নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেক্ষাপট: ঐশীর রায় শিথিলের আবেদন বনাম নারীর সমঅধিকার আন্দোলন!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২

সেদিন পত্রিকাতে দেখলাম বাবা-মায়ের হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ঐশী মৃত্যুদণ্ডের রায় মওকুফের জন্য উচ্চ আদালতে আপীল করেছে। এ বিষয়ে পত্রিকাতে আরও বলা হয়েছে স্বাধীনতার ৪৪ বছরের ইতিহাসে এদেশে কোন নারীর মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করা হয় নি! সেদিক বিবেচনায় ঐশীর শাস্তি লাঘবের বড়সড় একটি সুযোগ থেকে যাচ্ছে। সাথে তার বয়স টাও হয়ত তাকে শাস্তি লাঘবের ক্ষেত্রে খানিক টা বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।
"স্বাধীনতার ৪৪ বছরের ইতিহাসে এদেশে কোন নারীর মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করা হয় নি" এই বাক্যটিতে অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করার যৌক্তিকতাটা আমার বোধগম্য নয়। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এসে বাংলাদেশে যদি যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার কার্যকর হতে পারে, তাহলে ঐশীর ফাঁসির রায় কেন নয়? বয়সের তুলনায় ঐশীর কর্মকাণ্ড যেমন পরিপক্ক ছিল, তেমনি মা-বাবা কে হত্যা করার যে পরিকল্পনা সে করেছিল সেটাও ছিল রীতিমত পরিণত ও প্লান মাফিক! ঐশীর কর্মকাণ্ড, জীবনযাপনের ধরন আর হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মত বিষয়, সবটাই যখন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মত ছিল তখন শাস্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে কেন তাকে শুধু নারী বলে ছাড় প্রদান করা হবে যখন সমঅধিকারের বিষয়টি আমাদের এত মাথা ব্যথার কারণ?
বাংলাদেশ সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত কে প্রভাবিত করতে এদেশের মিডিয়া খুব পরোক্ষ এবং কার্যকর ভুমিকা পালন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সে কারণেই 'স্বাধীনতার ৪৪ বছরের ইতিহাসে এদেশে কোন নারীর মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করা হয় নি'- এ কথাটাতে আমার আপত্তি! একথাটা বারবার প্রকাশের মাধ্যমে মিডিয়া অবশ্যই ঐশীর স্বপক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করবে এবং এক সময় সেটা হয়ত ঐশীর রায় শিথিলে ভুমিকা রাখবে! কিন্তু তা কেন?

