নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নকে পাথেয় ভাবি।

অলওয়েজ ড্রিম

"Only He Who Can See The Invisible Can Do The Impossible" Frank Gain আমার ইমেইল ঠিকানাঃ [email protected]

অলওয়েজ ড্রিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

যৌনমন কিংবা অলিগলি অন্ধকার! - ৭

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৬




(বহু বছর পরের একদিন)

আজ থেকে চল্লিশ, পঞ্চাশ কিংবা ষাট বছর পরে অন্ধকারের এই অভিজ্ঞতাগুলি, পৃথিবীতে তখন আর এই কামুক রমণী নেই, মনে পড়বে তার। তখনও ঘৃণায় আজকের মতোই বিষিয়ে উঠবে মন। তখনও খুঁজবে সে আজকের এই অন্ধকারের পুলকগুলিকেই। কিন্তু পাবে না। কেউই পায় না দ্বিতীয়বার। ব্যাতিক্রম-সে পেয়েছিল অসংখ্যবার। দীর্ঘদিন ধরে। সেই কামুক রমণীর সান্নিধ্যে।

কী অসহ্য শিহরণ!
কী ভীষণ সে পুলক!
দীর্ঘক্ষণ ধরে ছলকে ছলকে লাভা উদ্গীরণ! তারপর আরও দীর্ঘক্ষণ ধরে- দুই ঘণ্টা, তিন ঘন্টা, চার ঘন্টা কিংবা তারও বেশি - সেই উদ্গীরণের স্মৃতি শরীরের প্রতিটি অণুতে-পরমাণুতে অবিরাম বয়ে বয়ে চলা! ভেসে ভেসে চলা! শরতের শুভ্র-সাদা মেঘের ডোঙ্গায় চড়ে কেউ যদি ভেসে বেড়াতে পারে ইচ্ছামতো, তার আনন্দ কি এর সমান হবে? কোনো কিছুতেই কি এর সমান পুলক সম্ভব?
সেই প্রথম সে টের পেয়েছিল স্মৃতি শুধু মনের নয় শরীরেরও আছে। এবং শারীরিক স্মৃতি আরও বেশি তীব্র। আরও বেশি প্রখর। সেই সময়টায় সে নড়তে পারত না, কথা বলতে পারত না; বিবশ পড়ে থাকত বিছানায়। জীবনের সবচেয়ে ভাললাগা মুহূর্তগুলি সে তখন কাটিয়েছিল। সবচেয়ে অসহায়, একাকী, দুর্বিষহ মুহূর্তগুলিও কি সেই সব দিনগুলিতেই নয়!

কী যে কুহক জানত সেই নারী! কী যে মায়া! সে কি ডাকিনী ছিল! মন্ত্র জানত! ভেড়া কিংবা ভেড়ুয়া হতে হতেও সে কি তবে বেঁচে গিয়েছিল?
*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*+*

(শুরু)

এই গল্পের নায়ক একজন গ্রাম্য কিশোর। যদি সে কিশোরী হত তবে তাকে এভাবে বর্ণনা করা যেত - তার বয়সী কিশোরীরা কেউ রজঃদর্শন করেছে, কেউ করেনি কিন্তু প্রত্যেকের মুখে প্রাথমিক লালচে আভা কাটিয়ে ওঠা মাত্র-সবুজ আমপাতার স্নিগ্ধতা।

