নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামাজিক বোধ – ১

০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৪৫

যদি কোন একটা জায়গায় একজন মানুষ থাকেন তাহলে তিনি তার নিজের মতো জীবন যাপন করতে পারেন। ঠিক একই জায়গায় দুজন মানুষ থাকলে তাদের প্রত্যেককে অপরের সুবিধা-অসুবিধার কথাটা ভাবতে হয়। এমনকি তারা পরমাত্মীয় বা মা/বাবা/ সন্তান কিংবা স্বামী/ স্ত্রী হলেও অপর মানুষটির সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবতে হয়। মা/বাবা এবং সন্তান একসাথে থাকলে বেশিরভাগ সময় মা/বাবা-ই ছাড় দিয়ে থাকেন। কিন্তু যেখানে লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি অজানা-অচেনা মানুষ থাকেন সেখানে কে কাকে ছাড় দেবেন? আর কতটুকুই বা দেবেন? জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তাই নারী/ পুরুষ, তরুণ/ তরুণী/ বয়োবৃদ্ধ কে কাকে কতটুকু ছাড় দেবেন সমাজ ও রাষ্ট্রে তার একটা সার্বজনীন বোঝাপড়া দরকার।

সব সমাজে এই বোঝাপড়াটা রয়েছে। এই বোঝাপড়াটার অনেক কিছুই লিখিত আইন হিসাবে থাকে; যেমন, রাস্তায় মানুষ ও গাড়ির চলাচলের জন্য ট্রাফিক আইন। আবার মানব সমাজের অনেক বোঝাপড়া রয়েছে যা মানুষ হিসাবে আমরা করে থাকি। যেমন, অসুস্থ কাওকে পথেঘাটে পড়ে থাকলে আমরা তাকে হাসপাতাল বা বাড়িতে পৌঁছে দিই। কিন্তু অসুস্থ কাউকে পথেঘাটে পড়ে থাকতে দেখলে তাকে যে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে এমন কোন লিখিত আইন নেই। অলিখিত এই বোঝাপড়াগুলো মানুষ সমাজ/ রাষ্ট্রে বসবাস করতে করতে শিখে নেন। অন্যদিকে সমাজ/ রাষ্ট্রের লিখিত বোঝাপড়া মানুষকে জানানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আইন অমান্যকারীদের প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে পদক্ষেপ নেয় তা থেকে অন্যরা বিশেষ আইনটির কার্যকারিতা বুঝে নেন। যেমন, রাস্তাঘাটে ধূমপান করা বাংলাদেশে আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু আইনটির প্রয়োগ কোথাও হয় কিনা তা কারো জানা নেই। এ কারনে রাস্তাঘাটে ধূমপান করা ধূমপায়ী এবং অন্যদের কাছে একটা স্বাভাবিক কাজ।

সামাজ ও রাষ্ট্র জীবন যাপন করার এমন একটা ক্ষেত্র যেখানে প্রত্যেক মানুষের কাজ বাকী সব মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই একটা সুন্দর সমাজে মানুষের জীবন যাপন ও চলাফেরা এমন হয় যাতে সবাই সুষ্ঠু ও ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে পারে। এমন সমাজ ও রাষ্ট্রে একজন সন্তানসম্ভবা মা কিংবা চলাফেরায় অক্ষম একজন নাগরিকও নিশ্চিন্ত মনে ঘরের বাইরে বেরতে পারেন। তবে এই দুনিয়ায় এমন রাষ্ট্র বা সমাজও রয়েছে যেখানে মানুষের সামাজিক বোধ এতটাই কম যে রাস্তার চলমান মোটর সাইকেল ফুটপথে হাঁটতে থাকা মানুষের ওপর উঠে পড়ে।

সহজ কথায়, সামাজিক বোধ হচ্ছে সমাজে যথাযথভাবে জীবন যাপন বা জীবনাচারের বোধ। তা সমাজের সবার সাথে শান্তিময় সহাবস্থানের বোধ। যেমন, সামাজিক বোধহীন একজন মানুষ নিজের ঘর পরিষ্কার করে সব ময়লা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলতে পারেন। রাস্তা দিয়ে যে দিনরাত অসংখ্য মানুষ অগণিত গাড়ি ছুটে চলেছে তা নিয়ে তার কোন চিন্তা বা উদ্বেগ নেই।

সামাজিক বোধ তাই এমন বোধ বা উপলব্ধি যা অন্যের জীবনকে বাধাগ্রস্থ না করে কোন ব্যক্তি বিশেষকে জীবন যাপন করতে শেখায়।

