নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মান ও মানদণ্ড

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৪

প্রতিদিনকার জীবনে যা কিছু আমরা করি, কিনি বা ব্যবহার করি অনেক সময় তার গুণ বা মান জানতে চাই। মাসের শেষে হাতে পয়সা না থাকলে একটু কম মানের মাছ কিনতে বাজারে যাই রাত দশটার পর। আবার মাসের শুরুতে ভালো মানের মাছ কেনার সময় মাছটা টিপে টুপে দেখে নিই। কিনি তার মান বুঝে। এই মান স্রেফ চোখের দেখা ও হাতের আঙুল চালিয়ে বুঝে যাই আমরা। আবার অসুস্থ হলে ডাক্তার যখন রক্ত পরীক্ষা দেন তখন তিনি বুঝতে চান রক্তের মানটা। রক্তের বিভিন্ন উপাদান ও রোগ জীবাণুর উপস্থিতি তিনি বুঝতে পারেন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে। রিপোর্টে একটা রেফারেন্স-মান থাকে যে মানের সাথে মিলিয়ে বিশেষ মানুষটির রক্তের মান বোঝা যায়। এক্ষেত্রে রেফারেন্স-মানটা একটা মানদণ্ড।

একই বিষয় বা বস্তু মাপার জন্য আবার একাধিক মানদণ্ড থাকতে পারে। যেমন, পথের দূরত্ব মাপার জন্য মাইল এবং কিলোমিটার দুটোই ব্যবহার করা হয়। যখন একাধিক মানদণ্ড থাকে তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কোনটা ভালো? যেসময় ব্রিটিশ শক্তি ছিল দুনিয়া-সেরা তখন মাইলের ছিল জয়জয়কার। আজকাল সবাই চাই কিলোমিটারে দূরত্ব মাপতে। দুনিয়ার দিকে দিকে আজ আমেরিকান মানদণ্ডের জয়ধ্বনি। মানদণ্ড তৈরি ও মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমেরিকানরা অবশ্য অশেষ কৃতিত্বের দাবীদার। টয়লেট-ফিটিংস থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুতে তারা তৈরি করেছে আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড বা মানদণ্ড।

তবে এটা ভাবার কোন কারন নেই যে মানদণ্ড তৈরি সহজ কোন ব্যাপার। আদৌ তা নয়। মানদণ্ড তৈরি ও মান নিশ্চিত করা যে কত কঠিন তা যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের দিকে তাকালে বোঝা যায়। উন্নত কোন দেশ যখন উন্নয়নশীল দেশ থেকে কিছু নেয় বা আমদানি করে তখন তারা তাদের মানদণ্ডে যাচাই করে নেয়। যেমন, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত চিংড়ির ভিতর জেলি পাওয়ায় ইউরপীয়ন ইউনিয়ন এদেশ থেকে রপ্তানিকৃত চিংড়ির মান নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। উন্নয়নশীল দেশগুলো মানদণ্ড তৈরি এবং গুণমান বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। উন্নত দেশগুলো যখন যাচাই না করে কোন কিছুই নেয় না তখন উন্নয়নশীল কোন কন দেশ খুঁজে ফেরে পোকায় কাটা ফসল, পঁচে যাওয়া খাদ্য শস্য।

কেবল পণ্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে নয়, লেখাপড়া ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও উন্নত দেশগুলো তাদের মানদণ্ডে সবকিছু যাচাই করে নেয়। যেমন, বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নিলেও বাইরের দুনিয়ায় লেখাপড়া করতে চাইলে সেখানে আরেকবার মাস্টার্স করতে হয়। আবার দুনিয়ার যেখানে যতই ইংরেজি শেখা হোক না কেন ব্রিটিশ (IELTS) বা আমেরিকান (TOEFL) মানদণ্ডে সেটা যাচাই না করা পর্যন্ত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে কাউকে পড়তে নেবে না।

এই যখন উন্নত দেশের অবস্থা তখন বাংলা ভাষাভাষীর বাংলাভাষাজ্ঞান যাচাই করার কোন মানদণ্ড আজও নেই। এতে বোঝা যায় যে বাংলা ভাষাভাষীরা এক উন্নয়নশীল জাতি। কেবল ভাষার ক্ষেত্রে নয়, ব্যতিক্রম বাদে প্রায় কোন ক্ষেত্রেই এ জাতির মানসম্মত কোন মানদণ্ড নেই।

