নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অন্য সবার মতো নই। কারন আমি অন্য সবদের দলে নেই। আমার পরিচয় যে আমি ই।

আহমদ আতিকুজ্জামান

শত সহস্র শ্রেষ্ট সব স্বত্ত্বার ভীড়ে আমি কেউ ই না। ভালোবাসি ফুটবল। ফুটবল ফ্যান- এটাই সময়োপযোগী সেরা পরিচয় ধরা যেতে পারে।

আহমদ আতিকুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামলার সাক্ষী ময়না পাখি | শাহাদুজ্জামান

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪১



প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত 'মামলার সাক্ষী ময়না পাখি' বইটি লেখক শাহাদুজ্জামান উৎসর্গ করেছেন মিথিলা ফারজানা ও জ্যোতি জয়েনউদ্দীনকে। উৎসর্গপত্রটা দারুন। লেখক ছোট্ট করে অথচ কত সুন্দর করে লিখেছেন, 'দেখে ভালো লাগে তুমুল ব্যস্ত মেট্রোপলিটান হিজিবিজি জীবনেও সাহিত্য তোমাদের টানে..


ক্লাস সিক্স থেকে নতুন ক্লাসে উঠার পর নতুন বই পাওয়া মাত্র আমি সর্বপ্রথম যে কাজটা বাসায় গিয়ে করতাম, তা হচ্ছে সন্ধ্যাবেলা বাংলা বই মেলে এক এক করে গল্পগুলো পড়ে ফেলতাম। অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে, তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখন যেকোনো বই পড়ার আগে কয়েকবার পড়ে নেই উৎসর্গপত্রটা। আমার মনে হয় সব পাঠকেরাই এই কাজটি করেন। আমি এক পাঠককে চিনি, যিনি হুমায়ুন আহমেদের অন্তত ত্রিশটা বইয়ের উৎসর্গপত্র মুখস্থ বলে যেতে পারেন। বইয়ের উৎসর্গের মাধুর্যতা দেখে শাহাদুজ্জামানের তারিফ করতে হয়।


বইয়ের নাম 'মামলার সাক্ষী ময়না পাখি' শুনে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই অদ্ভুত নামের পিছনের রহস্যটা কি! লেখক পাঠকদের এই রহস্যের সমাধান দিয়েছেন তার দশম গল্পে এসে। বইখানা ১১ টি ছোটগল্প দিয়ে সাজানো। বইয়ের নাম দিয়ে লেখক বাজিমাত করেছেন বলাই বাহুল্য। গল্পগুলোর শিরোনাম যথাক্রমে: 'জনৈক স্তন্যপায়ী প্রাণী, যিনি গল্প লেখেন', 'মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার', 'টুকরো রোদের মতো খাম', 'চিন্তাশীল প্রবীন বানর', 'পৃথিবীতে হয়তো বৃহস্পতিবার', 'উবার', 'অপস্রিয়মাণ তির', 'ওয়ানওয়ে টিকেট', 'লবঙ্গের বঙ্গ ফেলে', 'মামলার সাক্ষী ময়না পাখি' এবং 'নাজুক মানুষের সংলাপ'।



প্রথমেই বলে রাখি, সবগুলা গল্পই দুর্দান্ত। চঁমৎকার অলঙ্কার যেন ফিকে, ম্লান! চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানের মতো রসকষহীন বিষয়ে যার পিএইচডি ডিগ্রি আছে, তার লেখায় এতো সুক্ষ্মভাবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এতো নিঁখুতভাবে ফুটে উঠতে পারে- দেখে অবাক হতে হয়। মননশীল কথাসাহিত্যে শাহাদুজ্জামানের অস্তিত্ব বাংলা সাহিত্যেকে আরোও খানিকটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা অস্বীকার্য।মামলার সাক্ষী ময়না পাখি’ বইয়ের প্রতিটি গল্প যেমন মুখরোচক, তেমনি এর রয়েছে অন্তর্নিহিত এক ভাষা। সে ভাষা নিরবে কিছু একটা বলে গেছে অবলীলায়। আছে সমাজের জন্য শিক্ষনীয় বার্তা।জনৈক স্তন্যপায়ী প্রাণী, যিনি গল্প লেখেন’ গল্পের মতিন কায়সারের কথাই ধরা যাক। সে জানে গল্প লিখলেই তাকে গল্প বলা যাবে না। গল্পের এই নকল পৃথিবীতে আসল- নকল আছে; কেউ গল্প বানিয়ে তোলে আর কেউ গল্প হয়ে উঠে। কি অসাধারণ ফিলোসফি। মতিনের দ্বারা লেখক জানান দেন- সত্যকে ঢাকঢোল পিটিয়ে পলাতক আসামির মতো খোঁজতে নেই।প্রহেলিকার কুয়াশা গায়ে মেখে নগরের বাতাসে একা একা হাঁটতে হাঁটতে মতিন আমাদের কত সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়।



