নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অন্য সবার মতো নই। কারন আমি অন্য সবদের দলে নেই। আমার পরিচয় যে আমি ই।

আহমদ আতিকুজ্জামান

শত সহস্র শ্রেষ্ট সব স্বত্ত্বার ভীড়ে আমি কেউ ই না। ভালোবাসি ফুটবল। ফুটবল ফ্যান- এটাই সময়োপযোগী সেরা পরিচয় ধরা যেতে পারে।

আহমদ আতিকুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিস্তল...

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:১১



বাবাকে বললাম, পিস্তল কিনব।
উনি ধমকের স্বরে বললেন, কী?

আমি সাহস হারিয়ে ফেললাম। জানতাম রাত দিন কাঁদলেও উনি আমাকে পিস্তল কিনে দেবেন না। গত দুই বছর ধরে এ আবদারের এমনই জবাব দিতেন তিনি। আমি আশাহত হয়ে ভাবতাম, আর একটু বড় হই। তাহলে হয়ত আর না করতে পারবেন না। ওয়ান, টু পেরিয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়ছি। অথচ বাবার ধমকের কোন পরিবর্তন নেই।

বাবার বাম হাতের আঙুল ধরে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দোকানে দোকানে ঘুরলাম। ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু কিনে দিলেন। ইয়া লম্বা লেজওয়ালা কদুর মত বেলুন, প্লাস্টিকের বাঁশি, বাঁশের বাঁশি, বেলুনওয়ালা বাঁশি, কাঁচের রকেট, সবুজ রঙের টেনিস বল, প্লাস্টিকের বাস, কাগজের চশমা, কাগজের ফ্যান আরও কত কি! বাবা একটা খেলনার দোকানের পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে আরও কিছু কিনতে গেলেন। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। ব্যাগে রাখা খেলনায় চোখ বুলিয়েও শান্তি পাচ্ছিলাম না। সবকিছু ছাপিয়ে আমি কেবল পিস্তলের কথাই ভাবছিলাম। হঠাৎ বাম পাশের দোকানটায় চোখ গেল। আমার বয়সী একটা ছেলের হাতে টিনের সাদা পিস্তল। বিকেলের রোদে ওটা যেন ঝলমল করে উঠছে। গুলি করার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না।

আমি ওর কাছে গেলাম। বললাম, আমাকে দাও, দেখিয়ে দিই। ছেলেটা পিস্তল আমার হাতে দিল। স্প্রিং এর হিটার বরাবর বারুদ রেখে ট্রিগারে চাপ দিলাম। ফট করে আওয়াজ হল। বারুদের গন্ধ নাকে এসে ভাললাগা খেলা করল মনের ভেতর। কত মজা! আমি ফায়ার করতে পারি!

দোকানের সামনে লোক সমাগম বাড়তে লাগল। ভীড় ঠেলে আগের জায়গায় এসে দেখি আমার খেলনার ব্যাগটা নাই! আমি তো হতভম্ব! হায়! আমার এতগুলো খেলনা। কোন চোরে নিল? কি করব কিছুই বুঝলাম না। বাবা এলে নিশ্চিত ইচ্ছেমত বকবে। কোথায় ফেলেছি ব্যাগ মনে করতে পারলাম না। বাম পাশের দোকানের সামনে গেলাম, পেলাম না। বুকের ভেতরে শত শত রাউন্ডের ফায়ারের শব্দ আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলল আমাকে। বাবা ফিরে আসার আগেই যে করে হোক ব্যাগ খুঁজে পেতেই হবে। অনেক খুঁজেও পেলাম না। এত মানুষের ভীড়ে কোথায় খুঁজব আমি?

স্রোতের মত মানুষ যাওয়া আসা করছে। কাকে জিজ্ঞেস করব আমি? ভাবলাম বাবা দেরি করে আসুক। এর মধ্যে যদি পাওয়া যায়। একই জায়গার মধ্যেই ঘোরপাক খেলাম, তবুও কিছু মিলল না। খেলনা হারানোর কষ্টে মেলাটা আমার কাছে শোক দিবসে পরিণত হল। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন আমার কাধে মৃদু টোকা দিল। পেছনে ঘুরে দেখি বাবা! আমি হতভম্ব। এতগুলো খেলনা হারিয়েছি নিশ্চয় খুব বকবেন। ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। আশ্চর্য ব্যাপার বাবা বকলেন না।
ধমকের সুরে বললেন, ব্যাগ ফেলে কোথায় যাও তুমি? মন কোথায় থাকে?

