নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি লেখক হতে চাই না, কলম হব ভাই। আমি আমার কালিতে তোমাদের রাঙাতে চাই।”

অলিউর রহমান খান

আসসালামু আলাইকুম। আমি অলিউর রহমান খান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। আমি গল্প, কবিতা, উপন্যাস ইত্যাদি খুবই পছন্দ করি যে কারণে ব্লগিংয়ে যোগদান করা। সবাইকে আমার ব্লগে স্বাগতম। ফেইসবুক: Aliur Rahman Khan

অলিউর রহমান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দেখা আমেরিকার ঋতু বৈচিত্র।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৬


আমি আমেরিকায় আছি প্রায় ৫ বছর ধরে। আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি নিজেকে এখানকার আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে মারা যাব। আসলে সব কিছু ছাপিয়ে মনটা পরে থাকে সবুজ-শ্যামল আমার বাংলায়; যেখানে প্রকৃতিক এক অপরূপ মায়া মনটাকে ভরিয়ে রাখতো। এক হ্রাস কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি এবং নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় যুদ্ধ করে যাচ্ছি অবিরত। তবে আস্তে আস্তে এখানের ও রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে শুরু করেছি।

আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের মত এটি ছয় ঋতুর দেশ নয়। আমেরিকায় বর্ষা ও শরৎকাল নেই। চারটি ঋতুর দেশ নামে পরিচিত উত্তর আমেরি এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এ অঞ্চল গুলো।
আমেরিকার চারটি ঋতু হলো যথাক্রমে,
শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম ও হেমন্ত।

আপনাদের কাছে হয়তো একটু অন্যরকম লাগতে পারে কারণ আমরা বাঙ্গালীরা ৬টি ঋতুতে অভ্যস্ত। এখানকার ঋতুর সাথে বাংলাদেশের ঋতুর অনেক তারতম্য রয়েছে। কেউ আমেরিকায় না এসে থাকলে সমীকরণটা বেশ জটিল বলে মনে হতে পারে। এ জন্যই আমি আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্ত আকারে আমেরিকার ৪টি ঋতু তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আমাদের দেশে যেমন প্রতিটি ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট নিয়ে হাজির হয় ঠিক তেমনি এখানে ও তার ব্যতিক্রম নয়।



১। শীত কাল: শীত কালের প্রথম দিকে তেমন একটা ঠান্ডা অনুভব করা না গেলে ও সন্ধ্যার পর থেকে তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। গাছ-পালার পাতা গুলো ধীরে ধীরে ঝরতে শুরু করে। এক সময় গাছ গুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তবে গাছের পাতা গুলো ঝরে পরার সময় হলে চা বিভিন্ন রকমের রঙ ধারণ করে। কত যে বাহারি রঙ তা হিসাব মেলানো কঠিন। টুকটুকে লাল, হলুদ, খয়েরী, বাদামী, পীত রঙ সহ কত রকমের বিচিত্র রঙের ছড়াছড়ি তার কোন হিসেব নেই। নিজের চোখে না দেখলে এর রূপ সৌন্দর্য বুঝা যাবে না। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বাংলাদেশে যখন এসবের ছবি টিভি বা বাঁধানো কাঁচে সাজানো থাকতো দেয়ালে তখন হা করে চেয়ে থাকতাম ছবি গুলোর দিকে। এত ভালো লাগতো মন মাতানো দৃশ্য গুলো দেখে! ছবি গুলো দেখে দেখে হারিয়ে যেতাম কল্পনার রাজ্যে। ঘুরে বেড়াতাম সেসব গাছের ছায়ায়, ঝরে পড়া পাতা গুলোর দেশে।
আর মনে মনে ভাবতাম এসব রং করা বা এডিটিং করে এমন সুন্দর করে রেখেছে। কিন্তু এখানে আসার পর আবিষ্কার করলাম, এ গুলো নকল নয় সত্যিই প্রকৃতির এক অপার বৈশিষ্ট্য।

