নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমদ জসিম জার্নাল

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

আহমদ জসিম

মূলত গল্প ও প্রবন্ধ লিখি।

আহমদ জসিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুনেন: মজার মজার কিছু গুজব!

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৯

সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ! দেলোয়ার হোসেন সাঈদী চন্দ্র ভ্রমণ করে আসলো, তার ভ্রমণের বাহন জামাতীদের ছড়ানো গুজব আর এদেশের কতিপয় ধর্মান্ধ মুসলমানের অজ্ঞতা। তবে গুজব রটানোর বিষয়টা এ-অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। এমনই গুজবকে কেন্দ্র করে ভণ্ড হয়ে যায় মহা সাধু আর সাধু হয়ে যায় ভণ্ড! এমনই গুজবের উপর ভর করে একটাকা দামের লাল কয়েন হয়ে যায় একশ টাকা মূল্য, আর নিরীহ অবুঝ প্রাণী তক্ষক হয়ে উঠে লোভী মানুষের লক্ষ্যবস’।

এমনই এক গুজবকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারির মতো শতবছরের এক প্রাচীন জনপদের উপর কেমন তাণ্ডব লীলা চলেছে আমি চোখে দেখেছিলাম।

আমরা যদি লক্ষ করি তাহলে দেখবো তাবৎ গুজবের পিছনে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর কায়েমি স্বার্থ কাজ করে, যেভাবে আমরা হাটহাজারির ঘটনায় প্রথমিকভাবে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম যে, জসিম মিস্ত্রি নামে এক যুবক মসজিদ পলেস্তারা ভেঙে সংখ্যালঘু হিন্দু সমপ্রদায় মসজিদ আক্রমণ করেছে বলে গুজব ছড়িয়েছিল, আর হাজার হাজার ধর্মান্ধ মুসলমান এই গুজবে পঙ্গপালের মতো এসে হামলে পড়েছিল মন্দির আর হিন্দু বাড়ির ওপর। আমরা নানা মিডিয়ার মারফতে জসিম মিস্ত্রির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানতে পারি, সেই ঘটনায় জসিম মিস্ত্রি নিজ হাতে উক্ত মসজিদের পলেস্তারা তুলেছে আর জানালার একটা কপাট আলগা করেছে। ব্যাস, অতটুকু! আর জনা যায় না, কাদের স্বার্থে কিংবা কাদের নির্দেশে দিনমুজুর অশিক্ষিত লোকটা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। বিষয়টা নিয়ে আমাদের মিডিয়াও পালন করেছিল রহস্যজনক নীরবতা। এই নীরবতা নিয়ে আমি তখন কয়েকজন মিডিয়া কর্তা ব্যক্তির সাথে কথা বলেছিলাম, নীরবতা বিষয়ে তাদের যুক্তি ছিল এই ধরণের ঘটনা চেপে যাওয়াই ভাল, বেশি প্রচার করলে সামপ্রদায়িকতাকে উস্কানি দেওয়া হবে। এই যেন ঊট পাখি বালিতে মুখ গুজার মতো ব্যাপার।

যে সমাজে এই ধরণের গুজব তৈরির মতো স্বার্থ আছে এবং তা দ্রুত সময়ে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অজ্ঞতা আছে, সেখানে এই নীরবতা অর্থহীন। সেটা প্রমাণের জন্য আমাদের খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। হাটহাজারির ঘটনার রেশ কাটতে-না-কাটতেই এবার আক্রান্ত হলো কক্সবাজারের বৌদ্ধ সমপ্রদায়। এবার গুজবের উৎস ফেইসবুকে জনৈক বৌদ্ধ যুবকের ইসলাম ধর্মের অবমাননা। অথচ অদ্ভুত ব্যাপার হলো যে অঞ্চলে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননা নিয়ে এতো বড় কাণ্ড ঘটে গেলো সেই অঞ্চলে শতকরা দশমিক এক ভাগ মানুষ ফেইসবুক নামক মাধ্যমটির সাথে পরিচয় আছে কিনা সন্দেহ আছে। তবে এই গুজবের হোতা কারা? আমাদের কাছে এখানেও পুরো রহস্য উন্মোচিত হয় না, এক্ষেত্রে অবশ্যই মিডিয়া সরব হলেও নীরব রাষ্ট্রযন্ত্র যাদের উপর এধরণের গুজবের রহস্য উন্মোচনের পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত। তবে আমরা আমাদের সাধারণ কাণ্ড-জ্ঞান দিয়ে বুঝে ফেলি হাটহাজারির মন্দির ও হিন্দু বাড়ি কিংবা কক্সবাজারের প্যাগোডা ও বৌদ্ধপল্ল্লিকে কেন্দ্র করে তৈরি গুজবের পিছনে কাজ করে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের বিশেষ কারসাজি।

