নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অন্য সবার মতো নই। কারন আমি অন্য সবদের দলে নেই। আমার পরিচয় যে আমি ই।

আহমদ আতিকুজ্জামান

শত সহস্র শ্রেষ্ট সব স্বত্ত্বার ভীড়ে আমি কেউ ই না। ভালোবাসি ফুটবল। ফুটবল ফ্যান- এটাই সময়োপযোগী সেরা পরিচয় ধরা যেতে পারে।

আহমদ আতিকুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি রবে নিরবে | হুমায়ূন আহমেদ।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৫



- হুমায়ূন স্যার....হুমায়ূন স্যার...স্যার শুনছেন?
- হু..
- হু কি স্যার? হু বললে মনে হয় পাত্তা দিচ্ছেন না। বলুন শুনছি।
- হু শুনছি। বল।
- পাঁচটা বছর হয়ে গেল, ও পাড়ে চলে গেলেন!
- শোন ব্যাটা, "যাওয়া-আসা" শব্দ দুইটা আপেক্ষিক। তোর কাছে মনে হচ্ছে চলে গেলাম, আমার কাছে মনে হচ্ছে চলে আসলাম। বুঝতে পেরেছিস?
- পেরেছি। স্যার একটা কথা শেয়ার করব।
- বল।
- আমি আজ রাতে আত্মহত্যা করব। রাত ১২ টা এক মিনিটে।
- খুবই ভালো। হাসপাতালে শুয়ে যন্ত্র ফন্ত্র শরীরে পেঁচিয়ে হাসফাস করে মরা কোন কাজের কথা না। মরবি সুস্থ অবস্থায়। মরার এক মিনিট আগেও শক্ত সমর্থ মানুষ থাকবি। অসুস্থ বুড়া গরু কোরবানীতে কোন স্বার্থকতা নেই। কোরবানী দিলে সুস্থ সবল জোয়ান গরু দিতে হয়, বুঝলি?

- ওয়াও, স্যার! চমৎকার বলেছেন। আমি মুগ্ধ।
- তা কিভাবে সুইসাইড করবি?
- বিষ খাব কিংবা ফ্যানে ঝুলে পড়ব।
.
- আফসোস! দুইটাই মেয়েদের পছন্দের পদ্ধতি। যাই হোক, তোর ইচ্ছা। মরার সময় তুই যদি সেলোয়ার কামিজ পরেও মরিস তাতেও কিছু যায় আসে না। তবে বিষ কেনার সময় ডেট দেখে কিনবি। দরকার হলে কয়েকটা দোকান ঘুরবি। ভেজাল বিষ খেলে মরবি না তো মরবি না, উল্টো বমি করে ভাসাই দিবি। আর ফ্যানে ঝুলে পড়ার আগে দেখবি সিলিং শক্ত কিনা।
নইলে ফ্যানসহ পড়ে হাত পা ভাঙবি। বাকি জীবন লুলা হয়ে থাকতে হবে।

- স্যার আপনি তো দেখি হিমুর মতোই কথা বলছেন!
- হিমু আমার সৃষ্টি না? তার মানে আমিই হিমু।
- তাও ঠিক। আচ্ছা স্যার আপনি একবারও জানতে চাইলেন না কেন মরতে চাই?
- কেন মরবি সেটা তোর ব্যাপার। হিমুদের বেশি কৌতুহল থাকতে নেই। তবুও বল।

- আমি মরব দুইটা কারণে। প্রথমত আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম, প্রচন্ড রকম। মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। একটুও মায়া রেখে যায় নি। এতদিন তাকে আগলে রেখেছি, তাকে তার মতো থাকতে দিয়েছি। চলে যাওয়ার সময় টুপ করে চলে গেল। কিছুই রইল না। যেন আমি কচু পাতা, আর সে জল। তাকে অক্ষত রাখলাম। চলে যাওয়ার সময় সব নিয়ে চলে গেল।

