নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন মনোযোগী পাঠক ।

রানা আমান

রানা আমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংক্ষেপিত রেল ভ্রমণ (সাথে পুরনো দিনের স্মৃতি ) ।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪

নরসিংদী যাবো যাবো করেও সময় বের করতে পারছিলুম না । এ সপ্তাহে যেতেই হবে তাও ১৬ই ডিসেম্বার রাতে একটা ডিনার এর নেমন্তন্ন আছে যা এড়ানো সম্ভব না তাই ঠিক করলুম ১৭ তারিখ ঘুরে আসবো নরসিংদী থেকে । ১৫ তারিখ রাতে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎই মনে হলো ট্রেনে যাওয়া যেতে পারে , অনেকদিন ট্রেনে উঠা হয় না । আমার ড্রাইভার শাহিনকে বললুম এয়ারপোর্ট স্টেশনে ঢোকো , কাউন্টারে গিয়ে দেখি ১৭ তারিখ সকালে এগারসিন্ধুরের নরসিংদীর কোন সীট নেই , ভৈরবের আছে ,তাও শোভন শ্রেণীতে, নিয়েই নিলুম । ১৭ তারিখ সকালে ৭ : ৩০ এ স্টেশনে নেমে শাহিনকে বললুম , 'তুমি নরসিংদী চলে যাও , ট্রেন যদি লেট থাকে , নরসিংদী স্টেশন থেকে আমাকে রিসিভ করো '। ৭:৪৫ এ ট্রেন আসার সময় তবে তখনো ট্রেন কমলাপুর থেকেই ছাড়েনি । প্লাটর্ফময়ে বেশ ভিড় , এরই মাঝে সুন্দরবন এক্সপ্রেসের আসার ঘোষণা হলো , আমি ভাবলুম এরা বোধহয় সব সুন্দরবনের যাত্রি , কিন্তু না কারুর তেমন কোনো চন্চলতা ও দেখলুম না । আশাকরি প্লাটর্ফম বোঝাই যাত্রিরা সবাই এগারসিন্ধুরের যাত্রি নয় । একটু পর ট্রেন এলো , বেশ কিছু মানুষ কমে গেলো (আমি সহ) প্লাটর্ফম থেকে । ৮:০১ এ ট্রেনেরও চাকা গড়ালো । মাত্র ১৬ মিনিট লেট , ব্যাপার না । ভেতরে ভিড় একেবারে মন্দ নয় । বেশিরভাগ দুজনের সীটেই তিনজন করে বসেছে , আমার সীটেও তাই । সামনের সীটে এক পরিবার , তারাও বেশ চাপাচাপি করেই বসেছে । সাথে দু বাচ্চা । পরিবারের কর্তাটির দেখলুম ছেলেটির দিকে যত মনোযোগ , মেয়েটির দিকে ততটা নয় । সাথে নিয়ে আসা বক্স খুলে চিকেন ফ্রাই বের করে ছেলেকেই আগে সাধাসাধি , মেয়েটিকে পরে একপিস হাতে ধরিয়ে দিলো , জ্যুস খাবে কিনা সে প্রশ্ন করলো শুধু ছেলেকে । অথচ মেয়েটিই বয়সে ছোট । বৈষম্য নিরসনে অভিভাবক সচেতন না হলে মানসিকতা গড়ে উঠবে কিভাবে ! ছোটবেলা থেকে এভাবে অগ্রাধিকার পেয়ে বড় হয়ে ওই ছেলেটির মানসিকতা আর পরিবর্তন নাও তো হতে পারে । অবশ্য আমার পর্যবেক্ষন ভূল হতেই পারে ।

টন্গী পার হবার পর দেখলুম ডাবল লাইন হবার কারনে এবং নগরায়নের চাপে রেললাইনের দুপাশেই অনেকই পরিবর্তন । নতুন লাইনটা দিয়ে ট্রেন যাচ্ছিলো নরসিংদীর পথে , পাশেই পুরনো লাইনটা , ঢাকাগামী ট্রেনগুলো ব্যবহার করে ওটা । পুবাইল আর আড়িখোলা স্টেশনের মাঝে চুয়ারিয়াখোলা এলাকাটা পার হবার সময় একটা ছোট্ট রেলওয়ে কালর্ভাট ও তার পাশে থাকা বড় একটা গাছ দেখে মনে হলো এইতো কিছুই বদলে যায় নি । অনেক আগের স্মৃতি মনে পড়লো , এই কালর্ভাটটিতেই অনেকক্ষন বসেছিলাম সেদিন ।