তবে মানসম্মত কাজ করা বা পণ্য উৎপাদনের দুটো উপায় রয়েছে। এর মধ্যে সহজ উপায়টা হলো, সারা দুনিয়ায় গৃহীত বা স্বীকৃত কোন মানদণ্ডের অনুসরণ করা। আর অন্যটি হলো নিজেরাই এমন এক মানদণ্ড তৈরি করা যা দুনিয়ার ভালো কোন মানদণ্ডের সমান ভালো বা সবচেয়ে ভালো মানদণ্ডটির থেকেও ভালো। যেমন, চীনা পণ্যদ্রব্য একসময় মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও বর্তমান কালে তাদের পণ্য সারা দুনিয়া অধিকার করে চলেছে। অন্যদিকে, আমেরিকানরা ব্রিটিশ মানদণ্ড ব্যবহার না করে প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব মানদণ্ড তৈরি করে নিয়েছে।

দেশকেন্দ্রিক মানদণ্ডের বাইরে অনেক বিষয়ে আন্তর্জাতিক অনেক মানদণ্ড রয়েছে। এসব মানদণ্ড দিয়ে কোন একটি ক্ষেত্রে দুনিয়ার কোন একটি দেশের অবস্থা বা মান বোঝা যায়। যেমন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর মানদণ্ডে ২০১৬ সালে ১৭৬ টি দেশের মধ্যে সোমালিয়া সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এই মানদণ্ডে ১০০-এর মধ্যে সোমালিয়া পেয়েছে ১০। অন্যদিকে ডেনমার্ক সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ হিসাবে মর্যাদা পেয়েছে। এতে ডেনমার্ক ১০০-তে পেয়েছে ৯০। (Click This Link )

একইভাবে আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট পাওয়ার রাঙ্কের হিসাবে (https://www.passportindex.org/byRank.php) জার্মানির পাসপোর্টধারীরা সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের অধিকারী। দেশের বাইরে তারা সবচে সহজে যেতে পারেন। জার্মান পাসপোর্টের স্কোর ১৫৩। অন্যদিকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের স্কোর ৩৫। পাকিস্তান ছাড়া বাংলাদেশের থেকে কম স্কোরের দেশগুলো সব যুদ্ধবিধ্বস্ত। এমনকি আফ্রিকার দেশগুলোর স্কোরও বাংলাদেশের থেকে ভালো। আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট পাওয়ার রাঙ্কের হিসাবে বাংলাদেশের নিচের দেশগুলো হলো ইয়েমেন, সোমালিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তান, ইরাক ও আফগানস্থান।

আবার এমন অনেক মানদণ্ড আছে যা একটা নির্দিষ্ট সীমার বাইরের কোন মান মাপতে পারে না। যেমন, আমাদের শরীরের উত্তাপ বা জ্বর মাপার থার্মোমিটার। যন্ত্রটি কেবল ৯৪ থেকে ১০৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত মাপতে পারে। ৯২ বা ১১০ ডিগ্রী মাপা এর সাধ্যের বাইরে। এরকম একটি মানদণ্ড হচ্ছে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় সূচক। সূচকটি প্রতি বছর পৃথিবীর সেরা ১,০০০ টি বিশ্ববিদ্যালকে তালিকাভুক্ত করে। (http://cwur.org/2016.php) যেহেতু এটি দুনিয়া-সেরা ১,০০০ বিশ্ববিদ্যালকে তালিকাভুক্ত করে তাই বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় আজ পর্যন্ত সেখানে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি।

জগতের আর সব কিছুর মতো গুন-মান বজায় রাখার চেষ্টা বা অপেক্ষাকৃত উন্নত মানদণ্ড তৈরি এক ধরনের সাধনা। তা সংস্কৃতিরও অংশ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

আখেনাটেন বলেছেন: আমার বিবেচনায় সামুর মানদণ্ডে অনেক মানসম্মত একটি লেখা এটি।

ভালোলেগেছে পড়ে।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:৩৫

আবু সিদ বলেছেন: প্রিয় আখেনাটেন , আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.