নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক যাযাবর

আমি মিহু

আনাড়ি হাতের আনকোরা লেখক

আমি মিহু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যু

২০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৭

শিশুদের অন্ধকার ভীতি আর বড়দের মৃত্যু ভীতি একই ধরণের ব্যাপার। শিশু মনের এই স্বাভাবিক ভীতি গল্প ও কাহিনী শুনতে শুনতে বৃদ্ধি পায়। মৃত্যুভীতির বেলায় ও কথাটি প্রযোয্য।
পাপের মাসুল দিতে এই দুনিয়ায় এসেছিলাম তাই আমাদের মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। এটা অবশ্য সৎ চিন্তা ও ধর্মানুগ বিশ্বাস কিন্তু মৃত্যুকে প্রকৃতির পাওনা হিসাবে ভীতির চোখে দেখা আবার দুর্বলতার লক্ষণ। অবশ্য ধর্মীয় চিন্তা ও ধ্যানে একটা মিশ্র গর্ব ও কুসংস্কার নিহিত রয়েছে। যেমন কোন কোন সন্যাসী গ্রন্থে অনুশোচনার পদ্ধতি হিসাবে বলা হয়েছে যে মানুষ যদি প্রনিধান করে যে তার একই আঙুলের অগ্রভাগ পিষ্ঠ হলে তা তাকে কত ব্যাথাকাতর করে তোলে, তাহলে সে বুঝতে পারে যে তার সারাটি দেহ জর্জরিত ও বিগলিত হলে তা তুলনামূলক ভাবে আরো কত বেদনাদায়ক হবে। তাদের মতে এভাবে মৃত্যু যন্ত্রনা সম্পর্কে বেশ কিছুটা ধারণা করা চলে এবং ফলে অসুশোচনার কাজ অনেক দূর এগিয়ে যায়। কখনো কখনো মৃত্যু আবার দেহের অঙ্গ বিশেষে অনুভূত ব্যাথার চেয়ে ও কম বেদনাদায়ক হয়। কারণ শরীরের প্রধান অংশগুলির অনুভব শক্তি সর্বাপেক্ষা কম। কোন এক দার্শনিক সাধারণ মানুষের মতই বলেছিলেন মৃত্যুর চেয়ে মানুষের মৃত্যুর আনুসাংগিক বিষয়গুলোকে বেশি ভয়ের চোখে দেখে। মনে হয় তিনি যথার্থই বলেছিলেন। বেদনায় গোঙ্গানো, দেহ মোচরানো, মুখের ববর্ণতা, বন্ধুবান্ধবের রোদন, শোক প্রকাশ, অন্তেষ্টিক্রিয়া, সব কিছু মিলে মৃত্যুর চিন্তাকে ভয়াবহ করে তুলে। এটা ও আবার প্রনিধানযোগ্য যে মানব মনের এমন আবেগ কমই আছে যা মৃত্যু ভয়কে জয় এবং পরাভূত করতে পারেনা। যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য যদি তার পক্ষে পর্যাপ্ত সংখ্যক সংগি সাথী থাকে তাহলে মৃত্যু তার জন্যে এমন কোন অজেয় শক্তি নয়। প্রতিশোধ চরিতার্থ করার জন্য মানুষ সহজেই উর্ধ্বে উঠে। প্রেমে অন্ধ হয়ে মানুষ মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে। মর্যাদা রক্ষার্থে মানুষ নিজেকে মৃত্যুর পথে ধাবিত করে। এমনকি ভীতির কারণে আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত করে। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, সম্রাট অথো ১ (Otho) যখন আত্মহত্যা করলেন তখন সে দুঃখে (অথচ দুঃখ হলো মানুষের অতি সাধারণ দুর্বলতা) তার একান্ত বংশবদ অনুসরণকারী হিসাবে অনেকেই দরদী হয়ে এবং তারা যে সত্যিকারের অনুসারী ছিলেন তা প্রমান করার জন্য নিজেরা মৃত্যুবরণ করলেন। সেনেকা ৭ (Seneca) তো আরো কোন ক্ষুদ্র কারনকে মৃত্যুবরণের জন্য যথেষ্ট মনে করতেন। তার মতে কোন বিষয়ে প্রতীতি জন্মাবার মতো কারণের সল্পতা এবং কোন বিষয়ে আবার পরিপূর্নতা লাভ মৃত্যুবরণের কারণ হতে পারে। মরতে হলে কাওকে দুঃসাহসী হতে হবে অথবা অতিশয় দুঃখক্লিষ্ট হতে হবে এমন কোন কথা নেই। একই কাজ বহুবার করার ফলে অনেক সময় অনেকের জীবনকে ক্লান্তিজনিত যে বিতৃষ্ণা আসে, তার মতে তা-ই জীবন ত্যাগ করার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হতে পারে। এ কথাও ভেবে দেখবার মতো যে, মৃত্যু যখন এগিয়ে আসে তখনই সে কারণে মহামানুষদের প্রকৃতিতে আকস্মিক পরিবর্তন হয়না। অন্তিম মুহূর্তটি পর্যন্ত তারা প্রকৃতিতে একান্ত স্বাভাবিকতা অব্যাহত রাখেন। অগাস্টাস সিজার ২ (Augustus Saesar) অন্তিম মুহূর্তে তার স্ত্রীকে কি সুন্দর ভাষায় প্রীতি ও শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলেন -- "বিদায়, লিভিয়া যতদিন বেঁচে থাকো আমাদের দাম্পত্য জীবনের স্মৃতিকে মনে রাখো।" টাইবেরিয়াস ৩ (Tiberius) শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিকতার লক্ষণ বজায় রেখেছিলেন। ঐতিহাসিক ট্যাসিটাস ৮ (Tacitus) মন্তব্য করেছেন যে টাইবেরিয়াস দৈহিক শক্তির অবনতি ঘটেছিলো কিন্তু বাইরের আবরণে স্বাভাবিকতা অব্যাহত ছিলো। ভেসপাসিয়ান ৪ (Vespasian) মৃত্যুকে গ্রহন করলেন কৌতুকের সাথে। আসনে উপবিষ্ট অবস্থায় বললেন মরে আমি দেবতা হতে যাচ্ছি। গলবা ৫ (Galba) দন্ডাদেশের সাথে নিজের মৃত্যুকে বরণ করলেন। নিজের গৃবাদেশ এগিয়ে দিয়ে বললেন রোমের জনগণের কল্যাণের জন্য যদি হয় অস্ত্রাঘাতে আমাকে শেষ করো। সে সেপ্টেমিয়াস সেভেরাস ৬ (Septemius Severus) রাজকার্য পরিচালনার মাঝখানে মৃত্যু বরণ করলেন আর বললেন "কই কারো যদি কোন কাজ বাকি থাকে এখনই শীঘ্রই নিয়ে এসো"। এরকম আরো অনেক দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। অবশ্য, স্টোইকরা (৯) তাদের অতিশয়োক্তি ও দুরূহ প্রস্তুতি-পদ্ধতি দ্বারা মৃত্যুকে বড় ভয়াবহ করে তুলেছিলো। তার চেয়ে বরং সেই ব্যাক্তিই ভালো বলেছেন যার বিচারে জীবনের সমাপ্তি প্রকৃতির অন্যতম আশির্বাদ। জন্ম ও মৃত্যু উভয়ই নিতান্তই স্বাভাবিক, আর শিশুর জন্য বোধ হয় উভয় ব্যাপারই সমান বেদনাদায়ক। একাগ্রচিত্ত কর্মব্যাস্ততার মাঝে যে মৃত্যু ঘটে তা উত্তেজিতি মানুষের আহত হওয়ার সাথে তুল্য। উত্তেজিত মানুষ আহত হবার পরে বেশ কিছুক্ষণ আঘাতের অনুভুতি থেকে মুক্ত থাকে। কাজেই সৎ ও শুভ কিছুতে আত্মনিয়োগ করে থাকাই হচ্ছে মৃত্যুর বেদনাকে এড়িয়ে চলার উপায়। কিন্তু আমি একান্ত ভাবে বিশ্বাস করি যে "চাওয়া-পাওয়ার পর্বটি মুটামুটি শেষ হয়ে গেলে প্রভু এবার আমাকে নিয়ে নাও" এ প্রার্থনা দিয়ে মৃত্যুকে আহ্বান জানানো একান্তই মধুর। এটা উপেক্ষেণীয় নয় যে মৃত্যুর সাথে আমাদের জন্যে সুযশের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এবং অপরের পরশ্রীকাতরতার সমাপ্তি ঘটে। জীবদ্দশায় যাকে লোকে হিংসা করে তার মৃত্যুতে তাদের অন্তরে আবার তার জন্যই তাদের অন্তরে প্রীতিবোধ জাগ্রত হয়।
টিকাঃ
১,২,৩,৪,৫ঃ উনারা সবাই রোম রাজ্যের সম্রাট ছিলেন।
৭ঃ বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক, পন্ডিত ও নাট্যকার। উনি রোম সম্রাট নিরোর বাল্যকালের শিক্ষক ও রাস্ট্রীয় কার্যের পরামর্শক ছিলেন। পরে তিনি আপন শিষ্য নিরোর আদেশে আত্মহত্যা করেন।
৮। বিখ্যাত রোমান ঐতিহাসিক।
৯। স্টোইকরা গ্রীসদেশীয় বিশেষ দার্শনিক মতবাদ স্টোইসিজম এর অনুসারী ছিলেন। এরা মানুষের সাধারণ আসক্তির উর্ধ্বে এক কঠিন নীতি-পীড়িত জীবন যাপনের পক্ষপাতী ছিলেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.