নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমদ জসিম জার্নাল

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

আহমদ জসিম

মূলত গল্প ও প্রবন্ধ লিখি।

আহমদ জসিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প: অদ্ভূত কান্না

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২৯

আহমদ গোলাম মাওলা বেশ সকালেই ঘুম থেকে উঠে, বলা যায় এটা তার একেবারে শৈশব কালের স্বভাব। মোয়াজ্জিনে আজান দেওয়ার সাথে সাথে মাওলা আর বালিশে মাথা রাখতে পারে না। সকালে শোয়া থেকে উঠেই ফজরের নামাজটা আদায় করবে, তারপর পুরো বাড়ির সীমানাটা একবার প্রদক্ষিণ শেষ করে, সদ্য নির্মিত অট্টালিকার দিকে মুখ করে কিছুসময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। এই সময় মাওলা মনে মনে শূন্য থেকে পুণ্যতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে শোকরানা আদায় করবে। তারপর ঘরে ঢুকলেই কাজের বুয়া এক কাঁপ রং চা দিয়ে যাবে, চা শেষ করে ঘরে পায়চারি করতে করতে ঘড়ির কাঁটা বরাবর আটটা হলে: এবার সে নিজের রুমের দিকে যাবে, সব ছেয়ে কঠিন কাজটা করতে! স্ত্রী সায়মা বেগমের শিউরে বসে, কণ্ঠে রাজ্যের তাবৎ আদর আর দরদ জড়ো করে, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে: ওগো আমার সোনা মণি জাদুর কণা, এবার ঘুম থেকে উঠো, সকালের ঘুম যে শয়তানের! এই সময় মাওলার ভিতর কেমন যেন ভয় কাজ করে, স্ত্রীর মেজাজ ভাল থাকলে তো কোন কথা নেই, কিন্তু খিটখিটে থাকলে ঘুম থেকে জেগেই শুরু করতে পারে চ্যাঁচামেচি, বলে উঠতে পারে: বুড়া খান্নাস আমার ঘুম ভাঙলে কেন? স্ত্রী বয়স নিয়ে কোঁটা দিলে মওলার খুব খারাপ লাগে, এই সময় তার মনে পড়ে যায়, স্ত্রীর তার থেকে বয়সে একুশ বছরের ছোট! মাওলা চাইলে মুখের উপর বলতে পারে: টাকার ফিকির করতে গিয়ে বিয়েটা এতো দেরি হলো, সেই টাকা দিয়ে তোমারে কিনছি, বয়স আমার কম হলে তোমার মতো ফ্যামিলির মাইয়্যারে বিয়া আমার বালে করে, আর এত তোয়াজ...? মনে রাখবা আমি বাংলাদেশের তিনশো জনের একজন! কিন্তু কথাগুলো শেষ পর্যন্ত মাওলা মনেই থাকে, বলা হয় না কখনও। এই বয়সে বউ-এর সাথে খুনসুটি পাকিয়ে সংসার ভাঙতে ভয় হয়। তা ছাড়া পলিটিক্স করা মাওলাকে পাবলিক সেন্টিমেন্টের কথাও মাথাই রাখতে হয়। আফটার অল ভাবমূর্তি বলে একটা কথা আছে। এই সময় এসে বউ নিয়ে কেলেঙ্কারি তার পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারে! তাই বউ কাঁদলে মাওলাও কাঁদে, আর বউ হাসলে মাওলা ও হাসে! তবে মাওলার আজকের কান্নায় কোন কৃত্রিমতা নেই, সত্যিই সে কাঁদছে বউ-এর কান্না দেখে!নিয়মের ব্যর্থই ঘটিয়ে আজ গোলাম মাওলার ঘুম ভাঙল স্ত্রীর কান্নার শব্দে! সকাল ছয়টার দিকে একটি ছাপা কান্নার শব্দ মাওলার ঘুম কাতর কানে বাজে,!সেই শব্দ শুনে মাওলা সচকিত হয়ে দ্রুত শোয়া থেকে বসে পড়ে। দেখল সায়মা দুই হাঁটুর মাঝে মুখগুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! এই প্রথম স্ত্রীকে এই ভাবে কান্না করতে দেখে। মাওলা প্রথমে অপ্রস্তুত হয়ে, কিছুক্ষণ নীরবে স্ত্রীর দিকে হত বিহ্বল ভাবে তাকিয়ে ছিল। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দরদি কণ্ঠে: কি হয়েছে তোমার সোনা? আমাকে বল, মা-বাবার জন্য মন খারাপ লাগছে? বলতো ড্রাইবারকে গাড়ি বের করতে বলি, তোমাকে বাপের বাড়ি দিয়ে আসুক। না, এতে সায়মার কান্না থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং কান্না যেন বুক ফেটে আরো উচ্চ শব্দে বেরিয়ে আসছে। চাপা কান্না ক্রমশ ভারী কান্নাতে রূপান্তরিত হচ্ছে! মাওলা কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। অনেক চেষ্টা করেও মাওলা আর নিজেকে সামলাতে পারল না। এবার স্ত্রীর কান্না দেখে মাওলা নিজেই কেঁদে দিল, তার কান্নাও স্ত্রীর কান্নার সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে উচ্চ শব্দে রূপ নিতে শুরু করল। মাওলা স্ত্রীর কান্না আর সহ্য করতে না পেরে এক সময় কান্না করতে করতে তার রুম থেকে বেরিয়ে আসল। আর বেরিয়ে এসেই মুখোমুখি হয়ে গেল, কাজের বুয়া রহিমার। রহিমা প্রতিদিনের মতো মাওলাকে এক কাঁপ রং চা দিতে এসে যেন বোকা বনে গেল! দেখল সাহেব কাঁদছে। একেবারে বাচ্চা ছেলেদের মতো করে উচ্চ শব্দে কাঁদছে। রহিমা বোকার মতো শুধু সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কান্নার কারণ জানার সাহস হচ্ছে না, আবার কি করবে তাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। কিছুক্ষণ চা-এর কাঁপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর, এবার রহিমাও শুরু করল কান্না। অতি-উচ্চ শব্দে কান্না করতে করতে রহিমা চা-এর কাঁপ নিয়ে চলে যাচ্ছে রান্না ঘরের দিকে, কিন্তু তার কান্নার শব্দ শুনেই বাইরে থেকে ছুটে এলো দারোয়ান গনি মিয়া। শ্যাম সুন্দরী রহিমার সাথে জোয়ান তাগড়া দারোয়ান গনি মিয়া Ñভাব জমাতে চায় অনেকদিন ধরে, রহিমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে গনি মিয়া শুধু একবার জিজ্ঞাসা করল: কি হইলো রহিমা খাতুন, তুমি এমন করে কান্দ ক্যান?’ রহিমা একথার কোন জবাব না দিয়ে, চোখ মুছতে মুছতে একবার মুখ মোচড় দিয়েছে মাত্রÑ এতেই গনি মিয়া আর আবেগ সামলাতে পারল না! এবার শুরু হলো গনি মিয়ার কান্না পর্ব,গনি মিয়ার কান্নার জোড় দেখে, হত-বিহ্বল রহিমা খাতুন বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর কান্না করতে করতেই গনি মিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মালি সুবল দাস এমনেই নরম মনের মানুষ, গনি মিয়াকে এইভাবে কান্না করতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারল না। সুবলের কান্না শুরু হলো নীরব-নিঃশব্দে। কিন্তু ততক্ষণে পুরো ঘরে শুরু হয়ে গেছে কান্নার এক মহা-উৎসব। উৎসবটা শুরু হয়েছে ভোর ৬টা থেকে, ঠিক আটটা বাজে গাড়ি নিয়ে এলো ড্রাইবার। কান্না ভেজা চোখেই ড্রাইবারকে গেট খুলে দিল দারোয়ান গনি মিয়া। ড্রাইবার গাড়ি থেকে নেমেই শুনতে পেলো কান্নার মহা-উৎসব। বিস্ময়ে হত বিহ্বল ড্রাইবার সালাম, দারোয়ান গনি মিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলÑ হাত দিয়ে মোচেও যেন চোখের জল শেষ হচ্ছে না! এবার ঘরের দিকে তাকাল, ভিতর থেকে ভেসে আসছে সম্মিলিত বিলাপের স্বর। ড্রাইবার সালামের মনে পড়ে গেল: সাহেব হার্ট-এর রুগি, ইতিমধ্যে একবার স্টকও করছে! সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইবার সালাম পকেট থেকে মোবাইল বের করে সংবাদটা জানিয়ে দিল সচিবালয়ে! কথাই বলে গ্রামময় রাষ্ট্র হইয়্যা গেল। আর মাওলার ক্ষেত্রে ঘটল, ঘর হইতে সচিবালয়ে পর্যন্ত ছড়ায়্যা পরিল! শোক বার্তা প্রস্তুত ছিল, শুধু নামের স্থলে আহমদ গোলাম মাওলা লিখে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শোক বার্তা পৌঁছাতে শুরু করে দিল মিডিয়াগুলোতে। ইতিমধ্যে এমপি গোলাম মাওলার মৃত্যুতে: রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে গবীর সমবেদনা আর জাতির অপূরণীয় ক্ষতির কথা, জানিয়ে দিতে পুরা মন্ত্রী আবদুল জব্বার রওনা দিলেন আহমেদ গোলাম মাওলার বাড়ির উদ্দেশ্যে ।


