নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদস্খলিত ভালোবাসা... এবং কিছু অব্যক্ত কষ্ট আর কান্না!!

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০০

...অন্ধকার আজকাল বড্ড ভালো লাগে....অথচ একটা সময় দিনের আলো ছিল আমার ভীষণ প্রিয়। প্রতিদিন নতুন ভোরের অপেক্ষায় থাকতাম আমি ।...এক একটা ভোর কি অদ্ভুত রকম সুন্দর হত তখন! এক একটা ভোর যেন নতুন এক একটা গল্পের শুরু।..
কালে কালে বেশ খানিকটা পথ আজ পেরিয়ে এসেছি।...এখনকার ভোরগুলো আর আগের মতন সুন্দর হয় না, নতুন কোন গল্পের কথাও বলে না.... ভোরগুলো এখন বড্ড বেশি একঘেয়ে, একপেশে!....তাই অন্ধকারই আজ আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমার সব গোপনীয়তার, কান্নার আর দীর্ঘশ্বাসের নীরব সাক্ষী।.....

কপট বন্ধুদের চেয়ে যদিও এই বন্ধুই ঢের ভালো।....কোন উপকারে না আসুক, অপকার করার অন্তত কোন অভিপ্রায় নেই তার। হ্যাঁ...আমার জীবন এখন সত্যিকারের বন্ধুহীন। এমনকি বন্ধুত্ব শব্দটাই বড্ড বেশী মিথ্যা আর লোক দেখানো মনে হয় আজকাল। স্বজনদের উপস্থিতিও কদাচিৎ, কালেভদ্রে ঘটে। প্রিয় মানুষ বলতে এই দুনিয়ায় একজনই অবশিষ্ট আছে কেবল। যার মুখের দিকে তাকিয়েই স্বেচ্ছামৃত্যুর বিষ পান করা হয়ে উঠছে না।..

আর একজন প্রিয় মানুষ ছিল...সবার চেয়ে প্রিয়...হয়তো মায়ের চেয়েও...
স্বার্থপরের মত শোনাচ্ছে, তাইনা?... জানি। তবু এটাই হয়তো সত্যি! ২৪ ঘন্টা যাকে ঘিরে আমার সময়, স্বপ্ন, ভবিষ্যত, সুখ, আনন্দ, চাওয়া-পাওয়া সব আবর্তিত হত...সেই একজনই আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিল!

জীবনের গোলমেলে হিসাবের ব্যাপারে আমার কোনকালেই কোন ধারণা ছিল না। এতটাই সহজ সরল ছিল জীবনটা। অথচ যে মানুষটার হাতে পরম বিশ্বাসে জীবনটা নির্ভার ভাবে ছেড়ে দিয়েছিলাম, সে আমাকে ঠকালো! বীভৎস ভাবে ঠকালো। দিনের পর দিন তার বদলে যাওয়া নিষ্ঠুর মারমুখী ব্যবহার, অপমান, ৮ বছরের সবগুলো মুহুর্তের কথা, প্রতিশ্রুতির কথা অকপটে অস্বীকার করা...... এসব কিছু আমাকে জীবনের সেই অন্ধকার দিকটাকে চিনতে শেখালো যার সম্পর্কে আমরা পূর্ব কোন ধারণাই ছিল না।...এমন সব ভয়াবহ কুৎসিত সব মিথ্যা আর নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হলাম আমি, যে নিষ্ঠুরতা এ জীবন আগে কখনো দেখে নি।..

