নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডোন্ট টেক মোমেন্টস ফর গ্রান্টেড!

আমিনা মুন্নী

আমিনা মুন্নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নর্থ সাউথের স্টুডেন্টদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাঃ \'চক চক করলেই সব সময় সোনা হয় না\'

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:০২



২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে নাশকতা চেষ্টার অভিযোগে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বাংলাদেশি তরুণ কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে গ্রেফতার করে। নাফিস নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার রাজীব হায়দারকে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানি ছাড়া বাকি ৭ জনই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্র।

চলতি বছরের পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। হামলাকারী ৬ জঙ্গির মধ্যে দুইজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের আগে পুলিশ চৌকিতে হামলাকারীদের অন্যতম আবির হোসেন ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির অন্তত ৩ জন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার পর উদ্ধার জিম্মিদের মধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসনাত করিমের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখন তদন্ত করা চলছে।
হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলায় জড়িত জঙ্গিদের বাসা ভাড়া দেওয়া ও তা গোপন করার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক এস এম গিয়াস উদ্দিন আহসানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মূল বক্তব্য-------------------

জঙ্গী সম্পৃক্ততায় একক ভাবে কোন প্রতিষ্ঠানকে যদিও এককভাবে দায়ী করা ঠিক না...তবুও এই ধরনের নিউজ দেখলে কিছু স্বস্তি সত্যিই তৈরি হয় ভেতরে! নর্থসাউথ বিষয়ক নতুন পুরনো কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আসলে তার জজন্য দায়ী। আমার সাবেক বয়ফ্রেন্ড একদিন কথা প্রসঙ্গে আমাকে বলেছিল, "আমাকে সুন্দর আর স্মার্ট চিনাইতে আইসো না। আমি NSU তে পড়ে আসছি। এরকম বহুত সুন্দর আর স্মার্ট মেয়ে দেখে আসছি"! আমি তো শুনে অবাক। তার কথা থেকেই আমি প্রথম ধারণা পাই যে NSU তে বাংলাদেশের সব হুরপরি আর স্মার্ট মেয়ে পড়ে। আমার নিজের প্রায় সবগুলো কাজিনই NSU তে পড়তো। এদের সুবাদে কিছু NSU er এর সাথে মেশার সুযোগ আমার হয়েছিল। এরা NSU শব্দটাই এমন চিপামারা স্টাইলে আক্কেল মাড়ির পাশ দিয়ে বাতাস ছেড়ে বলতো যে সেটাও একটা দেখার মতো বিষয় ছিল। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় চাকরীর সন্ধান শুরু করতে এসে এই NSU বিড়ম্বনায় পড়েছি সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ ভালো ভালো চাকরিগুলোতে NSU ছাড়া বাকীগুলোর কোন ভাত নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি এই তিক্ত অভিজ্ঞতা কম বেশি অনেকেরই হয়েছে। এ যেন অনেকটাই শেখ সাদির গল্পের মতোন। ভেতরে মাল থাকুক আর না থাকুক, লাখ লাখ টাকা খরচ করে নেয়া NSU এর সার্টিফিকেটের দামই এমপ্লোয়ারদের কাছে বেশি। এদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই বৈষম্যের স্বীকার। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর একটা লেখা পড়ছিলাম সেদিন জঙ্গীবাদ নিয়ে। তিনি সেদিন কিছু সত্যি কিন্তু যা অনেকের কাছেই অজানা তা তুলে ধরেছেন।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রকে নিজের গাটের পয়সা খরচ করে পড়তে হয় এবং সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়। অথচ হাজার হাজার স্টুডেন্টের সাথে প্রতিযোগীতা করে পাবলিক ভার্সিটির সীমিত আসনের বিপরীতে জায়গা করে নেয়া স্টুডেন্টদের পেছনে সম পরিমাণ বা অধিক টাকা খরচ করে রাষ্ট্র তাদের পড়াশুনার ব্যয়ভার বহন করে। অথচ রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা এই ছাত্রদের মূল্যায়নে এমপ্লোয়াররা বিশেষত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সত্যিকার অর্থেই অনীহা চোখে পড়ার মত।

সেদিন NSU এর এক সাবেক শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। তিনি (নারী) অত্যন্ত স্বাধীনচেতা এবং শো-অফ করা কর্মকান্ড প্রচারে বেশ আনন্দ পান বলেই মনে হলো। তিনি কোন একজনের কমেন্টের বিপরীতে নিজের পোস্টে বেশ অহং নিয়ে লিখেছেন, 'NSU এর স্টুডেন্টরা সেরা বলেই সব সেরা চাকরীগুলো NSUer রাই পায়। অন্যদের কোন বেল নাই!'
সেরা চাকরী বা পরিসংখ্যান নিয়ে যথেষ্ট জানাশোনার অভাবের কারণেই সম্ভবত তিনি এই ধরনের মন্তব্য করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তবে তিনি কিন্তু পুরোপুরিও ভুল বলেন নি। কারণ অতি সম্প্রতি চাকরিদাতাদের ভেতর NSU প্রেম এতোটা বেড়েছে যে অদূর ভবিষ্যতে সেরা চাকরীগুলো তে NSU ছাড়া কারো অস্তিত্বই পাওয়া যাবে না বলে আশা করা যায়। আর যাবেই বা কেন? মেধা মূল্যায়নের সুযোগই তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাবলিক ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের দেয়া হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন হলো মেধার মূল্যায়নই যখন হচ্ছে না তখন দরিদ্র এই দেশের কষ্টার্জিত সব টাকা শুধু শুধু এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের মেধাহীনদের পেছনে খরচ করে রাষ্ট্রের লাভ টা কি???....

