নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পশ্চিমা ভোগ সংস্কৃতিতে বাক্স বন্দি বাংলাদেশী মুসলিমের ‘মাহে রমজান’

২৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬

বাংলাদেশী মুসলিমদের অবস্থা বর্তমানে হাইব্রিড খচ্চরের চেয়েও খারাপ। খারাপ বলতে একটু বেশিই খারাপ যেন। ভীষণ আইডেন্টিটির সংকটে ভুগছি আমরা। একদিকে দাঁড়ি টুপি লাগাতে পারছিনা মৌলবাদী হয়ে যাওয়ার ভয়ে, আরেক দিকে পুরো পশ্চিমা কালচারেও নিজেদের পুরোপুরি ভাসিয়ে দিতে পারছিনা পরকাল হারানোর ভয়ে। তাই ইদানিং কালে আমাদের অবস্থা প্রায় বেখাপ্পা কাকতাড়ুয়ার মত। খুউব কদাকার দেখতে!
এই উপমহাদেশে একমাত্র বাংলাদেশী মুসলমানরাই সম্ভবত নিজের অস্তিত্ব নিয়ে এমন নিদারুন সংকটে ভুগছি। সিঁদুর শাঁখা পড়ে পহেলা বৈশাখে উৎসব করাও যেমন চাই আমাদের, তেমনি থার্টি ফার্স্ট এর নামে রাত দুপুরে মদ নিয়ে মেয়েমানুষ নিয়ে বেলেল্লাপনা করাটাও চাই। হলি খেলাও চাই, ঈদ করাও চাই। রোজা রাখি আর না রাখি, ঘটা করে সেহরি আর ইফতার পার্টি করাটা ষোল আনা চাই!
এদেশটাকে ধ্বংস করবে দুই শ্রেণির মানুষ। এক, মুক্তমনারা আর দুই, বুর্জোয়া সমর্থিত মিডিয়া। শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য বিদেশি বেনিয়ারা আমাদের ধর্ম সংস্কৃতি কে যাচ্ছেতাই ভাবে ব্যবহার করছে। ব্যবসার মুনাফা বৃদ্ধির জন্য অসংলগ্ন সব ভিনদেশী উপকরণ ঢুকে যাচ্ছে আমাদের সংস্কৃতিতে। মৌলিকতা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সব কিছু থেকে। আর আমরা হয়ে যাচ্ছি এক একটা উৎকৃষ্ট মানের খচ্চর