- বুঝতে পেরেছি। তোমার যুক্তিতে খানিকটা ভুল আছে।
প্রথমত জগতে আসা যেমন আছে, চলে যাওয়াও তেমনি আছে। কেউ এসেছে তারপর কোন দিন চলে যায় নি, এমর হয়েছে কখনো? হয়নি..
এই যে আমি চার বছর হয়ে গেল চলে আসলাম। পৃ্থিবীর মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। কেউ আটকে রাখতে পেরেছে? কেউ আমার জন্য আত্মহত্যা করেছে? শাওন করেছে? করে নি।

তোমাকে একটা জিনিস মানতে হবে, কেউ চলে যাওয়াটা ন্যাচারাল। কেউ চলে গেলে সর্বোচ্চ মন খারাপ করতে পারো, কান্নাকাটি করতে পারো..কিন্তু তুমিও চলে যেতে পারো না। এটা ন্যাচারাল না। হোল্ড ইউর ওউন স্টেশন।

- কিন্তু স্যার, আপনি তো অসংখ্য স্মৃতি রেখে গেছেন। অসংখ্য বই, নাটক, আপনার নুহাশপল্লী। সে কিছুই রেখে যায় নি। কচু পাতার পানির মতোই টুপপপ..
- কচু পাতার পানির কথা বলছো।

একটা জিনিস ভেবে দেখো। কচু পাতায় জল না আটকানোর দায় জলের না, কচু পাতারই। সহজ সত্য, তুমি তাকে আটকে রাখতে চাওনি বা যতদিন সে ছিল ততদিন তাকে তোমার সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগ করতে দাওনি। তুমি নড়েছো,সেও নড়েছে। মিশে থাকতে না পেরে একদিন টুপ করে পড়ে গেছে। দায়টা আগে নিজে নাও, তারপর তাকে দোষী ভাবো। তুমি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছো তাকে দোষী করে, তোমাকে না। এটা অন্যায়। আত্মহত্যার মোটিভেই গন্ডগোল আছে।

- স্যার আরেকটা কারণ..
- হু বলো..
- আমি লেখালেখি করি। ভালো রকম লেখালেখি। তবে স্যার একটা নিন্দা বাণী শুনতেই হয়। আমি নাকি আপনার ভেতর থেকে বের হতে পারছি না। আমি আপনার দ্বারা প্রভাবিত। তাই ঠিক করলাম আপনার মৃত্যু দিনেই মরে যাব। আপনার দ্বারা কতটা প্রভাবিত প্রমাণ করব।

- হাহাহা..শুনে আনন্দ পেলাম। সত্যি বলতে কি আমি দেশের সাহিত্যাঙ্গনকে বলতে গেলে নিজের ঘর হিসেবে বানিয়ে নিয়েছি। প্রায় প্রতিটা সাহিত্যিককে আমার ঘরে বাস করতে হয়। আমার ঘরের বাইরে বের হয়ে লেখা কঠিন ব্যাপার। এতে অসম্মানের কিছু নেই। আমি ৪০ বছরে নিজের রাজত্ব সৃষ্টি করেছি। আমিও কিন্তু রবীন্দ্র প্রভাবিত। তোমরা এত তাড়াহুড়া করো কেন? অন্তত ১০ বছর লেখো, দেখবে নিজের আলাদা রাজত্ব সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।

- স্যার আপনার কথা শুনে সুইসাইড করার ইচ্ছে কমে গেল।
- সুইসাইড করা কোন কাজের কিছু না। আর যুগ যুগ ধরে রাত ১২ টা এক মিনিটে পৃথিবীর অপরাধীরা মারা যায়। সবাই হয়তো অপরাধী না, কেউ কেউ বীরও। তারপরও পৃথিবীর আদালতে তারা অপরাধীই। তুমি বীর নও, ক্রিমিনালও নও। ১২ টা এক মিনিট তোমার জন্য না।
- একি স্যার! আপনি আমাকে এতক্ষণ তুমি করে বলছিলেন? কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি মিসির আলী!

