নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাগতম অদৃশ্যের এই ব্লগে।।আসবেন , দেখবেন , ঘুরবেন ,বুঝবেন - হারিয়ে যাবেন এই তো দুনিয়ার খেলা। আমি শুধু রুপক মাত্র ।

অদৃশ্য পথিক ০০৭

সবাইকে একদিন এই মায়া ছেড়ে হতে হবে অদৃশ্য।স্বাগতম অদৃশ্যের এই রহস্যময় ব্লগে্‌।জাতিকে লেখনীর মাধ্যমে সঠিক পথ দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস আমার এই ব্লগ।

অদৃশ্য পথিক ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহরতলীর গল্প

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১৩

-তার মানে আপনি আসবেন না?
-মাত্র তো তিন মাস গেল। আরও মাসখানেক থাকুক। বাপের বাড়িতে যাবার জন্য তো আমার কান পচাঁইছে।
-আমরা তো শেলীকে নিয়ে যেতে আপনাকে বলছি না। ওকে দিয়ে গেলেন। এরপর আর দেখতে এলেন না। বেচারি মনমরা হয়ে থাকে।
-আপনার বইনের কি রূপ বেড়ে গেছে যে দেখে আসতে হবে?
কথাটা শুনে মিলির মাথায় রাগটা চড়ে উঠল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালো ও।
- শুনেন। আমার ব্যবসাটা একটু চলুক। টাকা তো দিতে বলছিলাম দেন নাই। নতুন শুরু করছি। ক দিন যাক তারপর আসব।
মিলির ইচ্ছে করছিলো কোন কিছু না বলে লাইনটা কেটে দিতে। কিন্তু পারল না। হাজার হোক বোনের জামাই। এমনিতে কয়েকদিন ধরে কিছু কথা কানে আসছে ওর। কথাটার সত্যতা জানে না। আর তাই মিলি অতি সাবধানে ফোনের অপর প্রান্তের লোকটার সাথে কথা বলল।
ফোনের অপর প্রান্তের লোকটার নাম ইদ্রিস আলী। যদিও তার প্রকৃত নাম ইদ্রিস মিয়া। আলী তার নিজের লাগানো। মিলির মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় আলী নামটা কি আকিকা দিয়ে রাখা হয়ছে কিনা জানতে। তবে মিলি এ লোকটাকে পছন্দ করে না মোটেও। সুতরাং এ কথা জিজ্ঞেস করার মত কোন মানে হয় না। লোকটাকে দেখলে মিলির গা শিরশিরে অনুভূতি হয়। একজন মানুষকে যতটা ঘৃণা করলে এ রকম অনুভূতি আসে - মিলি ঠিক ততটাই ঘৃণা করে তাকে। মিলির মা ও ইদ্রিস আলীকে পছন্দ করেন না। ইদ্রিস আলিকে দেখলে রাহেলা বেগমের অবশ্য গা শিরশিরে অনুভূতি হয় না। উল্টো তার ইচ্ছে করে থাপ্পড় মেরে ইদ্রিস আলির বাকাঁ দাঁত গুলো ঠিক করে দিতে। আফসোস তিনি তা করতে পারে নি কোনদিন। ইদ্রিস আলিকে এ পরিবারে কেবল যে ভালোবাসে তার নাম শেলি। রাহেলা বেগমের ছোট মেয়ে। ইদ্রিস আলি ভালোবাসার মত কোন পাত্র কিনা এ কথা ভেবে শেলির অনুভূতিকে ছোট করার কোন মানে হয় না।
মিলি যখন দরজায় কড়া নাড়ল ভেবেছিল মা দরজা খুলবে। কিন্তু খুলল শেলি।
-আরেহ বুবু। আজ এত তাড়াতাড়ি এলি যে? -
-আজ হাফ ডে ছিল।
-ভাল হয়েছে। তুই কাপড় বদলা আমি চা নিয়ে আসছি। কথা আছে।
কথা আছে শুনে মিলির বুকটা ধক করে উঠল। কি কথা বলবে শেলি?
রুমে এসে দেখে রাহেলা বেগম শুয়ে আছে। কাপড় ছেড়ে মিলি বারান্দায় আসে। এ বারান্দা দিয়ে শহরটা দেখা যায়। আহামরি শহর না । কিনতু মায়ামাখা শহর। কত গল্প আছে এ শহরের বিকেল গুলোতে! আর কত গল্প সাজিয়ে রেখেছিল মিলি। কোন এক সময়ের ভাবনা। মিলির আর ভাবতে ভালো লাগে না।
- নে তোর চা।
- মার শরীর খারাপ নাকিরে?
- উহু। শরীর না মন খারাপ।
- কি হয়েছে?
-মার সাথে ঝগড়া হয়েছে বুবু।
মিলি আর কিছু বলে না। চুপচাপ চা খেয়ে উঠে পরে। টিউশনিতে যেতে হবে। মাথায় আজেবাজে চিন্তারা গিজগিজ করছে। নতুন কোন চিন্তা ঢুকানোর ইচ্ছে নাই মিলির।
ক দিন ধরে যে চিন্তাটা মাথার মধ্যে বাসা বেধেঁছে তা হল ইদ্রিস আলিকে নিয়ে। মিলি সারাদিন বাইরে থাকে। কিছু কথা কানে আসে। কেউ কেউ মিলির কাছে এসে খেজুরে আলাপ জুড়ে দেয়
-আরেহ। তোমার বোনের জামাই নাকি তোমার বোনকে ডিভোর্স দিল?
ক্লাস সিক্সের রেজাল্টকার্ড ঠিক করছিল মিলি। এরূপ কথায় মাথা তুলে তাকায়।
-এসব আষাঢ়ে গল্প কে শোনায়?
- সে কি? ইদ্রিস নাকি মেয়ে দেখছে? তোমার বোন কি সতীনের সাথে সংসার করবে?
মিলির ইচ্ছে করে ঠাস করে একটা চড় প্রশ্নকর্তার গালে বসিয়ে দিতে। ইদানিং রাহেলা বেগমের স্বভাব পেয়েছে মিলির। এমন হলে এ চাকুরি যেতে বেশিদিন নাই। শোনা কথায় মিলির বিশ্বাস নেই কোনদিন। তবুও মনের ভেতর খোঁচখোঁচ করে। শেলি অন্তস্বত্তা সাড়ে পাঁচ মাসের। তিন মাস আগে শেলিকে বাপের বাড়িতে দিয়ে তার স্বামীর খোঁজ নেই বলতে গেলে। মাঝেমাঝে ফোন দেয়। মিলির তাই ভয় লাগে ।

