঠোনে। আজ সারাদিন ওর অনেক কাজ।



নিতাইয়ের হলুদ রঙা দানবটা আজ যেন নতুন উদ্দ্যমে ছুটছে! কি গর্জন রে বাবা!! এটাই তো চাই! ছোট রাস্তা পার হয়ে হাইওয়ে তে উঠলো নিতাই। ঢাকা আরো ১০ মিনিটের পথ। এই সময়ে একটা বিড়ি ধরানোই যায়।



ঢাকায় ঢুকল নিতাই। ঠিক যা চেয়েছিল সে। সামনেই একটা বিরাট জটলা। টায়ারে আগুন জ্বলছে মাঝরাস্তায়। তার চারপাশে সেই দানবগুলো হাতের লম্বা লাঠী উচিয়ে দাঁড়ানো। পাশেই ২ টা গাড়িতে আগুন জ্বলছে। একটা পুলিশের নিথর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে রাস্তায়। এগিয়ে যাচ্ছে নিতাই-ওর হলুদ রঙা দানবে চেপে। সামনের পশুগুলো এগোচ্ছে চিৎকার করে। আরো এগিয়ে গেছে নিতাই। আরও....এবার বদলা নেবার পালা। বদলা।

চাকার নিচে শরীরের হাড় ভাঙ্গার শব্দ পেল নিতাই। রক্তের ছিটা ট্রাকের কাঁচে এসে লাগলো কিছুটা। ৩-৪ টা তো গেছেই কমপক্ষে। নিতাই আরও সামনে এগোয়। কাজ এখনও বাকী আছে। এবার একটা বিড়ি তো ধরানোই যায়!



সন্ধ্যায় সেই বালুর মাঠের পাশে এসে নিতাই থামে। ট্রাকের বেশীরভাগ অংশেই রক্ত লেগে আছে। খুনি আর পশুদের রক্ত। তারাতাড়ি পরিস্কার করা দরকার..



সেদিন রাতেই,পূর্ণিমা ছিলো। ঘরের উঠোনে নিতাই শুয়ে আছে। তার পাশে নীলুর রক্তমাখা ফুটবল। নিতাই ফুটবলের ওপর হাত রাখে। এরপর গল্প বলা শুরু করে। লাল পরী-নীল পরী আর সাদা পরীদের গল্প। গল্প না শোনালে তো নীলু ঘুমাতে পারে না !

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬

আমিই সেই বাউন্ডুলে বলেছেন: বাহ বেশ ভালো লাগলো.

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫

কাঁচের দেয়াল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.