পরম বিশ্বাসে একদিন যে মানুষটার হাত ধরেছিলাম, যে মানুষটার উপর ভরসা করে দীর্ঘ ৮ টা বছর অপেক্ষা করলাম, কেমন অদ্ভুত ভাবে সে বদলে গেল...।
যে স্বপ্নটাকে ছুঁয়ে দেখবো বলে জীবনের চলার পথের সব বাহুল্যগুলো ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিলাম, সেই স্বপ্নের দিকে যতই এগিয়ে চাইছিলাম, স্বপ্নটা ততই দূরে সরে যাচ্ছিল...স্বপ্নের পিছনে ছুটতে গিয়ে একটা সময় খেয়াল করে দেখলাম, যার হাত ধরে ছুটে চলেছি এতটা পথ, সে আমার হাতটা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে...তার জন্য বাহুল্য ভেবে যাদের একটা সময় নিঃসংকোচে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি, তারাও আজ দৃষ্টিসীমার বাইরে হারিয়ে গেছে...
জীবন নামের মহাসমুদ্রে আমি আজ বড্ড একা।...একটা সময় ছিল যখন মনে হত হাবুডুবু খেয়ে হলেও বাঁচি, বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।....ঈশ্বরের কাছে প্রতি মুহুর্ত প্রার্থনা করতাম, আমার বিশ্বাস তুমি ভেঙ্গে দিও না! ... ৮ বছরে তিলে তিলে মানুষটার চরিত্রের যে অবয়ব আমি মনের ভেতর তৈরি করে নিয়েছি, যেমন জেনেছি তাকে...সেই বিশ্বাসটা, সেই অবয়বটা তুমি মিথ্যা করে দিও না... ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শোনেন নি! পরম ভালোবাসা, মমতা আর বিশ্বাসে বছরের পর বছর ধরে তৈরি করা অবয়বটা কেবল যেন বদলে গেছে... !!! যেন কেউ এসিড নিয়ে ঝলসে অবয়ব টাকে কুৎসিত করে দিয়ে গেছে।.............

এখন আর বেঁচে থাকার চেষ্টা করি না! বিশ্বাস যেখানে এতটা ঠুনকো, মানুষ যেখানে এতটাই পদস্খলিত.... মানুষের বিবেক যেখানে মমির অস্তিত্ব নিয়ে ঠিকে আছে কেবল, সেখানে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থেকে কি লাভ??।... তার চেয়ে বরং জীবনের স্রোত ই আমাকে নিরুদ্দেশে ভাসিয়ে নিয়ে যাক....যাক না...ক্ষতি কি তাতে!

জানেন তো, চারপেয়ে জানোয়ার আঘাত করলে গভীর ক্ষত তৈরি হয়, যত্নে তা আবার সেরেও যায়। কিন্তু দো-পেয়ে জানোয়ারের দাঁতে এতটা বিষ থাকে, এর আঘাতে মৃত্যু অনিবার্য!

বলছি তার কথা, যার হাত ধরে মরীচিকার পেছনে কোন দিকে না তাকিয়ে দিনমান এক করে ছুটে চলেছি অনেকগুলো বছর। মনুষ্য জীবনের সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ সময়গুলো সম্ভবত! যার মুখোশবিহীন কদর্য চেহারাটা আমার দু'চোখের পাতা আজ আর এক করতে দেয় না! যার নিখু্ঁত নিপাট ভালোমানুষীর অভিনয় আমাকে প্রতি মুহুর্ত আমাকে আঘাত করে চলেছে, ভোরের আকাশ, শরতের কাশফুল, বৃষ্টি ভেজা সেঁদো মাটির গন্ধ, কদম ফুল, ঝড় কোন যা কিছুতে এ জীবনে ভালোলাগা কাজ করতো, তার কোন কিছুই আজ আর আমাকে স্পর্শ করে না! অভিশপ্ত একটা জীবন্মৃতের জীবন কাটাচ্ছি আমি শুধু একজনকে বড্ড বেশি ভালোবেসেছিলাম বলে, বিশ্বাস করেছিলাম বলে!....সত্যিকার ভালোবাসায় এরচেয়ে উত্তম প্রতিদান আর কি হতে পারে বলুন তো!!.... আমার সাজানো গোছানো জীবনটাকে ছিবড়ে খাবলে ক্ষত বিক্ষত, করে দিয়ে নতুন মাংসে মুখ গুজেছে সে আজ!.....সেই মাংস খোঁজায় কোন লজ্জা নেই, দ্বিধা নেই...নেই কোন অপরাধবোধ!