আবার কিছু গুজবের অন্তর্নিহিত কারণ আমাদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেও ধরে না, যেমন লাল কয়েন, একদল কিশোর তরুণ পঙ্গপালের মতো ছুটে এসে এক টাকা দামের লাল কয়েন কিনে নিচ্ছে একশত টাকা দিয়ে। ওই কয়েন ব্যবসা করে কোটিপতি হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর তেজোদীপ্ত তরুণ কিশোরদের নিঃস্ব আর তেজহীন হতে দেখলাম মাত্র পাঁচ ঘন্টার মধ্যে। আমার ঠিক মাথায় ঢুকে না আবালবৃদ্ধবণিতার কাছে এই গুজবটা রটিয়েছে কে বা কারা? আমরা স্রেফ একটা দৈনিক পত্রিকার বদৌলতে এতটুকু জানতে পারি, এই গুজবের উৎপত্তিস’ল ছিল সিলেট। একইভাবে বলা যায় নিরীহ প্রাণী তক্ষকের ব্যাপারটাও, পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টালেই প্রায়শ চোখে পড়তে থাকে, নানা স’ান থেকে ডজনে ডজন মৃত তক্ষক উদ্ধার হচ্ছে সেই সাথে আটক হচ্ছে দুই একজন মানুষও। তক্ষক উদ্ধার ও মানুষ আটকের পর আমরা আর জানতে পারি না, এই পক্রিয়ার শেষ পরিণতি কী? যেভাবে আমরা আজও জানতে পারি না, এই নিরীহ প্রাণিটির প্রতি কার বা কাদের এমন শত্রুতা ছিল যে জীবননাশকারি এমন একটা গুজব রটালো।

আমরা এতক্ষণ যে গুজব বিষয় কথা বললাম সেই গুজবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম, চাঁদে সাঈদির ছবি দেখা যাওয়া সংক্রান্ত গুজবের তুলনায়। এই গুজবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বাধীন বাংলাদেশের বিয়াল্ল্লিশ বছরের ইতিহাসে এক ভয়াবহতম অধ্যায়। আমার যারা ৭১ দেখি নাই, তারা এই ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর তাণ্ডবলীলা দেখে ৭১-কে আন্দাজ করতে পারি। পরিতাপের বিষয় হলো জামায়াতিরা এই তাণ্ডবলীলা স্রেফ তাদের কর্মী বাহিনি দিয়ে চালায়নি, তাদের এই অপকর্মের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে কিছু অজ্ঞ ধর্মান্ধ মানুষকে। তাদেরকে এই শিরকি কাজে প্ররোচিত করার প্রস’তি কিন’ তারা বেশ আগ থেকেই নিয়েছে- এটা আমরা ধারণা করতে পারি। কারণ, মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি- জামাতের কর্মিরা এই গুজবটা মসজিদের মাইকে মোবাইল এসএমএস-এর মধ্যমে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল। মজার বিষয় হলো চাঁদ নিয়ে এই গুজব বিশ্ব রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। তবে উপমহাদেশের রাজনীতিতে চাঁদ নিয়ে প্রথম গুজব তৈরি হয়েছিল ১৯৪৭ সালে, মুসলিমলীগের কতিপয় নেতা অজ্ঞ অশিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে প্রচার করতে শুরু করে যে, আকাশে যেদিন নতুন চাঁদ উঠে সেদিন চাঁদের বুকে জিন্নাহর ছবি দেখা যায়। মুসলিমলীগ নেতাদের এই গুজব প্রচারকালিন জামায়াতিদের তাত্ত্বিক গুরু মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ছিলেন হায়দারাবাদ নিজাম দরবারের ইসলামী পণ্ডিত। তখন তিনি এই অপপ্রচার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘চাঁদের ভিতর জিন্নাহর ছবি দেখা যায় বলে যারা প্রচার করছে তারা কাট্টা কাফের, এইসব প্রচারে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়। যারা এই সব শিরকি কাজে লিপ্ত তাদের পাথর মেরে হত্যা করাই হবে উপযুক্ত শাস্তি।’ অথচ সেই ঘটনার ৬দশক পর মওদুদির অনুসারিরাই সেই শিরর্কি কাজটা করলো। এতে আমি মোটেও বিস্মিত হইনি, বিস্মিত হইনি এই কারণেই যে, ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে শিরক কিংবা ধর্ম দু’টাই আপেক্ষিক ব্যাপার। আসল কথা হলো ধর্ম বেচে খাওয়া। ১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক স্বার্থে শিরক চিহ্নিত করা প্রয়োজন ছিল, তাই মওদুদি সেটা চিহ্নিত করেছে, আবার ২০১৩ সালে এসে সেই শিরকই তারা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। তবে আমাকে বিস্মিত করে যে ব্যাপারটা, তা হলো, আজ হতে অর্ধশতাব্দীকাল আগে যে গুজব দিয়ে এদেশের মুসলমানদেরকে বোকা বানানো গেছে ঠিক একই গুজব আজও কার্যকর। এর অর্থ দাঁড়ায়, সময় অতিক্রম হয়েছে ঠিকই কিন’ আমরা চেতনায় সেই মধ্যযুগেই রয়ে গেলাম, এই রয়ে যাওয়ার দায় এদেশের শাসকশ্রেণি কোন মতেই এড়াতে পারে না;যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ক্ষমতায় আসে কিংবা যারা ইসলামি মূল্যবোধের কথা বলে সেই ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা যদি জাতিকে সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিত করতো, এমন গাজাখুঁরি গুজব সহজে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারতো না কিংবা যারা ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বলে ক্ষমতায় আসে তারা যদি মানুষকে ধর্মের ইতিহাস, দর্শন যুক্তিগুলো জানা-বুঝার সুযোগ করে দিত, তবে কোন কুচক্রী মহল মানুষকে এত সহজে শিরকি কাজে জড়িয়ে ফেলতে পারতো না।

