নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অন্য সবার মতো নই। কারন আমি অন্য সবদের দলে নেই। আমার পরিচয় যে আমি ই।

আহমদ আতিকুজ্জামান

শত সহস্র শ্রেষ্ট সব স্বত্ত্বার ভীড়ে আমি কেউ ই না। ভালোবাসি ফুটবল। ফুটবল ফ্যান- এটাই সময়োপযোগী সেরা পরিচয় ধরা যেতে পারে।

আহমদ আতিকুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেচে থাকুক বাস্তবিক সব ভালোবাসা .....

০১ লা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯

রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। চোখ পড়লো খোলা এক রেস্টুরেন্টে। ভেতরে এক ভদ্রলোক সাথে পরিচিত এক মহিলাকে দেখলাম। ভদ্রলোক উল্টোমুখ হয়ে বসে আছেন।মহিলাটাও সিরিয়াস ভঙ্গীতে কি যেন বলছেন। আমি এগিয়ে গেলাম। না অন্যকেউ না।আমার খুব কাছের এক ভাই আর ভাবি। আমার কিছুটা অবাক লাগছে কারণ ওই ভাবি বা ভাই কেউ এই টাইপের রেস্টুরেন্টে খাওয়াতো দুরের কথা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাননা কখনো।ভালো রেস্টুরেন্ট ছাড়া লাঞ্চ ডিনার বা কোন কিছু কল্পনাতীত।

আমাকে দেখেই তারা ডাকলেন খুব জরুরী ভাবে। বললাম- "কি অবস্থা ভাবি?"ভাবি বললেন- "ভাই আসছো ভালই হইছে। কিছু আলাপ করি। তোমার ভাই এক্কেবারে গাধা। হিসাবে কাঁচা”। ভাই লজ্জা পেলেন বোধয় ভাবির দেয়া এহেন সার্টিফিকেটে।আমি হাসলাম। এই হাসি দিয়ে ভাইকে যেন ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম- মেয়েরা তাদের স্বামীকে সবসময় গাধাই ভাবে। তারা মনে করে স্বামীরা টাকা পয়সার হিসাব কম বোঝে। এ তেমন কিছুনা ভাই। বি ইজি।

তাদের দু'টা মেয়ে। এক ছেলে। বড় মেয়ে এবার এইচএসসি পাশ করেছে। রেজাল্ট মোটামুটি ভালো। এই রেস্টুরেন্টে বসে আলোচনা হচ্ছে মেয়ের ভার্সিটি ভর্তি নিয়ে। সামনে সাদা কাগজ। ভাবি বললেন- আতিক, ভাই লেখতো...আমি লেখছি। ভাবি বলছেন- "আমি পার্লারে বাবদ যে খরচ করি ধর হাজার দুয়েক। লেখো পার্লার খরচ বাদ। "আমি খাতায় লিখলাম দু'হাজার। পাশ থেকে ভাই বলছেন-“এবার লেখো ডাক্তার বাবদ প্রতিমাসে তিনহাজার। এখন থেকে ডাক্তার বাদ”।পাশ থেকে ভাবি ক্ষেপে গেলেন। “এই তুমি ডাক্তার বাদ দেবে কেন। তোমারতো কোমরের ব্যাথা এখনো ভালো হয়নি”।ভাই বলছেন- "না ধুর। কিসের ব্যাথা। এই ব্যাথার আর ওষুধ না খেলেও হবে। শুধু খরচ। তুমি লেখো। "আমি লিখলাম তিনহাজার। এ পর্যন্ত তাদের অতিরিক্ত থেকে বের হলো মোট পাঁচহাজার। 

এবার ভাবি বলছেন-“প্রতি সপ্তাহে মাছ মাংস না খেয়ে এখন থেকে মাসে একবার মাংস একবার মাছ। তাহলে খরচ বাঁচল কত, সোহান যোগ কর আরও আড়াই হাজার, কত হলো?” লিস্টে যোগ হল সাড়ে সাত হাজার টাকা।এবার পাশ থেকে ভাই বললেন- “বাসায় ডিশ লাইন কেটে দিলে কেমন হয়। এসব চ্যানেলে কি সব দেখায়। দেখার মত না। লাইন কেটে দিলে বাঁচবে আরো ছয়শত। পত্রিকা দুইটা নেয়ার দরকার নাই। একটা নিলেই হবে- সোহান লেখো আরো এক হাজার”।আমি যোগ করলাম আরো এক হাজার। ভাবি বললেন- এখন থেকে তুমি অফিস থেকে আর সিএনজি করে বাসায় আসবেনা। আমিও আর সিএনজি করে বাসায় আসবো না। কোথাও যাবোও না। হাঁটাহাঁটি শরীরের জন্য ভালো। এতে করে মাসে আমাদের বাঁচবে আরো হাজার চারেকের মত। "কিন্তু ভাই এই বয়সে তিন কিমি কিভাবে হাঁটবে?

