নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলমগীর হোসেন আবীর

আলমগীর হোসেন আবীর

আলমগীর হোসেন আবীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরীচিকা (২য় পর্ব)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২২

ঘন্টা পড়ার সাথে সাথেই শিক্ষকরা সবাই শ্রেণী কক্ষে চলে গেছেন। কয়েকদিন ধরে চেয়ারম্যান স্যার নিয়মিত আসছেন। তাই সবার মধ্যে এমন পরিবর্তন দেখে মোনা অবাক হয় না। বেশিরভাগ মানুষই এরকম। বসের সামনে নিজেকে দায়িত্বশীল উপস্থাপন করায় বেশ পটু। অথচ এর আগে এরাই ক্লাসে যেতেন লেট করে। ঠিকমত পড়াতেন না। ছেলেমেয়েরা বুঝতে চাইলে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতেন। এ কথা কেউ স্যারকে বললে তিনি বিশ্বাস করবেন কিভাবে? কারো কাছে নিজেকে ভাল সাঁজানোটা প্রয়োজন বোধ করে না মোনা। বিবেকের সাথে দায়িত্ব পালন করে সে। ভালবাসা ও আন্তরিকতা ঢেলে দিয়ে পড়ানোটা তার সখ। কে ভাল বলল আর কে মন্দ বলল তা দেখার বিষয় না। ক্লাসে যাওয়ার জন্য যখন সে উঠে দাড়াল ঠিক তখন জামাল এসে বলল, চেয়ারম্যা স্যার আপনাকে দেখা করতে বলছে, ম্যাডাম।
প্রতিদিনই খুব সকাল সকাল বিছানা ছাড়ে মোনা। নাস্তা তৈরিতে মাকে সহায়তা করে। একসাথে নাস্তা করে ছেলেকে পড়তে বসায়। নিজেও পাশে বসে বই পড়ে। ঘন্টাখানেক পরে স্কুলের জন্য বের হতে প্রস্তুতি নেয়। সবকিছুই সময়মত করার অভ্যাস তার। তবে বেশ কয়েকদিন ধরে শরীর যেন তাকে সহায়তা করছে না।বরং তার সাথে বিরোধীতা করছে। সময়মত প্রস্তুতি সত্ত্বেও স্কুলে পৌছতে দেরি হচ্ছে তার।

সালাম দিয়ে মোনা বলল, আসব স্যার?
অবশ্যই। আসুন। না চেয়ে বলল শোভন। ভিতরে প্রবেশ করতেই এবার তার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চেয়ার দেখিয়ে দিয়ে বলল, বসুন প্লিজ।
শোভন আবার কাজে মনোযোগ দিল। একটুপর বেল বাজাল। জামাল আসলে বলল, চা দাও।
আপনার সাথে আমার কখনো কথা হয়নি। রেজিস্টার খাতার পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে শোভন বলল, আপনি জয়েন করার পর থেকে আর দেশে আসা হয় নি। তবে ওখানে বসেও খবর রেখেছি। শুনেছি আপনি খুব ভাল পড়ান। মোনা কিছু না বললে খাতা থেকে চোখ তুলে সে বলল, বাসায় কে কে আছেন? আপনার বাবা-মা?
বাবা নেই । মা আছেন।
আর?
ছোট ভাই আছে। তবে আমাদের সাথে থাকে না। ও যেখানে চাকরি করে সেখানে থাকে।
ও আচ্ছা্। শুনুন , যে জন্য আপনাকে ডেকেছি। ক্লাস চলছে। ছেলেমেয়েরা বসে আছে। তাই কথা সংক্ষেপ করছি। পরে আপনার ডিটেইলস জানব। আপনি একটু কথা বলারও সময় দেন না। প্রতিদিনই দেখছি আপনার লেট হচ্ছে। টিফিন পিরিয়ডে কথা বলা আমি পছন্দ করি না। তখন আপনাদের নাস্তা সেরে একটু রেস্ট নেওয়ার সময়। আর ছুটির সাথে সাথেই আপনি বের হয়ে যান। রাগ করবেন না। আমি আপনাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি না। আপনার প্রতি আমার রিকুয়েস্ট রইল। একটু সময়মত আসার চেষ্টা করবেন।
মোনা কিছু না বলে টেবিলের উপর বিছানো গ্লাসের নিচে রাখা বিভিন্ন ভিজিটিং কার্ড দেখতে থাকল।
আপনি একজন ভাল টিচার। স্টুডেন্টরা সবাই আপনার ক্লাস আগ্রহের সাথে করে। আপনার ভাল সবার কাছে যেন বলতে পারি। আমি চাই সবাই আপনাকে ফলো করুক । আর কিছু না।
আমার কোন অবদান নেই। মোনা চট করে বলল। আমার কোন যোগ্যতা নেই। আমাকে কারো ফলো করার প্রয়োজন নেই।
ভাল মানুষগুলো এরকম একগুয়ে টাইপের হয়। শোভনের তা জানা আছে। সে এই প্রথম মোনাকে ভালভাবে লক্ষ্য করল। কেমন শুকনো মুখ। শরীরের সেই মধুমাখা উজ্জ্বলতা আর খুঁজে পাওয়া যায় না তার মধ্যে। সেই কৃষ্ঞচূড়ার মত হাসি লেগে থাখা মুখে লুকিয়ে রাখা ম্লানিমা বড়ই বেমানান। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সে বলল, তুমি মাইন্ড করছ মোনা। আমি চাই কেউ যাতে তোমার সমালোচনা করতে না পারে।
নাম ধরে ডাক শুনে শোভনের দিকে চোখ রাখল মোনা। শোভন অন্তত তার নামটা ভুলে যায় নি? এই মুহুর্তে তার ঠিক কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আনন্দের কান্না।
স্যরি । শোভন বলল। আমি আপনাকে তুমি করে বলছি। আসলে আপনি তো আমার আনেক জুনিয়র হবেন। তাছাড়া এখানে আনেক কেই তুমি করে বলি। মনে কিছু নিবেন না। আর স্টুডেন্টরা শুনেছি আপনাকে মোনা ম্যাডাম ডাকে। তাই আমার মুখেও তা চলে আসছে।
শোভনের কথাটা যে সত্য না তা মোনা স্পষ্ট বুঝতে পারল। স্টুডেন্টরা কেউ তাকে মোনা ম্যাডাম ডাকে না।
আপনার মত যদি আর কয়েকজন গুণী টিচার পেতাম। শোভন হাসছে।
শোভনের প্রশংসা করাটা মিথ্যে মনে হচ্ছে। তার হাসিটা কটাক্ষ মনে হচ্ছে। তার এই বর্তমান দূরবস্থাকে অপ্রত্যক্ষভাবে হাসছে সে। মোনা আর সহ্য করতে পারল না। সে উঠে দাড়াল, এখন আসতে পারি? আর কিছু বলার আছে আপনার?
শোভন কিছু না ।তার মুখ থেকে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে গেল।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১২

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: ভালো লিখেছেন। আমার ব্লগে ঘুরে আসবেন কিন্তু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.