নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমদ জসিম জার্নাল

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

আহমদ জসিম

মূলত গল্প ও প্রবন্ধ লিখি।

আহমদ জসিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: কনডম

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২১

নীলা যখন সারামুখে চন্দনের প্রলেপ আর দুই চোখে দুই ফালি শসা দিয়ে, খাটের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে -তখনেই কলিংবেলটা বেজে উঠল। নীলা বিরক্ত হয়, তবে ব্যস- নয়;কারণ সে জানে, এখন কার আসার সময়।তাই ধীরেসুসে' চোখের উপর থেকে শসার ফালি আলগোছে সরিয়ে এক পাশে রাখল, তারপর ধীরে ধীরে দরজার কাছে গিয়ে ছিটকিনিটা খুলে, দরজা একটু ফাঁক করে উঁকি দিয়ে দেখল। হ্যাঁ, যার আসার কথা সেই এসেছে,‘আরে রাশেদা ভাবি যে,আসুন আসুন,’ বলে ঘরে ডেকে নিল। রাশেদা অবশ্যই নীলার হলদে প্রলেপ দেওয়া মুখটা দেখে প্রথমে একটু চমকে উঠেছিল,পরোক্ষে নিজেকে সামলে,ঘরে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসল। রাশেদা বসার পর নীলা দেওয়ার ঘড়িটার দিকে এক পলক তাকাল, তারপর রাশেদাকে উদ্দেশ্য করে বলল:‘আপনে একটু বসেন আমি এখনেই ওয়াশরুম থেকে আসছি।’তারপর নীলা দ্রুত চলে গেল ওয়াশরুমের দিকে। পাক্কা আধ-ঘণ্টা পর নীলা যখন ফিরে আসে তখন তার মুখ খুব উজ্জ্বল দেখাচ্ছে! রাশেদা বাঁকা চোখে বার বার দেখে নেয় নীলার উজ্জ্বল মুখটা। রাশেদার খুব জানতে ইচ্ছা করে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো নীলার কোটিপতি ব্যবসায়ী স্বামী এই রং ফরসাকারী বস'টা আনল কোথা থেকে? আবার জিজ্ঞেস করতেও সংকোচ হয়, পাছে ছোটোলোক ভেবে না বসে। অবশ্যই জানতে রাশেদার বেশি সময় লাগে না, আলাপের শুরুতেই নীলা জানিয়ে দেয়:‘ওটা বার্মিজ চন্দন, আপনার ভাই সেবার ব্যবসার কাজে বার্মা গেল, তখন এনেছে।’ রাশেদা নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে কথার জবার দেয়:‘ও আচ্ছা।’ রাশেদার এই ও আচ্ছা জবাবের ভেতর যেন মিশে আছে একটা দীর্ঘশ্বাস। নীলা ব্যাপারটা বুঝতে পারে, বুঝার পর তার খুব ভালো লাগে! তখন নীলা আরো বেশি উৎসাহী হয়ে আলাপ শুরু করে:‘আর বলবেন না ভাবি, যতবার দেশের বাইরে যাবে, আমার জন্য কিছু না কিছু আনবেই, এত করে নিষেধ করি, কে কার কথা শোনে! নিষেধ করলে উল্টো কী বলে শুনবেন ?’ রাশেদা আগ্রহী হয়ে:‘কী বলে?’ নীলা এবার একটু লাজুক হাসি দিয়ে:‘ বলে তুমি এই সামান্য কটা জিনিসের জন্য আপত্তি করছ, অথচ পারলে পুরো পৃথিবীটাই তোমার হাতে এনে দিতাম! কথাটা বলেই নীলা খুব হাসে,এই হাসির মধ্যেই রাশেদা অনেকটা বোকার মতো প্রশ্ন করে:‘আপনার সাহেব আপনাকে খুব ভালোবাসে, তাই না ভাবি?’ হ্যাঁ, অসম্ভব ভালোবাসে, কেন, আপনার সাহেব বাসে না? পাল্টা প্রশ্ন শুনে রাশেদা যেন হঠাৎ চমকে উঠে, দ্রুত বলে উঠে:‘হ্যাঁ, বাসেতো।’