নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমিও একদিন লাশ হব, সেই লাশ মাটির নিচে থেকে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে অংগার হবে। বৃষ্টি ভিজা কাদায় শরীর ভিজে যাবে, শুধু অনুভবে নিথর লাশ হয়ে রয়ে যাব শেষ বিচারের অপেক্ষায়.......

ফেনা

মুক্ত ও সাদা মনের মানুষ হতে আগে চাইতাম। এখন আর চাই না। এখন একটু মুক্তি চাই, চাই জীবনটা শেষ হবে এই অপেক্ষার অবসান। [ মৃত্যুটা খুব স্বাভাবিক; বেঁচে থাকাটা অস্বাভাবিক।]

ফেনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাটক - এক খণ্ড জীবন

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:২০

চরিত্রায়নঃ

দাদা ---
দাদী ---
খায়রুল ---
খায়রুলের স্ত্রী ---
নাতনী ---
নাজির ---


দৃশ্য – ০১

[স্থানঃ মেস বাসা। অন্ধকার রুম। পর্দা, জানালা,দরজা সব বন্ধ। রুমে নাজির একা ঘুমাচ্ছে। বাকি বন্ধুরা সবাই কলেজে চলে যাওয়াতে বিশাল বাসাটায় নাজির এখন সম্পুর্ণ একা। অগোছালো ভাবে রুমের বিভিন্ন জায়গাতে কাপর চোপর পড়ে আছে। যেখানে সেখানে সিগারেটের সুগা, সিগারেটের অংশ পড়ে আছে। দুই পর্দার ফাঁক দিয়ে রোদের হালকা সুর্যের আভা রুমের ভিতর ঢুকছে। নাজিরের বিছানায় এলোমেলো ভাবে মোবাইল, ঘড়ি, হ্যডফোন, সিগারেটের প্যাকেট ইত্যাদি পড়ে আছে।]

নাজির আড়মোড় দিয়ে ঘুম থেকে হালকা ভাবে চোখ খুলে আশপাশটা একটু দেখার চেষ্টা করে। তারপর জানালার পর্দাটা একটুখানি টেনে বাহিরে দিকে তাকায়। রোদের পখড়তা চোখে এসে বারি খায় নাজিরের। নাজিরের চোখ দুটি ছোট হয়ে আসে। জানালার পর্দাটা সোজা করে পাশ ফিরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময় দেখে। তারপর আবার একটা কুড়ি দিয়ে সোজা হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু একেবারে না উঠে ঝিম ধরে বসে থাকে।
খাট থেকে নিচে নেমে একটু পানি খেয়ে একটা সিগারেট ধরায়। আস্তে আস্তে টুথ ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে হাই তোলে নাজির। এগিয়ে যায় বারান্দার দিকে। সিগারেট টানা শেষ করে ব্রাশটা মুখে দিয়ে এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। দাঁত ব্রাশ করতে করতে কোথায় যেন হারিয়ে যায় নাজির।

দৃশ্য - ২

বাথরুমে মুখ ধূয়তে ধূয়তে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে। দ্রুত মুখে পানি দিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে নাজির। ফোনটা রিসিভ করে।

নাজিরঃ হ্যালো.. .. আস্ সালামুআলাইকুম। কে বলছিলেন?
মনিরঃ হ্যালো, নাজির আমি মনির। কিরে তু্ই আজ কলেজে আসলি না কেন?
নাজিরঃ ভাল লাগতেছিল না তাই। ক্লাস শেষ করে পারলে আমারে একটা ফোন দিস। আর এই ফোন নম্বরটা আবার কার?
মনিরঃ নয়া নিছি।
নাজিরঃ আচ্ছা এখন রাখি। পরে কথা বলি। বাই।
মনিরঃ ওকে। বাই।

নাজির ফোনটা বিছানার উপর রেখে রান্না ঘরের দিকে যায়। নাস্তা নিয়ে খেতে খেতে নিজে নিজেই বিরবির করছে। আর বলছে-
“যাই কোথাও গিয়ে ঘুড়ে আসি।”
নাস্তা শেষ করে টিভিটা অন করে নাজির। কাধের ব্যাগটা হাতে নিয়ে লুঙ্গি, গামছা সহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ভরতে থাকে। তারপর ঘড়িটা হাতে নিয়ে চোখ বড় বড় করে ঘড়িতে দেখে প্রায় দুইটা বেজে গেছে। খুব দ্রুত রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে নাজির।