- হাহাহা, ব্যাটা মিসির আলী তো আমারই সৃষ্টি। আমিই মিসির আলী! মিসির আলী কাউকে তুই বলে না।
- স্যার আরেকটা প্রশ্ন। কোন কারণে কি আপনার মনে হয় মরে গিয়ে ভালোই হয়েছে?
- হাঁ, প্রায়ই মনে হয়। দেখ, আমি মরে যাওয়ার পরপর যুদ্ধপরাধীরা ফাঁসিতে ঝুলতে শুরু করল। গণজাগরণ সৃষ্টি হল, শাপলা চত্ত্বর বলে পাল্টা আরেকটা জিনিসের উদ্ভব ঘটল। তারপর শুরু হল ব্লগারদের লেখালেখি-সিরিয়াল কিলিং এবং সবশেষে জঙ্গীবাদ। আমি বেঁচে থাকলে এসব নিয়ে আমাকে বলতেই হত। আমার ধারণা অতীতের মতো এবারও আমার কথাগুলো বুদ্ধিজীবি সমাজের পছন্দ হত না। আমি বুদ্ধিজীবি সমাজে একঘরে হয়ে যেতাম। সহজ ভাবে বললে আমি ভয়ানক সমস্যায় পড়তাম।



- আপনার কনিষ্ট ভ্রাতা মুহম্মদ জাফর ইকবাল ব্যাপারে কিছু বলবেন?
- না, তার ব্যাপারে অনেক বলেছি। নতুন করে কিছু বলার নেই।
- কিন্তু তিনি আপনার ব্যাপারে আপনার মৃত্যুর পর একটা মন্তব্য করেছেন। বলেছেন আপনি ইতিহাসে দুর্বল এবং ইতিহাস নিয়ে আপনার লেখা বই বিশ্বাস করার দরকার নেই।
- হাহাহা...সেটা তার বক্তব্য। সে বলতেই পারে।
- বুদ্ধিজীবি নিয়ে আপনার একটা বাণী আছে। "মানুষ স্বভাবই বিক্রি হতে পছন্দ করে। মানব সমাজের মধ্যে বুদ্ধিজীবিরাই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হতে পছন্দ করেন এবং কবে বিক্রি হবেন সেজন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন।" মনে পড়ে স্যার?
- হু।
- বুদ্ধিজীবি সমাজে কি আপনি নিজেকে "শুভ্র" দাবি করতে পারবেন?
- অবশ্যই। বুদ্ধিজীবি সমাজে আমি শুভ্র। টপিক পাল্টাও, শরীর গুলাচ্ছে।

- আচ্ছা স্যার, অনেক বোদ্ধা বলেন আপনি সস্তা লেখক। তাদের সকাল শুরু হয় আপনাকে গালি দিয়ে, রাত শেষ হয় আপনাকে গালি দিয়ে। তাদের ব্যাপারে কিছু বলবেন?

- মজার কথা বলেছো। সমস্যা হচ্ছে কি তাদের অনেকের নাম মানুষ জেনেছে কেবল আমার সমালোচনা করার কারণে। আমাকে গালি দিতে পেরেছে বলেই এক আধখান বই বিক্রি হয়েছে। তাদের রুটি রুজির কথাও তো ভাবতে হবে। এখানে খারাপের কিছু নেই। আমি তাদেরকে জীবিত অবস্থায় মাফ করে দিয়েছে। মরে গিয়ে নতুন করে মাফ করার কিছু নেই।

- রূপা, মিরা, মুনা, বাকের ভাই, টুনি, মতি, তিতলি, বাদল..মাজেদা খালা...ওরা কেমন আছে জানতে চাইবেন না?
- ওরা ভালো থাকবে। ওদের ভালো থাকতেই হবে। আমার সৃষ্টি করা জগত খারাপ থাকবে না।

- সত্যি বলতে আমরা এখন কেউ ভালো নেই স্যার। সবাই আছে আতংকে। কেউ হয়েছে তোঁতা পাখি। শিখানো বুলি বলছে। আবার কেউ উটপাখির মতো মাথা বালিতে ঢুকিয়ে রেখেছে। আপনাকে বড় বেশি দরকার ছিল।