কথাগুলো বলে দু’জন কিছুক্ষণ নীরব সময় অতিবাহিত করে, যেন দু’জনেই বলার মতো কথা খুঁজে বেড়াচ্ছে, কিছুসময় পর রাশেদাকে বেশ উৎফুল্ল্ল দেখায়, বলার মতো একটা কথা খুঁজে পেয়েছে, কিংবা নীলাকে আহত করার মতো কথা! তারপর বিনয়ের সাথে বলে: ভাবি কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি? নীলা একটু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রাশেদার দিকে তাকিয়ে:‘হ্যাঁ, করুন।’ রাশেদা এবার আমতা আমতা করে বলে:‘না মানে, আপনার বিয়ে হয়েছে বছর চারেক হয়ে গেল, এখনও তো বাচ্চাকাচ্চা কিছু....?’ প্রশ্নটা শুনেই নীলা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, নীলার হাসি দেখে রাশেদা হতবাক হয়, সাথে খানিকটা বিরক্ত হয় এই ভেবে যে:‘এটা কি হাসার মতো প্রশ্ন হলো!’ অবশ্যই হাসার কারণটা নীলাই উন্মোচন করে:‘আর বলবে না ভাবি, আমার সাহেবের কথা -সে বলে কিনা আমাকে অন-ঃসত্ত্বা হতে সে দেখতে পারবে না, তার খুব কষ্ট হবে।
-‘ঠিক বুঝলাম না!’ নীলা বিস্ময় কণ্ঠে বলে।
- ‘ওই যে, নিজের শরীরের মধ্যে আরেকটা মানুষকে নয় মাস বহন করতে হবে, তারপর প্রসব যন্ত্রণা এইসব আর কি।’ নীলার উত্তর শুনে রাশেদা নিজের উপর বেশ বিরক্ত হলো, বিরক্ত একারণে যে, প্রশ্নটা যেন নীলার জন্য শাপে বর হলো! নীলার জবাব শুনে রাশেদা অন্যমনস্ক হয়ে গেল, রাশেদাকে আনমনা দেখে নীলা একটু বিব্রত হয়, মনে মনে ভাবে:‘কথাটা কী তবে সে বিশ্বাস করল না?’ প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য নীলা রাশেদাকে পাল্টা প্রশ্ন করে:‘ভাবি আপনার বিয়ে হলো, তাওতো দু’বছর হয়ে গেছে, কিন' বাচ্চাকাচ্চা? রাশেদা কোন রকম সংকোচ ছাড়াই বলে:‘বাচ্চা নেওয়ার ব্যাপারে আমার সাহেব প্রবল ইচ্ছে,আমিই নিচ্ছি না- আসলে বোঝেন তো ভাবি; চাকরিজীবীর সংসার, আমার সাহেব যে মাইনের চাকরি করে বাড়িভাড়া, সংসার খরচ তার উপর বাড়িতে ওর মা-বাবার জন্য কিছু পাঠিয়ে, মাস শেষে আমাদের হাতে আসলে তেমন কিছুই থাকে না, তার সাথে সংসারে একটা বাড়তি মুখ যোগ হওয়া মানে বাড়তি খরচ, বোঝেন তো একটা সন-ান মানুষ কার মানে কিন' চার্টেখানি কথা নয়!’ নীলা এবার মুখে একটু দুঃখ দুঃখ ভাব এনে: ‘ও আচ্ছা, আমাদের ব্যাপারটা অবশ্যই অন্যরকম, দেখেন না,আপনার ভাই ঘরে আসলে আমি একদম ওর পাশ থেকে সরতে পারি না; এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হবার সুযোগ দেয় না, আমি লাই দিলে তো ব্যবসা গুটিয়ে ঘরেই বসে থাকত!’ কথাগুলো নীলা বলে শেষ কারার সাথে সাথে মোবাইলের রীংটোন বেজে উঠে, মোবাইলটা হাতে নিয়ে নীলা একবার স্ক্রিনের দিকে তাকায়, তারপর হাসি হাসি মুখে নিচু স্বরে রাশেদাকে উদ্দেশ্য করে বলে:‘আমার সাহেব, তারপর আদর মাখানো কণ্ঠে শুরু করে আলাপ:‘হ্যাঁ, বল শুনছি গো, বারে আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরবে যে? আচ্ছা ঠিক আছে।’ অতটুকু কথা বলেই নীলা মোবাইল রেখে দিল, মোবাইলই রাখার পর নীলাকে খুব উৎফুল্ল্ল দেখাচ্ছে, মনে হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর প্রেম তথ্যের পক্ষে জোরালো সাক্ষী হয়েই যেন স্বামীর কলটা এলো নীলার কাছে। রাশেদা অবশ্যই বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর:‘ভাবি এবার উঠি, আপনার সাহেব আসার সময় হয়েছে,’ বলে বিদায় নিল।তবে যাবার সময় রাশেদা নিয়ে গেল, পরশ্রীকাতরতা আর ঈর্ষা, তবুও এই দুই প্রতিবেশী নারীর সম্পর্কে ছয় মাস পর্যন- চলেছে একই নিয়মে।