অপরাধীর বড় পরিচয় হওয়া উচিত সে একজন অপরাধী। নারী বা পুরুষ, লিঙ্গ বিবেচনায় তা কোন ভাবেই শিথিলযোগ্য হতে পারে না! ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু প্রোগ্রেসিভ চিন্তা চেতনার মানুষদের সন্ধান মেলে যারা ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেন যে ঐশীদের সৃষ্টির পেছনে যারা রয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে, তাদের শাস্তি দিতে হবে! আমার ব্যক্তিগত ভাবনা বলে ঐশীরা নিজেরাই তৈরি হয়, এদের কেও তৈরি করেনা। কারণ ভালো আর মন্দ সব সময় আমাদের সামনে থাকে। কিন্তু এই দুটো দিকের কোনটা আমরা বেছে নেব সেই সিদ্ধান্ত নিতান্তই আমাদের হাতে থাকে... হ্যাঁ, তবে আমাদের এই জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহনে ভুমিকা রাখে আমাদের পরিবার! পরিবার আমাদের শেখায় কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ এবং ভালো বা মন্দের ভেতর আমরা কোনটিকে বেছে নিব! একটি পূর্ণ বয়স্ক মানুষ তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সঙ্গ থেকে শিক্ষা নেয়। তবে প্রাথমিক আর দীর্ঘস্থায়ী শিক্ষাটা সে পায় তার পরিবার থেকে। বয়সের সে বিবেচনায় ঐশীর শেখার জায়গাটা হত্যাকাণ্ডের সময় পর্যন্ত প্রধানত তার পরিবারই ছিল। তাই সে হিসাবে বলতে গেলে, ঐশী কে সঠিক শিক্ষা দিতে না পারার জন্য সমাজ বা সঙ্গের আগে প্রধানত দায়ী তার পরিবার! ...
যদিও আমার চিন্তার খোরাক ঐশীর অপরাধের বিচার বিশ্লেষণ নয়, তবুও প্রসঙ্গক্রমে কথাগুলো বলা। পুরুষ আর নারী... সমাজ এবং বিচার ব্যবস্থা, দুটোর ভিতর প্রকট হয়ে উঠা বৈষম্যই আমার চিন্তার কারণ... তবে কি মেয়েরা সত্যি অবলা? দুর্বল? ... যদি তা হয়ে থাকে তাহলে সম অধিকারের প্রশ্ন আসে কেন? আর যদি তা না হয়, তবে কোন ধরনের ছাড়ের প্রশ্নই বা কেন আসে?
নারী আর পুরুষ...একই মেকানিজমে তৈরি হলেও সম্পূর্ণ আলাদা এবং বিশেষ বৈশিষ্টের এর অধিকারী। এরা একে অপরের পরিপূরক। কোনভাবেই প্রতিযোগী নয়। অথচ নারী-পুরুষ কে প্রতিযোগিতার রিয়েলিটি শোতে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কিছু মধ্যস্বত্ত্ব ভোগী সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা মানুষগুলোই যেন প্রতিনিয়ত সম আদায়ের নামে প্রমান করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মেয়েরা দুর্বল, পিছিয়ে পড়া! একদিকে 'নারী' শব্দ টিকে ব্যবহার করে সব ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা আদায়, একই সাথে অনর্থক তুলনা টেনে এনে সম অধিকারের গান গাওয়া! এর চেয়ে বড় হিপোক্রেসি আর কি হতে পারে! সাম্যবস্থায় নারীর পাওনা নারী পাবে, পুরুষের টা পুরুষ। অথচ
নারী নির্যাতন, লিঙ্গ বৈষম্য, সমঅধিকার জাতীয় শব্দগুলোকে ব্যবহার করে মেয়েদের প্রতিনিয়ত যেমন হেয় করা হচ্ছে, তেমনি ইচ্ছাকৃত ভাবে মেয়েদের ক্ষমতাকে ছোট করা হচ্ছে কতিপয় নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। পাশাপাশি 'নারী' শব্দটিকে ব্যবহার করে এমন কিছু আইন ও শাস্তির বিধান তৈরি করা হচ্ছে যা রীতিমত 'পুরুষ' নির্যাতনের সামিল! আমাদের চারপাশের সমাজে কি শুধুই মেয়েরা নির্যাতিত হয়? সেখানে নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যা কি একেবারেই নেই?...সতি্য বলতে গেলে নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবে প্রকাশ ভঙ্গি, প্রচারণার অভাব আর মিডিয়ার অসহযোগিতার কারণে তা চাপা পড়ে থাকে। কেবলমাত্র বৌ-শাশুড়ির যুদ্ধের জেরেই অন্তত ৭০% শতাংশ পুরুষ প্রতিদিন মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হন। সেই নির্যাতন বিচারের আইন কোথায়? প্রসঙ্গক্রমে একটা ঘটনা শেয়ার করি। একবার আমার এক মামা আর মামী পারিবারিক কোন এক অশান্তির জেরে ঝগড়া করছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমার মামী মামার লুঙ্গি টেনে ছিড়ে ফেলেছে, হাতে কামড় দিয়েছে। এখন এই ঘটনাটি যদি একটি নারীর সাথে ঘটতো আর সেই নারী যদি থানায় কমপ্লেইন করতো, নারী নির্যাতন আইনের সুবিধা নিয়ে সাথে সাথেই পুরুষটিকে ১৪ শিকের ভেতরে ভরে দেয়া হত। কিন্তু পুরুষটি কোথায় যেত? তার নির্যাতন রোধে কোন আইনটা আছে এদেশে? নারী নির্যাতন রোধে তৈরি আইনগুলোর যাচ্ছে তাই রকম ব্যবহার করে অনেক মহিলায় সুবিধা নিচ্ছেন এবং পুরুষদের ব্ল্যাকমেইল করছেন। অথচ সম অধিকার নিয়েই যখন এত তর্ক বিতর্ক তখন আইনের বেলাতেও তা উভয়ের জন্যই সমান ভাবে কার্যকর করা উচিত ছিল।
সীমাবন্ধতা পুরুষেরও যেমনআছে, নারীরও আছে। ওয়াসফিয়া ৭ পর্বতচূড়া জয় করেছে বলেই যে সেই একই কাজটি সব মেয়ের পক্ষেই করা সম্ভব তা যেমন সত্যি নয়, তেমনি একজন মেয়ে কোন কাজ পুরুষের মত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই অন্য কোন মেয়ে তা করে দেখাতে পারবে না, সেটাও ভুল।

