নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরিসীম অনুতাপ ও একটা প্রস্তাব

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৯

সামহোয়ারইন ব্লগের সেতু ভাইয়ের মৃত্যুর কথা আমি জেনেছি বেশ দেরিতে। খবরটা আমি পাই অপূর্ণ রায়হানের লেখায়। আরও অনেকের মতো এ খবর আমার মনকেও বিষাদে ভরে তোলে। আমার সমস্ত চেতনায় ছড়িয়ে পড়ে অপরিসীম অনুতাপ। আমরা প্রত্যেকে মানি যে দুঃখ বিষাদ আর মৃত্যু জীবনেরই অংশ। এই মেনে নেয়ার পরও জীবনই আমাদের কাঙ্খিত, অকাল মৃত্যু নয়।

যদি সেতুকে বাঁচানো যেতো! এই অনুতাপ আরও বাড়ে যখন অপূর্ণের লেখা আর তার সাথের শ’খানেক মন্তব্যের ভিতর খুঁজে পাই সেতুর ব্যক্তিত্ব। চিরকাল আমি এই বিশ্বাস পোষণ করেছি যে একজন মানুষের জন্য যথাযথ মানুষ হয়ে উঠাটাই সর্বোচ্চ কিছু হওয়া। তা এক রকম সাধনাও। এই সাধনা সেতুর জীবন ও আদর্শের ভিতর স্পষ্ট। যখন সেতু বলেন যে কারও সাহায্য তিনি নেবেন না তখন আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ’দ্য ওল্ডম্যান এন্ড দি সি’ উপন্যাসের বুড়ো জেলের কথা মনে পড়ে। গভীর সাগরে গিয়ে তার ধরা মাছটি সে তীরে আনতে পারে না। সে ফেরে হাঙরের আক্রমণে নিঃশেষ হওয়া মাছটির কঙ্কাল নিয়ে। তীরে ফিরলে মানুষেরা সেই কঙ্কাল দেখে আফসোস করে। বৃদ্ধ বলে, মানুষ মরে কিন্তু পরাজয় বরন করে না।

বর্তমান কালে আমরা যে আদর্শ বিশ্বাস ও সভ্যতার ভিতর বসবাস করছি তা রেনেসাঁস পরবর্তী ইউরোপীয় সভ্যতার দ্বারা বহুল প্রভাবিত। গ্রীক ও রোমান সভ্যতার প্রভান ম্লান হয়ে এলে মানব মননের ইউরোপীয় বিকাশ প্রায় হাজার বছরের শীত নিদ্রায় ডুবে যায়। তা ফের বিকশিত হতে শুরু করে ১৫-১৬ শ শতকে। এটা প্রথম দেখা দেয় ইতালীতে। দাšে,Í লিওনার্দো-দ্য-ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো আর গ্যলিলিওর কথা কম বেশি আমাদের সবার জানা। এরা শিল্প সাহিত্য ও বিজ্ঞানে এক নতুন কালের সূচনা করেন। এ কালের ইতালীতে প্রভাবশালী অনেক পরিবারের মধ্যে মিডিচি (Medici) পরিবার প্রায় ৭০০ বছর তাদের পারিবারিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি ধরে রাখে। এই পরিবার থেকে রোমান ক্যাথলিক গীর্জার দুজন পোপও নির্বাচিত হন। অনেকের মতে বর্তমান ব্যাংকিং পদ্ধতির শুরু হয় এ পরিবারের হাত ধরে। পরিবারটি বিখ্যাত ভাস্কর-চিত্রকর-প্রকৌশলী মাইকেল এঞ্জেলো সহ শিল্প-সংস্কৃতির সাথে জড়িত অনেকের পৃষ্ঠপোষকতা করে।

সৃজনশীলতার সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের পৃষ্ঠপোষকতা করা সারা পৃথিবীতে অব্যাহত ছিলো রাজতন্ত্রের কালেও। বর্তমানে অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা (Social Safety) দিয়ে থাকে। আমাদের মতো দেশে তার নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যতটুকু আছে দলীয়করনের কারনে তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌছয় না। অর্থাৎ, এখানে নিজের নিজের ভালো-মন্দ বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা সব মানুষের নিজেকেই করতে হয়।

সেতু ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে আমাদের মনে যে অপরিসীম অনুতাপ এরকম আরও ব্যথা ও অনুতাপ আমাদের সইতে হবে যদি আমরা এখনই এ নিয়ে ব্যবস্থা না নিই। আমাদের লেখক পাঠক ভাই-বোন-বন্ধুদের ভিতর ব্যাংকার বা আইনের লোক যেমন আছেন তেমনি আছেন সৎ চিন্তার পরিশ্রমী মানুষ আর অগণিত কোমল মনের সহমর্মী। আমরা সবাই মিলে যদি দীর্ঘমেয়াদি একটা ফান্ড গড়ে তুলি তাহলে কোমন হয়? যারা পারি প্রতি মাসে বিশ পঞ্চাশ বা একশ টাকা করে যদি সেই ফান্ডে জমা করি তাহলে ৫/১০ বছরের মধ্যে তা একটা মোটা অংকের টাকা হতে পারে। সেতু ভাইয়ের মতো অবস্থায় কেউ পড়লে তা দিয়ে তার চিকিৎসার চেষ্টা তো অন্তত করা যাবে। যদি তিনিও সেতু ভাইয়ের মতো সাহায্য নিতে কুণ্ঠিত থাকেন তাহলে অন্তত ধার তো নিতে পারবেন!