দৃশ্য - ৩

লোকেশনঃ বাস স্ট্যান্ড এবং বাস

কাধের ব্যাগটা হাতে নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে নাজির। নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেয় ; কোথায় যাবে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাজির ব্যস্ত রাস্তায় বাস, রিক্সার আসা যাওয়া দেখছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। সিগারেট যখন অর্ধেকটা তখন একটা লোকাল বাস প্রায় নাজিরের বরাবর এসে দাঁড়ায়। কোন কথা না বলে হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে নাজির এক লাফে বাসে উঠে যায়। জানালার পাশে এটা সীটে জায়গা পায়। এক দৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখটা ভাবলেশ এবং অনেকটা ফ্যাকাশে দেখায়।

বাসের কন্ট্রাক্টর এসে নাজিরকে বলে –

কন্ট্রাক্টরঃ মামা কই যাইবেন?
নাজিরঃ বাস কই যাইব?
কন্ট্রাক্টরঃ মাওয়া ঘাট যাইব। আপনে কই যাইবেন মামা?
নাজিরঃ শেষ পযর্ন্ত। মাওয়া ঘাট।

এই কথা বলে নাজির আবার অন্যমনস্ক হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।


দৃশ্য - ৪

লোকেশনঃ নদীর পাড়

বাস স্ট্যান্ড থেকে নাজির নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ায়। তখন বিকাল পাচঁটা বাজে। নদীর পাড় ঘেঁষে ঘাসে উপর ভাল একটা জায়গা দেখে বসে নাজির। তখন মোবাইল ফোনটা বেজে উঠে।

মনিরঃ হ্যালো.. ..
নাজিরঃ হ্যালো.. .. হ্যা বল।
মনিরঃ কিরে কই তুই? ফোন দিতে বলছিলি কেন?
নাজিরঃ নাহ। এমনি। ভাবছিলাম কাছাকাছি থাকলে দেখা করব। তাই।
মনিরঃ ঠিক আছে। আমি তোর বাসার কাছেই আছি।
নাজিরঃ না রে। আমি বাসায় নাই।
মনিরঃ কোথায় তুই?
নাজিরঃ আমি মাওয়া ঘাট। এখন রাখি। পরে কথা বলবনে। বাই।
মনিরঃ কীরে তোর কি হয়ছে? তোরে কেমন যেন মনে হয়তেছে।
নাজিরঃ কিছু না। ফোন রাখি।

এই কথা বলেই নাজির ফোনটা রেখে দিল। মনিরকে আর কথা বলার কোন সুযোগ দেয় না।


দৃশ্য - ৫

লোকেশনঃ নদীর পাড়

দূরে একটা ছোট মেয়ে নদীরে বসে পানিতে পা ভিজিয়ে বরসি দিয়ে মাছ ধরছে। তার দিকে এগিয়ে যায় নাজির।