প্রসঙ্গক্রমে রুশ কথাসাহিত্যিক লেভ তলস্তয়-এর একটা কথা আমরা স্মরণ করতে পারি, তিনি বলেছেন- একজন সুশিক্ষিত মানুষের সাথে অশিক্ষিত মানুষের পার্থক্য হচ্ছে ততটুকু, যতটুকু একটা জড় পদার্থের সাথে জীবের হয়। তলস্তয়ের এ কথা শাসকশ্রেণি ভালই জানে তারপরও তারা মানুষকে প্রকৃত শিক্ষিত করে না, কারণ মানুষ শিক্ষিত হলে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সহজ হবে না। মানুষের অজ্ঞতাই শাসকশ্রেণির শাসনের প্রধান উৎস। এই অজ্ঞতা আমাদের কাছে কখনো ধরা দেয় তক্ষক, লাল কয়েন কিংবা কখনো মোবাইলে জিনের বাদশা, চাঁদে সাঈদীর ছবি হিসেবে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৪৮

পথহারা নাবিক বলেছেন: এইভাবে ছ্যাঁচড়ামি কইরা পোষ্টে হিট বাড়াইতে লজ্জা লাগে না!! শালা হাইব্রিড!!

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

আহমদ জসিম বলেছেন: না লাগেনা ভাই, কারণ ভাল জিনিস বার বার খাইলেও মুখ ফিরে না।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৫৯

শফিক আলম বলেছেন: ভাল লিখেছেন। এই উপমহাদেশে যত সাম্প্রদায়িক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তার প্রায় সবই ধর্মব্যবসায়ীদের গুজবের ভিত্তিতে হয়েছে। অশিক্ষা সমাজের জন্য ক্যান্সার বটে। যতদিন সমাজ শিক্ষিত না হয়ে উঠবে, ততদিন এই ব্যবসা চলতেই থাকবে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১

আহমদ জসিম বলেছেন: আপননেও ভাই দারুণ বলেছেন, আপনাকেও ধন্যবাদ।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১৮

ডাইরেক্ট টু দ্যা হার্ট বলেছেন: আমার ভাগিনা কেন জানি সাইদিকে সহ্য করতে পারেনা অযথা তার নামে গুজব ছড়ায় গত কিছুদিন আগে পূর্নিমা গেল নিউইয়র্কের আকাশে আমরা সাগড়ের তীর ঘেষে যাচ্ছিলাম লংআিল্যান্ড
ভাগীনা হুট করে চিৎকার দিয়ে বললো মামা চাদে বুড়িনাই দেখন চাদ ধব ধবে সাদা হয়ে আছে সাইিদি কি বুড়িটারে শেষ মেস মাইরাই পালাইলো
আমি বললাম দয়া করে সাইদির নামে আর গুজব ছড়াবেননা বেচারা নেহায়েতই ভালো সুরকার মানুষ

আজকে আবার আরেক গুজব শুনলাম এক জামাত সমর্থকের কাছে তার বক্তব্য হলো সোনালী ব্যাংকে সিধ কাটা লোকটা নাকি ভারতের র এর লোক ভারত যেই টাকা লোন দিয়েছে তা নাকি এভাবেই চুরি করে নিবেন এই দেশ থেকে এই জন্য নাকি র‌্যাব এখনো তাকে ক্রস ফায়ারে দেয়নি অন্যজন সেই তালে গাল লাগিয়ে বললো সরকার সবজানে

গুজবের বয়স হয়না এই দেশে দিন দিন তরতাজা যুবক হচ্ছে

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৪

আহমদ জসিম বলেছেন: দারুণ রসপূর্ণ মন্তব্য।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৩৮

লাতি বলেছেন: দারুণ একটি লেখা পড়লাম। অসাধারণ , ধন্যবাদ

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২১

আহমদ জসিম বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:১২

নিয়েল হিমু বলেছেন: দারুন

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২২

আহমদ জসিম বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.