একি! বাবার হাতে ব্যাগ এল কি করে? আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না। উনার হাতে থাকা আরেকটি পলিথিনের ব্যাগ থেকে জিলাপি বের করে আমাকে খেতে বললেন। এর মাঝে আর কোন কথা হল না।

বাবার সাথে বাড়ি ফিরছি। তখনো মাগরিবের আযান দেয়নি। মেলাও শেষ হয়নি। আরও থাকতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু বাবার গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে নিজের ইচ্ছেটা অপ্রকাশিতই রয়ে গেল। রাস্তা ধরে হাঁটছি আর মাথার মধ্যে চকচকে পিস্তল, বারুদের গন্ধ আর ফায়ারিং এর ঠাস ঠাস শব্দ খেলা করছে। বাবাকে আস্তে করে ডাকলাম, আব্বা।

উনি শুনলেন নাকি না শোনার ভান করলেন বুঝলাম না। আবার ডাকলাম, এবারও একই অবস্থা। বুঝলাম মাঝপথে কোন আবদার তিনি শুনতে চান না হয়ত। কথা বলার সুযোগ না পেয়ে নিরবে হাটতে লাগলাম। আমার হাতে কত খেলনা। অথচ এর সবকিছুই কেমন যেন অর্থহীন মনে হচ্ছে। শুধু একটা পিস্তল কিনে দিলেই এত খেলনার চেয়ে বেশি আনন্দ পেতাম। মানুষ মাঝে মাঝেই এমন হয়, সব কিছু থাকলেও নির্দিষ্ট একটা কিছুর জন্যই বেশি আকুল হয়ে পড়ে।

সেটা ছাড়া মূল্যহীন হয় সব আকাঙ্ক্ষা। আহারে এই মেলায়ও আমার পিস্তল কেনা হল না। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই। বাম পকেটে আছে দুটা দুই টাকার নোট, একটা এক টাকার কয়েন। পিস্তল কিনতে আরও পনেরো টাকা লাগবে। বিশ টাকার এক পয়সাও কম নয় যে। গত মেলায় শামীম বিশ টাকা দিয়েই কিনেছিল। আমার ভেতরে যে কতটা খারাপ লাগা ছেয়ে যাচ্ছে বাবা তা কখনোই টের পাচ্ছেন না।
কোথাও ভ্যান ট্যান কিচ্ছু পেলাম না। বাধ্য হয়ে পুরো রাস্তাই হেটে আসতে হল। বাড়িতে এসে দেখি মা উদগ্রীব হয়ে আছেন আমার জন্য। ব্যাগ থেকে বের করে দেখতে লাগল কি কি খেলনা কিনেছি। খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে লাগল। আমার মধ্যে কোন আনন্দই কাজ করল না। মা এটা খেয়াল করল। বলল, কিরে, তোর মন খারাপ?
- না মা।
- এত খেলনা নিলি তাও মন খারাপ?
আমি হালকা হাসিমুখ করে তাকিয়ে আছি মার দিকে। মা আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, কি হইছে, ক ত?
- কিছুনা মা।

মা এবার তার আঁচলের গিট খুলে মুড়ে যাওয়া পাঁচ টাকার পাঁচটা নোট বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, এক দৌড়ে যাবি, পিস্তল কিনেই এক দৌড়ে চলে আসবি। কোন দেরি করবি না কিন্তু। যা।

আমি আর কোন দিক না তাকিয়ে, মার গালে একটা চুমু দিয়ে সোজা দৌড় দিলাম ঘাট তিলকপুরের মেলার পানে। আহা কি মজা। আজ আমার পিস্তল কেনা হবে। মনে মনে বললাম, মা তুমিই আমার একমাত্র প্রশ্রয়দাতা, আমার শেষ আশ্রয়। ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: লেখাটি বড় হলেও বেশ গোছানো, পরিপাটি লেখা। সত্যি আপনার লেখার স্টাইল আমাকে মুগ্ধ করেছে। অনেক ভাল লাগা আপনার জন্য। শুভ কামনা।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩২

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ♥♥♥

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৬

মাশ-নুর বলেছেন: অসাধারণ লেখা। তবে আপনার লেখা একই সাথে দুই বার চলে এসেছে। মনে হয় পেস্ট করতে গিয়েই এই বিড়ম্বনা। শুভকামনা।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: জ্বি, দুবার হ্যে গেছিলো। ঠিক করে দিয়েছি, ধন্যবাদ। ♥

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:১৪

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আমি সেদিন ৮০ টাকা দিয়ে একটা পিস্তল কিনলাম! +++

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩৬

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: টাকা'টা মায়ের কাছ থেকে পেলেন?

৪| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: না, আব্বা দিয়েছিলো B-)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: তাহলে তো ভালোই

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১২

পবন সরকার বলেছেন: মায়েরা বাবার চেয়ে নরম মনের

৬| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০১

মাআইপা বলেছেন: দারুণ হয়েছে লেখাটা। একেবারে শৈশব!!!!!!!!!!!!!
খুব শখ ছিল ১টা এয়ারগান কেনার।
টাকার অভাবে কেনা হয়নি, যখন কেনার সামর্থ হলো তখন আর শখ ছিল না।
শুভ কামনা রইল।

৭| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: পিস্তল জিনিসটাই আমার অপছন্দ।

৮| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:০০

খাঁজা বাবা বলেছেন: আপনি চুরি বিদ্যা টা ছোট বেলায় রপ্ত করতে পারেন নাই।
আমার কোন আফছোস নাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.