নাজিরঃ এই মেয়ে তুমি কি কর?
রীপাঃ কেন? আপনে কে?
নাজিরঃ নাহ। এ..এ..এমনি।
রীপাঃ নাচি।
নাজিরঃ বরসি নিয়ে কেউ নাচে জানতামনা তো। বরসি দিয়ে তো মাছ ধরে।
রীপাঃ দেখতাছেন, বুঝতাছেন। তাইলে জিগান কেন!!
নাজিরঃ তোমার নাম কি?
রীপাঃ রীপা। [নামটা বলেই মুখটা ভেঙ্গচি কাটে।]
নাজিরঃ তোমার বাড়ি কোনটা?
রীপাঃ কেরে? আপনে আমার বাড়ি দিয়া কী করবেন?
নাজিরঃ নাহ! এমনি জিজ্ঞাস করলাম। তুমি কি একলা আসছ? মাছ ধরতে পার?
রীপাঃ কেরে। আমি একলা আসলে আপনের কি। বলেই লাফিয়ে দাঁড়ায়। [এমন একটা ভাব যেন এখনই ধরে মারবে।]
নাজিরঃ না না ….. । রাগ কইরনা। তোমার কে কে আছে? [রীপা আবার বসে।]
রীপাঃ দাদা, দাদী আর আমি।
নাজিরঃ তোমার বাবা মা?
রীপাঃ মইরা গেছে।
নাজিরঃ ওহ। সরি।
রীপাঃ ওই যে আমার দাদা আসতেছে। [এই বলে রীপা বরসীটা টেনে তুলে গোছাতে থাকে।]
দাদা সামনে এসে দাঁড়ায়। একটু বিরক্ত নিয়ে রীপাকে বলে-
দাদাঃ কিরে তোর কি আক্কেল নাই? রোগা মানুষটারে ফেলাইয়া এখানে একলা একলা বইসা মাছ ধরছ?
রীপাঃ যাইতাছি। হগল সময় তো ঘরের ভিত্তেই থাকি। বাইরে কি আমি আর যাইতে পারি। একটু বাইরঅইছি আর বুইরাডা কি করতাছে।
দাদাঃ [একবার নাজিরের দিকে তাকিয়ে।] ভাই কে আপনি?
নাজিরঃ না …… মানে …… আসলে.. আমি ঢাকা থেকে এসেছি।
দাদাঃ কার বাড়িতে আসছেন?
নাজিরঃ কারও বাড়িতে না। আমি আসলে ঘুড়তে এসেছি।
দাদাঃ ও… আচ্ছা আচ্ছা…. [রীপার দিকে তাকিয়ে] রীপা তুই বাড়িতে যা। আমি আইতাছি।
[রীপা এক দৌড় দিয়ে নদীর পাড়ে উঠে যায়। তারপর চোখের সীমানায় হারিয়ে যায়।]

দৃশ্য - ৬

লোকেশনঃ নদীর পাড়

নাজিরঃ আমি আপনাকে দাদা বলতে পারি?
দাদাঃ ঠিক আছে। বল।
---- তবে তুমি এখন কোথায় থাকবা? এখানে তো কোন থাকার জায়গা নাই। সন্ধ্যা হয়ে আসল। [নাজির দাদার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মলিন, ফ্যাকাশে একটা চেহারা। মনে হচ্ছে অনেক দিন ধরে খাওয়া দাওয়া হয় না।]
নাজিরঃ জি আমার নাম নাজির। আপনার বাড়ি কোন দিকে?
দাদাঃ আমি এ দিকে ছোট একাটা ঝোপড়িতে থাকি।
নাজিরঃ আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা বলব।
দাদাঃ হ্যাঁ বল। [এই কথা বলে দাদা হাটতে থাকে। সাথে নাজিরও।]
নাজিরঃ আপনার ছেলে, ছেলের বউ তারা কোথায়? আপনার পরিবার………, আপনাকে দেখলে মনে হয়না আপনার অবস্থা এত খারাপ ছিল।
দাদাঃ [ঠোটের কোণায় কষ্টের একটা লোকানো হাসি দিয়ে।] তুমি ভাই আজই ফিরে যাবা?
নাজিরঃ না দাদা। দেখি কোথাও থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। মোটামুটি মাথা গুজার ঠায় হলই হবে।
দাদাঃ এই এলাকাতে কোথাও তো থাকার জায়গা পাবা না। নদী ভাঙ্গনের জায়গা। বাড়ি ঘর এখন আছে আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে কিছুই নাই। সব নদীর পেটে বিলীন হয়ে গেছে। সম্ভাবনাময় কিছু প্রাণ অকালেই হারিয়ে যাবে কাউকে কিছু না বলে। কিছু কান্না বিশাল বটবৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে জীবনের প্রতিটা কোণায়। [দাদার চোখে পানি আসতে থাকে।] অবশিষ্ট যে জীবনটা পড়ে থাকে সেটা একটা মোচড়ানো কাগজের ঠোঙ্গা ছাড়া আর কিছুই নয়। বেচে যাওয়া কিছু কিছু জীবন হয়ে যায় একেকটা জীবন্ত আতুর ঘর। [দাদা আর বলতে পারে না। ফুপিয়ে কাদঁতে থাকে।]
নাজিরঃ দাদা …. দাদা…. প্লিজ কাদঁবেন না। আমি আপনার সব কথা শুনব। মানুষ তার কষ্ট বলতে পারলে হালকা হয়। এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেল, কাল সকালে আবার শুনব।
দাদাঃ হ….. দাদা চোখ মুছে। তুমি তো এখন কোথাও থাকার জায়গা পাবানা। তয় তোমারে আমার খুব ভাল লেগেছে। তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তবে আমার সাথে আমার ভাঙ্গা ঘরে রাতটা কাটাতে পার।
নাজিরঃ না না না… দাদা এটা এভাবে বলেন কেন। আপনার ঘরে থাকাটাতো আমার জন্য চরম সৌভাগ্যের। আমি আপনার বাড়িতে থাকব।
দাদাঃ যদিও আমি তোমার মেহমানদারিটা করতে পারব বা আদো তোমাকে খাওয়াতে পারব কি না তাও বলতে পারি না।
নাজিরঃ সেটা কোন বিষয় নয়। চলেন সামনের দিকে যাই। [দু’জনে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। কেউ কোন কথা বলে না। নাজির শুধু মাঝে মাঝে দাদার চোখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে।]


