নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমদ জসিম জার্নাল

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

আহমদ জসিম

মূলত গল্প ও প্রবন্ধ লিখি।

আহমদ জসিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপীবাগের ছয় খুন নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪২

পরম স্পর্শকাতর মানুষও যে কোন ধরনের নৃশংসতার সাথে অবস্ত্য' হয়ে যেতে পারে, যদি সেই মানুষ একটা নৃশংস সমাজে বাস করে। আমরা বোধকরী এমনেই নৃশংসতাই অবস' হয়ে গেছি! কোন মৃত্যুই যেন আমাদের আর সেই ভাবে তাড়িত করে না! গতকালের ঘটে যাওয়া কোন নৃশংসতার কথা আজ আমরা কত সহজে ভুলে যাচ্ছি,বরং মানসিক ভাবে যেন প্রস'তি নিয়ে রাখছি- আগামীতে এর ছেয়েও ভয়ানক কোন নৃশংসতার সাক্ষী হবার জন্য। তবে প্রত্যেকটা নৃশংসতা আমাদের চোখে অঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সমাজের দৈন্যতাকে। যেভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ খুন, বলে দেয় এদেশের ক্ষমতামুখী রাজনীতি দেউলিয়াত্ব, একই ভাবে খুন, গুম ক্রসফায়ারের মতো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কিংবা থানা হাজতে আসামির মৃত্যু আমাদের দেখিয়ে দেয়, দেশে আইনের শাসনের দৈন্যতাকে । তারপরও কিছু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমাদের আলাদা করে ভাবতে হয়, যেভাবে আমাকে ভাবাচ্ছে রাজধানীর গোপীবাগের একটি বাড়িতে লুৎফর রহমান(৬০) ও তার ছেলে মনির হোসেন(৩০)সহ আরো চারজন খুন হবার ঘটনাটা। এমন নয় যে, একই ঘরে গলা কেটে পাঁচ-ছয়জন খুন হবার ঘটনা দেশে প্রথম ঘটল। বরং আমাদের বিষয়টা নিয়ে এই জন্যই আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে, লুৎফর রহমানের খুন হওয়া সাথে জড়িয়ে আছে, এই অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, পরমত সহিষ্ণুতা এবং ধর্মীয় উগ্রতা তথা জঙ্গিবাদের মতো ভয়ানক কিছু সামাজিক প্রশ্ন। ওই খুনের ভেতর দিয়ে, এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাবার আগে আমাদের লুৎফর রহমান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া দরকার। লুৎফর রহমান একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ ছিলেন, যিনি একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী গঠনে তৎপর হন। তিনি নিজেকে ইমাম মেহেদি বলে দাবি করতেন। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, ইমাম মেহদি হচ্ছে আল্লার মনোনীত একজন বিশেষ ধর্মীয় ব্যক্তি, যিনি কেয়ামতের অব্যবহিত পূর্বে পৃথিবীতে আসবেন, তাঁর কাজ হলো: দজ্জাল নামক মিথ্যাবাদী ও দুর্দান- অত্যাচারী যে কিনা আবার নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করে বহু লোকের ইমান নষ্ট করবে, সেই বেইমানের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা। লুৎফর রহমান যে ইমাম মেহদি ছিলেন না, এটা মোটামুটি আমাদের কাছে পরিষ্কার। কারণ ধর্মমত অনুসারে ইমাম মেহদি খুন হবার কথা নয়, তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হবার কথা। স্বাভাবিক নিয়মেই আমাদের সামনে প্রশ্ন এসে দাঁড়াই: এমন উচ্চশিক্ষিত মানুষ হয়েও কেন তিনি নিজেকে ইমাম মেহদি দাবি করল? আর কারাইবা থাকে খুন করল?