নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেবার মত তেমন কোন পরিচয় এখনো অর্জন করতে পারিনি। আরও কিছুদিন সময় দিন.।।

আনন্দ কুটুম

কে আমাকে ফুলের মালায় বরণ করল, আর কে আমাকে জুতার মালায় বরণ করল ! তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি যেন সব সময় সত্য দ্বারা পক্ষপাত দুষ্ট হই। এটাই নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা।

আনন্দ কুটুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শত্রুর মুখে সত্যের বাণী.।.।.।.।

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:২৯

ইংরেজিতে ঝগড়া-বিবাদে আমি খুব একটা পটু না। কিন্তু বাধ্য হয়েই একদিন ফুজিলকে বলেছিলাম- “আম মার্কিং ইট। ডোন্ট টক্ট টু মি লাইক দ্যাট আনি মোর।“। এর পর থেকেই দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে দেছে বেঁকে। বেচারা ফুজিল বহু চেষ্টা করেছে বন্ধুত্বটা জোড়া লাগাতে। আমিই সেই সুযোগ তাকে দেইনি। কারন আর কিছু না। সরি বলাটা এই ধরনের মানুষের কাছে ডাল-ভাত না, তার থেকেও সস্তা।
যাই হোক, ইন্ডিয়ান পলিটিক্স এর একটা প্রেসেন্টেশন ছিল। ব্যাটার ভাগ্যে পড়েছে “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ”। এটা নিয়েও আমার সাথে কথা বোলবে বলে বলেছিল। আমার দিক থেকে নো-পাত্তা। অবশেষে ব্যাটা একাই প্রেসেন্টেশন তৈরি করেছে।
ক্লাসে এসে দেখি সে ডায়েসে দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্রায় ২৫ মিনিট লেট। ক্লাসে ঢুকেই বুঝতে পারলাম যে এই অপেক্ষাটি আমার জন্যই। শুরু হল প্রেসেন্টেশন। ব্যাটা একটা করে তথ্য উপস্থাপন করে আর আমার দিকে একবার করে সমর্থনের দৃষ্টিতে তাকায়। আমি তো মনে মনে ধরেই নিয়েছি যে পাকিস্তান পন্থী মুসলিম ছেলের প্রেসেন্টেশন আর যাই হোক নিরপেক্ষ হবে না। সে যতবার বাংলাদেশ কথাটা উচ্চারণ করেছে প্রতিবারই আমার দিকে আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত করেছে। মানে, এখানে আমিই বাংলাদেশ। আমিই একটি মুক্তিযুদ্ধ। আমিই একটি ছোট্ট তুলতুলে রক্তাক্ত জমিন। এর পরে আমাকে প্রশ্ন করল-“ তুমি আওয়ামীলীগ কি সেটা জান? জানলে ডিটেইলে বল”
অদ্ভুত ব্যাপার হল পুরো সময়টা জুড়ে সে যা বলেছে তার মাঝে একটিও ভুল খুঁজে পেলাম না। আমি কিন্তু অপেক্ষায় ছিলামই তার ভুল ধরতে। কিন্তু ১০০% নিরপেক্ষতা বজিয়ে রেখে সে তার বক্তব্য উপস্থাপন করে গেল। না কোন তথ্যের ভুল, না কোন তারিখের ভুল, না কোন নামের ভুল, না কোন ভারতের এক্সট্রা হিরোইজম। না সেখেনে ছিল- “ইন্ডিয়া ক্রিয়েট বাংলাদেশ” । না ছিল “উইদাঊট ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ ইস নাথিং”।
একটা জিনিস বুঝলাম যে এই প্রেসেন্টেশনটা তৈরি করতে ব্যাটা প্রচুর খেটেছে। কতটা খেটেছে সেটা অনুমান করা আমাদের ক্লাসের সবার পক্ষেই সম্ভব। গত এক বছরে আজই প্রথম ব্যটা পরিপাটি হয়ে, ফর্মাল সাংবাদিকদের মত সুটেট বুটেট হয়ে, এত সুন্দর ও পরিপাটি একটা প্রেসেন্টেশন দিল। আচ্ছা বলুন তো, এই পরিপাটি কি বেশি নাম্বার পাওয়ার জন্য? আর যেই যা বলুক, আমি মানতে রাজি না। আমি ৯৯% নিশ্চিত ব্যাটা আমাকে ইম্প্রেস করার জন্যই এতকিছু করেছে। যেন আমি তার পাপ মার্জনা করি।
একটা বিষয়। সত্য কখনো চাঁপা থাকে না। সত্য বেরিয়েই আসে। আমি কিন্তু কিছুই বলিনি। কিন্তু সে ঠিকই খুঁজে নিয়েছে বাংলাদেশের স্থপতি কে, স্বাধীনতার ঘোষক কে, বঙ্গবন্ধু কত বড় নেতা, ভারতের অবদান কতটুকু, ভারত কি স্বার্থে সেদিন বাংলাদেশের বন্ধু হয়েছিল, ইন্দ্রা গান্ধীর অবদান কি, ভারত কবে সশস্ত্র যুদ্ধে যোগ দিয়েছে, সেই যুদ্ধ আমাদের কতটুকু সাহায্য করেছে।
কিছু বিষয় কিন্তু খুব স্পষ্ট আমার কাছে।
১। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখতে আওয়ামীলীগের যে নোংরা নাটক তার কোন দরকার নেই। বঙ্গবন্ধুকে যার খুঁজে নেওয়ার সে ঠিকই সত্যকে খুঁজে নেবে। এই ভিনদেশী বালক কিন্তু আওয়ামীলীগও করে না, বিএনপিও করে না। কিন্তু বাংলাদেশে না পুরো বিশ্বে বঙ্গবন্ধু যে কত বড় মানের জননেতা সেটা সে ঠিকই বুঝে গিয়েছে।