পাবলিক ভার্সিটির পোলাপান রাজনীতি করে, মারামারি করে....ভাংচুর করে, মানলাম। এদিকে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়টিও তো কম যায় না। তারাও তো দেখি জঙ্গীবাদে শ্রেষ্ঠত্ব কামিয়ে বসে আছে! NSU এর ছাত্ররা বেশি ট্যালেন্ট, NSU এর মেয়েরা একটু বেশিই কিউট, বেশি সুন্দর আর স্মার্ট, NSU- er রা চাকরীতে সেরা, গসিপে সেরা, MMS স্ক্যান্ডালে সেরা, ফ্লার্ট করাতে সেরা, ছেলে বা মেয়ে পটাতে সেরা, বড়লোকিতে সেরা, লোক দেখানো তে সেরা, নাম কামানো তে সেরা..আজ তারা জঙ্গীবাদেও সেরা। শ্রেষ্ঠত্ব আজ তাদের পরিপূর্ণতা পেয়েছে।

সেদিন জনৈক মডেল যিনি সম্ভবত NSU তেই পড়ে, তার ফেসবুকে আক্ষেপ করে লিখেছেন NSU তে সম্ভবত তিনি ছাড়া সব মেয়েই স্মোক করে। কথাটা একটু বাড়াবাড়িই বলা হয়ে গেছে আমি জানি জানি।

তবে নর্থ সাউথে এমন অনেক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি হয়। নকল সার্টিফিকেট এর ভুয়া পিএইচডি ভিসি/প্রো-ভিসির কথা আমরা জেনেছি সেটা খুউব বেশিদিন আগের কথা না। দায়িত্ব অবহেলায় আগুন লাগার ঘটনা, ব্লগার হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতা আর সাম্প্রতিক জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা... এই সবকিছুই প্রমাণ করে টাকা কামানোটাই এখন NSU কর্তৃপক্ষের মূল attention এর জায়গা। তাই ব্রান্ড ভ্যালুকে পুঁজি করে এটি এখন শিক্ষামান বা শিক্ষা পরিবেশের চাইতে অর্থ কামানোতেই অধিক মনোযোগী।

পাবলিক ভার্সিটির সব ছাত্র যেমন মেধাবী না, তেমনি নর্থ সাউথেও কেবল শুধু টাকার জোরেই সবাই পড়ে না। এখানেও প্রচুর মেধাবী স্টুডেন্ট আছে। মেধা কম বেশি সবারই থাকে। এটা সত্যি যে নর্থ সাউথ যে ব্রান্ড ভ্যালু তৈরি করেছে তা নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই অর্জন করেছে। কিন্তু কিছু লোকের অতি মূল্যায়ন আর কর্তৃপক্ষের ওভার কনফিডেন্সই এই পরিস্থিতি তৈরিতে অনেকাংশে দায়ী।

বাটার জুতা টেকসই বেশি। তাই বাটা জুতার কাটতিও ভালো। কিন্তু যারা বাটার টেকসইত্ব বিবেচনা করে বাটার জুতা এখনও পড়েন, তারাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন আজকালকার বাটা কতটা নামের, আর কতটা কামের!

অতি মূল্যায়ন জিনিসটা কোন ক্ষেত্রেই ভালো না। তাই নর্থসাউথের সটুডেন্ট আর কর্তৃপক্ষ সবার জন্যই একটা ধাক্কা জরুরী ছিল। কারণ এরা সব ক্ষেত্রেই ধরা কে সরা জ্ঞ্যান করছিলো। সাথে ছিল কিছু নর্থ সাউথ মোহগ্রস্থ এমপ্লয়ার!

যদিও নর্থ সাউথের কতিপয় স্টুডেন্টদের এই ধরনের জঙ্গী সংশ্লষ্টতার ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। মূলত এটা থেকে অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন।

ভালো-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর, মেধাবী-মেধাহীন, স্মার্ট-আনস্মার্ট এই সব বৈচিত্র মিলিয়েই সব প্রতিষ্ঠান। কাউকে একক কৃতিত্ব দেয়া যেমন অনুচিত, তেমনি বাকীদের প্রতি অযৌক্তিক অবহেলাটাও অন্যায়।
জঙ্গী সংশ্লিষ্টতারর এই দায় নর্থ সাউথের একার না। আমাদের সকলের। কারণ সমাজটা বা দেশটা আমাদের সকলকে নিয়েই!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

সভ্য বলেছেন: প্রথমে লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সুন্দর এবং সত্য বিষয়গুলো তুলে ধরার জন্য। তবে পাশাপাশি এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে কিছু বা কয়েকজন খারাপ বা বখে যাওয়া ছাত্রের জন্য পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সকল শিক্ষার্থীকে দোষারোপ করা নিশ্চয় ঠিক হবে না। যারা খারাপ, তার এনএসইউ হউক বা আমেরিকান ইউনিভার্সিটি হউক, সব জায়গায় তাদের কারিশমা দেখাবে, তবে এনএসইউতে ছাত্রদের স্বাধীনতা বেশী বণেই ,সে হচ্ছে, এই জন্য প্রথমেই দরকার নজরদারী। যাই হউক, আমি শুধু বলবো, কড়া নজরদারীর মধ্য দিয়ে এই সব সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গণ্য করা উচিত বলে আমি মনে করি। আপনি ভাল থাকুন, এই সব থেকে দূরে থাকুন, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করে শেষ করছি। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.