জামানের দাড়িগোঁফ শক্ত হয়নি। কণ্ঠ কেবল ভাঙতে শুরু করেছে। নারীদের প্রতি কৌতূহল দিনদিন বেড়ে চলেছে। কারও শরীরের সামান্য স্পর্শ পেলেও নিজের ভিতরে যে ভাল লাগার অনুরণন ওঠে তার গুনগুনানি সে শুনতে পায়। ভিতরে কোথাও যেন একটা জোনাক পোকা জ্বলে ওঠে। কোথাও যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি! অন্যরকম উৎসাহ! অভূতপূর্ব! অনন্যসাধারণ! আবাল্য পরিচিত অনুভূতিগুলির সাথে এই অনুভূতিটাকে মেলানো যায় না। এই অনুভূতি জামানকে কিসের যেন আগমনী গান শোনায়? জামান সেই রহস্য-সংগীতের সুর-মূর্ছনায় বিভোর হয়ে পড়ে। বিবশ হয়ে পড়ে। বিস্মিত মনে অপেক্ষা করে নবীন বরণ উৎসবের। বিস্মিত চোখে চেয়ে থাকে রহস্যময়ী নারীদের দিকে। তাদের অসংখ্য উঁচু ঢেউয়ের দিকে। সেই ঢেউয়ের উচ্ছাস তার মধ্যে ভালোলাগার আবেশ আনে। তাকে উতল-উছল, ব্যাকুল করে তোলে। আউলাঝাউলা করে ফেলে। এরকম এক আউলাঝাউলা দিনেই সে আসে। এসে আরও আউলাঝাউলা করে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। তার উড়ন্ত বিনুনি, নিতম্বের উথালপাথাল ঢেউ তাকে অসহায় প্রশ্নের সমুদ্রে ভাসিয়ে নিতে থাকে - নারী এত সুন্দর কেন? নারী এত টানে কেন?

স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বালিকা বিদ্যালয়ের কাউকে যদি সঙ্গী হিসাবে পাওয়া যায়, হোক না কাছাকাছি থেকেও দুস্তর পারাবার, থাকুক না অগম্য নিরবতা, কী যে ভাল লাগে! কোথাও যেন কোনো দুঃখ নেই - বাতাসে বাতাসে রোমান্টিকতা, আকাশজুড়ে রংধনু! আর মনের ভিতর অজস্র রঙিন প্রজাপতির খুনসুটি।

(বিস্তার)

আমজাম, লোহাগড়া, আর টাকটুক খাওয়ার বয়স মাত্রই পার করে আসা জামান হাজারো কী ও কেনোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে একা একা ভাবনার অতলে তলিয়ে যায়। রহস্যের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খায়। সমবয়সী বন্ধুরাও তাকে সাহায্য করতে পারে না। শুধু আজগুবি আর অদ্ভুত সব তথ্য জোগায়। তারা যখন আরও ছোট ছিল, একদিন খোকন বলেছিল মেয়েদের কোথায় কোথায় নাকি চুমা দিলে পেটে বাচ্চা আসে। কিন্তু কোথায় তা সে বলতে পারেনি। কামাল জানিয়েছিল তার ধারণা মেয়েদের নাভিতে চুমা খেলে বাচ্চা হয়। সতীশ উরুসন্ধির দিকে তর্জনী তাক করে বলেছিল, তোরা জানো বালডা! মাইয়াগো এইহানে চুমা দেলে বাচ্চা অয়। জোরে দেলে পোলা, আস্তে দেলে মাইয়া। একটা দেলে একটা, দুইডা দেলে জমজ বাচ্চা অয়।

অদ্ভুত সেই সব ধারণা প্রকৃতিই কাটিয়ে দিয়েছে। পশু-পাখি-পতঙ্গের কাছে সে সংগম জেনেছে। প্রকৃতির সাহায্য নিয়ে একা একাই সে আবিষ্কার করে চলেছে এক নতুন জগৎ। আনমনা হয়ে একা একা হয়ত সে এই নতুন জগতের সকল দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষা করে।

এমনি এক একলাএকা দিনে সে আসে। এসে জামানকে সিঁড়ির প্রথম ধাপে তুলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। তার উড়ন্ত ওড়নার ঢেউয়ে জামান খুঁজে পায় সিঁড়ি ভাঙার ডাক।

আসলে ধুপধাপ দৌড়ে এসে নিলুফার জানতে চেয়েছিল, ও জামান, কাকী কই?
- বুইনার বাড়ি গেছে।
= মাসুদ?
- মা'র লগে গেছে।
= কাক্কু?
- হ্যার লগে মায় আর মাসুদ গেছে।
= ধুস ছ্যামরা, প্যাঁচাও ক্যা?
- কী প্যাঁচাইলাম?
= একলগে কইলেই তো অইত - সবাই ময়নাবুগো বাড়ি গ্যাছে।
- একলগে না জিগাইলে একলগে কেমনে কই?