এই সাতসকালে আবদুল জব্বারকে দেখে আহমদ গোলাম মাওলা বিস্মিত, আর জলজ্যান্ত মাওলাকে দেখে বিস্মিত জব্বার। পরস্পর কিছুক্ষণ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর জব্বার হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠল, কোন হারামির বাচ্চা মাওলার মিথ্যা মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে সচিবালয়ে ফোন করেছে? মাওলা মৃত্যুও কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল! কিন্তু জব্বারের বিষ্ফোরিত দৃষ্টি আর রাগী চেহারা দেখে কোন কথা বলারই সাহস হচ্ছে না। উপস্থিত সবাই নীচের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন জব্বারের দৃষ্টি থেকে নিজের মুখটা আড়াল করতে চায়! জব্বার আবারও আগের মতো রাগী স্বরে:‘সময় থাকতে স্বীকার করে নাও, তদন্তে ধরা খেলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে কিন্তু। মন্ত্রী জব্বারের ধমক শুনে ড্রাইবার সালামের বুকের ভেতর একটা মোচড় দিয়ে উঠল, বুঝতে পারল পালাবার আর কোন পথ নেই। সালাম এবার গুটি গুটি পা-এ জব্বারের সামনে এসে হা ও মাও করে কেঁদে বলে উঠল: স্যার আমার কোন দোষ নাই, আমি দারোয়ান গনি মিয়ার কাঁদন দেখেই তো.....! সাথে সাথে পিছোন দাঁড়ানো গনি মিয়ার তীব্র প্রতিবাদ করে: ফালতু কথা কইবা না মিয়া, আমি কাঁদলাম রহিমার কাঁদন দেখ্যা, আর তুমি কও....! রহিমা তার নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল, চিৎকার দিয়ে গনি মিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল: হারামির বাচ্চা, মিছে কবিতো এক কোপে শরীর থেক্যা তোর কল্লা ফেল্লা দিমু, আমি কানচি আমার মনের দুঃখে, তোর বাপের কী? অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মন্ত্রী জব্বার আবারও: এভরি বোর্ডি স্টপ বলে চিৎকার করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সবাই চুপ। জব্বার এবার রহিমাকে কাছে ডেকে নিয়ে শান্ত কণ্ঠে: এমন করি তুই কাঁদলি কেন আমারে বলতো?’ রহিমা এবার চরম আতঙ্কিত কণ্ঠে: স্যার এ-বাড়ির নিমক খাই, সাব-মেমসাহেব আমাগো মা-বাপের মতো, স্যারের কান্দন দেখ্যা আমি আর নিজেরে ঠিক রাখতে পারি নাই। মন্ত্রী জব্বার এবার দৃষ্টি দিল মাওলার দিকে। মাওলা নীচের দিকে তাকিয়ে, নিচু স্বরে অথচ স্পষ্ট ভাষাতে জানিয়ে দিল:‘ আমি কেঁদেছি আমার স্ত্রীর কান্না দেখে, এরমধ্যে এত কিছু! মন্ত্রী জব্বার এবার বিরক্ত কণ্ঠে: দয়া করে আপনার স্ত্রীর এমন কান্নার কারণটা কি, আমাদের জানানো যায়? মাওলা দৃঢ় কণ্ঠে: না, কারণ অনেক চেষ্টা করে আমি নিজেও জানতে পারি নাই। শোরগোলে মাওলার স্ত্রী উপস্থিত ছিল সেই প্রথম থেকেই, কিন্তু এতক্ষণ কোন কথা বলে নাই,তার নাম উচ্চারিত হতেই মুখে একটা মোচড় দিয়ে বলে উঠল আমি এতকিছু জানি না, সকালে বাথরুমে যাবার সময় জানলা দিয়ে দেখলাম মালি সুবল খুব কান্না করছে, তার কান্না দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না, তাই .....!স্ত্রীর কথা শুনে মাওলা একবার স্ত্রীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল, কিন্তু রাগ দীর্ঘ হবার আগেই সুবল থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে, হাউমাউ করে কেঁদে বলে উঠল: স্যার আমার কোন দোষ নাই, সেই দুধের বাচ্চা থেইক্যা নিজের সন্তানের মতো করি বড় করছিলাম শুকর টারে, আইজ সকালে ঘুম থেইক্যা উঠ্যা দেখি, শুকরটা আর বাঁচি নাই সেই দুঃখেইতো...! মন্ত্রী জব্বারের হঠাৎ উচ্চ শব্দের ধমকে সুবলের কান্নাতো থামলই, সেই সাথে পুরো বাড়িতে নেমে আসলও পিন পতন নীরবতা। মন্ত্রীর চোখ মুখ দিয়ে যেন রাগে-ক্ষোভের আগুন জ্বলছে! উপস্থিত অন্যদের চোখে মুখে এধরণের আতঙ্কের ছাপ। সেই আতঙ্কগ্রস্ত মুখগুলো থেকে কেউ একজন বলে উঠল: তাহলে আমরা সবাই এতক্ষণ শুকরের জন্য কাঁদলাম! কথাটা শোনার সাথে সাথে মন্ত্রীর শক্ত মুখ হঠাৎ রৌদ্র ঝলকের মতো ছড়িয়ে পড়ল হাসির ছটা। এবং সেই হাসিটা ছড়িয়ে পড়ল সবার মুখে। এরপর শুরু হলো পালা করে হাসির পর্ব।




মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



এটা প্রচলিত গল্পের সামান্য রূপান্তর মাত্র! আপনার বইতে দেননি তো?

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৭

আহমদ জসিম বলেছেন: সত্যকে স্মৃতিকে রূপান্তর করাই তো সাহিত্যের কাজ,

আপনি কী সিন্দাবাদের গালিচা নামের গল্পের বইটা পড়েছেন? সেখানে অবশ্যই এই গল্পের শিরোনাম ছিল রোদন পর্ব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.