দৃশ্য - ৭

লোকেশনঃ বাজার

একটা বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাজির একটু থামে। তারপর কিছু সবজী সাথে তেল ও মসলা কিনে। এই সময় দাদা তার দিকে তাকায় ………

দাদাঃ ভাই তুমি এটা কি করছ?
নাজিরঃ আমি তো আপনাকে দাদা ডাকি। তাহলে নাতি ঘরের জন্য কিছু বাজার করছে। তাতে তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সতুরাং দাদা আপনি একটু চুপচাপ অপেক্ষা করেন।

এই বলে নাজির আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দাদার কাছে আসে এবং বলে –“ দাদা এবার চলেন আমার কাজ শেষ।”
দাদা আর কিছু বলে না। নিরবে নাজিরের সাথে সামনের দিকে কদম ফেলে।


দৃশ্য - ৮

লোকেশনঃ দাদার বাড়ি

সন্ধ্যা সাতটা বাজে। দাদা আর নাজির বাড়িতে ঢুকেছে। ঘরের ভিতর একটা ছোট কপি বাতি জ্বলছে। অনেকটা না জ্বলার মত করে। এটাকে মূলত বাড়ি বলা যায় না। অনেকের বাড়ির পাশে আলগা ঝুপড়ি থাকে। এটা অনেকটা তাই। যাই হোক- বাড়িতে ঢুকতই দাদা তার নাতনী রীপাকে ডাকলেন-

দাদাঃ রীপা….. অই রীপা….
রীপাঃ কী হয়ছে?[ দরজার সামনে শরীরের কিছু অংশ এবং মুখটা একটু বের করতেই থমকে দাড়াঁয়।]
অই মিয়া আপনে আমাদের বাইতে আইছেন কেরে?
[নাজির হাসে।] তারপর নাজির বলে-
নাজিরঃ তোমাকে দেখতে আসছি।
দাদাঃ এই রীপা…. চুপ কর। মেহমানের সাথে এই ভাবে কথা কয়। হাত মখ ধূয়ার জন্য পানি দে।
নাজিরঃ তার আগে এই ব্যাগটা নাও।
রীপাঃ এইডার ভিত্তে কি?
নাজিরঃ আগে নাও। তারপর খুলে দেখ। [রীপা এসে ব্যাগটা হাত থেকে নেয়। ব্যাগটা নিয়ে দ্রুত ঘরের ভিতর কপি বাতিটার কাছে চলে যায়। খুলতে থাকে ব্যাগের ভিতর যা কিছু আছে। তারপর রীপা আস্তে করে ঘারটা ঘুড়িয়ে পিছনে তাকায়। নাজিরকে এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। মৃদু আলোতে মনে হল রীপার চোখে পানি। রীপার চোখে পানির উপস্থিতি টের পেয়ে নাজির তার জায়গা থেকে একটু সরে ঘুরে দাঁড়ায়। তার মনও কেমন খারাপ হয়ে যায়। রীপার মত এত ছোট মেয়েটার চোখে বাজার দেখে পানি চলে আসল! নাজির ভাবতে থাকে। হঠাৎ পিছন থেকে-

রীপাঃ ভাইজান পানি।[নাজির চমকে উঠে।]
নাজিরঃ ওহ্ তুমি।
রীপাঃ (মুখে হাত দিয়ে একটু জুড়েই হাসে।) হা হা হা হা…… আপনে ভয় পাইছেন!!!


