নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

I\'m a NSU Student and I\'m NOT a Terrorist

১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:১১



না, আমি NSU এর স্টুডেন্ট নই। তবে লেখাটা তাদের জন্যে।আমার এক পুরনো কলিগ স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে তিনি একজন নর্থ সাউথের স্টুডেন্ড এবং তিনি টেররিস্ট নন! ব্যাপারটা সত্যি দুঃখজনক।
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গী হামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই যে এমন স্ট্যাটাস দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি কথা বলাই বাহুল্য। কোন কিছুর বিষয়ে ধারণা করা আমাদের সহজাত স্বভাব। এক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে বিধায় নর্থ সাউথ যে জঙ্গীদের অভয়ারণ্য সে বিষয়ে মানুষের ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। এই ধারণা প্রসঙ্গে আরো কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। আমার শিক্ষা জীবন কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর যে প্রশ্নটি নিয়মিত পরিচিতজনদের কাছে শুনতে পেতাম তা হলো 'শিবিরের দৌরাত্ব কেমন সেখানে'? 'শিবির নাকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাস করে নিয়েছে?' হ্যাঁ, এটাকেই বলে ধারণা। এই ধারণাটা ছড়ায় মানুষের মুখে মুখে। কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ এমন ধারনায় উপনিত হয়।
এবার বাস্তবতায় আসি। রাবিতে আমার ৪ বছরের সময়কালে শিবিরের কোন আগ্রাসন দেখিনি। ছাত্রদল বা ছাত্র সংগঠনের মত এটিও একটি দল। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের মতো তারাও নতুন ছাত্রদের সংগঠনে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। বিভিন্ন সভা সেমিনার করে। কদাচিৎ মারামারি করে। অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের ছাত্ররা মারামারি হলে চাপাতি পিস্তল নিয়ে দৌঁড়ায়, কোপাুকপি করে। শিবির এত ঝামেলায় না গিয়ে ডিরেক্ট রগ কেটে দেয়। পার্থক্য বলতে এটুকুই। অথচ মানুষর ধারনা অনুযায়ী সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা হয় শিবিরের আগ্রাসনে। মেয়েরা হয়তো হিজাব ছাড়া বের হতেই পারে না। কিন্তু না। বাস্তবে চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যান্য ভার্সিটির মতো এখানকার ছাত্রছাত্রীরাও স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন করে, জাতীয় দিবস গুলোতে অনুষ্ঠান করে, পহেলা বৈশাখ বা ভালোবাসা দিবসে কনসার্ট করে, সন্ধ্যায় নাটকের গ্রুপের সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে হলে ফেরে। শিবিরের আগ্রাসন যদি থাকতোই তাহলে কি এসব সম্ভব সম্ভব হতো? হতো না! আমার ৪ বছরের সময় কালে ২ বার হল ভ্যাকেন্ট হয়েছে। দুবারই ছাত্রদল আর ছাত্রলীগের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে। শিবিরের কারণে না। তবুও মানুষের ধারণা কিন্তু বাস্তব চিত্রের পুরো বিপরীত।

ধারণার আর একটা নমুনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজ লাইফে পড়ার সময় যখন ভার্সিটি তে ভর্তির বিষয়টা চলে আসলো তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমার প্রথম পছন্দ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু পরিবারের চাপে চান্স পাওয়া সত্ত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ আমি পড়তে পারি নি। এর পেছনেও মূল কারণ টা কিন্তু এই ধারণা! চারপাশের অনেক শিক্ষক, আর পরিচিতজনের মুখে অতি প্রচলিত রিউমার অনুযায়ী জাহাঙ্গীনগরের পরিবেশ কে মেয়ের পড়াশুনার জন্য আমার পরিবার একেবারেই উপযোগী মনে করেন নি। বলায় বাহুল্য মানুষের মুখের এই ধারণা প্রসূত গল্পগুলো কোন অভিভাবকের জন্যই শুভকর নয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র কি আসলেই এমন? না! জাহাঙ্গীরনগর বাংলাদেশের সেরা ক্যাম্পাসের একটি যেখানে পড়াশুনা করা যেকোনো স্টুডেন্ট এর জন্যই সেৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এই যে প্রশাসনিক কিছু দুর্বলতা আর কিছু স্টুডেন্টদের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের দায়ভার বহন করতে হয় অন্যদের যা একেবারেই কাম্য নয়।

আবার ধরা যাক...আমার ভালোবাসার মানুষটি নর্থ সাউথে পড়তো এবং তার চরিত্র অত্যন্ত নোংরা। ঘটনাক্রমে আমি এমন আরো কিছু মানুষের সংস্পর্শে এসেছি যাদের অভিজ্ঞতাও একই রকম কম বেশি তিক্ত। সুতরাং আমি এবং আমার মত ভুক্তভোগীরা ধারণা করতে শুরু করলাম নর্থ সাউথের ছেলেরা ক্যারক্টারলেস। এবং তা ছড়িয়ে দিতে থাকলাম। একই ধরনের প্রচলিত ধারনা আরো অনেক স্থান, কাল আর পাত্রের ক্ষেত্রেই আছে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেগুলো সত্যিই অমূলক ও ভ্রান্ত।