- আমি এতসব মানুষ সৃষ্টি করলাম কেন? ঘাস খাওয়ার জন্য? তারা কেন দাড়াচ্ছে না, তারা কেন কথা বলছে না? আমি উটপাখি-তোঁতাপাখি সৃষ্টি করি নি। আমি করেছি কোকিল। প্রয়োজনে গান গাইবে। আমি সৃষ্টি করেছি বাজপাখি। দরকার হলে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে।
- স্যার মেজাজ খারাপ করলেন?
- কিঞ্চিৎ।
- স্যার দুইটা গল্প শুনবেন। আত্মহত্যা সম্পর্কিত যে গল্প বলেছি সেটা মিথ্যে। কিন্তু এই দুইটা সত্য গল্প।
- বল।

- ১৯ জুলাই ২০১২ সাল। শুক্রবার ছিল। সেদিন একটা ছেলে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। রিকশায় শুনল আপনি মারা গেছেন। উদাস হয়ে বৃষ্টিতে ভিজল তারপর..বৃষ্টির জলের সাথে চোখের জল একাকার হল। পরীক্ষা না দিয়ে আপনার স্মৃতি বিজড়িত সিলেটের মিরাবাজারে ঘুরাঘুরি করল। টানা চারদিন চারটা করে পত্রিকা কিনল কেবল আপনার খবর নেয়ার জন্য...
- ব্যাটা কাঁদছিস কেন?
- স্যার দ্বিতীয় গল্প।

২৫ জানুয়ারী ২০১৬। একটা অপারেশনের পর পোস্ট অপারেটিভে এই ছেলেটাই মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে কেবল ইচ্ছেশক্তি আর ভাগ্য তাকে ফিরিয়ে এনেছিল। অন্য কিছু না। স্যার, আপনার ভাগ্য কেন এত খারাপ ছিল? আপনার ইচ্ছে শক্তির কি কমতি ছিল? হোয়াই স্যার??

- চিল্লাচ্ছিস কেন? থাম। আমি তো আছিই। তোর টেবিলে তাকিয়ে দেখ। আমি শুয়ে আছি। আমি নুহাশপল্লীতে আছি।
"যদি মন কাঁদে, চলে আছিস এক বরষায়"।

আমি চান্নি পসর রাইতে জেগে থাকব। বাদলে দিনে মনে পড়া বৃষ্টিতে থাকব। শ্রাবণ মেঘের দিনের বৃষ্টিতে আমাকে খুঁজে পাবি। আমার বই, নাটক, সিনেমা, গল্প সবই তো রেখে এলাম। কিছু নিয়ে এসেছি আমি? মন খারাপ করছিস কেন?

- তাই বলে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন?
- কি যন্ত্রণা! ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছিস কেন? আমার গল্প পড়িস নি? হুট করে শেষ হয়ে যেত, চরম অতৃপ্তি নিয়ে। আমার সৃষ্টি করা গল্পের মতো আমিও হুট করে চলে যাব, অতৃপ্তি দিয়ে। স্বাভাবিক না?
- হাঁ। স্যার, মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবেন?
- হু। দিচ্ছি।
- স্যার আমার হাত দিয়ে না। আপনার হাত দিয়ে....স্যার....স্যার আপনি শুনতে পাচ্ছেন? স্যাররররর....স্যাররররররর.....।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনেক নাটকীয় করার চেস্টা করেছেন, সুবিধে হয়নি; ব্লগারেরা সুন্দর উপস্হাপনা পছন্দ করেন।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৯

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: সে পর্যায়ে পৌছাতে পারিনি :(

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১৭

কবীর হুমায়ূন বলেছেন: ভালো লাগলো। ভালো থাকুন।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৫২

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ ভোর ৬:৪০

জগতারন বলেছেন:
আমি তার লিখা কোন বই পড়ি নাই। তার কাহিনী জানার পর পড়ার ইচ্ছাও নাই।

৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৩৯

Al Rajbari বলেছেন: চোঁখ ও হৃদয় ভিজে গেল- (আবিষ্কারের দুয়ারে দাঁড়িয়ে মনে হল)

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৯

তারেক ফাহিম বলেছেন: গল্পের প্রথমাংশ অাগেও একবার পড়েছি সামু ব্লগেই, নিকটা মনে করতে পারছিনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.