দৃশ্য - ৯

লোকেশনঃ দাদার বাড়ি

নাজির হাত মুখ ধূয়ে দরজার সামনে, রীপা একটা পুরানো গামছা এগিয়ে দেয়। অনেকটা ময়লা। রীপার হাত থেকে গামছা নিয়ে হাত মুখ মুছার সময় দাদা সামনে এসে দাঁড়ায়। দাদা বলে-
দাদাঃ কিরে রীপা এভাবে দাঁড়ায়ে থাকলে চলব? রান্না করতে হবে না? মেহমান খায়ব কি। তারাতাড়ি যা। [রীপা রান্না ঘরে চলে যায়। দাদা নাজিরের দিকে তাকায়।] বলে-
ভাই তুমি আস। তোমাকে তোমার দাদীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
[নাজিরকে ঘরের ভিতর একটা কোণায় ছোট চকির সামনে নিয়ে যায় দাদা। চকিতে শুয়ে আছে একজন জরার্জীণ শরীরের বয়স্ক মহিলা। নড়াচড়া নাই। শুধু ঢেবঢেব করে চেয়ে আছে। হালকা কপির আলোতে যতটুকু বুঝা যায়। তাতেই মনে হচ্ছে সে অনেক দিন পর এই পরিবারের মানুষ ছাড়া অন্য মানুষ দেখল।]
দাদাঃ এই হচ্ছে তোমার দাদী। সুস্থ স্বাভাবীক জীবন ছিল তার। যখন আমাদের ছেলেটার সাথে ছেলের বউটাও এক্সিডেন্ট করে মারা গেল, ছেলেটা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে তখন খায়রুলের মা স্ট্রোক করল। ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারলাম না। ছেলেরও না ছেলের মাকেও না। ছেলের বউডা তো মইরাই গেল। তখন থেকে খায়রুলের মা প্যারালাইজড্। কথাও বন্ধ। শুরু হয় আমার দূর্বিসহ জীবনের পথ চলা।
নাজিরঃ এত বড় এক্সিডেন্ট কিভাবে হল দাদা?
দাদাঃ [একটা র্দীঘ শ্বাঃস ফেলে।] হ্যাঁ। তোমাকে বলব। কেউ তো আমার কষ্ট শুতে চায়না। আজ তোমাকে বলব।
নাজিরঃ জি দাদা আমি শুনব। আপনি বলেন।
[দাদাকে নিয়ে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় নাজির।]
দাদাঃ রীপা বসার কিছু দিয়ে যা তো।
[রীপা কোন কথা না বলে চুপচাপ এসে একটা মুড়া আর একটা পিড়ি দিয়ে যায়। দাদা পিড়িতে বসে তার জীবনের গল্প বলা শুরু করে।]


দৃশ্য - ১০

লোকেশনঃ দাদার বাড়ির উঠান

দাদা পিড়িতে বসে তার জীবনে দুঃখের স্রোতে ভেসে যাওয়ার গল্প বলছেন। আর ঐ দিকে রীপা রান্না করছে। এই পিচ্চি মেয়ে অনেক মনোযোগ দিয়ে পাক্কা রাধুনীর মত রান্না করছে।

দাদাঃ আমার সন্তান বলতে ঐ একটাই ছিল। খায়রুল। মা ছেলের সারাদিন অনেক আনন্দে থাকত। ফুটফুটে ছেলের বউ সহ বেশ ছিলাম। আমার আর্থিক অবস্থাও ছিল অনেক ভাল। একটা চারচালা ঘর ছিল। ছিল গরু, জমিন। মোট কথা সব মিলে আমার ঘরে সুখ ছিল। আর এখন আমার ছেলে নাই, ছেলের বউও নাই। সাথে ঘর, গরু, জমিন সবই গেল।
এই সবের বদলে পাইছি সন্তান হারানোর কষ্ট, ভিটা মাটি হারিয়ে হয়েছি সহায় সম্বলহীন। স্থবীর স্ত্রী, একটা এতিম নাতনী নিয়ে একা অসহায় দিন কাটায়। আজ অসহায় হয়ে অভাবের তারণায় পিষ্ঠ। একবেলা খাবারের অপেক্ষা..........
[বলতে বলতে ফুপিয়ে কাদতে থাকে দাদা। তার কান্না থামাতে ইচ্ছা করে না। তার বুকের ভিতরের কষ্টগুলো কান্না হয়ে ভাসিয়ে দিক সব কিছু। হিংস্র কষ্টগুলো থাবা বসিয়ে রেখেছে এই বৃদ্ধ লোকটির বুকে। সেই থাবা কান্নার নোনা জল হয়ে বের হয়ে যাক।]
নাজিরঃ দাদা এত কষ্ট একা একা বয়ে বেরাচ্ছেন কেন? আমাকে বলেন। প্রথম থেকে সব ঘটনা বলেন। আমি শুনব।
দাদাঃ হ্যাঁ বলব। আমি তোমাকে সব বলব। [কাঁন্না থামাতে থামাতে বলে।]

