নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি লেখক হতে চাই না, কলম হব ভাই। আমি আমার কালিতে তোমাদের রাঙাতে চাই।”

অলিউর রহমান খান

আসসালামু আলাইকুম। আমি অলিউর রহমান খান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। আমি গল্প, কবিতা, উপন্যাস ইত্যাদি খুবই পছন্দ করি যে কারণে ব্লগিংয়ে যোগদান করা। সবাইকে আমার ব্লগে স্বাগতম। ফেইসবুক: Aliur Rahman Khan

অলিউর রহমান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৬


অনেকদিন পর আজ ছোট বেলার বন্ধুকে হঠাৎ করেই ফোন দিলাম। অনেকে আগে থেকেই নাম্বারটা আমারা কাছে যদিও ছিলো, কিন্তু ব্যস্ততার জন্য আর কথা বলা হয়ে উঠেনি।
বন্ধুটির পূর্ণ নাম আহু হুরায়রা মোহাম্মদ তানভীর খান। সবাই তাকে তানু বলেই ডাকে। সে অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্র ছিলো। ছোট বেলা থেকেই পড়া-লেখায় বেশ মনোযোগ তার। ক্লাস নার্সারি থেকে আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিলো এবং তা আজ অবধি আছে ঠিক আগের মতই অক্ষুন্ন। আমার স্কুল, কলেজ মিলিয়ে অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব আছে। প্রিয় বন্ধুদের তালিকায় তানু একজন। ভালো ছাত্র হওয়াতে বিভিন্ন সময় তার শরণাপন্ন হয়েছি। সব সময়ই আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রয়োজনের সময়। দু’জনের বাড়ির দূরত্ব ছিলো মোটামুটি বেশীই। তার পরও সুযোগ পেলে আমরা বেড়িয়ে পড়তাম এক সাথে। চলে যেতাম নদীর ধারে কিংবা দূর-দুরান্তে কোথাও। সাথে নিয়ে যেতাম বাদাম বা বুট। খেতে খেতে হতো গল্প, দুষ্টুমি আর হাসা হাসি। এভাই হেসে খেলে পার হয়ে যাচ্ছিলো আমাদের দিন গুলো।

একটা সময় এসে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে দুই’জন দুই কলেজে ভর্তি হলাম। যদি ও আমাদের দেখা হতো না তবে মাঝে মাঝেই কথা হতো। কলেজ শেষ হলো আর আমি পাড়ি জমালাম প্রবাসের পথে। শত ব্যস্ততায় আমাদের যেগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে কতটা বছর পেরিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না।

যা বলছিলাম, অনেক দিন পর তানুর সাথে কথা হচ্ছিল আমার। ঢাকা থেকে ওর এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে এসেছে। আজই নাকি চলে যাবে আবার। একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সিলেটে বেড়াতে এসে বন্ধুর বাসায় উঠেছে। কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ একটা ছেলের কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেলাম। ছেলেটি খুব ক্ষীণ সুরে ওদের কাছে কিছু খাবার চাইতে লাগলো।
তানু আর তার বন্ধুর সাথে ছেলেটিকে ও বসতে বলল খাবার টেবিলে। তারা দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য একটা রেস্টুরেন্ট বসেছিলো। আমি যখন ফোন করেছিলাম তখন তারা খাওয়া শেষ করে রেষ্ট নিচ্ছিলো। এর ভেতরে ছেলেটির আগমন ঘটে।

আমার সাথে কথা বলতে বলতে শুনলাম তানু খাবারের অর্ডার দিচ্ছে ছেলেটির জন্য। এর ফাঁকে জমে থাকা কত কথা হলো আমাদের। বার বার ফিরে গেলাম ছেলে বেলায়। মধুর স্মৃতি গুলো দু’জনে শেয়ার করলাম ইচ্ছে মত। পুরনো দিনের কথা শুনতে শুনতে বার বার ফিরে গেলাম সেই দুরন্তপনা শৈশবে। আর আমি গেয়ে উঠলাম,

“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা,
সে কি ভোলা যায়।।

আয় আর একটিবার আয় রে সখা
প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব
প্রাণ জুড়াবে তায়....

তানু ও আমার সাথে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠল এক সাথে। মূহূর্তেই দুজন হারিয়ে গেলাম ছেলে বেলার সোনা ঝরা দিনগুলোতে। গানটি শেষ করতে পারলাম না, এমনি করেই ওয়েটারের ডাক মামা খাবার রেডি। এই লন...