কিন্তু নিলুফার তার স্বভাবসুলভ চাপল্যে সকল যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে "হয়, হইছে"! বলে এক মধুর মুখঝামটায় হেসে ফেলে। মুখঝামটার এই মাধুর্যটুকু, মিষ্টি হাসির এই স্নিগ্ধতাটুকু জামানের বুকের ভিতরে কীরকম এক হাহাকার জাগায়। বুকটা তার খালি-খালি লাগে। ফাঁকা-ফাঁকা লাগে। কোথাও যেন রাশ-রাশ শূন্যতা জমাট বেঁধে আছে। হীম হয়ে আছে। এই শূন্যতাবোধের মানে প্রথম মানব জানতে পেরেছিলেন প্রথম মানবীকে পেয়ে। জামানও বুঝতে পারে তার শূন্যতাবোধ নিলুফারের একান্ত আশ্লেষ কামনা করে।

সুতরাং নিলুফার চলে যেতে নিলে জামান তাকে ডাক দেয় - নিলু, হুইনা যা।
দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়েই নিলুফার জানতে চায়, কী?
জামান ইশারায় কাছে ডাকে। নিলুফার ইশারাতেই জানতে চায়, কী? কেন?
- এদিগে আয় না। জামান অনুরোধ করে। তার খুব ইচ্ছা হয় নিলুফারের একটা হাত নিয়ে বুকে রাখে। শূন্যতাটুকু দূর করে। কিংবা হয়ত আরও কিছু প্রগাঢ় ইচ্ছা তার শূন্যতাবোধকে আরও চাগিয়ে দেয়। নরম করে সে চেয়ে থাকে নিলুফারের দিকে। সেই দৃষ্টিতে কী থাকে - দাবি? প্রণয়াকাঙ্ক্ষা? সুপ্ত কামনাও কি থাকে না সেখানে?

নিলুফারও জানে এই চাউনির মানে। তারও হয়ত মনের ভিতর কিছু একটা করে। কিন্তু পুরুষ যেখানে ধৈর্যহারা, নারী সেখানে সহজাত গুণেই সহিষ্ণুতার পাখি - পেখমমেলা নৃত্য চায়, কণ্ঠখোলা সঙ্গীত চায়, নীড়ের ভরসা চায়, সর্বোপরি সময়ের কিছুটা দূরত্ব চায়, তারপর বিবেচনা করে ধরা দেবে কিনা।

সুতরাং নিলুফার 'কী' বলে একটু থামে। তারপর "কী তোর নাকের ঘি"! বলে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বাতাসে তার চুল ওড়ে ~~~ ওড়না ওড়ে ~~~ কামিজের ঝুল ওড়ে ~~~ আর তার পিছেপিছে উড়ে চলে জামানের মন ~~~ প্রথম সোপানে তার পা!

তারপর দিনে দিনে সিঁড়ি ভেঙে এগোয় জামান। যখন তখন গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠে গান। কিন্তু মাঝখানের গল্পগুলো থাক। এক লাফে ছাদে ওঠা যাক।