২। “ইন্ডিয়া ক্রিয়েট বাংলাদেশ” নিয়ে আমরা প্রচুর ভারতকে গালি দিয়েছি। কিন্তু আদতে অ্যাড খানা বানিয়েছিল ১/২ জন মাত্র। আজ ফুজিল যে সততার পরিচয় দিল, তাকে কিন্তু আমরা স্বাগত জানাব না। আমরা শুধু নোংরাটাই নিতে জানি। শুভ্রতা/ সত্য সব সমই এড়িয়ে যাই। আজ কিন্তু কেউ বলবে না যে ভারতকে ধন্যবাদ এমন একটি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য।
৩। এত কিছুর মধ্যেও কিছু মানুষ থাকবেই যারা নেগেটিভ খুঁজে খুঁজে সামনে নিয়ে আসবে। একজন মেয়ে কিন্তু ক্লাসে বলেই বসল- “তুমি জান যে তারা আইসিসি কে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল বলেছে?” ঠিক আপনাদের মত। আপনারাও কেউ না কেউ ঠিক এর মাঝে ঐ ক্রিকেট ম্যাচ টেনে আনবেন, তিস্তা আনবেন, বর্ডার কিলিং আনবেন।
আসলে আমরা সব কিছুর মাঝেই জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলি। একারনেই আমরা কোন সমাধান আনতে পারি না। পলিটিক্স বা গনিতের যে ধারাবাহিক কিছু নিয়ম আছে সেটা সম্পর্কে আমরা বড়ই অজ্ঞ। আমরা আলাদীনের চ্যারাগের মত সমাধান প্রত্যাশা করি।
যাই হোক, প্রেসেন্টেশনের শেষে ম্যাম যোগ করলেন ১৪ ডিসেম্বার বুদ্ধিজীবী হত্যা। ম্যামের কথা শুনে চোখে জল চলে এল। তিনি উদাহরন দিয়ে বুঝালেন-“ধর যদি ভারতের সকল ডাক্তার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ব্যাবসায়িকে মেরে ফেলা হয়। ধর যদি, আম্মানির পরিবার, রতন টাটার পরিবার, গান্ধী পরিবারকে নির্মূল করা হয়। কি ঘটবে ভারতের কপালে? ভারতের উন্নতি কি ভাবে হবে? এটাই হয়েছে বাংলাদেশের বেলায়। পাকিস্তান চেয়েছে যে বাংলাদেশ যেন কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। একারনে তারা সকল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। এই হত্যার ফল আজো বাংলাদেশ বহন করে যাচ্ছে। এটা ছিল বড়ই বেদনা দায়ক হত্যা। এই হত্যা কিন্তু কোন যুদ্ধ না। ঐ মানুষগুলোকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লাইন ধরে দাঁর করিয়ে গুলি করা হয়েছে। কতটা বীভৎস তা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।“
ম্যাম আরো বললেন, কেন ভারত সেদিন বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল। ভারত যে সেদিন পলিটিক্যাল ভাবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই বাংলাদেশকে সাপোর্ট করেছিল সেটাও তিনি সততার সাথে স্বীকার করলেন। তিনি স্বীকার করলেন এটাও যে, মানবিকতাও একটা বিষয়। একটি সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট দেশের উপরে হত্যাযজ্ঞ চলছে, ভারত চুপ থাকতে পারে না। এটা মানবিক ছিল না। তাছারা পাকিস্তানের দুই প্রান্তের যে ধর্ম বাদে সব কিছুই ভিন্ন সে বিষয়টিও ম্যাম তুলে ধরলেন। উঠে এল গৌরব ময় আমাদের মাতৃভাষা সংগ্রামের ইতিহাস। ক্লাসের সবাই একমত যে, আজ যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ থাকত, তাহলে আজ পাকিস্তানের যে অবস্থা সেই পরিনাম বাংলাদেরও হত। যদি পাকিস্তন ও বাংলাদেশ উভয়ই জঙ্গি রাষ্ট্র হত তা হলে অবশ্যই ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হত। সুতরাং ভারতের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাপোর্ট করাটা জরুরী ছিল।
আপনি কি ভাবে নিবেন জানি না। কিন্তু আজকের দিনটি আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভারতে থাকতে পেরে, এই মানুষগুলোর সাথে পরিচিত হতে পেরে, এদের থেকে জ্ঞান আহরন করতে পেরে আমি সত্যিই ধন্য। পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিলে পুরো ভারতই বাংলাদেশকে যথেষ্ট রেস্পেক্ট দিয়ে থাকে। কিন্তু জানিনা কি কারনে আমার দেশে প্রচলিত হয় শুধু ভারতের কুৎসা গুলোই। যাদের দিব্য দৃষ্টি নেই বা যাদের আছে। তাদের নিশ্চয়ই বুঝেতে বাকি থাকার কথানা। আমাদের মস্তিষ্কে পাকিস্তানের ম্যাপ আজো গেথে আছে। ভারতের সাথে বিবাদ বাড়িয়ে আমরা দিনকে দিন আরও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছি। সেটা খুব কৌশলেই হচ্ছে। আমরা আমজনতা সেই একই ভাবে হুজুগে নেচে যাচ্ছি। কারন আর কিছু না, বাঙ্গালী তো হুজুগেরই জাতি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:১৫

ইমরান আশফাক বলেছেন: পশ্চিমবংগ বাদে পুরা ভারতই বাংলাদে্শকে যথেষ্ট সন্মান করে, কথাটি সত্য। ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৩:৩৮

অস্হির বলেছেন: ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.