রীপার রান্না শেষ। রীপা এই দিকেই আসছে।
রীপাঃ অ-দাদা তুমি কি লোকটারে সারা রাইত এইখানে বসায়া রাখবা? খাওয়নের সুযোগ দিবানা?
দাদাঃ তোর রান্না শেষ হয়ছে?
রীপাঃ রান্না শেষ সেই কখন….। এখন ওঠ। খায়তে আয়।
[নাজির রীপার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। এই পিচ্চি মেয়ে কত সুন্দর করে রান্না শেষ করে আসল।]
দাদাঃ রীপার দিকে… যা ঘরে গিয়া ভাত বার। আমরা আইতাছি।
[রীপা চলে যেতে থাকে; দাদা নাজিরের দিকে তাকায়।]
-চল ভাই ঘরে চল। এবার খাওয়া দাওয়া সারি। তোমার কেনা বাজার দিয়ে তোমার মেহমানদারি করি। তোমাকে আপ্যায়ন করার মত সামর্থ তো আমার আর নাই।
নাজিরঃ দাদা এইটা কি বলন দাদা!! আমিতো নিজেকে আপনাদের থেকে আলাদা কিছু মনে করছিনা।
[এই বলে দাদা এবং নাজির উঠে দাড়াঁয়। ঘরের ভিতর যাওয়ার সময় দাদা পড়ে যেতে নেয়। নাজির খুব দ্রুত দাদাকে ধরে সামলে নেয়।]
নাজিরঃ কী হল দাদা? শরীরটা কি খারাপ লাগছে?
দাদাঃ না না না কিছু না ভাই। বয়স হয়ছে তো। আমি ঠিক আছি।
[নাজির দাদাকে ধরেই ঘরের ভিতর গিয়ে দাড়াঁয়। রীপা একটা ভাঙ্গা পাটি মাটিতে বিছিয়ে দেয়। দাদা আর নাজির আর কোন কথা না বলে পাটিতে বসে পড়ে।]