আস্তে আস্তে শীত ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং প্রকৃতির তার রূপ-সৌন্দর্য হারাতে শুরু করে। মাঝে মাঝেই তুষার বৃষ্টি হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে তাকালেই দেখা যায় চারিদিকে শুভ্র তুষারে রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর কানায় কানায় পূর্ন হয়ে আছে। এ যেন এক প্রকৃতির নীলা খেলা। যদিও তুষার দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে কিন্তু জীবন যাত্রা হয়ে উঠে দুর্বিষহ। আকাশ হয়ে থাকে গম্ভীর, মাঝে মাঝে সাঁঝের ছুটাছুটি চোখে পড়ে।
তখন সব সময় শরীরে গরম কাপড় রাখতে হয় না হলে আর রক্ষা নেই। এখানে এত প্রচন্ড শীত যে এক মিনিটের জন্য হাত মোজা ছাড়া বাহিরে থাকলে রক্ত বন্ধ হয়ে পরে। রাস্তা ঘাট বরফে বরফে ভরে থাকে যে জন্য খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয় এবং তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে প্রচুর পরিমানে মানুষ দূর্ঘটনার শিকার হয়।

তবু মানুষ ব্যস্ত সময় পার করে কাজ কর্ম নিয়ে। এ দেশে যতই প্রতিকুল পরিবেশ থাকুক না কেন কাজের বালাই নেই এবং যে কোন প্রতিকুলতার সম্মুখীন হলে অতি দ্রুততার সাথে সমাধান করে কর্তৃপক্ষ। এখানে ও বাঙ্গালী পরিবার গুলো শীতে নানান ধরনের পিঠা-পায়েস তৈরী করে দেশের আমেজ পাওয়ার চেষ্টা করেন। ছুটির দিনে পরিবার পরিজনদের নিয়ে হয় গল্প গুজব এবং আত্মীয় স্বজনরা ও মাঝে মাঝে সবার সাথে যোগ দিয়ে এর মধুরতা বাড়িয়ে দেন। এভাবে চলতে থাকে কয়েক মাস। মাটির বুকে একটু আধটু বরফের অস্থিত্ব থাকা অবস্থায়ই ছোট ছোট নরম লাল, নীল, হলুদ রং এর ক্রকাস ফুল শীতের কঠিন ফুড়ে উঁকি দিয়ে স্বাগত জানায় বসন্তকে।


বসন্ত কাল: বসন্ত আসে এক ঝাঁক নতুন স্বপ্ন ও আশা নিয়ে। শীত ও বরফের তীব্রতায় মানুষ যখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তখন বসন্তের আগমনে সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচে। গাছের শুকনো ডালের শাখায় শাখায় নতুন নতুন সবুজ কুঁড়ি দিতে শুরু করে। এপ্রিলের শেষ সময়ে গাছ গাছালির চারিদিক সবুজ পাতায় ভরে যায়। দিবাকর যেন নতুন সাজে সজ্জিত হয়, গগন জুড়ে থাকে সুখের মাতামাতি। বাড়ির আশে পাশের গাছ গুলোতে দেখা মিলে কাঠবিড়ালের দল। তারা আপন মনে ছুটে চলে এক ডাল হতে অন্য ডালে।

তাদের ছুটা ছুটি দেখে মনে পরে যায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের “খুকী ও কাঠবিড়ালি” কবিতাটি,
“কাঠবিড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও?-

ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকল্গুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!”


বসন্তের অপরূপ বাহার দেখে মনে হয়, শিল্পি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে তুলি আঁচড়ে ছবি এঁকেছেন। সে এক চমৎকার সৌন্দর্য্যের বাহার যা দেখে মাঝে মাঝে কবি হয়ে উঠার ইচ্ছে করে আমার। পাখ-পাখালির কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে চারিপাশ। মনে হয় বহুদিন পরে আজ বুঝি তাদের মনে রঙ লেগেছে।



গ্রীষ্ম কাল: এখানে গ্রীষ্ম মানেই অন্যরকম আবহাওয়া ও প্রকৃতি। সবাই শীত ও বসন্ত পার করে একেবারে গরম কাপর ছুঁড়ে দিয়ে হাতে নেয় পাতাল জাতীয় কাপড়। চারিদিকে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাগান সাজাতে। শৌখিন মানুষেরা ফুলে ফলে সাজিয়ে রাখে ঘরের বারান্দা সহ চারিপাশ। বাড়ির আঙ্গিনায় ও লাগানো হয় বাহারি রকমের ফুলের গাছ এবং চারিদিক সবুজে সবুজে প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পায়। রাস্তার আশে পাশে দেখা মিলে বুনো ফুল গাছ সারি সারি।