******
অনেক দিন পর মিলি আজ সারাটা দিন বাসায় কাটালো। দুপুর পরযন্ত বিছানায় শুয়ে ছিল। তারপর উঠে গোছল করে রান্নাঘরে আসল। রাহেলা বেগম চুলায় কৈ মাছ ভাজছিল।
-উঠলি?
-হুম
- ভাত দিব? এত বেলা হয়ে গেল
- চা দিতে পারবে মা?
-এখন চা খাবি?
-হুম। দেও না
চা নিয়ে মিলি বারান্দায় আসে। অলস একটা দুপুর। বেশী ভাগ মানুষ এখন ভাতঘুমে। সূরযটাও যেন বিশ্রাম নিচ্ছে। কেমন নিঝ্ঝুম চারিদিক। এ রকম অলস দুপুরের স্বপ্ন মিলিও কখনও দেখেছিল। চা খেতে খেতে কোন এক জনের সাথে কাটানোর। অথবা কোন কোন ভরদুপুরে কারো হলুদ খামের চিঠির অপেক্ষায়। মিলির এখন একত্রিশ চলছে। হলুদ খামের চিঠির বয়সটা অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে। আবেগটাও নেই। কিন্তু অনেক দিন পর মিলির আজ আবার মনে হচ্ছে হলুদ খামে চিঠি পাঠানোর কেউ থাকলে মন্দ হত না!
********
সপ্তাহ দুয়েক আগে ইদ্রিস আলি এসেছিল। শেলির জন্য সবুজরঙা তাঁতের শাড়ি নিয়ে। শেলির হাসিহাসি মুখটা মিলে গেল সবুজ রঙের শাড়িটা দেখে। এই লোকটা জানে না শেলির সবুজ রঙের প্রতি এলার্জি আছে?সবুজ রঙের কাপড় পরলে শেলির নিজেকে কলাগাছ লাগে। ইদ্রিস আলি রাহেলা বেগমের সাথে গল্প করার চেষ্টা করছে। তবে কোন সুবিধা হচ্ছে না। রাহেলা বেগম মুখটা এমন হাড়িঁর মত লাগছে যে তার সামনে মেয়ের জামাই না স্বয়ং মৃত্যুদূত হাজির।
প্রচন্ড বিরক্তিতেও মিলির হাসি এল মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।
********
-বুবু শোন
মিলি তাকিয়ে দেখে রুমের দরজায় শেলি অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিলিকে কিছু কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দরজায় দাড়িয়ে শেলি হড়হড় করে বমি করে দিল।
রান্নাঘর হতে মিলির মায়ের চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে।
শেলি খাটের উপর গা এলিয়ে শুয়ে আছে। মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে। মিলি হঠাৎ চাপা স্বরে কেঁদে উঠল।
-বুবু আমি মাংস পুড়ে ফেলছি
শেলির মাঝে অদ্ভুত কারনে কাঁদার প্রবণতা আছে। ছোটবেলায় একবার আচার ওয়ালাকে টাকা দিতে ভুলে গিয়েছিল শেলি। বাসায় এসে এমন ভাবে কাঁদল যে রাহেলা বেগম ভয় পেল সে পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙল কি না।
মিলির মন খারাপ বিকেল হতেই। মন খারাপের কারন আজ রাস্তায় স্কুলের বান্ধুবির সাথে দেখা। কি সুন্দর দুটো মেয়ে হয়েছে পারুলের! দেখলে গাল টিপে দিতে মন চায়। পারুলের তো খুব ভাগ্য। যাকে ভালোবেসেছিল তার সাথে সুখে সংসার করছে। ভালোবেসে সংসার করলে কি সব সময় সুখি হয়? মা তবে সুখি হয় নি কেন? আচ্ছা শেলি কি সুখি?
-বুবু আজকে আমার সাথে আজ শুবি?
মিলি শেলির মাথায় হাত বুলিয়ে কথা বলে। শেলি খুব খুশি। শক্ত করে মিলিকে জড়িয়ে ধরে।
- বুবু তোরা আমার উপর রাগ, না?
-কেন?
-উহু।ভান করিস না তো। তোরা ভানটাও ঠিক মতো করতে পারিস না।
- কী করেছি?
শেলি চুপ হয়ে যায়। কথার মাঝে চুপ হয়ে যাওয়া শেলির অভ্যাস।মিলি ভাবে শেলির সব অভ্যাস কি এখনও আছে? অনেকদিন শেলিকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয় না।
- শেলি তুই সুখি?
- অদ্ভূত প্রশ্ন তোমার!!
- বলবি? তোর মনে হয় তোর বর তোকে ভালোবাসে?
- কেন মনে হবে না? মিলি চুপ হয়।
- আমি জানি তোমরা ওকে পছন্দ করো না। আমার বিয়ে দিয়েছ মান সম্মানের ভয়ে। এটাও জানি মা যখন ওর সাথে রূঢ় হয়ে কথা বলে আমার কেমন লাগে।বুবু এ মানুষটার যে ব্ল্যাকমেইলিং তোমাদের অসহ্য লাগে আমি তা ভালবাসা ভাবতে ভালবাসি। নাহলে এমনটা করবে কেন সে?