(২)
ইদানীং রাশেদার মন-মেজাজ বেশ খিটখিটে থাকে, ব্যাপারটা বুঝতে পারে রাশেদার স্বামী হানিফ, তবে বের করতে পারে না কারণ! ‘তবে কি কেউ কানভারি......... করছে?’ না, সে ধারণার পক্ষেও কোন জোরালো যুক্তি খুঁজে পায় না:‘সারাক্ষণ তো ঘরে একাই থাকে, বড় জোড় পাশের বাসার নীলা ভাবির সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানো, মোবাইলের কল লিস্টতেও অনাহত কোন নম্বর নেই, তবে?’ হানিফ অনেক ভেবে সি'র সিদ্ধানে- পৌঁছায়:‘নিঃসঙ্গতাই রাশেদাকে ভেতর থেকে খুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছে।’ স্ত্রীর প্রতি একটু বাড়তি মনোযোগের সিদ্ধান- নেয় হানিফ, সেই সাথে খানিক আপসোসও করে: বেচারি রাশেদা, সংসার আরেটুক গুছানোর কথা চিন-া করে একটা সন-ান পর্যন- নিচ্ছে না!’ তবে হানিফের বাড়তি মনোযোগের থিওরি শেষ পর্যন- হিতে বিপরীত হয়! হানিফের অতি মনোযোগ রাশেদার কাছে যেন অসহ্য লাগে, সে ক্রমশ আরো বেশি খিটখিটে হয়ে পড়ে। রাশেদা নীলা সাথে নিজের তুলনা করতে গিয়ে, নিজেকে বড্ড দুর্ভাগা মনে হয়।ভাবে:‘আমিও তো কম সুন্দরী নয়, পড়াশোনাও সমান, তারপরও আমার ভাগ্যে জুটল, নীরস চাকুরে স্বামী আর নীলার ভাগ্যে কোটিপতি ব্যবসায়ী! অতটুকু তবু সহ্য হয়, তবে অসি'র হয়ে উঠে যখন মনে পড়ে, রাশেদ যে ভাবে পাগলের মতো করে ভালোবাসে নীলাকে, সেরকম করে ভালোবাসতে জানে না হানিফ!কথাটা মনে পড়লেই নীলার উপর প্রচণ্ড ঈর্ষা হয় রাশেদার; শুধু ওই দম্পতির প্রেমের গল্প শোনা থেকে বাঁচার জন্য, ইদানীং নীলার ঘরে যাওয়া এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছে রাশেদা। তবুও পাশাপাশি ঘর বলে দু’নারী কখনও কখনও মুখোমুখি হয়ে যায়, নীলা তখন জিজ্ঞেস করে:‘কি ভাবি, ইদানীং আমাকে কেমন এড়িয়ে চলেন মনে হয়! রাশেদা ব্যাপারটা হালকা করার জন্য একটা অট্টহাসি দিয়ে বলে:‘দূর ভাবি, কি যে বলেন! আসলে ঘরে নিজের কাজে ব্যস- থাকতে হয় তো।’ রাশেদার এই উত্তর নীলার মন ভরে না, তাই মুখের উপর বলে উঠে:‘ ভারে, নতুন করে কীসে এমন ব্যস-তা বাড়ল? আগে তো দিনে নিদেন পক্ষে একবার হলেও আসতেন।’ রাশেদা এ-কথার আর জবার খুঁজে পায় না, শুধু হাসে, তবে হাসির ভেতর লুকিয়ে থাকে ঈর্ষার বিষ, আর মনে মনে আওড়াতে থাকে: ‘ আর সহ্য হয় না, তোমার ওই দামি দামি শাড়ি আর অলংকারের প্রদর্শনী, তাও না হয় মানা যায়, কিন' যখন শোনাও তোমার ব্যবসায়িক স্বামীর প্রেম কাহিনি, যে কিনা কোটি টাকার ব্যবসার লেনদেন ছেড়ে, স্রেফ তোমার ভালোবাসার টানে ফিরতি বিমানে ফিরে আসে দেশে, আর ঘরে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলে: আমি পারব না নীলা, এক মুহূর্তের জন্য তোমাকে চোখের আড়াল করে রাখতে পারব না, তখন তোমার সামনে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয়! রাশেদা মনের ভাবনার ছাপ মুখে পড়ার আগেই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়, আর দরজা বন্ধ করার আগে নীলাকে একবার বলে যায়:‘ভাবি ঘরে বিস-র কাজ পড়ে আছে।’