নীল আকাশে ঝক ঝকে রোদ ও ফুলের সুভাসে তৈরী হয় এক অন্যরকম পরিবেশ। তাপদাহ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। অনেক সময় তা এত বেশী হয় এবং তার ফলে বনে আগুন লেগে যায়। প্রকৃতি যেন এক অশান্তির ছোঁয়া নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয়। অবশেষে নেমে আসে বৃষ্টি, প্রকৃতি ফিরে পায় শান্তি। মানুষ আকাশের পানে থাকায়ি বৃষ্টি দেখে আর আনন্দের রেখা ফোটে উঠে চোখে মুখে।
হাসির রেখা ফোটে উঠে সমস্ত অবয়ব জুড়ে তা স্পষ্ট হয়। অনেক সময় অত্যাধিক বৃষ্টিপাতে রাস্তা-ঘাটে জল জমে থাকে। তবে তা খুব দ্রুত নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা আছে যার ফলে তেমন অসুবিধার সম্মুখীন আমাদের হতে হয় না।
ছুটির দিনে সমুদ্র সৈকতে মানুষের ভীড় তীব্র আকার ধারণ করে। সেখানে জড়ো হয় নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ। সবাই পরিবার পরিজন দেয় নিয়ে মেতে উঠে বনভোজন, হৈ হুল্লোড়ে, নাচ-গান, চলে আনন্দ ফুর্তি। ব্যস্ত জীবনে সবাই একটু সুখের খুঁজা খুঁজি করে সময় পার করে।



হেমন্ত কাল: মেঘ মুক্ত পরিষ্কার আকাশ জানান দেয় হেমন্ত আগমনের। এখানে হেমন্ত বেশীদিন স্থায়ী হয়না। যত দিনই থাকে এক অপরূপ সুন্দর্য্যের মিলনমেলা তৈরী হয়। হেমন্তের শেষে পাতা গুলো আবার সবুজ বর্ণ থেকে বাহারি রঙে রূপান্তরিত হয়। কত রকমের রঙ ধারণ করে তা বুঝানো সহজ হবে না। প্রকৃতি এক অপরূপে নিজেকে সজ্জিত করে রাখে। পৃথিবীতে কত রকমের যে রঙ আছে তা হেমন্তে পাতার রঙের পরিবর্তনেই বুঝা যায়। আস্তে আস্তে শীত এসে যায় ও পাতা গুলো ঝরে পড়তে থাকে। হেমন্তের সৌন্দর্য নিয়ে কত গান, কবিতা রচিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাহারি রঙিন পাতায় ভরে যায় রাস্তা ঘাট আর শুরু হয় কনকনে শীত।

হেমন্তের এমন একটি চিত্রকল্পের কথা ভেবেই সম্ভবত সেই রবীন্দ্রনাথ লিখতে পেরেছিলেন, ‘তোমার অশ্রুজলের
করুণ রাগে,যাও,
যাও গো এবার যাবার আগে
রাঙিয়ে দিয়ে যাও।’




ছবি: সংগৃহীত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫১

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: বরফ পড়ার দিনে কি গোসল করা হয়? আর বাংগালিদের বিচে হাটাহাটি করতে অস্বস্তি লাগেনা?

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪

অলিউর রহমান খান বলেছেন: অবশ্যই গোসল করা হয়। সবাই করে তা নয় কিন্তু বেশীর ভাগই করে। এখানে গরম পানি চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে, সে জন্য এখানে গোসল করতে শীত গরম মনে হয় না।
এখানে শীতের সময় হিট চালু থাকে ২৪ ঘন্টা। গোসল না করলে শরীরের শুষ্ক হয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে যায়। সুতরাং গোসল করতেই হয়। অনেক সময় আমি ২ বার গোসল করি ঠোঁট ফেটে যাওয়ার ভয়ে।

হ্যাঁ। হাঁটা যায় অস্তিত্ব লাগার কিছু নেই।

ধন্যবাদ মন্তব্যর জন্য।
শুভেচ্ছা নিবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.