নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমদ জসিম জার্নাল

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

আহমদ জসিম

মূলত গল্প ও প্রবন্ধ লিখি।

আহমদ জসিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েটা যেভাবে খুন হলো

২৬ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫০

[ঘটনা সত্য, তবুও গল্প করে বলতে হচ্ছে। কারণ মানুষ ঘটনা শুনতে চায় না। ---লেখক]

মসজিদের পাশের গলি। গলির পাশ ঘেঁষেই রাস্তার উপর বিদ্যুতের খুঁটিটা। সেই খুঁটিতেই হেলান দিয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে কাঁদছে, শ্যামবর্ণ, চুলে একটা বিনুনি। হলুদ রঙের সেলোয়ারের সাথে সাদা রঙের কামিজ। বয়স ষোল-সতের’র বেশি হবে না। ব্যাপারটা প্রথম দৃষ্টি গোচর হলো রফিকের। উৎসাহী রফিক কাছে গিয়ে কতক সময় নীরবে দেখল, মেয়েটা ঠোঁট আর নাক ফুলিয়ে কান্না করছে, চোখ লাল হয়ে গেছে! ‘এই মেয়ে তোর বাড়ি কই? এভাবে কান্না করছিস কেন?’ রফিক বললে। মেয়েটা স্পষ্ট করে কিছু বলার আগেই, জামশেদ চৌধুরী এসে, সিএনজি থেকে নামল। জামশেদ চৌধুরীকে সিএনজি থেকে নামতে দেখে পাড়ার যেসব উঠতি বয়সের ছেলে-পুলে মেয়েটার আশে-পাশে ঘুর-ঘুর করছিল। তারা দ্রুত দূরে সরে গেল। রফিক জামশেদ চৌধুরীকে সালাম দিয়ে, ‘মামা মেয়েটা সেই কবে থেকে এখানে একা-একা দাঁড়িয়ে কান্না করছে!’ চৌধুরী মেয়েটার দিখে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকিয়ে গর্জন করে, ‘এই মেয়ে তোর বাড়ি কই? এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কান্না করছিস কেন?’ মেয়েটা চোখ তুলে চৌধুরীর দিকে তাকাল। মধ্যবয়স্ক চৌধুরীর গালভরা চাপাদাঁড়ি কপালের উপর নামাজির আলামত স্বরুপ কালো চি‎হ্ন! মেয়েটার মনে এবার যেন একটু সাহস হলো- কান্না থামিয়ে ভাঙ্গা-ভাঙ্গা গলায় বলতে শুরু করলো, আঁই নোয়াখালিত তুন বড় আপার বাসায় আইছি, বাস তুন নামি এক্কেন সিএনজি নিছিলাম, সিএনজিতে ব্যাগ রাই টয়লেটে গেছি; আই দেই সিএনজি নাই- ব্যাগে আঁর কাপড়-চোপড়, টেয়াঁ আর আপার বাসার ঠিকানা আছিলো! কথাগুলো বলেই মেয়েটা এবার উচ্চস্বরে কান্না জুড়েদিল! মেয়েটা ঠোঁট-নাক ফুলিয়ে কান্না করছে আর চৌধুরীর দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ ঘটনাস্থলে শুধু রফিক আর চৌধুরী ছিল, এরিমধ্যে মেয়েটাকে ঘিরে পাড়ার মুরুব্বি আর উৎসাহী লোকদের একটা জটলা পেকে গেছে। চৌধুরী সাহেব কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর রফিককে বললে, ‘তুমি কী মেয়েটারে রাতে আশ্রয় দিবা?’ রফিক দ্রুত জিহ্বায় কামড় দিয়ে,‘কি কন মামা! আমি ব্যাচেলার মানুষ- রাতে দোকানে থাকি, আমি কোই জায়গা দিমু; আপনে বাড়িওয়ালা মানুষ, আপনেই নিয়ে যান।’ চৌধুরী তাচ্ছিল্য করে বললে, ‘আমারে ভূতে কিলাইছে; এ-রকম রাস্তার মেয়ের উপকার করতে গিয়ে কত ভদ্রলোক বিপদে পড়েছে তুমি জান!’ সঙ্গে-সঙ্গেই পিছন থেকে সাত্তার সাহেব বলে উঠলো, ‘জামশেদ সাহেব ঠিকই বলেছেন এইতো সেদিনকার কথা- আমাদের এক কলিগ এ-রকম একটা রাস্তার মেয়েকে অসহায় ভেবে আশ্রয় দিয়েছিল সেদিন রাতেই তার ঘরে ডাকাতি হলো - কিসের অসহায়? খবর নিয়ে দেখগা এই মেয়ের সাথে কোন ডাকাত দলের সম্পর্ক আছে!’ লতিফ সাহেব সাত্তার সাহেবের মুখ থেকে কথাটা কেড়ে নিয়ে, ঠিকই বলেছেন, এ-সমস্ত রাস্তার মেয়েদের কোন বিশ্বাস আছে? দেখা গেল রাতে ডাকাতকে খবর দিয়ে ঘরের সবাইরে হাত-পা বেঁধে জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট!’ এ-ভাবে আলাপটা বেশ জমে উঠেছে, এই আলাপ কারিদের দিকে মেয়েটা কান্নাভেজা চোখ দু’টা দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে। দারোয়ান আবুল কার কাছে জানি খবরটা শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে, ‘আহারে! তুই কোন মায়ের ছা? এমন একলা-একলা রাস্তায় কাঁদছ, আয় আইজ রাতে তুই আমার কাছে থাকবি, কাইল যেমনে পারি তোর মা’র কাছে পৌঁছায়া দিমু।’ এতক্ষণ জমে-ওঠা আলাপটা আবুলের কথা শুনে হঠাৎ যেন থমকে গেল! নেমে এল নিরবতা- এই নিরবতার মাঝে চৌধুরী আবুলের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল, তারপর শান্ত কণ্ঠে বললে, ‘শুনলাম তোমার বউ-ছেলে সব বাড়ি গেছে, ঘরে তুমি একলা আছ! জামশেদ চৌধুরীর কথা শুনে উপস্থিত সবলোকই উচ্চস্বরে হো-হো করে হেসে উঠলো। আবুল লজ্জায় মাথা নিচু করে উপস্থিত মানুষের ভিড় ঠেলে দ্রুত সরে পড়লো। পরের দিন সকালে ঘুমভাঙ্গা মানুষ লতাগুল্মবেষ্টিত দলই পুকুরের পশ্চিমপাড়ের দিকেই ছুটছে। নিথর দেহ, চোপ-চোপ রক্ত! ছিন্ন-বিন্ন পড়নের কাপড়! পুলিশ নানাভাবে আলামত খোঁজার চেষ্টা করছে। মাঝে-মাঝে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে নানা তথ্য জিজ্ঞেস করছে। লাশটাকে ঘিরে পুলিশসহ শ’খানেক মানুষ, কারো মুখ লা-শব্দ - পিনপতন নিরবতা। সেই নিরবতা ভেঙ্গে চৌধুরী চিৎকার করে বলে উঠলো, আল্লাহর দুনিয়াই সব সিমার হয়ে গেছে, এমন একটা মানুষও ছিল না যে মেয়েটাকে একটা রাত আশ্রয় দিতে পারে। কথাটা বলার সময় আবুল যে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, লক্ষ করেনি, - চোখা-চোখি হতেই, লজ্জায় তড়িৎ চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলো।