‘মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার’- শিরোনামে গল্পে লেখক এক জটিল সমীকরণে অথচ খুব পরিষ্কারভাবে একটা বাস্তবতার অবতারনা করেছেন। আইসিইউ বাণিজ্যে কিংবা মৃতুপথযাত্রী রোগীকে নিয়ে হাসপাতালের ছলছাতুরি কথা এদেশে নিত্যকার বিরাট এক সত্য ঘটনা। লেখক খুব সূক্ষভাবে তা তুলে ধরেছেন। গ্রীক দেবি ইয়োসের প্রসঙ্গ টেনে লেখক বুঝাতে চেয়েছেন মেডিকেল সাইন্স কেবল মৃত্যপথযাত্রী রোগীর জীবনটা আরেকটু দীর্ঘায়ু করার সুযোগ দিয়েছে- জীবনের গ্যারান্টি দেয় নি। মেডিকেল সাইন্স জীবন- মৃত্যুর কোনো সমাধান দিতে পারছে না কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের একটা নৈতিক দ্বিধার ভেতর ফেলে দেয়! কি চরম সত্যে। ‘টুকরো রোদের মতো মতো খাম’- গল্পটা খুবই সাধারণ। সম্ভবত এর কনসেপ্ট’টা সবচেয়ে সাদামাটা। অথচ সাধারণ গল্পটাই কত অসাধারণ নিপুণতায় সাজিয়েছেন লেখক। বইয়ের সবচেয়ে কোয়ালিটি কন্টেন্টের তালিকা করলে আমি যে গল্পটাকে সবার উপরে রাখবো সেটি হচ্ছে- ‘চিন্তাশীল প্রবীণ বানর’। এক কথায় দুর্দান্ত।গল্পটায় গল্পের জাদুকর হূমায়ুন আহমেদের একটা ছায়া দেখতে পাই শাহাদুজ্জামানের কলমে। গল্পের শুরুটা পড়ে কেউ আচঁও করতে পারবে না কি হতে চলেছে শেষে! ক্লাইমেক্সটা মূলত শেষ চার লাইনে। অথচ কি দারুন এক শিল্পীর মতো পুরো ক্যানভাস জুড়ে তিনি আঁকলেন নিদারুন এক বাস্তবতা। আমাদের সমাজে এই ঘটনা অহরহ হয়, অনেক বেশিই হয়। বেশিরভাগ সময়ই সেসব ঘটনা গল্প হয়ে ফুটে উঠেনা কোনো দক্ষ গল্পকারের কলমের গাঁথুনিতে। শাহাদুজ্জামান এক প্রবীণ বানরের চোখ দিয়ে যেন সমাজকে দেখিয়ে দিলেন পরকীয়ার ভয়ংকর এক পরিণতি।




লেখকঃ শাহাদুজ্জামান


তারপর মাসুদের ‘পৃথিবীতে হয়তো বৃহস্পতিবার’ কাহিনির অবতারণা করে লেখক সমাজের একটি শ্রেণীর মানুষের পরিচয় তুলে ধরেছেন, যারা বারবার ঠকে আরেকদল ছদ্মবেশি কাছের মানুষদের কাছে! পাঠকদের ‘উবার’-এ চড়িয়ে লেখক একটি সিনেমাটিক দৃশ্যের জন্ম দিলেন। গল্পটা সাধারন, তবে লেখকের গোছানো শব্দশৈলী গল্পটার একটা জমাট ভাব তুলে ধরতে পেরেছে। গল্পটাতে যে বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে তা আমাদের সমাজে খুব-ই সাধারণ একটি ব্যাপার। ‘অস্রিয়মান তির’ শিরোনামের গল্পটায় লেখক একটা বার্তা আবারো দিলেন- মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নাই! শাহাবের ব্যাপারটাই দেখুন না, শেষ পরিণতি কি হলো? এগুলা হয়, আমাদের চারপাশে এগুলা খুব হয়।