পরদিন মধ্যদুপুরে হলুদ খামের চিঠি কড়া নাড়ে মিলিদের দরজায়। চিঠির প্রাপক মিলি নয়।
রাহেলা বেগম খামটি পান। তারপর হতে তিনি শয্যাশয়ী। বিকেলে মিলি বাড়ি আসারপর হতে মাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রাহেলা বেগম এখন ডাক্তারের ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছেন। ঘেমে যাওয়া ঘুমন্ত মাকে দেখে মিলির অনেক মায়া লাগছে। মায়েদের মাঝে এত মায়া কেন?
রাহেলা বেগম ঘুমানোর আগে থমথমে মুখে মিলিকে বলে
- তুই ওই শয়তানটাকে আমার কাছে আনতে পারবি একবারের জন্য?
- সে দেখা যাবে। তুমি এখন ঘুমাও
- বল পারবি? আমি তাকে কষে একটা থাপ্পড় দিব। আচ্ছা এখন তো তাকে থাপ্পড় দেয়া যাবে। সে তো আর এ বাড়ির জামাই না
মাঝরাত প্রায়। শেলির প্রচন্ড ক্লান্ত লাগলেও বারান্দা হতে নড়তে ইচ্ছে করছে না। এক হাতে দুপুরের হলুদ খাম। খামের ভেতরে ডিভোর্স পেপার আর কয়েক লাইনের কাটাকাটা শব্দের একটি চিঠি।
শেলি,
তোমার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে তোমার সাথে সংসার করা আমার আর হয়ে উঠছে না। অতএব আমি পুনরায় বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাত্রীর পরিচয় তোমাকে পরে জানানো হবে। আর এটাও জানি তোমার মা আর বোন কখনও তোমাকে সতীনের ঘর করতে দিবে না। অতএব ডিভোর্স আবশ্যক।
ইতি
ইদ্রিস আলী
এত কাটাকাটা করে কেউ কথা বলে? তাও আবার যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে তার সাথে?প্রচন্ড কষ্টেও কাল রাতে শেলির মিলিকে বলা কথাগুলো মনে পড়ায় হাসি পায়। আচ্ছা ইদ্রিস চিঠিটা লেখার সময় রেগে ছিল? কি মনে পড়ায়? শেলি একদিন তরকারিতে লবণ দেয় নি। আরেকদিন সকালে ইদ্রিস কাজে যাবার আগে দেখে ওর জামাটা ধুয়ে দেয় নি শেলি। এসবমনে পড়ায় ও এভাবে কঠোর ভাষায় চিঠি দিল? আচ্ছা লেখার সময় একবারো ইদ্রিসের শেলির খুশি হয়ে বাবুর কথা জানানোর কথা মনে পড়ে নি?
শেলির নিজেকে হালকা লাগে। অনেকদিন ধরে আকড়ে রাখা মিথ্যেকে মুক্তি দিতে পারার আনন্দও। এ শহর সত্য মিথ্যেকে জড়াজড়ি করে গল্পে বাঁধায়।
শহরতলীর গল্পেরা রাতের গভীরতার সাথে গভীর হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.