আসলে কাজ না ছাই! দরজা বন্ধ করে রাশেদা আদপে বসে নীলার প্রতি তার স্বামী রাশেদের ভালোবাসা বনাম তার নিজের প্রতি স্বামী হানিফের প্রেমের তুলনামূলক বিচারে। কোন মতেই মিলাতে পারে না! নীলার স্বামী কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন ছেড়ে ফিরতি বিমানে বিদেশ থেকে ফিরে আসে স্ত্রীর ভালোবাসার টানে! দেশের বাইরে না হোক, বছরের দু’একবার তো হানিফকেও চাকরির কারণে ঘরের বাইরে থাকতে হয়, কই, কখনও তো বাড়ি ফিরে জড়িয়ে ধরে বলে নি: তুমি ছিলে না বলে রাতে একরত্তিও ঘুমাতে পারি নি! সত্যি না হোক, মিথ্যে মিথ্যে করে হলেও তো বলতে পারতো! হ্যাঁ, বলেছে, যত বারেই বাইরে গেছে, যাওয়ার আগে বলে গেছে:‘নিজের দিকে খেয়াল রেখ রাশেদা,’ কিংবা দিনে দু’বার করে ফোন দিয়েছে। তবে এখানে তো ভালোবাসা নেই, যা আছে তাকে বলা যায় বড় জোড় কর্তব্য! এভাবে রাশেদার গভীর ভাবনাগুলো যখন একটা দীর্ঘশ্বাসে শেষ হয়, তখন নীলার ঘরে চলে অন্য কাণ্ড,আজও নীলার স্বামী রাশেদ একটু আগেই ঘরে ফিরে, দ্রুত প্যান্ট-শার্ট পালটিয়ে পড়ে নেয় লুঙ্গি, তারপর পাল্টানো কাপড়গুলো স্ত্রীর দিকে ছুঁড়ে বলে: কাপড়গুলো কালেই লন্ড্রি সপে পাঠিয়ে দেবে, দেওয়ার আগে ভালো করে দেখে নিও, এর আগে কিন' একবার দরকারি কাগজসহ লন্ড্রিতে পাঠিয়ে ছিলে। ঘটনাটা আরেকবার স্মরণ করে দেওয়াই নীলা এবার প্যান্ট-শার্টের পকেটগুলো ভালোকরে দেখে নিতে শুরু করে, শার্টের পকেট, কিছু নেই, প্যান্টের ব্যাক পকেট কিছু নেই, ফ্রন্ট পকেট বাম পাশ কিছু নেই, ডান পকেটে হাত দিয়ে কিছু একটার অসি-ত্ব টের পায়, তারপর পকেট থেকে বের করে এনে দেখে, একটা অব্যবহৃত কনডম! কনডমটা আবারও পকেটে রেখে, প্যান্ট-শার্ট দুটি ছুঁড়ে ফেলে ময়লা কাপড়ের স-ূপের মধ্যে। তারপর একটা বিষণ্ন হাসি দিয়ে, ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় স্বামীর কাছে, স্বামী রাশেদ ততক্ষণে ফ্যান ছেড়ে শরীর এলিয়ে দেয় খাটের উপর।
(৩)
শুক্রবার ছুটির দিন, এ-কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার রাতকে রোমান্স করার রাত হিসেবে বিয়ের পর থেকেই কাটিয়ে আসছে রাশেদা হানিফ দম্পতি। অথচ গত রাতটা রোমান্সের বদলে দু’জনের হয়ে গেল তুমুল ঝগড়া। রাশেদার বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভগুলো যেন অগ্নি বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ল! বার বার রাশেদার মুখে ঘুরেফিরে আসে একই কথা:‘নীলা ভাবির স্বামীর মতো দামি অলংকার আর দামি কাপড় দিতে না পার, তার মতো ভালোবাসতে তো পারতে।’ হানিফ ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, ঠিক বুঝতে পারে না, কী করে রাশেদ সাহেবের মতো করে স্ত্রীকে ভালো বাসতে হয়, কিছু না বুঝেই হানিফ একসময় গর্জন করে বলে উঠে:‘এ আর নতুন কি, সব নারীর কাছে, পরপুরুষ সুপুরুষ হয়।’ হানিফের কথার প্রতিক্রিয়া রাশেদার কাছে ঠিক যেন, পোড়া ঘাতে লবণ ছিটা দেওয়ার মতই! স্বামীর কথার কোন জবাব না দিয়ে রাশেদা স্বামী থেকে মুখ ফিরিয়ে পিছন ফিরে শোয়, তারপর শুরু হয় কান্না! এ যেন অনেক দিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভের বিষ্ফোরণ। অথচ আজ হানিফ স্ত্রীর অভিমান ভাঙার কোন চেষ্টাই করল না, বরং সে শুয়ে আছে একেবারে নির্লিপ্ত ভাবে।এভাবেই রাত গভীর হয়, একসময় দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়ে। সেই ঘুম থেকে রাশেদা জেগে উঠে অনেক বেলা করে, ঘুম ভাঙার পর বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে রাশেদা বুঝতে পারে, তার মাথাটা বেশ ধরেছে। ঘাড় ফেরাতেও খুব কষ্ট হচ্ছে! তারপরও কষ্ট করে একবার স্বামীর দিকে তাকাল, হাফিন তখনও গভীর ঘুমে, স্বামীকে এমন নিশ্চিনে- ঘুমাতে দেখে ঘৃণাটা আরো গভীর হয়। রাশেদা এবার দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নিয়ে, ধীরে ধীরে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে। তারপর চোখেমুখে পানি দিয়ে রান্না ঘরের বদলে চলে যায় ব্যালকনিতে।সেখানে বসে রাশেদা আকাশ দেখে, আজ আকাশকেই যেন তার খুব আপন মনে হয়। এভাবে আকাশ দেখতে দেখতে রাশেদা যেন হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে! এই আত্মমগ্নতা ভাঙে একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে।ফিরে দেখে, আর কেউ নয় হানিফ, হানিফকে দেখেই মুহূর্তের মধ্যে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয় রাশেদা! হানিফ একই ভাবে কিছুসময় নীরব দাঁড়িয়ে থাকার পর শান-কণ্ঠে বলল:‘প্লিজ, যত পার আমাকে কষ্ট দাও, নিজেকে দিয়োনা, টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নাও।’ কথাটা বলেই হানিফ সরে পড়ে,কিন' তখনও রাশেদা নির্বিকার, তবে এবার তার ভাবনার জগতে আসে নীলা, নীলার উপর তার খুব রাগ হয়, ভাবে:‘না হয় তোমার স্বামী তোমাকে একটু বেশিই ভাল বাসে, তবে সেটা এভাবে বলে বেড়ানোর দরকার কী? নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে মানুষ, আচ্ছা, এই কথাগুলো মুখের উপর বলেই তো নীলাকে অপমান করা যায়! এবার নীলাকে অপমান করার জন্য রাশেদার মন ছটফট করতে থাকে! রাশেদা একবার উঁকি মেরে স্বামীকে দেখে নেয়, হানিফ গভীর মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ছে। এই সুযোগে রাশেদা নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে আসল নীলার ঘরের সামনে! তারপর চৌকাঠে লাগানো কলিংবেলে টিপতেই দরজা খুলে,দেয় নীলার স্বামী রাশেদ। অপ্রত্যাশিত ভাবে রাশেদের মুখোমুখি হয়ে রাশেদা তড়িৎ বলে উঠল:‘ভাবি?’ রাশেদ একচিলতে হাসি দিয়ে বলল:‘ও তো একটু অসুস'।’ রাশেদা একটু বিস্মিত কণ্ঠে:‘কেন কী হয়েছে?’ রাশেদ এবার স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে : ও-কিছু না, এই একটু সর্দি-জ্বর।’ ‘ও আচ্ছা, তা হলে আমি পরে আসব,’ বলেই রাশেদা নিজের ঘরের দিকে দ্রুত চলে যায়। একটা অপমানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতে রাশেদার এখন নিজেই অপমানিত বোধ করছে! রাগ প্রশমনের উপায় হিসেবে রাশেদা আবারও সেই ব্যালকনিতে আশ্রয় নেয়।