‘সার্বজনীন উৎসব’ নামক একটা চমৎকার শব্দ আমরা ইদানিং শিখেছি। ঠিক একই ভাবে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ নামক একটা অতি চমকপ্রদ বাক্যও আমরা প্রায়ই সুবিধা মত জায়গা বুঝে ব্যবহার করি। কিন্তু আদতেও কি তাই? দুর্গা পূজায় একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী যত বেশি মণ্ডব ও দেবী মায়ের মুখ পরিদর্শন করেন, তার পুণ্যি তত বেড়ে যায়। কিন্তু একজন মুসলিমের জন্য ইসলাম ধর্ম কি সেটা আদৌ সমর্থন করে? সনাতন ধর্মাবলম্বী কে দেখেছেন কখনও সার্বজনীন উৎসবের নামে কোরবানির ঈদে গরু জবাই করতে? নাকি কোন সনাতন ধর্মাবলম্বী কে দেখেছেন কখনও ঈদের জামাতে সামিল হতে? কারণ উনারা জানেন ‘সার্বজনীনতা’ অছিলায় কি কতদূর কতটা যাওয়া যায়!... সেটা আমরা অতি আধুনিক মুসলিমরা জানি না! আপনি যখন ‘সার্বজনীন উৎসব’ এর কাঁথা পুড়িয়ে বন্ধুদের নিয়ে মণ্ডব থেকে মণ্ডবে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরে বেড়ান, কোন মুসলিম মেয়ে যখন শাঁখা সিঁদুর পরে ‘সার্বজনীন উৎসব’ বন্ধুদের সাথে সেলফি তুলে বেড়ান, তখন আপনি শিরক করে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবার মত অপরাধটাই করেন। এবং খারিজ হয়ে যাওয়ার পরও আপনি নির্লজ্জের মত জন্মসুত্রে নিজেকে মুসলিম দাবী করেন। যে জিনিসের হক আপনি ঠিক মত আদায় করেন নি, সে জিনিস আপনি কি করে আপনার বলে দাবী করতে পারেন বলুন তো?
ধুরন্দর কিছু ব্যবসায়ীর উর্বর মস্তিক প্রসুত এদেশীয় উৎসবের এক নতুন সংযোজন সেহরি উৎসব। সেদিন কোন এক আধুনিকার ফেসবুক পোস্টে লেখা দেখতে পেলাম, ‘রমজান একটি সার্বজনীন উৎসব!’
পবিত্র গাভী!!
ভাবতে অবাক লাগে এদের অভিভাবকেরা কি ইসলামের বেসিক শিক্ষাটুকুও আজকাল সন্তানদের দেয় না। রমজান মাস মুসলিমদের ইবাদতের জন্য আর গুনাহ মাফের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট মাস। আল্লাহর নবী রাসুল (স) এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত করতে বলেছেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে মাফ চাইতে বলেছেন। অথচ ডিজিটাল জামানার ডিজিটাল জেনারেশন এটাকে বানিয়ে ফেলেছে সার্বজনীন উৎসব। রোজা সংযমের মাস, অথচ এই মাসটাতেই আমাদের অসংযম হয়ে যায় লাগাম ছাড়া। অনেকের কাছে না খেয়ে থাকাটাই কেবল রোজা। না খেয়ে রোজা করছি অথচ থেমে নেই গীবত, কুটকাচালি, পরনিন্দা, হিংসা, বিদ্বেষ বা হানাহানি। অনেকে সারাদিন না খেয়ে থেকে রোজা করেন, আর টাইম পাস করেন মুভি দেখে, গান শুনে... হায়রে রোজা! কোথায় চোখের সংযম, কোথায় কানের সংযম।
শুধু মাত্র না খেয়ে থাকাটাকে রোজা বলে না, সেটা কে বলে উপোষ করা।
এই সহজ স্বাভাবিক সত্যিটাও কি পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের দিতে ভুলে গেলেন? সেহরি আর ইফতারের সময়টা মুসলিমদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইফতার সামনে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ্‌ তা কবুল করেন। সেহরির সময়টা নফল ইবাদতের জন্য সেরা সময়। আল্লাহ্‌ এই সময় মানুষের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়ে বান্দাদের ডাকতে থাকেন, কে আছে ক্ষমা চাওয়ার, আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করবেন, কারো প্রয়োজন থাকলে তা চাইতে, তিনি টা পূরণ করবেন...
অথচ সেই ইফতার আর সেহরির সময়টাকে আমরা থার্টি ফার্স্ট নাইট আর পহেলা বৈশাখ এর কাতারে নামিয়ে এনেছি! স্লিভলেস ট্রান্স প্যারেন্ট আঁটসাঁট পোশাক করে ৩/৪ স্তরের মেকাপ দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঢলা ঢলি করে ছবি তোলাটা এখন সেহেরির ইবাদত! রোজা না রেখেও রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে চেক ইন দিয়ে খাবারের ছবি পোস্ট করাটাই এখন রমজানের সেরা ইবাদত। ইফতার কেবল মাত্র রোজাদারদের জন্য, এই সত্যি টা বাংলাদেশী মুসলমানদের সন্তানেরা এখন আর জানে না। ইফতারের টাইম এ বে-রোজদারের খাওয়া আর রোজকার সান্ধ্যকালীন নাস্তা যে একই ঘটনা এই পার্থক্যটুকু বোঝার বোধ যেন সবার মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে। দিনের পর দিন ব্যবসায়ীদের চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপনের চটকধারি ভাষা, প্রমোশন আর আধুনিকতার ভিড়ে ধর্মীয় অনুভুতি ও আচারগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে অথচ সেদিকে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
এদেশ মৌলবাদীদের কারণে পিছিয়ে পড়ছে বা জঙ্গিদের জন্য আফগান রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে বলে যারা হা-পিত্যেশ করে খবরের কাগজে লেখালিখি করছেন, টক শো আর সেমিনারে বাক-বাকুম করে নিজেদের ব্যবসা আর পরিচিতি বাড়িয়ে চলেছেন, তাদের বলতে চাই, এদেশে সতিকার দ্বীন -ই একটাও কামেল হুজুর/আলেম বা ইসলামের পথে চলা কোন জিহাদি থাকলে রমজান মাস নিয়ে ব্যবসায়ীগুলোর এমন তামাশার তীব্র প্রতিবাদ করতো। ... বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল হত!! এদেশে এমন একজনও আসল ইসলামি স্কলার থাকলে সেহরি বা ইফতার নিয়ে এমন বেলেল্লাপনা বা তামাশা করার সাহস কেউ দেখাতো না।
আসলে আমাদের মত আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা মুসলিমদের চাইতে নাস্তিকেরা অনেক ভালো। কারণ এরা সব কিছুর সত্ত্ব ত্যাগ করে ভোগের দিকে পা বাড়ায়।
আর আমরা ধান্দাবাজ মুসলিমেরা যারা আছি, আমাদের একুল অকুল সব চাই! পশ্চিমাদের মত ভোগ বিলাসের জীবনের প্রতি আমাদের আকর্ষণ যেমন দুর্নিবার, তেমনি মুসলিম পরিচয়টার লেবাস কোন রকমে গায়ে জড়িয়ে রাখাটাও আমাদের জন্য জরুরি! আর তাইতো দুই নৌকাই পা রাখতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম টাকে আমরা তামাশার মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছি।
এই অপরাধ ক্ষমাযোগ্য নয়!