জামানের চাচা চাকরিসূত্রে থাকে দেশের আরেক প্রান্তে। বাড়িতে আসে ছ’মাসে-ন'মাসে এক-আধ বার। তার বড় টিনের ঘরে একমাত্র সন্তান নিলুফার, নিলুফারের মা, আর দাদীই শুধু থাকে। কিন্তু দাদী যাবেন তার মেয়ের বাড়ি বেড়াতে। সুতরাং রাতে অত বড় ঘরে নিলুফার ও তার মা'র ডর ডর লাগবে এটাই স্বাভাবিক। রাতে টিনের চালে কতরকম শব্দ হয় - পাতা পড়ার শব্দ; বাতাসের শব্দ; পোকামাকড় পড়ার শব্দ; নিশাচর কোনো পাখি এসে বসলে তার শব্দ; নারকেলের টরি পড়ার শব্দ; বাদুড়ের মুখ থেকে ছুটে যাওয়া কোনো আধাখাওয়া ফল পড়ে গেলে তার শব্দ; রাতে টিন যখন ঠাণ্ডা হতে থাকে তখন সে ডাকে, সেই ডাকাডাকির শব্দ; আরও কতরকমের শব্দ দু'মা-মেয়েকে ভয় দেখাবে! ভয়ে তারা চমকে চমকে উঠবে। এবং পরের দিনই তারা জামানের মায়ের কাছে এসে অনুরোধ করবে, যে কদিন নিলুফারের দাদী না আসবে সে কদিন রাতে জামান তাদের ঘরে ঘুমাবে। রাতের খাওয়াটাও তাদের ঘরেই খাবে।
জামানের মা রাজি হয়ে গেলে দু'মা-মেয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরে যাবে। যাওয়ার সময় নিলুফার চোখ মেরে গেলে জামানের দুঠোঁটের প্রান্ত পৃথিবীর দুপ্রান্তকে ছোঁবে। মাঠের ক্রিকেট সেদিন আর কিছুতেই ভালো লাগবে না। দিনটাকে অহেতুক বিশাল মনে হবে। কেউ যেন টেনে বড় করে দিচ্ছে এমন মনে হবে।
অবশেষে সারাদিনের ছটফটানির পরে, ভরা গ্রীষ্মের মাঠঘাট ফেটে-চৌচির-খরায় বৃষ্টির মতো সন্ধ্যা আসে। জামানের মন হাওয়ায় ভাসে। ভাসতে ভাসতে সে পৌঁছে যায় নিলুফারের কাছে। নানা রকম শরীরী খেলায় যখন তারা মেতে ওঠে তখন তাদের মগ্নতা ভেঙে যায় জামানের শরীরটা নিলুফারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে।

ভিতর থেকে নিলুফারের মা জিজ্ঞেস করে, জামান আইছ?
- হ কাকী।
= বয় চা-মুড়ি দিতাছি।
চা-মুড়ি আসতে আসতে দুজনের অবশ্য হাতে-হাতে, পায়েপায়ে এবং অতি অবশ্যই চোখেচোখে কত কথা হয়ে যাবে। তারপর তিনজনে চায়ে মুড়ি ভিজিয়ে ভিজিয়ে সরব আনন্দে খেতে থাকবে। টুকটাক কথা হবে, কাকীমার অগোচরে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা হবে। চিমটি হবে, হাসি হবে। তিনজনের আড্ডা খেঁজুর গুড়ের মতো সুবাস ছড়িয়ে জমে উঠবে। কাকী একবার মৃদু রসিকতাও করবে জামানের রেনট্রিফুলের পাঁপড়ির মতো নরম দাড়িগোঁফ নিয়ে। কথা নানা দিকে ছড়িয়ে নিলুফারের বাবার প্রসঙ্গ এলে কাকী দীর্ঘশ্বাস ছাড়বে বড় করে। জামান জানতে চাইবে, কাকী কাকায় কবে আইবে?
=আর আইবে! হে তো মোর দুঃখ কোনো কালেই বোজল না।
তারপর বিষণ্নতার আবহ হেসে উড়িয়ে দিয়ে কাকী ভিতরে চলে যাবে। জামান নিলুফারের একটু কাছে চেপে বসলে নিলুফার বাঁকা হেসে দূরে সরে যাবে।জামান অভিমানে আরও দূরে সরে বসলে নিলুফার পিছন থেকে এসে জামানকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়াবে। জামান নিলুফারের হাতের উপর হাত রাখবে। নিলুফার জামানের কানের কাছে মুখ নিয়ে হয়ত বলবে, বাবা, বাবুর রাগ কত! কিংবা হয়ত অন্য কোন কিছু। অন্য কোন দুষ্টি-মিষ্টি উচ্চারণ। দুজনের ঠোঁটে থাকবে হাসি। পতপত করে মনে উড়বে খুশির পতাকা।
ভাত বেড়ে কাকী দুজনকে ভিতরে ডাকলে আপাতত রোমান্স ভেঙে যাবে। কিন্তু নিলুফারের চাউনি জামানকে স্বপ্ন দেখাবে আরও গভীর কিছু পাওয়ার।
অতঃপর ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যাবে, রাতের নিস্তব্ধতা টের পাওয়ার সময় চলে আসবে কিন্তু জামানের কিছুতেই ঘুম আসবে না। অপেক্ষার প্রহর লম্বা হতে থাকবে ইলাস্টিকের মতো। প্রত্যাশার পলি ছিদ্র হয়ে সমস্ত পানিটুকু নিঃসরণের পর প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে জামান ঘুমিয়ে পড়বে। এবং স্বপ্নের ভিতর এক হিংস্র বাঘিনী তাকে কামনা করলে কিছুতেই দৌড়ে সে কাছের আমগাছটির কাছে যেতে পারবে না। তার আগেই তাকে নিচে ফেলে ঘাড় মটকাতে আসবে। ভয়ংকর দাঁতের সারি দেখে যেইনা সে চিৎকারের জন্য হা করতে যাবে অমনি বাঘিনীটা তার ঘাড় না কামড়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে তাকে বাঘ হতে বলবে। সে তাতে রাজি না হলে বাঘিনীটাই কামুক রমণী হয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তার কচি দুটি ঠোঁট সেই রমণীর ওষ্ঠপীড়নে রক্তাক্ত হয়ে উঠবে। স্তনের চাপে পিষ্ট হতে হতে অগ্নি উদ্গীরণের জন্য আগ্নেয়গিরি যখন খুললাম খুললাম নেচে উঠতে যাবে, জ্বালামুখ খুলে যাওয়ার উপক্রম হবে ঠিক তখন তার ঘুম ভেঙে যাবে। নড়বড়ে খাটের মটমট আওয়াজ আর এক ঝটকায় তাকে নিচ থেকে উপরে তুলে নেওয়ার তরিৎ শক্তিতে স্বপ্নোত্থিত জামান চমৎকৃত হওয়ার বদলে না স্বপ্ন না বাস্তব, না সত্য না মিথ্যার দোলাচলে দুলতে দুলতে বাঘ দেখবে, বাঘিনী দেখবে। পুরুষ কবুতরের বাকবাকুমে ভোর হতে দেখবে।