দৃশ্য - ১১

লোকেশনঃ ঘরের ভিতর খাওয়ার সময়

নাজির আর দাদা যেখানে খাওয়ার জন্য বসল তার সাথে ভাঙ্গা একটা চাটাই এর বেরা দিয়ে আলাদা করা হয়েছে দাদীর ঘরটা। আর সেখানেই রাখা রান্না ঘরের সব জিনিসপত্র। রীপা ঐ ঘর থেকে পানির জগ, গ্লাস, প্লেট, ভাত, তরকারি সব একে একে এনে নাজির ও দাদার সামনে রাখল। একটা বাটিতে দাদা ও নাজির হাত ধূয়ে সারতে সারতে রীপা তাদের প্লেটে ভাত দিয়ে দিচ্ছে।
নাজিরঃ এ... এই .... এ কী করছ!!! অল্প করে দাও। আগে অল্প করে খেয়ে দেখি তোমার রান্না কেমন?
রীপাঃ আমি তো ছোড মানুষ। আমার রান্না তো আপনার মজা লাগত না। [বলতে বলতে দাদার প্লেটে ভাত দেয় রীপা।]
দাদাঃ রীপা বইন..... আমরা নিজেরা নিয়া খায়। তুই এই ফাঁকে তোর দাদীরে একটু খাওয়াদে।
[রীপা একটা বাটিতে ভাত নিয়ে দাদীর কাছে চলে যায়। দাদীকে সে মুখে তুলে খাওয়ায়ে দেয়। দাদা নিরবে ভাত খায়। কোন কথা বলে না। তার চোখ দুটি ছল ছল করছে। তার চোখে পানি কেন বুঝতে পারে না নাজির। কয়েকবার তাকিয়ে দাদার চোখের দিকে লক্ষ্য করার চেষ্টা করে নাজির। কোন প্রকার কথা না বলে খুব দ্রুত খাওয়া শেষ করে উঠে নাজির।]
নাজিরঃ দাদা আমার খাওয়া শেষ। আপনি খাওয়া শেষ করেন। আমি বাইরে আছি।
[বলেই নাজির বাহিরে চলে আসে। আশপাশটা দেখে। হঠাৎ মনে হল হালকা একটা কান্নার আওয়াজ। নাজির একটু এগিয়ে যায় ঘরের দিকে। তারপর একটু উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে ভিতরে কি হচ্ছে। নাজিরের চোখ জলে ভরে আসে। ঠোট দুটি কেপে উঠে। রীপা ভিতরে ভাত খাচ্ছে। পাশে দাদা দাড়িঁয়ে।]
দাদঃ কিরে বইন কান্দস কেরে?
রীপাঃ কেরে কান্দি বুঝনা!! [মুখে ভাত নিয়ে কথা বলে রীপা।]
[দাদার পা জড়িয়ে ধরে কাদঁছে। হঠাৎ দাদার পা ছেড়ে দিয়ে মুখে ভাত থাকা অবস্থায় মুখে আরো বড় এক লোকমা ভাত পুরে দেয় রীপা। কান্না তার থামতে চায়না।]
দাদঃকি অইছে আমারে ক।
রীপাঃ সুখে কান্দি। দাদা অমারা আজ কত দিন পর কউছে; পেট ভইরা ভাত খায়লাম। দাদা ভাত......
[রীপা ফুপিয়ে কাদঁছে আর ভাত খাচ্ছে। নাজির আর নিজেরে ধরে রাখতে পারছেনা। তার বুক ফেটে কান্না আসছে।]
নাজিরঃ [নাজির একা একা বলেতে থাকে.....] মানুষ ভাতের জন্য কান্দে!! মানুষ এক মুঠো ভাতের জন্য অপেক্ষা করে অনন্ত সময়। হায়রে জীবন। কেউ ভাত নষ্ট করে উল্লাস করে। আবার জীবনের অন্য পিঠে ভাতের জন্যই হা-হা-কার করে জীবনের অস্তিত্ত্ব। এটাই কি জীবনের অর্থ!!!!
নাজির চুপচাপ ঘরের একটা কোনায় এসে দাড়াঁয়। নাজিরের চোখে এখনো পানি। বুকের ভিতর একটা চাপা কষ্ট অনুভব করে। নেজের চোখ মুছতে মুছতে আকাশের দিকে তাকায়। বিরবির করে বলতে থাকে—
নাজিরঃ এটা তোমার কেমন বিচার খোদা!! একটা বাচ্চা মেয়েকে কেন এত কষ্ট দাও? এটাতো নিঃপাপ। বুঝিনা খোদা বুঝিনা....... তোমার খেলা বুঝিনা। [নাজিরের চোখের কোনা দিয়ে আবার পানি ঝরতে থাকে।]

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৪২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: কষ্টের জীবন। নাটক টা ভালো লাগলো।

একটা কথা। বানানের দিকে একটু খেয়াল করবেন, তাহলে পড়তে আরো ভালো লাগবে।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১০

ফেনা বলেছেন: ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলা। আর বানান- আসলে টাইপিং এর জন্য এমন হয়েছে। তার উপর কিছু আঞ্চলিকতা রাখার চষ্টা করেছি।
ভাল থাকবেন সবসময়।

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩

বিজন রয় বলেছেন: আমি নাটকের লোক। তাই মন দিয়ে পড়লাম।

ব্লগে একসময় আমিও নাটক পোস্ট করতাম, সে অনেক আগের কথা।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২

ফেনা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

জাহিদ অনিক বলেছেন:
নাটকটা পড়লাম------------ একটু স্লো নাটক

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩

ফেনা বলেছেন: আনন্দগুলি সব সময় ফাষ্ট থাকে। কিন্তু মানুষের জীবনের কষ্টগুলি একটু স্লথই থাকে।

৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর নাটক।
আমাদের পরিচালক ব্লগার আছেন কাইকর।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২

ফেনা বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
পরিচালক কাইকর ভাইকে আমন্ত্রন।

৫| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১৯

অব্যক্ত কাব্য বলেছেন: নাটকটি ভালো লাগলো

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭

ফেনা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.