গরম গরম খাবার টেবিলে এসেছে। সাদা ভাত, দেশী মুরগীর মাংস এবং সবজি। খাওয়ার সময় বার বার তানু জানতে চাইলো কি লাগবে না লাগবে। আমাদের কথা ভেতর ছেলেটির খাওয়া শেষ হলো। এর পর শুনলাম ছেলেটি ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে একটি শার্টের কথা বলল তানুর কাছে। ছেলেটির সুরে ভয়ের রেখা স্পষ্ট। তানু তাকে অভয় দিয়ে বলল, চলো সামনে ভালো দোকান পাওয়া যাবে। খাবারের বিল পরিশোধ করে তারা বেড়িয়ে পড়লো দোকানের খুঁজে। আমার সাথে কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলো একটা সপিং সেন্টারে।
তানুর প্রশ্ন কেমন শার্ট পছন্দ করো তুমি? খুঁজে দেখো কোনটা পছন্দ হয় তোমার। আমি কোন কথা বললাম না শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম তাদের কথোপকথন সেই প্রথম থেকে।

অনেক খুঁজা খুঁজির পর তাদের একটি শার্ট পছন্দ হলো অবশেষে। আমি সব কিছু শুনেই যাচ্ছিলাম কথার ফাঁকে ফাঁকে। মনে মনে আমি এক নতুন তানুকে আবিষ্কার করতে লাগলাম। পথের এই অনাদরে-অবহেলায় পড়ে থাকা ছেলেটির সাথে তানুর এই নমনীয় ব্যবহার আমাকে প্রচন্ড ভাবে ভাবুক করে তুলতে লাগলো। আমি ছেলেটির মুখ কল্পনায় দেখার চেষ্টা করছিলাম। দেখছিলাম ছেলেটির মুখে বিশ্ব জয়ের হাসির রেখা। যে রেখা আলোকিত করে রেখেছে চারিদিক।

আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম, কয়েকটা ছবি তুলে দিস আমাকে এবং ছেলেটির সাথে তুই তো থাকিস। কত দিন হলো দেখিনি তোকে। তানু প্রথমে আমার কথায় রাজি হলো না। বলল থাকনা এসব। ছবি দেখে কি করবি? আমি ও ছেড়ে দেয়ার মত পাত্র নই। শেষ পর্যন্ত তানু কয়েকটি ছবি তুলে আমাকে ফেইসবুকে সেন্ড করলো। সাথে সাথে আমি ল্যাপটপ থেকে ফেইসবুকে প্রবেশ করলাম। এর ভেতর ছেলেটির সাথে ও আমি কিছু কথা বলে নিলাম। শার্ট পেয়ে ছেলেটির কি যে খুশি! তার কথা বার্তায় সব কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো। বেশীক্ষণ কথা বলতে চাইলো না। তানুর কাছে ফোন দিয়ে দিলো ছেলেটি। বেশী খুশিতে ঠিক মত কথা বলতে পারছিলো না ছেলেটি। তার আকাশে যে আজ নতুন চাঁদ উঠেছে। তখন তানু পরম মমতা ও যত্ন করে ছেলেটিরকে নতুন শার্টি পড়িয়ে দিলো।


তানু ফোনে বলে উঠলো, ছবি কী পেয়েছিস? তোর কেমন লাগে দেখে আমাকে জানা।
ছেলেটির ছবি দুটো দেখলাম। বাহ! বেশ মানিয়েছে। শার্টি যে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে সেই কথা তানুকে জানালাম। তানু বলল, সত্যিই তোর পছন্দ হয়েছে? সায় দিয়ে বললাম সত্যিই খুব সুন্দর হয়েছে। আমার কথা শুনে সে ও এবার খুশি হলো। হাসি দিয়ে বলল, ছেলেটি খুব খুশি হয়েছে রে বন্ধু। তার মুখে ছিলো তৃপ্তির হাসি।

অবশেষে কথা শেষ করে ফোনটা রেখে দিলাম আর মনে মনে কত কথাই বলে যাচ্ছিলাম নিজের সাথে।
তানু সেই ছোট বেলা থেকেই আমার প্রতি কি কি দায়িত্বকর্তব্য পালন করেছে আমার সামনে এখনো সব কিছু স্পষ্ট। এতদিন আমি ভাবতাম তানুর দায়িত্ব বুঝি শুধু বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজ তার অন্য একটা লুকায়িত রূপ দেখলাম। আমার বন্ধুর অনেক ভালো দিক আছে জানতাম, তবে তার এত সুন্দর একটা মনও যে আছে এই প্রথম বারের মতো জানলাম।

তানুর কাছ থেকে আমি নতুন করে শিখলাম কি করে মানুষকে এক মূহুর্তেই আপন করে নিতে হয়। শিখলাম কি করে মানুষকে ভালোবাসতে হয়। আজ আমি আরও শিখলাম মানবতা কি। আমাদের সমাজে তানুদের মত মানুষ আছে বলেই পৃথিবীতে এখনো ভোর হয়, ফুল ফোটে। ফুল গুলো সৌরভ ছড়িয়ে দিয়ে একটা সময় ঝরে পরে ঠিকই কিন্তু মানুষ তার রূপ সুধা মনে রাখে।

এসব মানুষ একদিন পৃথিবীতে থাকবেনা কিন্তু তাদের মহানুভবতার গল্প রয়ে যাবে চিরকাল। যে গল্পগুলোর শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই.........

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৯

মাইনুল ইসলাম আলিফ বলেছেন: ভাল লিখেছেন ভাই।শিক্ষণীয় টপিক।
ব্লগে স্বাগতম।
ভাল থাকুন।শুভ কামনা।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩৩

অলিউর রহমান খান বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:১৭

প্রামানিক বলেছেন: শিক্ষনীয় পোষ্ট। ধন্যবাদ

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:০৮

অলিউর রহমান খান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ জনাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.