(পরিণতি)

তারপর দ্বিধান্বিত পদক্ষেপে বাড়ি ফিরে আসে জামান। কিছুতেই আর মায়ের দিকে তাকাতে পারে না। নিজেকে জঘন্য পাপী মনে হয়। তীব্র অনুশোচনায় জ্বলতে জ্বলতে বনেবাঁদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। মা তাকে ডেকে পায় না। বাপে তারে খুঁজে পায় না। মাঠের ক্রিকেট তাকে বাড়িতে এসে ডেকে যায়, কিন্তু সে সেখানেও যায় না। নিলুফার অপরাধী-মুখ করে খুঁজতে আসে, কিন্তু কোথায় জামান। কেউ তার খোঁজ জানে না। নিলুফার জানতে চায়, জামান কই গেল চাচী? তার চিন্তান্বিত মুখে ভালবাসার স্নিগ্ধ অনুভূতি তাকে মোহনীয় করে তোলে। চাচী তার থুতনি ধরে নেড়ে দিয়ে বলেন, আছে কোনোহানে, বনেবাঁদাড়ে টোটো করতাছে। খিদা লাগলে আইবেই।

সুতরাং বেলা যত গড়াবে অনুশোচনার অনুভূতি ক্ষুৎপিপাসায় রূপান্তরিত হতে শুরু করবে। বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরে আসবে। মায়ের প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো জবাব না দিয়ে শুধু হু-হা করে এড়িয়ে যাবে। এবং খেয়েদেয়ে আবার বেরিয়ে পড়বে। নির্জনে বসে ভাবতে থাকবে গেলরাতের পাপের কথা। স্বপ্ন কিংবা বাস্তবতার কথা। ভাবতে ভাবতে দ্বিধায় পড়ে যাবে সে। সত্য - মিথ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। একবার মনে হবে বাস্তব। পরক্ষণেই মনে হবে শুধুই স্বপ্ন।

আসলে সময়ান্তরে সকল অনুভূতিই লঘু হয়ে যায়। কোথাও একটা প্রলেপ পড়ে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য মন নিজেই ভেলায় চেপে বসে - অজুহাতের ভেলা। যতই সামনে এগোনো যায় ততই তরঙ্গোচ্ছাস কমতে থাকে।

সুতরাং জামান স্বস্তি পাবে - ভোরের অনুশোচনা, পাপবোধ দিগন্তেও নাই আর। বরং কেতলির লম্বা নলের ভিতর দিয়ে কামনার উদ্গীরণ টের পাবে সে। বাকবাকুম! বাকবাকুম! পুরুষ কবুতর!