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষেরা যদি তাদের নিজের টাকায় নদী পারাপারের সেতু নির্মাণ করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না একজন মানুষের বা লেখকের চিকিৎসাহীনতায় মরে যাওয়া ঠেকাতে?
আমাদের জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন নীরবতা সব থেকে খারাপ কথার চাইতেও খারাপ। সেই নীরবতা অকল্যাণেরও কারন। আমাদের দুঃখ কষ্ট অভাব আমাদেরকেই দূর করতে হবে, অন্য কেউ তা করে দেবে না। আর তা দূর হতে পারে কেবল বাস্তব-সম্মত পরিকল্পনা ও কাজের মাধ্যমে।

যাই হোক, সেতু ভাইয়ের স্ত্রীর কোন ধরনের উপকারে আসতে পারলে সেটাও তো একটা চমৎকার কাজ হবে!

সবশেষে অপূর্ণকে ধন্যবাদ তার লেখাটার জন্য। সেতু ভাই শান্তিতে ঘুমান। আরোগ্য হয়ে উঠুন ’স্বপ্নচারী গ্র্রানমা’।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৩

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
আপনার লেখাটিতে মন বিষাদে ছেয়ে গেল !

আমি নিজেও কিছুদিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলাম ।
আপনাদের দোয়া আর প্রতিপালকের বিশেষ ইচ্ছায় আমি
আবার যথারীতি ফিরে এসেছি আপনাদের মাঝে কিন্তু
যে চলে গেছে সহস্র চেষ্টায়ও ফেরানো যাবেনা আর তাকে !

আপনার প্রস্তাবনাটাও ভেবে দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ ।

ভালো থাকুন, সুস্থ-সুন্দর থাকুন ।

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

মামুন রশিদ বলেছেন: সেতু ভাই শান্তিতে ঘুমান। আরোগ্য হয়ে উঠুন ’স্বপ্নচারী গ্র্রানমা’।


সবার জন্য শুভকামনা ।

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: উত্তম প্রস্তাব ।

৪| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৩৭

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:




সুন্দর একটি লেখা। ভালো প্রস্তাব দিয়েছেন :)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০০

আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় মইনুল ভাই, কলমের কালি শেষ এবং আর যারা কমেন্ট দিয়েছেন,

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমরা সবাই না হলেও অনেকে যদি প্রস্তাবটাকে বাস্তবসম্মত মনেকরি তাহলে ছোট পরিসরে হলেও তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারি। এতে দুই ধরনের উপকারিতা আছে। একটি হচ্ছে যে উদ্দেশ্যে আমরা এটা করছি তার বাস্তবায়ন। অন্যটি হলো, আমরা এর মাধম্যে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব যা আমাদের ও পরের প্রজন্মকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহ যোগাবে। পরনির্ভরতা ছেড়ে নিজের ওপর আস্থা তৈরির নিদর্শন তৈরি হবে তাতে।

৫| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৯

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:





ভালো প্রস্তাব। এবিষয়ে আলোচনা চলতে পারে। প্রয়োজন সমমনাদের সংগঠিত হওয়ার... :)

৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: খুবই চমৎকার একটি প্রস্তাব। আমার সমর্থন আছে। আমিও ভাবছি কিছু দিন ধরে এই বিষয়ে। তবে একটু ভিন্নধর্মী চিন্তাভাবনা আছে। বিষয়টি গুছিয়ে লিখছি। একটা ফান্ড এভাবে গড়ে তুলতে গেলে বেশ কিছু বিষয়ে বিতর্ক থেকে যায়। যেগুলো খুবই ভাইটাল পয়েন্ট। সেই বাঁধাগুলো অতিক্রম করারও পন্থা থাকতে হবে। ইতিপূর্বে ব্লগার @আমি ইহতিব ও এই বিষয়ে একটা প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক তর্কে বিতর্কে তা এক প্রকার ভেস্তে যায়। ব্লগারদের আগ্রহী করে তোলার একটা বিষয়ও স্থান দিতে হবে এখানে।

আমার বিস্তারিত লেখায় আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আশা করবো।
ভালো থাকবেন সবসময়।।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

আবু সিদ বলেছেন: ধন্যবাদ অপূর্ণ। আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.