মসজিদের পাশের গলি। গলির পাশ ঘেঁষেই রাস্তার উপর বিদ্যুতের খুঁটিটা। সেই খুঁটিতেই হেলান দিয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে কাঁদছে, শ্যামবর্ণ, চুলে একটা বিনুনি। হলুদ রঙের সেলোয়ারের সাথে সাদা রঙের কামিজ। বয়স ষোল-সতের’র বেশি হবে না। ব্যাপারটা প্রথম দৃষ্টি গোচর হলো রফিকের। উৎসাহী রফিক কাছে গিয়ে কতক সময় নীরবে দেখল, মেয়েটা ঠোঁট আর নাক ফুলিয়ে কান্না করছে, চোখ লাল হয়ে গেছে! ‘এই মেয়ে তোর বাড়ি কই? এভাবে কান্না করছিস কেন?’ রফিক বললে। মেয়েটা স্পষ্ট করে কিছু বলার আগেই, জামশেদ চৌধুরী এসে, সিএনজি থেকে নামল। জামশেদ চৌধুরীকে সিএনজি থেকে নামতে দেখে পাড়ার যেসব উঠতি বয়সের ছেলে-পুলে মেয়েটার আশে-পাশে ঘুর-ঘুর করছিল। তারা দ্রুত দূরে সরে গেল। রফিক জামশেদ চৌধুরীকে সালাম দিয়ে, ‘মামা মেয়েটা সেই কবে থেকে এখানে একা-একা দাঁড়িয়ে কান্না করছে!’ চৌধুরী মেয়েটার দিখে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকিয়ে গর্জন করে, ‘এই মেয়ে তোর বাড়ি কই? এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কান্না করছিস কেন?’ মেয়েটা চোখ তুলে চৌধুরীর দিকে তাকাল। মধ্যবয়স্ক চৌধুরীর গালভরা চাপাদাঁড়ি কপালের উপর নামাজির আলামত স্বরুপ কালো চি‎হ্ন! মেয়েটার মনে এবার যেন একটু সাহস হলো- কান্না থামিয়ে ভাঙ্গা-ভাঙ্গা গলায় বলতে শুরু করলো, আঁই নোয়াখালিত তুন বড় আপার বাসায় আইছি, বাস তুন নামি এক্কেন সিএনজি নিছিলাম, সিএনজিতে ব্যাগ রাই টয়লেটে গেছি; আই দেই সিএনজি নাই- ব্যাগে আঁর কাপড়-চোপড়, টেয়াঁ আর আপার বাসার ঠিকানা আছিলো! কথাগুলো বলেই মেয়েটা এবার উচ্চস্বরে কান্না জুড়েদিল! মেয়েটা ঠোঁট-নাক ফুলিয়ে কান্না করছে আর চৌধুরীর দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ ঘটনাস্থলে শুধু রফিক আর চৌধুরী ছিল, এরিমধ্যে মেয়েটাকে ঘিরে পাড়ার মুরুব্বি আর উৎসাহী লোকদের একটা জটলা পেকে গেছে। চৌধুরী সাহেব কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর রফিককে বললে, ‘তুমি কী মেয়েটারে রাতে আশ্রয় দিবা?’ রফিক দ্রুত জিহ্বায় কামড় দিয়ে,‘কি কন মামা! আমি ব্যাচেলার মানুষ- রাতে দোকানে থাকি, আমি কোই জায়গা দিমু; আপনে বাড়িওয়ালা মানুষ, আপনেই নিয়ে যান।’ চৌধুরী তাচ্ছিল্য করে বললে, ‘আমারে ভূতে কিলাইছে; এ-রকম রাস্তার মেয়ের উপকার করতে গিয়ে কত ভদ্রলোক বিপদে পড়েছে তুমি জান!’ সঙ্গে-সঙ্গেই পিছন থেকে সাত্তার সাহেব বলে উঠলো, ‘জামশেদ সাহেব ঠিকই বলেছেন এইতো সেদিনকার কথা- আমাদের এক কলিগ এ-রকম একটা রাস্তার মেয়েকে অসহায় ভেবে আশ্রয় দিয়েছিল সেদিন রাতেই তার ঘরে ডাকাতি হলো - কিসের অসহায়? খবর নিয়ে দেখগা এই মেয়ের সাথে কোন ডাকাত দলের সম্পর্ক আছে!’ লতিফ সাহেব সাত্তার সাহেবের মুখ থেকে কথাটা কেড়ে নিয়ে, ঠিকই বলেছেন, এ-সমস্ত রাস্তার মেয়েদের কোন বিশ্বাস আছে? দেখা গেল রাতে ডাকাতকে খবর দিয়ে ঘরের সবাইরে হাত-পা বেঁধে জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট!’ এ-ভাবে আলাপটা বেশ জমে উঠেছে, এই আলাপ কারিদের দিকে মেয়েটা কান্নাভেজা চোখ দু’টা দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে। দারোয়ান আবুল কার কাছে জানি খবরটা শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে, ‘আহারে! তুই কোন মায়ের ছা? এমন একলা-একলা রাস্তায় কাঁদছ, আয় আইজ রাতে তুই আমার কাছে থাকবি, কাইল যেমনে পারি তোর মা’র কাছে পৌঁছায়া দিমু।’ এতক্ষণ জমে-ওঠা আলাপটা আবুলের কথা শুনে হঠাৎ যেন থমকে গেল! নেমে এল নিরবতা- এই নিরবতার মাঝে চৌধুরী আবুলের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল, তারপর শান্ত কণ্ঠে বললে, ‘শুনলাম তোমার বউ-ছেলে সব বাড়ি গেছে, ঘরে তুমি একলা আছ! জামশেদ চৌধুরীর কথা শুনে উপস্থিত সবলোকই উচ্চস্বরে হো-হো করে হেসে উঠলো। আবুল লজ্জায় মাথা নিচু করে উপস্থিত মানুষের ভিড় ঠেলে দ্রুত সরে পড়লো। পরের দিন সকালে ঘুমভাঙ্গা মানুষ লতাগুল্মবেষ্টিত দলই পুকুরের পশ্চিমপাড়ের দিকেই ছুটছে। নিথর দেহ, চোপ-চোপ রক্ত! ছিন্ন-বিন্ন পড়নের কাপড়! পুলিশ নানাভাবে আলামত খোঁজার চেষ্টা করছে। মাঝে-মাঝে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে নানা তথ্য জিজ্ঞেস করছে। লাশটাকে ঘিরে পুলিশসহ শ’খানেক মানুষ, কারো মুখ লা-শব্দ - পিনপতন নিরবতা। সেই নিরবতা ভেঙ্গে চৌধুরী চিৎকার করে বলে উঠলো, আল্লাহর দুনিয়াই সব সিমার হয়ে গেছে, এমন একটা মানুষও ছিল না যে মেয়েটাকে একটা রাত আশ্রয় দিতে পারে। কথাটা বলার সময় আবুল যে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, লক্ষ করেনি, - চোখা-চোখি হতেই, লজ্জায় তড়িৎ চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলো।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

নক্ষত্রের আমি বলেছেন: খুবই বেদনাদায়ক। যাই হোক লেখাটি ২বার পোস্ট করা হয়েছে, ভুল করে?

২৬ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩১

আহমদ জসিম বলেছেন: দুই বার ! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৬

পেন্সিল স্কেচ বলেছেন: নিষ্ঠুর সমাজের বাস্তব চিত্র , বেদনাদায়ক ।।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৮

আহমদ জসিম বলেছেন: সমমত

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: মেয়েটাকে কে খুন করল? কেন করল?

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৯

আহমদ জসিম বলেছেন: পড়ে বুঝেননি?

৪| ২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৭:৪৫

ইসটুপিড বলেছেন: .....এখানেগুতান

৫| ২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৭:৫৬

উদাস কিশোর বলেছেন: বর্বর সমাজের প্রতিচ্ছবি । ক্ষমতার পেছনেই থাকে লালসা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.