সন্ধ্যা হয়েছে আবার। বাড়ি ফিরে চলে জামান। শরীরের ভিতর বাকবাকুম! বাকবাকুম! কোনো অনুতাপ নেই। পাপবোধ নেই। নির্জলা কামনার আগুনে পুড়ে যাওয়া আছে। তার তীব্র জ্বলুনি আছে। উপশমের উপায়ের দিকে বেপরোয়া ধাবমানতা আছে। সকাল এখন তীব্রভাবে অতীত। রাতের অন্ধকার সূর্যের মতো দীপ্যমান।

ঘরের লাগোয়া খোপে পায়রার বাকবাকুম চলতেই থাকে। অপেক্ষার প্রহর বাড়তেই থাকে তার সাথে। কিন্তু কেউ আসে না। পুরুষ কবুতরের বাকবাকুম তাকে অস্থির করে তোলে। এপাশ-ওপাশ করতে করতে রাত গভীর হয়। নিশুতি রাত নিরব হতে হতে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তবে কি স্বপ্নই ছিল সব?
ঘুমিয়ে পড়ে জামান। আর স্বপ্নেই ধরা দেয় সেই কামুক রমণী। উদ্গীরণে উদ্গীরণে লাভার স্তুপ জমে। শীৎকার আর খাঁটের চিৎকারে জামান স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে আশ্বিনের কুকুর হয়ে যায়।
কিন্তু মদ গেলার পর মাতাল যেমন অবধারিত অবসাদের মুখোমুখি হবেই, তেমনি জামানও ঘুম ভাঙার পর প্রতিদিন অনুতাপের খোঁয়ারিতে দীর্ঘ সময় আটকা পড়ে থাকে। সে আর কিছুতেই মায়ের দিকে তাকাতে পারে না। মাকে ছুঁতে পারে না। সহজে কথা বলতে পারে না। মায়ের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে। মায়ের সাথে সহজ-মধুর সম্পর্কটা চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলে। থেকে থেকে কেবলই মনে হতে থাকে - কাকিমা আর মা সমানই তো। সে কিনা... ছি! ছি! কী জঘন্য পাপী সে। তার তো বিনা হিসাবে দোজখ।
বিপর্যস্ত জামান একাকী বনেবাঁদাড়ে ঘুরে বেড়ায়, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে আর চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়। পড়াশোনা গোল্লায় যায়। চোখের নিচে কালি পড়ে।যাবতীয় হুল্লোড় থেকে দূরে থাকে। ক্রিকেট তাকে আর টানে না, বন্ধুরা তাকে টানে না, নিলুফারও আর টানে না। মূলত কোনো কিছুই তাকে আর টানে না। শুধু মদাসক্তের মতো সন্ধ্যা হলেই আবার সে সারাদিনের অনুতাপ-অবসাদের কথা ভুলে যায়। খোঁয়ারি ভেঙে নতুন উন্মাদনায় জেগে ওঠে। নিজেকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারে না। মদের পেয়ালায় ঠোঁট চুবায় আর শীৎকারে চিৎকারে কেঁপে কেঁপে ওঠে।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: কাব্যিক, এবং সুন্দর।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৮

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রিয় হাসান মাহবুব ভাই।

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৪

জেন রসি বলেছেন: বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের এক কাব্যিক বিশ্লেষন । এক কিশোরের মনের অলিতে গলিতে তখন যে নিষিদ্ধ কৌতূহলের জন্ম হয় তার এমন বর্ননা আর কোথাও পড়েছি বলে মনে মনে পরেনা।