বইয়ের অন্যতম সেরা গল্প হচ্ছে ‘ওয়ানওয়ে টিকেট’। লেখক এই গল্পে তার প্রতিভার চরম সাক্ষর রেখেছেন সে-কথা বলাই যায়। রফিকুল আলম নামধারী এক ব্যক্তিকে নিয়ে গড়ে উঠা গল্পের ভীড়ে পাঠকেরা হঠাত-ই আবিষ্কার করবেন রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে; যিনি কিনা রফিকুল আলমেরই একসময়েরর কলেজ বন্ধু এবং শালীর জামাই! প্লেনের জানালায় তাকিয়ে তাঁকা রফিকুলের আলমের স্মৃতি রোমান্থন থেকে গল্পের শুরুটা শেষ হয় দুবাই এয়ারপোর্টে অবতরনের পূর্বের পাইলটের ঘোষনায়। এর ভেতরেই ঘটে যেতে থাকে গল্পের বিভিন্ন মোড়। গল্পটা যেন স্পষ্টই একটা ব্যাপারে ইঙ্গিত করে- সুযোগের অভাবে আমরা সবাই ভালো!



‘লবঙ্গের বঙ্গ ফেলে’- সামাজিক প্রেক্ষাপটের এক গল্প। মোজাম্মেল আলীর কাঁঠালময় একপেঁশে জীবনের এক প্রানবন্ত অধ্যায়ে যোগ হয় তার বিবাহিতা স্ত্রী নার্গিস পারভীন।নার্গিসকেই এই গল্পের খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যায় শেষের দিকে। মোজাম্মেল আলীর মেয়ের আত্মহত্যা গল্পের এক করুণ অথচ এই সমাজের একটি নিত্যকার ঘটনা। ‘মামলার সাক্ষী ময়না পাখি’ যেমন বইয়ের নাম- তেমনি গল্পেরও নাম। নিশান্দিয়া গ্রামের গাছি বজলুর চাতুরতা এক নিখুঁত ফ্রেমে বন্দি করেছেন লেখক। স্রোতের অনূকূলে সবাই গা ভাসাতে চায়- বজলু যেন তা-ই বলে। হাসপাতালের করিডোরে ক্লান্ত বজলুর তন্দ্রার ভেতরে জন্ম নেয় কল্পনাপ্রসুত এক গভীর সৃজনশীলতা, যা থেকে লেখক খুঁজে পান অন্য এক বজলুকে। যে বজলুর মতো অনেক বজলুই সমাজের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সুযোগ বুঝে কোপ মারে। একটা সময়ে তাদের আসল চেহারা উন্মোচন হয়, কারণ সত্যের মৃত্যু নেই। বজলুদের কাছে পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চ! এবং তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে সে মঞ্চের পতনের।



‘নাজুক মানুষের সঙ্গলাপ’ শিরোনামে লেখক ভিন্ন ধাঁচের এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন পাঠকদের। নৈতিকতা- যৌনতার আর সৃজনশীলতার গভীর ফিলোসফির অবতারণা করেছেন শাহাদুজ্জামান। জানিয়েছেন বাস্তব সব সত্য।



স্বার্থক বাক্যের যে প্রধান গুনটি কোনো লেখায় থাকা আবশ্যক তা হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা; শাহাদুজ্জামানের লেখায় এই গুনটি চোখে পড়ার মতো। আবার, ছোটগল্পের যে বৈশিষ্ট্য অপ্রধান, তা হচ্ছে পাঠকদের ভাবনার সমুদ্রে ফেলে চলে আসা; মানে হচ্ছে গল্পের কোথায় শুরু কোথায় শেষ পাঠকদের তা বুঝতে না দেয়া। শাহাদুজ্জামান এই বইয়ে সুক্ষভাবে এই কাজটি করতে পেরেছেন। প্রসংশা করতে হয় তার লেখার।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো একটা বইয়ের সন্ধান দিলেন।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৮

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: শীঘ্রই পড়ে ফেলুন

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৯

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার রিভিউ অসাধারন হয়েছে।
কিন্তু বইটা যোগার করা সম্ভব হবে না মনে হয়।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ। বইটা রকমারিতে আছে।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: পড়লাম। চমৎকার লিখেছেন। যে বইটি পড়েনি তারও অনেকটা পড়া হয়ে যাবে বৈকি! আপনাকে ধন্যবাদ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:০০

আমি সাজিদ বলেছেন: মিথিলা মানে ৭১ এর সবজান্তা পন্ডিতি দেখানো সেই মহিলা?

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২০

নীল আকাশ বলেছেন: রিভিউ ভালো লেগেছে।
খুব সুন্দর লিখেছেন। বইটা পড়ার আগ্রহ হচ্ছে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: পড়ে ফেলুন

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: শীঘ্রই পড়ে ফেলুন

অনলাইনে তো খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হয় বই টা কিনতে হবে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭

আহমদ আতিকুজ্জামান বলেছেন: রকমারিতে পেয়ে যাবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.