সেটা আমার ছাত্রজীবন তখন , ১৯৯৯ সনের কথা । ছুটিছাটায় যখনই নরসিংদী আসতুম , আমি আর আমার এক কাজিন উজ্বল মাঝে মাঝে বিকেলে রেললাইন ধরে হাটতে বের হতুম , হাটতে হাটতে নরসিংদী থেকে ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশন পর্যন্ত এসে আবার টেম্পো/হলারএ চড়ে নরসিংদী প্রত্যাবর্তন , সাথে চলমান আড্ডা। এমনই একদিন হাটতে হাটতেই হঠাৎ মাথায় একটা প্ল্যান অথবা পাগলামি এলো ,উজ্বলের সাথে শেয়ার করলুম এবং তৎক্ষনাৎ সাদরে গৃহীত । প্ল্যানটা ছিলো নরসিংদী থেকে রেললাইন ধরে হাটতে হাটতে ঢাকা যাওয়া । আমাদের প্ল্যানটা ছিলো সকাল ছটায় নরসিংদী থেকে রেললাইন ধরে হাটা শুরু করবো , ৮ টায় ঘোড়াশাল পৌছে ব্রেকফাস্ট , ১১ টায় আড়িখোলা, ১টায় পুবাইল পৌছে লান্চ , ৩:৩০ এ টন্গী , ছটার মধ্যেকমলাপুর পৌছে রিক্সা নিয়ে গুলিস্তান , তারপর বাসে চড়ে নরসিংদী প্রত্যাবর্তন । তবে প্ল্যান অনুযায়ী তো আর সবসময় সবকিছু হয়না । তখন আগস্ট মাস , কোন একটা রাজনৈতিক কারনে সকালসন্ধ্যা হরতাল ছিল সেদিন । সকাল ছটার বদলে দশটা নাগাদ নরসিংদী স্টেশনের প্লাটর্ফম থেকে দুজনে হাটা শুরু করলুম , বারোটায় ঘোড়াশাল পৌছে গেলুম । শীতলক্ষার উপর শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু তখন ছিলোনা , ফেরী ছিল সেখানে । ফেরীঘাটের কাছেই একটা মিস্টির দোকান ছিল বেশ নামকরা ঘোড়াশালের জন্য , সেখানে বসে বড় আকারের রসগোল্লা দুটো করে খেয়ে নদী পার হয়ে আবারো রেললাইন ধরে হাটা শুরু করলুম । আড়াইটায় পৌছলুম আড়িখোলা স্টেশনে , প্লাটর্ফম পার হয়ে ভেতরে ঢুকে ভাতের হোটেলের খোঁজ করতে লেগে গেলুম , ক্ষিধেও পেয়ে গিয়েছিলো বেজায় । খুব সাধারণ হোটেল , ভাত আর মাছের ঝোল , তাই চেটেপুটে ভরপেট খেয়ে আবারো রেললাইন ধরে হাটা শুরু করলুম । এবং একটা ভুল অলরেডী করেই ফেলেছি সেটাও টের পেলুম , তা হচ্ছে অমন ভরপেট খাওয়া উচিৎ হয়নি । এখন তো হাটতে একটু কষ্টই হচ্ছে । আরও একটা ভুল প্রথমেই করেছিলুম তাও টের পাচ্ছিলুম পদে পদেই , তা হলো কেডস জাতীয় কিছু না পরে চপ্পল পরে বের হওয়া । (সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শুধু আম্মাকে বলেছি , 'আম্মা এই একটু ঘুরেআসছি ' ডিটেইলসয়ে বলতে গেলে আর বের হওয়া লাগতো না ) চুয়ারিয়াখোলা এলাকাটা পার হবার সময় একটা ছোট্ট রেলওয়ে কালর্ভাটে বসে বিশ্রাম করলুম কিছুক্ষন , অনেক বাতাস ছিলো জায়গাটাতে । সাড়ে চারটা নাগাদ পুবাইল পৌছে প্লাটর্ফম পার হয়ে ভেতরে ঢুকে কালীগন্জ - টন্গী সড়কে এসে এক দোকানে কোল্ড ড্রিন্কস চাইলুম , তারা তাদের নিজেদের তৈরী দৈ চেখে দেখতে অনুরোধ করলো । সে দৈয়ের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে । পথে অনেকেরই কৌতুহলি দৃষ্টি ছিলো আমাদের উপর তবে সেটা সম্ভবত দুজনের হুবহু একই রকম পোশাক ও মাথার ক্যাপের কারনে । সাড়ে ছটা নাগাদ টন্গী স্টেশনে ঢুকে একটু বিশ্রামের অবসরে উজ্বলের সাথে আলাপ করে ঠিক করলুম , যেহেতু আমাদের রওনা হতেই চারঘন্টা লেট হয়ে গেছে তাই রেলওয়ে ট্র্যাক ধরে হাটা আজ এই টন্গী স্টেশনেই শেষ করি , তা না হলে নরসিংদী আজ পৌছতে সমস্যা হতে পারে । আবারো একদিন বেরুবো দুজনে নরসিংদী থেকে ভৈরব , পারলে ব্রাহ্মনবাড়িয়া পর্যন্ত । উজ্বলের হিসেবে ব্রাহ্মনবাড়িয়া পর্যন্ত একদিনে খুবই সম্ভব , সে পারলে আখাউড়া পর্যন্ত যায়।