তার খুন হওয়া সম্পর্কে পুলিশ মিডিয়াতে দুইটি সম্ভাব্য কারণের কথা বলেছেন: যার মধ্যে প্রথমটা হলো অন্য উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্বারা খুন হওয়া, দ্বিতীয়টা জায়গা-সম্পদ সংক্রান- বিরোধ। দ্বিতীয় ধারণাটা ধোপে ঠেকে না, কারণ লুৎফরের সাথে বাকি যে চারজনকে খুন করা হয়েছে, এরা ছিল আদপে তার মুরিদ বা ভক্ত, আর একই ঘরে অবস'ান করার পরও খুনিরা লুৎফরের স্ত্রী, ছেলের-বউ আর নাতির কোন ক্ষতিই করে নিই। এই প্রবণতা দেখে আমরা এক প্রকার নিশ্চিত ধরে নিতে পারি লুৎফর তার প্রতিপক্ষ উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী কর্তৃক খুন হয়েছে।খুনের প্রশ্নটা যখন আমরা এক ধরনের সমাধানে পৌঁছাতে পারছি , এরপর যে প্রশ্নটা আমাদের সামনে এসে দাঁড়াই: কেন তিনি নিজেকে ইমাম মেহদি ঘোষণা করতে গেলেন? তার এই ঘোষণার পেছনে দুইটা কারণ থাকতে পারে, প্রথম কারণ: প্রতারণা, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা, ধর্মকে পুঁজি করে নিজের আখের গোছানো- যেটা আমাদের দেশে রাষ্ট্রের একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সমাজের তৃণমূল পর্যন- ছড়িয়ে পড়েছে, দ্বিতীয় কারণ হতে পারে লোকটা মানসিক রুগি ছিল। এই ক্ষেত্রে আমরা নবি করিম (স.) এর একটা ঐতিহাসিক উক্তি স্মরণ করতে পারি:‘ তোমরা কখনোই ধর্ম নিয়ে বাড়বাড়ি কর না।’ নবি করিমের এই উপদেশ বাণীর ভেতরেই রয়েছে, ধর্ম নিয়ে বাড়া-বাড়ির ফলে সামাজিক এবং ব্যক্তিমানুষের মনস-াত্ত্বিক যে ক্ষতিকারক প্রভাব তৈরি হয় তার বিশেষ তাৎপর্য। ব্যক্তিমানুষের ধর্ম বিশ্বাস যখন আসক্তির জায়গায় চলে যায়, তখনেই সে হয়ে পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন, উন্মাদ। এই উন্মাদনা কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে তার একটা নমুনা আমরা এদেশেই দেখেছি: বেশ ক’বছর আগে এক পিতা ঈদুল আজহা’র জামাত থেকে এসে সে তার শিশু পুত্রকে জবাই করে হত্যা করে ছিল। সেই পিতার দাবি অনুসারে নবি করিম স্বয়ং দেখা করে , তার শিশু-পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার হুকুম দিয়েছেন। মনোচিকিৎসকদের মতে ব্যক্তির মধ্যে যখন ধর্ম আসক্তিতে পরিণত হয়, তখন তার কল্পনায় দেখা দেয় নবি, তিনি শুনতে পান গায়েবি উপদেশ, নিজেকে ভাবতে থাকেন অতিমানব বলে, আর সেই কল্পনা যখনেই সমাজে প্রয়োগ করতে যায় তখনেই এধরণের বিপদজনক ঘটনাগুলো সংগঠিত হয়। একই ভাবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, যারা গোপিবাগের সেই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে তারাও নিশ্চিত ভাবে ছিল মানসিক বিকারগ্রস- মানুষ। না হলে কোন সুস' মানুষের পক্ষেই, পশুর মতো হাত-পা বেধে ছয় ছয়টা মানুষকে জবাই করে খুন করা সম্ভব হতো না। তা ছাড়া তারা যদি সুস' হতো এতটুকু অন-তপক্ষে বুঝতে পারতো যে, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ইসলাম মোটেও অনুমোদন করে না।বলে রাখা ভাল:এই ধরনের বিকারগ্রস- মানুষ শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে নয়, যে কোন ধর্ম-বিশ্বাস থেকে তৈরি হতে পারে, এবং হচ্ছে ও! আমরা নিশ্চয় নরওয়ের সেই নৃশংস ঘটনার কথা ভুলে যায়নি, যে ঘটনায় শতাধিক মানুষকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে ছিল এক খ্রিস্টান তরুণ! সেই খুনিরও ভাবনা ছিল: সে ধর্মের জন্য খুন করছে, স্বয়ং যিশুর নির্দেশে! এই ধরনের উন্মাদের সংখ্যা সমাজে যতই বাড়বে, সমাজ ক্রমশ হয়ে পড়বে: অসি'র, অমানবিক, নিষ্ঠুর, হানাহানি আর মারামারি সমাজ। যার পরিণতিতে আমরা দেখছি, পাকিস-ান, আফগানিস-ান, ইরাকের মতো দেশগুলোতে। এখানে একটা কথা জোড় দিয়ে বলে রাখতে হবে, এই ধরনের ধর্মীয় উন্মাদগ্রস- মানুষ তৈরি হবার দায়, ধর্ম কিংবা ধর্ম-বিশ্বাস নয়, বরং রাজনৈতিক