দো পেয়ে জানোয়ারেরা আসলে সব পারে...প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, ভাঙতেও পারে। মানুষের ভালোবাসা আর আবেগ নিয়ে খেলতে পারে, খেলাতে পারে, স্বপ্ন দেখাতে পারে, ভাঙতেও পারে...একই মন দিয়ে অসংখ্য আমিনা কে ভালোবাসার কথা বলতে পারে, অসংখ্য জীবন নষ্টও করে দিতে পারে.....

...দীর্ঘযাত্রার ক্লান্তি আজ আমায় অনেকটা ধীর করে দিয়েছে! নতুন ভাবে চেনা কুৎসিত অবয়বটার পেছনে আমি এখন আর উন্মাদের মত ছুটে বেড়াই না!... তবে হ্যাঁ, পরম ভালোবাসা আর বিশ্বাসে তার যে অবয়বটা আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মনের ভেতর গড়ে তুলেছিলাম, সেই অবয়বটার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি...আমার সব হারানোর বেদনা সেই সুন্দর অবয়বটার জন্য...কুৎসিত অবয়বটির জন্য সীমাহীন প্রচন্ড ঘৃণা ছাড়া আর কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই আমার ভেতরে ! ...
এখন বেঁচে থাকার চেষ্টা করার চাইতে তাকিয়ে দেখে যাওয়াটাই আমার সহজ মনে হয়...
আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখি, চিরায়ত সেই নাটকের পটভূমিকা আর চিত্রনাট্য একই রয়ে গেছে। শুধু বদলে গেছে নটী। নটের ভূমিকা সেই আগের মতই আছে.....

জীবনে কখনও কোন কিছু নিয়ে আফসোস হয় নি। অথচ আজকাল একটা জিনিস নিয়ে মনের ভেতর প্রায় আক্ষেপ কাজ করে!....একজন নষ্ট মায়ের গর্ভ থেকে কেন জন্ম হলো না আমার..?? তাহলে হয়তো আমিও দোপেয়ে জানোয়ারদের মত খেলতে শিখতাম, স্বপ্ন বেঁচে খাওয়া ব্যাভিচারী হতাম, এক শরীর থেকে আরেক শরীর, এক মন থেকে আরেক মনে মুখ গুঁজে লালসা মেটাতে জানতাম, জানতাম কি করে হত্যা করতে হয় এক একটা জীবন আর এক একটা স্বপ্ন....

শেষ করছি একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে। আমার কাছের এক ছোট বোন হোস্টেলে থাকে। গতকাল তার হোস্টেলের এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কারণ চিরায়ত সেই প্রতারণা। প্রতারক প্রেমিকের প্রতারণার কষ্ট আর আঘাত সহ্য করতে পারে নি মেয়েটি। বেঁচে থাকার চাইতে মৃত্যুই তার কাছে সহজ মনে হয়েছে। অনেকেই আত্মহত্যার বিপরীতে কথা বলবে...আত্মহত্যা কাপুরুষের কাজ.... আরোও কত শত মন্তব্য আর অপবাদ রয়েছে আত্মহত্যাকারীর জন্য। কিন্তু একটা মেয়ে যখন কাউকে সত্যি ভালোবাসে সে ভালোবাসা যে কতটা তীব্র হতে পারে, প্রেমিকরূপী জানোয়ারগুলোর তা উপলব্দি করার ক্ষমতা নেই। তাইতো তারা ভালোবাসার নাটক করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিস্পাপ প্রাণগুলোকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করে। আর নিজেরা আনন্দ আর ভালোবাসার ফেরি করে চলে এক মন থেকে আরেক মনে, এক শরীর থেকে আরেক শরীরে!...

এক বুক কষ্ট, অভিমান আর অপমান নিয়ে যে মেয়েটা পরপারে হারিয়ে গেল, একটা নষ্ট পুরুষের জন্য জীবন যে মেয়েটাকে তার সব পাওনা থেকে বঞ্চিত করলো সেই প্রতারক কুকুরটাকে আইনের আওতায় এনে আত্নহত্যার প্ররোচনা দেয়ার জন্য কেউ তার শাস্তির কথা বলবে না কখনও....আর এই সুযোগেই জানোয়ারগুলো একটার পর একটা মেয়ের জীবন ভালোবাসার নামে নষ্ট করতে থাকবে।...