তারপর টন্গী স্টেশন থেকে একটা রিক্সা করে আবদুল্লাহপুর , সেখান থেকে সিএনজি বেবিট্যাক্সি নিয়ে গুলিস্তান , তারপর বাসে উঠে সোজা নরসিংদী । আম্মার বকুনী কিছুটা শোনার পরে আমার ভ্রমণ বৃতান্ত শুনে আম্মা থমকে গিয়ে শুধু বললেন এরপর কোথাও গেলে অবশ্যই বলে যাবে (আম্মা নিজেও বেড়াতে ভালোবাসেন) ।

পুরনো কথা ভাবতে ভাবতেই দেখি নরসিংদীতে ট্রেন ঢুকছে । ৮:৪৩ এ নরসিংদীতে নেমে শাহিনকে ফোন করলুম, কোথায় তুমি ? "স্যার আমি মাধবদিতে " এবার সোজা বাসায় , স্টেশন থেকে কাছেই । সেসময় স্মার্টফোন ছিলোনা , ডিজিটাল ক্যামেরা ও আমার ছিলোনা , সাধারন ক্যামেরায় তোলা এই একটি ছবিই অক্ষত পেলুম আমার এলবামে । এটা সেই চুয়ারিয়াখোলায় ছোট্ট রেলওয়ে কালর্ভাটে বসে বিশ্রাম নেয়ার সময় তোলা ।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৮

আহলান বলেছেন: পড়লুম .. .. ..

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭

রানা আমান বলেছেন: কষ্ট করে আমার এই এলোমেলো লেখা পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন,
পাঠে ভাল লাগল
শুভেচ্ছা রইল ।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩

রানা আমান বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ ।

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫১

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমার মাথার ভুত আপনার উপর ভড় করলো কখন? ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হাটা শেষ করে সিলেট শুরু করলাম, কিন্তু উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে সিলেট হাটা এখনো শেষ করতে পারলাম না......আপনি কি আমার সঙ্গী হতে পারেন??

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৬

রানা আমান বলেছেন: আপনার সাথে হাটতে পারা তো সৌভাগ্য , যদি নেন আমাকে সাথে তাহলে । আর আপনার মাথার ভুত আমার উপর ভড় করেছিলো সেই ১৯৯৯ সনে ।

৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: জানুয়ারীর শেষের দিকে সময় করতে পারলে আওয়াজ দিয়েন :)

৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

রানা আমান বলেছেন: আশা করছি পারবো ইন শা আল্লাহ ।

৬| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: ভাল লাগল আপনার ভ্রমণ বৃত্তান্ত আর শেই কবেকার স্মৃতিকথা!!!
শুভকামনা নিরন্তর!!!

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১

রানা আমান বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ ।

৭| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩২

আমিই মিসির আলী বলেছেন: পড়ে ভালোই লাগলো।

৮| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫১

রানা আমান বলেছেন: আমার এই সামান্য লেখাও আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমি আনন্দিত । আমার ধন্যবাদ জানবেন ।

৯| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০১

খায়রুল আহসান বলেছেন: বৈষম্য নিরসনে অভিভাবক সচেতন না হলে মানসিকতা গড়ে উঠবে কিভাবে - বিষয়টির প্রতি আপনার নজর পড়েছে দেখে খুব খুশী হ'লাম।
এই কালর্ভাটটিতেই অনেকক্ষন বসেছিলাম সেদিন আশাকরি স্মৃতিটা মধুর!
সমান্তরাল রেলপথের ছবি দেখতে আমার ভাল লাগে। তার পাশে কালভার্টের উপর বসা আপনার আবছা ছবিটাও ভাল লাগলো।
লেখাটায় প্রথম প্লাস দিয়ে গেলাম।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৯

রানা আমান বলেছেন: ১৭ বছর আগের ছবি খায়রুল আহসান ভাই , কি যেন বলে ! কালের ব্যবধানে এলবামে থেকে থেকে ছবি আবছা তো হয়েছেই , স্মৃতিটাও তো আবছা হবার পথে । আমার এ সামান্য লেখায় আপনার প্লাস আন্তরিক ধন্যবাদের সাথে গৃহীত ।

১০| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১১

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১৪

রানা আমান বলেছেন: :) :D :#)

১১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩

সজল জাহিদ বলেছেন: পড়লেম!

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৩

রানা আমান বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ ।

১২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ১ম রেল ভ্রমণ আমারও মনে দাগ কেটে আছে।

নতুন পোস্ট দিন।

১১ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০

রানা আমান বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই । আর নতুন পোস্ট এর বিষয়ে বলবো যে, ব্লগে নিয়মিত সময়াভাবে আসতে না পারায় , যখনি সময় করতে পারি, নিজে কিছু লিখতে যেয়ে সময়টুকু নস্ট না করে অন্য সবার লেখা পড়ে কাটানোই ভালো মনে করি । আমার নিজের ব্লগে মনে হয় আজ বেশ কিছুদিন পর ই ঢুকলুম।

১৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:

সুন্দর প্রতিউত্তরের জন্য বসন্তের শুভেচ্ছা।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮

রানা আমান বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই । আপনার প্রতিটি দিন হোক বসন্তের রঙে রঙ্গিন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.