প্রয়োজনের সময় 'নারী' বলে বাড়তি সুবিধা আদায়, আবার সম অধিকারের কথা বলে প্রোগ্রেসিভ সোসাইটির অ্যাডভান্টেজ নেয়া, দুটোর কোনটাই ঠিক। নারী বা পুরুষ বলে নয়, বরং নাগরিক হিসাবে সব নাগরিক সুবিধা ও আইনের অধিকার সবার জন্য সমান হওয়া উচিত!....
নির্যাতনের অভিযোগ করার অধিকার যদি নারীর থাকে, তবে পুরুষের ক্ষেত্রেও সেই অধিকার সমান ভাবে প্রযোজ্য হওয়া দরকার। অপরাধ বিবেচনায় কোন পুরুষ যে শাস্তি পায়, একই অপরাধে সমান শাস্তি তাই একজন নারীরও পাওনা।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৬

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: শ্রোতের বাইরে গিয়ে কঠিন সত্য উচ্চারন সবাই করতে পারে না, আপনি সেটা পেরেছেন। ঐশীর বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষন করলেও পোষ্টের ওভারঅল বক্তব্যের সাথে একমত। দেখলেনতো, মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের বক্তব্য আরও ভালভাবে উত্থাপন করা যায়।

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩১

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: স্যরি, "স্রোত" i.o. "শ্রোত"

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৯

আমিনা মুন্নী বলেছেন: ভাই, শিশু.... নির্যাতনের বিষয়ে নিশ্চয়ই জানেন। বলছি খুব ছোট্ট বেলার কথা। ক্লাস থ্রী তে পড়তাম তখন কিংবা টু তে। তখন সেই সময় ঐশীর বাবারর প্রায় ভিকটিম হয়ে যাচ্ছিলাম। পর্যাপ্ত সুযোগের অপেক্ষায় উনি সর্বনাশ করতে পারেন নি। কিন্তু ওই শিশু বয়সে মনে যে দাগ ফেলে দিয়েছিলেন তা আজোও মুছে যায় নি। সম্ভবত হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে যখন কনফার্ম হয়েছিলাম যে এই ব্যক্তি সেদিনের সেই এস আই মাহফুজ, তখন আমার মত পৈশাচিক অনুভুতি অনুভুতি আর কারোও হয় নি! একারণেই পরিবার থেকে শিক্ষা পাওয়ার কথাটা এত গুরুত্ত্ব দিয়ে বলেছি। যা আমার সাথে হতে যাচ্ছিল সুযোগের সদ্ব ব্যবহারে তা যে অন্য কারো সাথে তিনি ঘটান নি তা কে বলতে পারে!

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: বয়সের তুলনায় ঐশীর কর্মকাণ্ড যেমন পরিপক্ক ছিল, তেমনি মা-বাবা কে হত্যা করার যে পরিকল্পনা সে করেছিল সেটাও ছিল রীতিমত পরিণত ও প্লান মাফিক! ঐশীর কর্মকাণ্ড, জীবনযাপনের ধরন আর হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মত বিষয়, সবটাই যখন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মত ছিল তখন শাস্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে কেন তাকে শুধু নারী বলে ছাড় প্রদান করা হবে যখন সমঅধিকারের বিষয়টি আমাদের এত মাথা ব্যথার কারণ?


আপনার মানসিকতা অস্বাভাবিক। সচেতন, আধুনিক, চিন্তা ও সভ্যতার জগতের মানুষদের সাথে যথেষ্ট দুরত্ব রয়েছে।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫১

আমিনা মুন্নী বলেছেন: Right you are! And most welcome! :) I so admit that bro!

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৫

কেউ নেই বলে নয় বলেছেন: ঐশীর সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা সে বিচারটাকে প্যাচানর চেষ্টা করে গেছে। সে যদি স্বীকার করতো যে সে দোষী এবং এ কারনে সে অনুতপ্ত তবে সেটা অন্য দৃষ্টিতে দেখা যেতো। বয়স আর অন্য অনেককিছু বিবেচনায় শাস্তি কমেও যেতে পারতো। কিন্তু একজন যখন স্বীকারই করে না যে সে অপরাধ করেছে এবং সেই অপরাধই আবার সন্দদেহাতীত ভাবে প্রমানিত হয়, তখন আদালত তাকে সর্বচ্চ শাস্তিই দেয় অপরাধের মাত্রা হিসেবে নিয়ে। খুন একটা নয়, দুটা। আবার পরিকল্পিত এবং নৃশংস।

এর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। বখে যাওয়াদের জন্য করুনা নয়, যার অনুতাপ নেই তার জন্য করুনা নয়। করুনা আর মায়া দেখাবার জন্য সমাজে কোটি কোটী মানুষ পাওয়া যাবে।


৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আমার যেন মনে কোথাও কোন একটা পেছ আছেই, ঐশীর প্রতি করুনার যায়গা থেকে নয়, শুধু মনে হয় এমনটা কি হতে পারে!
যাইহোক অনেক কিছুই ঘটে যায় হয়তো ইহাও একটা ঘটে যাওয়া ঘটনা মাত্র।
আপনার পোষ্ট ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.