নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অন্য সবার মতো নই। কারন আমি অন্য সবদের দলে নেই। আমার পরিচয় যে আমি ই।

আহমদ আতিকুজ্জামান

শত সহস্র শ্রেষ্ট সব স্বত্ত্বার ভীড়ে আমি কেউ ই না। ভালোবাসি ফুটবল। ফুটবল ফ্যান- এটাই সময়োপযোগী সেরা পরিচয় ধরা যেতে পারে।

আহমদ আতিকুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'কোরবানির ঈদ এবং আমাদের বাস্তবতা....

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৭

দামাদামি শেষে গরুর মালিক ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় গরু দিতে রাজি হলেন। রফিক সাহেব এবার খুব খুশি। ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। এলাকার সবচে বড় কুরবানিটা উনিইবদিচ্ছেন। মনে মনে প্র্যাক্টিস করছেন
বারবার, লোকে দাম জিজ্ঞেস করলে কোন স্টাইলে বলবে। হাসিটা কেমন করে দিলে গরুর দামের সাথে মিলবে।

এসব ভাবতে ভাবতে গরু নিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। বাড়িতে ফোন করে বউকে বলে দিলেন,
- ‌'হ্যালো শুনছো? গরু কেনা শেষ। সবাইকে বলে দিও, এবারে এলাকার সবচে বড় গরু টাকা খরচ করে কুরবানি দেয়া হচ্ছে, লোকে যদি না-ই জানলো। তবে আর লাভ
কী!

গরু নিয়ে বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেলো। ফলে আশপাশের তেমন কেউ গরু দেখতে এলো না
হঠাৎ শুনলেন, দরজায় ঠক ঠক শব্দ। একখান অপরিচিত একটা গ্রাম্য মানুষ এসেছে। চোখে-মুখে ঘাম, পায়ে জুতা নেই। একটু পর পর চোখ মুছছে লোকটা। গায়ে ময়লা
কাপড়। সাথে ১১/১২ বছরে ছোট একটা
ছেলে। রফিক সাহেব খুব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
- কে আপনি?
- স্যার আমি আফনের গ্যারেজে রাখা গরুটার মালিক!
- মালিক মানে! আমি গতসন্ধ্যায় এত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে এলাম, আর আপনি বলছেন 'গরুর মালিক!'
- না স্যার, আসলে আমি গরুটার মালিক আছিলাম, মানে গতসন্ধ্যায় আমিই গরুটা আফনের কাছে বিক্রি করছি।
- ও আচ্ছা, তো এত রাতে কেনো আসছো? ভুল করে টাকা কম দিয়েছিলাম? নাকি জাল নোট পড়েছে?

গ্রাম্যলোকটা চুপ করে আছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে অনবরত। রফিক সাহেব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
- আরে কী হয়েছে বলবা তো! কাপড়-চোপড় লাগবে? নাকি আরও টাকা চাও?
- না স্যার, আসলে গরুটারে একটু দেখতে আসছিলাম। আমার পোলাডায় সারা রাইত কিছু খায়নাই। বারবার গরুটারে দেখতে চাইতেছে। তাই এই রাইতে ৯ মাইল হাঁইট্যা আসছি স্যার।যদি কিছু মনে না করেন, আমারে একটু সুযোগ দিলে গরুটারে একটু দেইখ্যা যাইতাম।
রফিক সাহেব নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন।বগ্যারেজ খুলে দিলেন। গ্রাম্য লোকটা ভেতরে ঢুকেই গরুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন।

ছোট ছেলেটাও কাঁদছে আর লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ‌'বাজান, ওই স্যাররে ট্যাকা ফেরত দিয়া দেও, আমি গরু নিয়া যামু! বাজান! ও বাজান! আমি গরু নিয়া যামু' গ্রাম্যলোকটা তার ছেলেকে কোনো উত্তর দিতে পারছে না। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। রফিক সাহেব দূর থেকে চুপচাপ দেখে যাচ্ছেন সব। বেশ কিছুক্ষণ পরে দুজন বেরিয়ে এলো। চোখ মুছতে মুছতে বললো,
- স্যার, আফনেরে কষ্ট দিলাম, মনে কিছু নিয়েন না।
- ও কি তোমার ছেলে?
- জী স্যার, একটা পোলাই। এইডারে পড়ালেখা করানোর জন্যই আদরের গরুটা বেইচ্যা দিলাম। গেলাম স্যার... দোয়া
রাইখেন....
- একটু দাঁড়াও,
রফিক সাহেব ঘর থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট জোর করে ছোট ছেলেটার হাতে গুজে দিলেন। বললেন, ঈদের দিন এসে বাসায় খেয়ে যেয়ো। বিদায় দিয়ে রফিক সাহেব ভেতরে ঢুকতে গেলেন। লোকটা আবার চিৎকার করতে করতে দৌঁড়ে এলো,
- স্যার স্যার, আরেকটা কথা স্যার,
- হ্যা, বলো,
- জবাইয়ের আগে গরুটারে একটু আস্তে ফালায়েন স্যার... অনেক আদরের গরু তো.....
এতটুকু বলেই লোকটা আবার কেঁদে উঠলো। আবার কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রফিক সাহেবকে সালাম দিয়ে রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করলো গ্রাম্যলোকটা। রফিক
সাহেব অনেক দিন পরে অনুভব করলেন, নিজের চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে। গেইটের গ্রিলে ভর করে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছেন, সত্যিকারের কুরবানি দেয়া খালি পায়ের অচেনা মানুষটার দিকে.....

© আহমদ আতিকুজ্জামান।undefined

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৫

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: মনটাই খারাপ হয়ে গেল!
চমৎকার লিখেছেন।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৫

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: বাস্তবতা তুলে ধরার প্রচেষ্টা। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫১

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: সত্যিই কত হাজারো যত্নে ঘেরা সন্তানের মত লালনপালন করা একটি গরুকে জীবিকার তাগিদে বিক্রি করে দিতে হয়।ভালো লাগলো।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৬

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: মেসেজটা বুঝতে পারাটাই অনেক কিছু। ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৯

বিজন রয় বলেছেন: ঈদ মোবারক।
আপনার এবং পরিবারের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: ঈদ মোবারক।

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫০

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৯

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: আপনাকেও ঈদের শুভেচ্চা।

৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এই ধরণের লেখায় একটা খারাপ অনুভূতি হয়। যারা কোরবানী দেয় তারা এই অনুভূতিটা পেলে - তারা কোরবানীর মহিমাটা বুঝতে পারবে।

গরুর পালকদের মনের মায়াটা যদি বুঝতে পারে - তাহলে নিজেদের মনের পশুত্বকেও বিসর্জন দিতে পারবে। এটাই কোরবানীর আসল উদ্দেশ্য।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪০

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার কথা। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.