নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁধার রাত

আঁধার রাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢিয়া ঢিয়া ঢিস ঢিয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়া, কাম খতম বনাম আমাদের বেদনাহীনতা

১২ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫৭

ঢিয়া ঢিয়া ঢিস ঢিয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়া। কাম খতম। একটা আপদ শেষ। ৪৩ বছর আগে তৈরী প্রেস রিলিজের ফরম্যাটে নামটা এডিট করে বসান হল কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী কালা কাইস্টা বন্দুক যুদ্ধে নিহত। বিভিন্ন থানায় তার নামে মাদক, অস্ত্র, চাঁদাবাজী ইত্যাদী ইত্যাদী অপরাধে ১৫টি মামলা রয়েছে।

পনেরটি অপরাধ সে একদিনে করে নাই। অনেক বছর ধরে করেছে। প্রথম অপরাধের পর এক মাসের মধ্যে যদি তার অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা যেত তাহলে সে অপরাধ না করার একটু অবসর পেত।

কেন সেটা করা গেল না, কেন আদালত তাকে জামিন দিল, কেন আইনজীবি একজন অপরাধীর পক্ষে আদালতের কাছে জামিন চাইল, পুলিশ চার্জশীটে কি নয় ছয় করল সে গুলো আলোচনা করার ক্ষমতা আমার নাই আমি বরং একটু সহজ সরল পথে হাঁটি।
খবরঃ
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল বিভাগসহ সব ধরনের আদালতে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৮। ইউএনডিপির পূর্বাভাস ২০২০ সালের মধ্যে মামলার জট ৫০ লাখে দাঁড়াবে, হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে ৯০ জন বিচারপতি আছেন, অধস্তন আদালতে সক্রিয় বিচারক আছেন ১ হাজার ৪০০। (সূত্রঃ প্রথম আলো, মিজানুর রহমান খান, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭)

৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৮ মামলার বিচার করছে ১৪৯০ জন বিচারক। একজন বিচারক গড়ে ২১৩৩ টি মামলার বিচার করছে।
একজন বিচারকের ঘাড়ে গড়ে ২১৩৩টি মামলার বোঝা।

ফলাফল: ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে গুলশানের নিজ বাড়িতে খুন হওয়া মেয়েটার খুনীর ফাঁসি হয় ২৮ নভেম্বর, ২০১৭ সালে। যদি ছবি না থাকত তাহলে উনিশ বছর পর ঐ মেয়ের মা কি নিজের মেয়ের চেহারা মনে করতে পারত?
১৯৯৮ সালে আমার বন্ধু লালু বান্ধবী রিক্তাকে বিয়ে করেছিল ক্লাস নাইনে পড়াকালীন সময়ে। ২০১৭ সালে তারা নানা নানী হয়েছে।

যে মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাসের জেল সে মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে ১০ বছর। ছয় মাসে একটা করে হেয়ারিং। ১০ বছর পর সাক্ষিরা কি দেখেছিল তা বেশীর ভাগই ভুলে যায়। যেহেতু অনেক দিন লাগবে মামলা নিষ্পত্তি হতে সেই গ্রাউন্ডে আইনজীবিরা আদালতের কাছে জামিনের আবেদন করে। বিচারে অনেক সময় লাগবে বা অন্য কোন গ্রাউন্ডে বিচারকও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে জামিন দিয়ে দেয়। বের হয়ে আরো দুইটা আকাম করে মামলা খাই। আবার একই প্রক্রিয়ায় জামিন পাই। আবার তিনটা আকাম করে মামলা খাই। একসময় ১৫টা মামলার আসামী হয়ে যায়।

অথচ একটাও নিষ্পত্তি হয় না। অন্তত একটা অপরাধের সাজার ব্যবস্থাও যদি তার জন্য করা যেত তবে ৬ মাস অপরাধ থেকে দুরে থাকতে পারত।

তারপর একদিন র‌্যাব তুলে নিয়ে যায় বাসা থেকে। কুখ্যাত সন্ত্রাসীর স্ত্রী পুত্র কন্যা র‌্যাব অফিসের সামনে বসে থাকে। একসময় হয়ত লাঠিপেটা করে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় সেখান থেকে। তারপর গভীর রাত ঢিয়া ঢিয়া ঢিস ঢিয়য়য়য়য়য়া। কাম খতম। একটা আপদ শেষ।

যেদিন ক্রসফায়ার দেওয়া হয় সেদিন কি কালা কাইষ্টাদের ভাল মন্দ কিছু খেতে ইচ্ছে করে কিনা তা কি জিঙ্গাসা করে? খাওয়ার শেষে কি একটা সিগারেট দেয় শেষ সুখ টানের জন্য। নাকি প্রশিক্ষণে পাওয়া অশ্লিল গালি দিতে দিতে ঢিয়া ঢিয়া ঢিস ঢিয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়া।

অথচ কতই না ভাল হতো যদি দশ হাজার বিচারক নিয়োগ দেওয়া হত। সর্বোচ্চ একমাসে বিচার সর্ম্পন্ন করা সম্ভব হত। কারো নামে ১৫টা মামলা থাকত না। ক্রস ফায়ার দেওয়ারও দরকার হত না। খুন করার ১৯ বছর পর মামলার নিষ্পিত্তি শেষে ফাঁসির ঘটনা ঘটত না। তিন মাস পর তা ঘটত। তবেই না ন্যায় বিচার হত।

গড়ে ২১৩৩টি মামলা ঘাড়ে বিচারকের অবস্থাটা কেমন? তারা analgesia তে আক্রান্ত হয়েছে সেই কবে। বেদনাবোধহীনতা নিয়ে তারা ভাল আছে। তাড়াহুড়া নাই তাদের। তারা যেন কমলাপুর ষ্টেশনের সামনে রিকসা থেকে নেমেই ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার হুইসেল শুনতে পাওয়া যাত্রী। দৌড়ায়ে কোন লাভ নাই। ট্রেন ধরা যাবে না। ট্রেন ফেল। তাই হাঁটতে জানলে পথেই আরাম তত্ত্বে বিশ্বাসী হতে বাধ্য হয়েছে। দৌড়ানো মানে নিজেকে কষ্ট দেওয়া। যায় ধীরে ধীরে। পৌঁছাবে এক সময়।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হয়ত হাজারো উদ্যাগ নেওয়া প্রয়োজন কিন্তু বিচারকের সংখ্যা ব্যাপক না বাড়ালে কোন সুফলই আসবে না।

রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যক্তির মামলার সংখ্যা থামাতে ব্যর্থ হয়ে ব্যক্তিকেই থামিয়ে দিচ্ছে ঢিয়া ঢিয়া ঢিস ঢিয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়ার মাধ্যমে।

অথচ রাষ্ট্রযন্ত্র একি সাথে সবচেয়ে বড় মামলাবাজ এবং বিচারক নিয়োগকারী!!!!!!!! তাই অন্ধ ও যদি রাষ্ট্রের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে “তুই অপরাধী রে”। কি করে সে মুখে হাত দেব?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আঁধার রাতের আলোকিত লেখায় ভাল লাগা :)

+++

২| ১২ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: দুষ্টমি করে অনেক লেখা লিখলেও সত্য কথাই লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.