এবার আর আকাশ ভালো লাগছে না,সময় যেন কিছুতেই ফুরোতে চায় না, একেকটা মুহূর্তকে যেন অনন-কাল মনে হচ্ছে! তবুও এভাবেই নীরবতা দিয়ে কাটিয়ে দেয়, পুর বিকেল আর অর্ধেক দুপুর। ঠিক ভর দুপুরের দিকে রাশেদার মনে হয়, কারো সাথে ফোনালাপ করে যদি মনটা হালকা করা যায়! এই ভাবনা থেকেই যখন ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে মোবাইলটা বের করে হাতে নেয়,তখনেই চোখে পড়ে একে একে সাতটা ব্যর্থ কল জমা পড়ে আছে তার মোবাইল স্ক্রিনে! বটম টিপে দেখে, সবগুলো কলেই এসেছে নীলার নম্বর থেকে। নীলার নম্বর দেখেই রাশেদা একবার মনে মনে ভর্ৎসনা করে নেয়:‘ নির্লজ্জ, বেহায়া নারী এবার স্বামীর প্রেম আমাকে লাইভ দেখাতে চায়!’ তারপর নীলাকে কলব্যক করার উদ্যোগ নেয়, কিন' তার আগেই নীলার নম্বর থেকে আরেকবার কল আসে রাশেদার মোবাইলে। রাশেদা রিসিভ করতেই অপর প্রান- থেকে নীলা করুণকণ্ঠে:‘ভাবি একটু আমার ঘরে আসবেন?’ রাশেদা বলে:‘ আপনার সাহেব তো ঘরে।নীলা বলে:‘ ও চলে গেছে, দরজাও খোলা আছে, প্লিজ একটু আসুন।’ রাশেদা এবার প্রতিশোধের মোক্ষম সুযোগ পেয়ে প্রচণ্ড উত্তেজনা নিয়ে ছুটে যায় নীলার ঘরের দিকে।হ্যাঁ, ঠিকই বলেছে নীলা, দরজা খোলা, ঘরে রাশেদ নেই, খাটের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে নীলা, তাকে কেমন বিধ্বস- দেখাচ্ছে, এলোমেলো চুল, চোখ লাল হয়ে গেছে, সেই লাল চোখের কোণে জমে আছে জল! রাশেদা এবার নীলার পাশে বসে কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে শরীরটা যেন পুড়ে যাচ্ছে! রাশেদা জিজ্ঞেস করে:‘রাশেদ ভাই কী ডাক্তার আনতে গেছে? নীলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে:‘না, চলে গেছে, এই সপ্তাহ আর বাড়ি ফিরবে না।’ কথাটা শুনেই রাশেদার উত্তেজনা যায় বেড়ে,তড়িৎ বলে উঠে:‘আপনার স্বামীর,এ কেমন ভালোবাসা ভাবি? অসুস' স্ত্রীকে একা ফেলে বিদেশ চলে যায়! আমার বর হলে....!’ রাশেদা কথা পুরো শেষ করতে পারে না, নীলা তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলতে শুরু করে: বিদেশ না ভাবি, এই শহরেরই কোন হোটেলে উঠেছে হয়তো, ওর কোন নারি স্টাফকে নিয়ে; কদিন ফুর্তি করবে, ফুর্তি শেষ হলেই আমার কাছে ফিরে আসবে।’ নীলার কথা শুনে রাশেদা যেন বিস্ময়ে হত-বিহ্বল হয়ে গেছে, মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছে না, শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে নীলার মুখের দিকে।রাশেদার বিস্ময়বোধ দেখে নীলা আবারও বলতে শুরু করে:‘ভাবছেন, তবে যে এত ভালোবাসার গল্প করি? মিথ্যে না ভাবি, আলমারি ভরা টাকা আছে, চাবিও আমার হাতে, ইচ্ছা মতো খরচ করতে পারি, পোশাক অলংকার কিছুরেই তো অভাব নেই! শুধু একটু....।’ কথাগুলো বলেই নীলা গুমরে কেঁদে উঠে, তার চোখের জলে বালিশ ভিজে চুপসে যায়। সেই কান্না জড়ানো কণ্ঠে নীলা বলে:‘চিন-া করি না ভাবি, ও তো ফিরে আসবেই! আসলে আমিই তো ওর একমাত্র লাইসেন্স করা রক্ষিতা! যদি বলেন, তবে আমি যাচ্ছি না কেন? তবে.শোনেন, যাদের কাছে যাব তাদেরও তো জীবন চলে ওর দয়াতে!




মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪

তারেক ফাহিম বলেছেন: ছোট গল্প ওত বড় হয় কেমনে?
তবে ছোট গল্পের বৈশিষ্ট বলে কিছু আছে।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৯

আহমদ জসিম বলেছেন: ঠিক কত শব্দ হলে একটা গল্পকে ছেট গল্প বলা যায়?

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩

আমানউল্লাহ রাইহান বলেছেন: শেষ হইয়াও হইলো না শেষ! আবার পড়ে আরেকটু ঘুচিয়ে নেন। অসাধারণ হয়েছে!

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০১

আহমদ জসিম বলেছেন: মূল্যবান উপদেশের জন্য ধন্যবাদ

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩

আমানউল্লাহ রাইহান বলেছেন: বেশি বড় হয়ে গেছে

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩২

আহমদ জসিম বলেছেন: আর ছোট করে লিখতে পারলাম না।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ লিখেছেন।
তবে গল্পের নামটা আরও উন্নত দেয়া যেতে পারত।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০৫

আহমদ জসিম বলেছেন: দাদা, গল্পটা ছোটকাগজ কঙ্কাল এ ছাপা হয়েছে একটি দীর্ঘশ্বাসের গল্প, শিরোনামে, আমার প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ পরপুরুষে একই শিরোনামে থাকবে। এখানে পরীক্ষামূলক ভাবে পাল্টে দেখলাম

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২২

শাহানাজ সুলতানা অধরা বলেছেন: বেশ লিখেছেন

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৪

আহমদ জসিম বলেছেন: ধন্যবাদ আপা

৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমাদের স্ত্রী গণ পাশের বাসার ভাবীগণের কথা শুনেই তুলনা শুরু করে দেন নিজের জীবনের সাথে। অথচ গভীরে চিন্তা করেন না। তবে শিরোনামের সাথে গল্পের প্লটের মিল নেই...

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০৭

আহমদ জসিম বলেছেন: এটাই সমাজের নিয়ম, নিয়ম পাল্টনোর জন্য সমাজ পাল্টানো জরুরী

৭| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৪

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: ছোট গল্প নয় এটা মাঝারি গল্প।নামের সাথে গল্পের মিল কম।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০

আহমদ জসিম বলেছেন: নামের সাথে গল্পের মিল থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই, ছোট, বড়, মাঝারি, যাই হোক গল্প হলেই হলো

৮| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: সুখেরই পৃথিবী সুখেরই অভিনয়, যতই আড়ালে রাখো, আসলে কেউ সুখি নয়।

দারুণ লাগলো, তবে শিরোনামটা আরো ভাল হতে পারতো।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২২

আহমদ জসিম বলেছেন: ভাই আপনার পরামর্শ নিলাম, এবং প্রকাশিতব্য গ্রন্থে নামটা পাল্টে দিব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.