নাস্তিকদের ক্ষমা আছে। আমাদের মত দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা মুসলিমদের কোন ক্ষমা নেই!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮

নুসরাত ইকবাল বলেছেন: আপু, আপনি অনেক সুন্দরভাবে মুসলমানদের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরেছেন।আসলেই মুসলমানদের এখন আর কোন মৌলিকতা অবশিষ্ট নেই। আমরা শুধুই নামের মুসলিম। তাই আমাদের সবকিছুতেই সার্বজনীনতা। আমাদের নিজস্ব বলতে শুধুই মুসলিম একটা নাম।

২| ২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: আমিনা মুন্নী, আসাধারন লেখা...ব্লগে হাজারো সসতা লেখার ভিরে আপনার লেখা টা চাবুকের মতন শপাং করে কেটে বসলো। ধন্যবাদ...লেখা চালিয়ে যান।

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:২৭

পেইজ ৭১ বলেছেন: আপনার লেখাটা চাবুকের মত কেটে বসল" শত পাঠকের মধ্যে একজনের মন্তব্য। এতে আপনার ভাললেখনী এবং ঐ নিদৃষ্ট পাঠকের সফটমন দুটোই প্রকাশিত। মনে রাখবেন, অপ্রকাশিত বাকি ৯৯জন পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনার পজিটিভ থাকাটা আরো জরুরী। মেট্রো লাইফের বাস্তবতায় ঝামেলা এড়াতে, কখনো কখনো ধানমন্ডির কোন রেস্তোরাঁয় বউসহ সেহরি খেতে যাই। আমাদের মন ও মনন বরকতময় রমজানকে কিভাবে ধারন করে, তার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট। সংখ্যায় নুন্যতম অংশের নোংরামি, গোটা বাঙ্গালী মুসলমানের গায়ে মাখানো টা মনে হয় ঠিক হবেনা। গোটা সাদা কাগজটায় কালো একটা বিন্দু, দৃষ্টিতে বিন্দুটাই আগে ফোকাস হয়। আপনি বিন্দুটির নিন্দায়, সাদা কাগজটিকে দুরে রাখুন।

৪| ৩০ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৪:০০

সজিব্90 বলেছেন: অসাধারন লেখা, আপনার বিশ্লেষনের ভিতর আমি নিজেও পড়ে যাই, শুধু ভাবি এখান বেরিয়ে যাওয়া উচিত কিন্তু উপায় খুজে পাচ্ছিনা , কোথায় যেন আটকে গেছি , নিজে কে অনেক বড় অপরাধী মনে হয়।

৫| ৩০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

শারলিন বলেছেন: অসাধারন লেখা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.