বর্তমান দুনিয়ায় যেসব দেশ বা জাতিকে আমরা উন্নত বলে জানি সেখানে মানুষের সামাজিক বোধ প্রশংসনীয়। সেসব দেশে রাষ্ট্রও এই সামাজিক বোধকে টিকিয়ে রাখতে বা আরও উন্নত করতে সচেষ্ট। এরকম কোন দেশে তাই ঘরের ময়লা ডাস্টবিনে না ফেলে মানুষের মাথায় বা সদর রাস্তায় ফেলার কোন উপায় নেই। সেখানে কোন মোটর সাইকেল ইচ্ছামতো ফুটপাথে উঠে যেতে পারে না বা কোন নাগরিক ফুট ওভারব্রিজ থাকতে দৌড়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে পার হবার চেষ্টা করে না। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রত্যেককে সুনাগরিক করে গড়ে তোলায় নিয়জিত। সেখানে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যার জন্য কেউ বেকসুর খালাস হতে পারে না।

অন্যদিকে অনুন্নত দেশগুলোতে সামাজিক জীবন যাপনের নিয়ম বা রীতিগুলো অগোছালো। সবার জন্য ভালো বা কল্যাণকর আচরণবিধির অভাব সেখানে। এসব দেশে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও উদাসীন। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে এসব জায়গায় তৈরি হয় নৈরাজ্য। মানুষ নদী-খাল দখল করে নেয়, সরকারি জায়গায় দোকান খুলে বসে, কাড়ি কাড়ি কালো টাকা বালিশে ভরে ঘুমতে যায়।

সামাজিক বোধ শুধু রাস্তাঘাট আর সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নয়। তা সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
অনেক সমাজ আছে যেখানে মা-বাবা বা শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে সন্তান বা ছাত্র/ ছাত্রীকে ভালো রেজাল্ট করান। প্রশ্ন ফাঁস করে পরীক্ষায় ভালো ফল করলে মানুষের জ্ঞান যে বাড়ে না সে কথা সবার জানা তবু কোন কোন দেশে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েই চলেছে। পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রত্যেক ছাত্র/ছাত্রী যদি আগে-না-দেখা প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পান তাহলে যেমন ছাত্র/ছাত্রী তেমনি তাদের অভিভাবকেরা তাদের শেখা ও জানার ঘাটতিটুকু বুঝতে পারেন। শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন যদি স্কুলে যাওয়ার মূল লক্ষ্য হয় তাহলে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করাটা অতি শোচনীয় ব্যাপার।

একইভাবে অফিসাদালত কলকারখানা যদি আমরা সর্বোৎকৃষ্ট উপায়ে চালাতে চাই তাহলে আমাদের বেছে নিতে হবে যোগ্যতম মানুষদের। তাতে সামাজিকভাবে যোগ্য মানুষটি যেমন তার প্রাপ্য আসন পাবেন তেমনি প্রতিষ্ঠানটিও পারবে সব থেকে ভালো কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২৫

আরিফ রুবেল বলেছেন: আধুনিক রাষ্ট্র তার প্রয়োজনে কিছু প্রথার চর্চা করে, কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশের শুরুর দিকে এই সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদির ধারণাগুলো ব্যপক জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু পুঁজিবাদ যতই বিকশিত হয়েছে ততই তার নগ্ন চেহারা উন্মুক্ত হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমরা মূলত পুঁজিবাদের বর্জ্যগুলোই আত্মস্থ করতে পেরেছি। অপর দিকে এর যে কিছু প্রথা প্রতিষ্ঠান ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়েছে। বাজার অর্থনীতির এই যুগে আকাশ সংস্কৃতি যেমন সুলভ, তেমনি সুলভ যেকোন ধরণের মাদক। কাজেই, পুঁজিবাদকে ধ্বংস না করে নয়া সমাজ ব্যবস্থা, নয়া সমাজ বোধ তৈরি হবে না।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৪

আবু সিদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৫০

নীরদ অর্ণব বলেছেন: বাংলাদেশের মত দেশে যোগ্যরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব পান না। আমাদের সমাজ কাঠামো পরিবর্তন করতে হলে আগে সমাজের মানুষদের শিক্ষিত করতে হবে ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৪

আবু সিদ বলেছেন: আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৪

ফ্রিটক বলেছেন: অনেক দামীকথা বলেছেন। ভাল লাগল

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৪

আবু সিদ বলেছেন: আপনার ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.