চমৎকার।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৩

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ধন্যবাদ জেন রসি। এই কিশোরের মধ্যে আমরা সবাইই হয়ত কিছু কিছু পরিমাণে আছি।

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩২

ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আগের গুলোর মতই অসাধারণ।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৯

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। লেখার মোটেই সময় পাই না। এই গল্পটা লিখতে চার মাস সময় লেগেছে। কারণ একটু একটু করে লিখতে হয়েছে। পরে দেখি কোথাও কোথাও তাল কেটে গেছে। ধারাবাহিকতা সাবলিলভাবে বজায় থাকেনি। তাই কৌশল করে যেখানে যেখানে মনে হয়েছে তালকাটা সেখানে শিরোনাম দিয়ে দেখি বাহ, দুর্বলতাটুকু এড়ানো গেছে।

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


প্রকৃতি ভালোবাসা ও প্রেমকে ফিজিক্যাল রূপ দিয়েছে; ভালোবাসা না থাকলেও ফিজিক্যালকে থাকতে হবে, থেকে যাবে, না হয় জীবনচক্র থেমে যাবে; ফুল থেকে ফল হবে, পরাগায়ন হবে, সেই অনুভুতিই জীবনের বড় অংশ।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৩

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: আপনার মন্তব্যগুলি অসাধারণ হয়। হয়ত অনেকেই বুঝতে ভুল করে, ভিতরের বক্তব্যটুকু ধরতে পারে না।

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৫৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: পড়লাম এক টানে বেশ ভাল লাগল , লিখাটিতে স্বকীয়তা আছে ।
শুভেচ্ছা রইল

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৪

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ধন্যবাদ আলী‍ ভাই। আপনাকেও শুভেচ্ছা।

৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: কিন্তু পুরুষ যেখানে ধৈর্যহারা, নারী সেখানে সহজাত গুণেই সহিষ্ণুতার পাখি - পেখমমেলা নৃত্য চায়, কণ্ঠখোলা সঙ্গীত চায়, নীড়ের ভরসা চায়, সর্বোপরি সময়ের কিছুটা দূরত্ব চায়, তারপর বিবেচনা করে ধরা দেবে কিনা। - অসাধারণ পর্যবেক্ষণ!
চমৎকার এ গল্পে যৌবনের সোনালী অগ্ন্যুৎপাতের চিত্র খুব সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে।
দুটো ভাল লাগা মন্তব্যের পুনরুল্লেখ করতে চাইঃ
বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের এক কাব্যিক বিশ্লেষন । এক কিশোরের মনের অলিতে গলিতে তখন যে নিষিদ্ধ কৌতূহলের জন্ম হয় তার এমন বর্ননা আর কোথাও পড়েছি বলে মনে মনে পরেনা। - জেন রসি (২ নং)।
প্রকৃতি ভালোবাসা ও প্রেমকে ফিজিক্যাল রূপ দিয়েছে; ভালোবাসা না থাকলেও ফিজিক্যালকে থাকতে হবে, থেকে যাবে, না হয় জীবনচক্র থেমে যাবে; ফুল থেকে ফল হবে, পরাগায়ন হবে, সেই অনুভুতিই জীবনের বড় অংশ। - চাঁদগাজী (৪ নং)। এটা একটা অসাধারণ মন্তব্য হয়েছে।
পোস্টে প্লাস + +


২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৫৯

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: বাহ, চমৎকৃত হয়ে গেলাম। আপনার মনোযোগী পাঠ এবং মন্তব্যের মনীষা মুগ্ধ না করে পারে না।
যে দুটি মন্তব্যের কথা উল্লেখ করলেন সত্যিই অসাধারণ। নিবিড় তাদের পর্যবেক্ষণ।

আন্তরিক ধন্যবাদ। সব সময় ভাল থাকবেন।

৭| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


প্রকৃতি মেয়েদের ভেতর আলাদা স্বত্বা দিয়েছে, তাদেরকে মা হওয়ার বাসনা দিয়েছে, সেখানে ভালোবাসার ফুল ফোটে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৭

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: সেই ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না
দুজন জেগে রই। ;)

৮| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম ভাই। কেমন আছেন? কতদিন আপনার সাথে দেখা হয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.