আমি ভাবছি। টাকা বাঁচানোর লিস্টে আর যোগ করতে ইচ্ছে করছেনা। এই দুজন নিজেদের সব সখ মাটি করে দিচ্ছে, নিজেদের শরীরকে কষ্ট দেয়ার রাস্তা বের করেছে। টাকা বাঁচাচ্ছে।মেয়েকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করাবে, প্রতি সেমিস্টারে অনেক টাকা লাগবে তাই। ইতিমধ্যে তারা তাদের যা সঞ্চয় ছিলো - ভেঙ্গে ফেলেছে সন্তানতো আরো দু’টা আছে।আমি একসময় বলেই ফেললাম- ভাই নিজেদেরকে এভাবে কষ্ট দেয়ার কি দরকার। মেয়েকে কি আরও পড়াতেই হবে? ভর্তি করাতেই হবে? আর তাছাড়া মেয়েরতো বিয়ে হবে , অন্যঘরে যাবে।ভাই কিছুটা বিরক্ত হলেন মনে হয় এমন কথা শুনে।বললেন- "ধুর মিয়া তুমি কি বুঝবা। আমার মেয়ে , আমার ছেলে আমার কলিজা। তারা বড় হবে, উচ্চশিক্ষিত হবে। আমাদের জীবন দিয়ে হলেও তাদেরকে অনেকদূর পর্যন্ত পড়াবো।যেদিন বাপ হবে সেদিন বুঝবে।"

আমি আবারও লিস্টে মনোযোগ দিলাম।এবার ভাই কেমন যেন চমকে গেলেন। বললেন- “আহা মেয়ে ভার্সিটিতে সারাদিন থাকবে। দুপুরে খাবে কি। বন্ধু বান্ধবীরাও মাঝে মাঝে আবদার করবে তার কাছে, মেয়ে লজ্জা পাবে,তুমি লিস্টে দু হাজার যোগ কর। আমি সকালে একবারে ভাত খেয়ে বের হবো, দুপুরে বাইরে লাঞ্চ করবোনা। শরীরটাকে একটু নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। ডায়েট করতে হবে। দু হাজার টাকা এমনি বেঁচে যাবে।এভাবে আমার লিস্টে টাকার পরিমাণ অনেক বাড়তে থাকে। ভাই সিগারেট ছেড়ে দেবেন। যিনি হার্টের অসুখেও সিগারেট ছাড়লেন না তিনি কিনা এবার সিগারেটও ছেড়ে দেবেন।মাসে আরও কিছু টাকা বাঁচবে। কাজে লাগাতে পারবে মেয়ের কাজে।তারা দু’জনেই টাকার যোগফল শুনে শব্দ করে হাসে। ইয়েস আমার মেয়ের টিউশান ফি জোগাড় হয়ে যাবে প্রতি মাসে এভাবেই।

তাদের প্রশান্তির হাসি দেখলেও আমি হাসতে পারছিনা।আমার মন খারাপ হতে থাকে।তাদেরতো আরো দু সন্তান আছে। তাদের পেছনেওতো অনেক খরচ। সে খরচ ম্যানেজ করতে না জানি এই দম্পতি আরও কত কষ্ট করবে তার হিসাব নেই...তারা টাকা বাঁচানোর লিস্টটা বারবার দেখছে। চা খাচ্ছে। আমার চা খেতে ইচ্ছে করছেনা। আমি ওখান থেকে চলে এলাম। আমাদের সব মা বাবারাই হয়তো এভাবেই নানা কৌশল করে নিজেদেরকে কষ্ট দেন। টাকা বাঁচিয়ে সন্তানের পেছনে খরচ করেন। “কি খেলাম কি পেলাম এসে যায় কি তাতে সন্তান মোর থাকে যেন সুখে শান্তিতে”। আমি ভাবলাম ; মেকি ভালোবাসার ভীড়ে বেচে থাকুক বাস্তবিক এ ভালোবাসা গুলো।।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৭ রাত ৮:১৫

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: পোষ্টটি মনোযোগ দিয়েই পড়লাম। আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে এমন লিখা পৌছানো দরকার। বাবা মায়ের তুলনা কোনদিন কারও সাথে হয়না, হয় না।

০১ লা মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার অমূল্য মন্তব্যের জন্যে।

২| ০১ লা মে, ২০১৭ রাত ৮:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


যাক বাঁচলাম, বাংগালীদের এখন ভালোবাসা একটা: প্রপোজ, ভালোবাসি, ব্রেক-আপ, কবিতা লিখি

০১ লা মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৪

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: হা হা হা... সত্যি বলেছেন দাদা।

৩| ০১ লা মে, ২০১৭ রাত ৯:২৫

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: এই রকম হুটহাট বাজেট কাট ছাট না ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করে পূব পরিকল্পনা করলে আর বিড়ি খাওয়া আর পারলারে যাওয়া ছাড়তে হত না। কে জানে মেয়ের বিয়েশাদির সময় হয়তো ঘর বাড়ি না জানি বেচে দেওয়া লাগে। তারপর তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, নিজের সুখ বিসজন দিয়ে ছেলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করার ভাবনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.