বোকা মেয়ে তুমি সোনালী! একটা সময় তোমার মত ভুল আমিও করতে যাচ্ছিলাম। বিশ্বাস করো, তোমার মৃত্যু তোমার ভন্ড প্রেমিকের পুরুষালি লালসা এতটুকুও কমাবে না, আরেকটা মেয়ের শরীরে একই ভাবে কামড় বসানোর সময় তার এতটুকুও দ্বিধা হবে না, পুরুষাঙ্গ টা এতটুকুও কাঁপবে না তার.... !! অসৎ চরিত্রের এই পুরুষগুলোর জন্মই হয়েছে কুকুরের বীর্য থেকে। এদের ভেতর তাই নূন্যতম নৈতিকতা বোধও অনুপুস্থিত। এদের কাছে ঈশ্বর নেই, পাপ-পূণ্য, মৃত্যু বা পরকালের জবাবদিহিতার ভয় নেই। তাই এরা অবলীলায় শুধুমাত্র নিজেদের কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করতে ঈশ্বরের নামে, এমন কি কুরআন ছুঁয়েও মিথ্যা শপথ করতে পারে। সমাজটার প্রতিনিধিত্ব এই মানুষরূপী জানোয়ারগুলোয় করছে। সমাজই এই জানোয়ারগুলোর সবচেয়ে বড় ঢাল। তুমি আত্মহত্যাকারী নও, তোমাকে আত্মহত্যা করতে তোমার প্রতারক প্রেমিক বাধ্য করেছে, এই সত্যিটা এই কুকুরশাসিত সমাজ কখনো মেনে নেবে না। তাই ভালোবাসার কথা বলে তোমার জীবন নষ্ট করার দুঃসাহস যে কুকুরটা দেখিয়েছে, তাকে শাস্তি দিতেই তোমাকে বেঁচে থাকতে হত!...
শাস্তি ওদের অবশ্যই প্রাপ্য। তা নইলে এই সব কুকুরগুলোর ভ্রণ থেকে ভবিষ্যতে আরো অসংখ্য নষ্ট পচে যাওয়া সত্ত্বা জন্ম নেবে .....অসংখ্য শ্ব-দন্ত জানোয়ার বাধ্য করবে অসংখ্য আমিনা বা সোনালীদের আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে....
....শাস্তি তোমাকেই দিতে হত সোনালী। অথচ তুমি মরে গেলে....তুমি মরে গিয়ে আবারও প্রমাণ করে দিয়ে গেলে 'মানুষ হয়ে জন্মানোতে কলি যুগে কোন সার্থকতা নেই। এ যুগ নষ্ট ভ্রণ থেকে জন্ম নেয়া দোপেয়ে জানোয়ারদের যুগ!' .......

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪০

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: :(

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৮

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: মানষিক কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার আমার নিজস্ব একটি পদ্ধতি আছে। আমি কারও দেয়া কষ্টে একবারই কষ্ট পাই, বারবার মনে করে নিজের কষ্ট বাড়াইনা। কারন বারবার কষ্ট পেয়ে ক্ষতি যা হবার আমারই হচ্ছে, তারতো নয়ই। আমি কষ্টটাকে টোটালি অস্বিকার করি। তবে এতে অপরাধী পার পেয়ে যায় ঠিকই, তবে আমার মানষিক শান্তি নষ্ট হয় না। আপনার কষ্টটা ফিল করে বলছি, আপনার মত করে আপনি চেষ্টা করুন এর থেকে বের হবার। কারন জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না। নতুন ভাবে জীবনটাকে গুছিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই সাহসী মানুষের কাজ। নিজের সীমানা ক্রস করে গেলাম কিনা বুঝছি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.