তবে চিন্তার বিষয়টা এখানে ভিন্ন। নর্থ সাউথের ছাত্রদের এই জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা অন্তত এটা প্রমাণ করে যে শক্তিশালী একটি চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপনে যথেষ্টই শক্তিশালী একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পেরেছে। এবং তারা শুধু আমরা যাদের কথা জানতে পেরেছি তাদের কেই কব্জা করে নি, বরং আরো অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছেে। যাদেরকে সনাক্ত করা মোটেও সহজ কাজ হয়। গুলশান হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে বা পুলিশের নজরদারী থেকে বাঁচার জন্য সাময়িক গা ঢাকা দেয়া বা ব্রেইন ওয়াশ কার্যক্রম কি করে পরিচালিত হবে সেটাও আশা করি তারা আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিল। সে হিসাবে পরিস্থিতি হয়তো আমাদের আশঙ্কার চাইতেও বেশি গুরুতর।

আমরা অত্যন্ত হুজুগ প্রিয় জাতি। আরো অনেক বিষয়ের মতো আর দু'এক সপ্তাহের ভেতর আমরা গুলশানের ঘটনার বিষয়ে বিস্মৃত হবো সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া । হয়তো মেতে উঠবো নতুন কোন ঘটনা বা বিষয় নিয়ে আমরা । এটা অনেকটা বাচ্চাদের নতুন খেলনা নিয়ে মেতে উঠার মতো ঘটনা যা কিছুদিন পরই পুরনো হয়ে যায় এবং নতুন খেলনা জায়গা করে নেয়। আমাদের এই বিস্মৃতজনিত সমস্যাকে জঙ্গীরা কাজে লাগাবে এবং সক্রিয়ভাবে তাদের কার্যক্রম নিভৃতে চালিয়ে যাবে। এমনটা ভাবারও কোন কারণ নেই যে কেবল নর্থ সাউথেই এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বরং বলা যায় পুরো যুব সমাজই এই প্রক্রিয়াভুক্ত যা পরবর্তী যেকোন সন্ত্রাসী হামলা হলেই আমরা বুঝতে পারবো।

জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। টেকনোলজির ব্যবহারেও তারা অনেক এগিয়ে। সুতরাং দেশ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় এদের বিরুদ্ধে কাজ করে পরবর্তী সন্ত্রাসী হামলাগুলো মোকাবেলা করায় হবে এ মুহুর্তে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ধারণাবশত শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি নজর না দিয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়াতে হবে।

নর্থ সাউথে বর্তমানে যে হাজারো ছাত্র ছাত্রী পড়াশুনা করছেন, এই ধরনের ধারণাপ্রসূত অভিযোগ যে তাদের ও তাদের পরিবারকে যথেষ্ট বিড়ম্বনা ও দুশ্চিন্তায় ফেলবে সেটা সহজেই অনুমেয়। একটা সময় ছিল যখন এখানে কেবলমাত্র উচ্চ বিত্ত পরিবারের সন্তানরাই পড়াশুনা করতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন প্রচুর মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাও এখানে পড়াশুনা করছে। এদের ভেতর এমন অনেক অভিভাবকই আছেন যারা নিজের সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করার চেষ্টা করছেন। এই পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ ও হয়তো কেবল এই সন্তানটির উপর নির্ভরশীল।‌ নর্থ সাউথের ছাত্র মানেই টেররিস্ট এই ধরনের প্রচারণা এই পরিবারগুলো এবং তাদের সন্তানদের জীবন বিভীষিকাময় করে দিতে যথেষ্ট। আল্লাহ্‌ পাক নিজে কুরআনে বলেছেন, ' তোমরা ধারনা বা সন্দেহ করো না, নিশ্চয়ই সেটটা শয়তানের কাজ'.

.....একজন টেররিস্টের একমাত্র পরিচয় সে টেররিস্ট। সে কোন সমাজ, পরিবার, ধর্ম, প্রতিষ্ঠান বা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না।
তাই একচেটিয়া নর্থ সাউথ বা অন্য যেকোন ভার্সিটির ব্যাপারে এমন অমূলক ধারণাপ্রসূত প্রচার থেকে সবার বিরত থেকে মূল বিষয়টির দিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩০

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: পোস্টের টাইটেল পড়ে হেসে দিয়েছি। সত্যি বললাম। তবে ব্যাপারটা যে মোটেই হাস্যকর নয়, সেটাও বুঝি। আপনার উদ্বেগ মোটেও অমূলক নয় এবং আমি মনে করি সেটাই স্বাভাবকি। আপনার মতামতের সাথে ঐক্যমত পোষণ করছি। সবকিছু ছাপিয়ে জাতি হিসেবে আমাদের কে এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে, নিজেদের পরিবার, সমাজের সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে যাদে আমাদের ভাই-বোন আর কোন ভুল পথে পা না বাড়ায়। লিখার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩৯

আমিনা মুন্নী বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ!

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৪০

সাম্প্রদায়িক বলেছেন: আল্লাহ্ পাক নিজেও কুরআনে বলেছেন, ' তোমরা ধারনা বা সন্দেহ করো না, নিশ্চয়ই সেটটা শয়তানের কাজ'......একজন টেররিস্টের একমাত্র পরিচয় সে টেররিস্ট। সে কোন সমাজ, পরিবার, ধর্ম বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে না।@ কিন্তু আমার বোধগম্য হইল না যে কাস্মীরে হিজবুল কমান্ডার হত্যঅর প্রতিবাদে অধিকাংশ মুসলিম মাঠে কেন???

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ২:০০

আমিনা মুন্নী বলেছেন: সরি। এই বিষয়টির ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি ইসলামের বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানের অভাবেই মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা অনেক সহজ হয়। আর সেই সুযোগটাই হয়তো অনেকে নেয়।

৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: শিবির রগ কেটে দেয় মানে আপু? তারা কি রগ কাটে নাকি? ছিঃ ছিঃ এটা তো খুব খারাপ কথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.