মত ঘটনের ক্ষেত্রে ধর্মের ব্যবহার কিংবা আরো সহজ করে বলা যায়, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারেই সমাজকে এই পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। ইরাকে ধর্মনিরপেক্ষবাদী সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর, জামাল নামে এক ঘড়ি বিক্রেতা একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিল: ‘সাদ্দামের পতনের পর আমরা যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি হারিয়েছি, সেটা হলো মানুষের সাথে মানুষ বন্ধন । একসময় অপরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করত:কেমন আছেন? আর এখন জিজ্ঞেস করে: আপনে শিয়া না সুন্নি?’এই বক্তব্য শোনার পর আমাদের আর বুঝতে সমস্যা হয় না, কেমন নরকে বসবাস করছে ইরাকের জনগণ! অথচ আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, যারা ধর্মকে রাজনৈতিক ব্যবহার করছে, এটা তাদের বিশ্বাস নয়, বরং ক্ষমতার মসনদে বসার অস্ত্র মাত্র। আমাদের দেশের অভিজ্ঞতার কথাই বলি না কেন: জিয়াও রহমান ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুমোদন দিয়েছেন, এবং আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে বিসমিল্লা্লহ সংযোগের বড় কৃত্তিত্বের দাবিদার তিনি, অথচ ঠিক একই সংবিধানে তিনি মদের লাইসেন্স আর বেশ্যাবৃত্তিকে দিয়েছেন বৈধতা। সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকা না থাকার সাথে ধর্ম কিংবা বিশ্বাসের কোন সম্পর্ক নেই, অথচ ইসলাম ধর্মে মদ আর বেশ্যাবৃত্তি কঠোর ভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সাথে কি নিদারুণ প্রতারণা! যতদিন পর্যন- রাজনীতিতে এই ধরনের প্রতারণা চলবে ততদিনেই সম্ভাবনা থাকবে সমাজে একেকজন লুৎফর রহমানের মতো ভণ্ড অথবা ধর্মীয় উন্মাদের জন্ম নেওয়ার। একই সাথে জন্ম নিবে তাদের হত্যাকারী পাশবিক খুনিরাও!





মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:১১

বোকার হদ্দ বলেছেন: পড়ে ভাল লাগল। আপনার সাথে একমত।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

আহমদ জসিম বলেছেন: পাঠের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:১৮

পরোবাশি২০১৩ বলেছেন: Very nicely written. Thanks

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২

আহমদ জসিম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৫৩

হোদল রাজা বলেছেন: well said!!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩

আহমদ জসিম বলেছেন: Thanks

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১৯

পথহারা নাবিক বলেছেন: মানির মান জুতা দিয়া বাইড়াইলেও কমে না!! তোমারও কমবে না!! পোষ্টের ভিতর পোষ্ট দিতেই থাকো হে লজ্জা শরমহীন!!

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:০৪

আহমদ জসিম বলেছেন: আমি একশত বার দিমু।

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪১

কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: বার বার একই পোষ্ট কেন দেন?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৫০

আহমদ জসিম বলেছেন: বেশি পঠিত হবার আশাতে।

৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:২২

কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: YOU KNOW IT'S A STUPIDITY!!! WE FELL SO DISTURBING BY THIS KIND OF TASK. HOPE YOU WILL BE ABLE TO UNDERSTAND.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.