নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষের প্রকৃত অর্থে যাহা গুণ থাকা দরকার সেরুপ গুন নিজের মধ্যে না থাকলেও চেষ্টায় আছি প্রকৃত মানুষ হয়ে বাঁচার।

এন.এ.আনসারী

একজন মানুষ হিসাবে আমিও সত্যক ভালবাসি। তাই আমারো চেষ্টা থাকে সত্য প্রকাশ করার আপ্রাণ চেষ্টা। অন্যের মত সহনশীলতার সাথে শুনা এটাই মনুষ্যত্য

এন.এ.আনসারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈঠকখানা

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০০

বন্ধু নুর মোহাম্মাদ এর সহিত মহল্লায় এক গরীব প্রতিবেশীর বিয়েতে গিয়াছিলাম। গরীব হইলেও বিবাহ অনুষ্ঠানে গরীবীর ইয়ানে দরিদ্রতার কোন ছাপ ছিলনা। আমি নুর মোহম্মদ ও আজিম দাওয়াত পাইলে হামেশা গরীবের বিবাহগুলিতে আগেবাগে উপস্থিত হই। ইহাতেও ব্যাতিক্রম হয় নাই। আরেক বন্ধু হায়দারের আসার কথা মাগার আসিতে কেন জানি বিলম্ব হইতেছে। মাগার আসিয়া যাইবে তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। আমরা তাহার জন্য এন্তেজার করিতেছি।
কন্যার বাবা আসিয়া আমাদের সহিত মোসাফা করিয়া কৃতজ্ঞতার সৌরভ তাহার দুই ঠোঁটে বিলাইয়া দিল। আমাদের পাশের সোফায় আরও দুই জন মেহমান আসিয়া বসিল। খাবারের জন্য আমাদেরকে আহবান করা হইলেও আমরা বন্ধু হায়দার এর এন্তেজারে আছি। মেহমান দুইজন অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা চুরি লইয়া আলোচনা করিতেছে। আকবর মিয়াও আলোচনায় শরীক হইলে আমি খামোশ থাকিতে পারিলাম না। যুবকদ্বয় আকবর মিয়ার কথা শুনিয়া চমৎকৃত হইয়া আমার রিএ্যাকশন জানিতে কৌতূহল মিশ্রিত নেত্রে আমার তরফ তাকাইলে আমি নীচু স্বরে কহিলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতাউর রহমান ভাল মানুষ ছিলেন বলিয়া গাফলতি দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করিয়াছেন অপরদিকে হলমার্ক আর সোনালী ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা ঘাপলার পরেও মন্ত্রী মহোদ্বয় বহাল তবিয়তে এখনো বর্তমান আছেন। দেশের চিত্রদতো এমন যে পদত্যাগ এর চিত্রই এখানে দেখা আলাদ্বীনের চেরাগে থাকা জ্বীনদের মত সহজে দেখায় যায় মাগার আতাউর রহমান স্যার করিয়া দেখাইয়াছেন। মন্ত্রী মহোদয়দের লাজ সরম থাকিলে তাহারাও পদত্যাগ করিতেন কিন্তা তা হয় নি। সোফা বসা মেহমান এই ঘটনার মধ্যে কিন্তু ষড়যন্ত্রর গন্ধ পাইতাছেন। এভাবে জনগনের টাকা রাঘব বোয়ালরা ঘাপলা করবে আর শাস্তি হিসাবে পদত্যাগ করে ভাল মানুষসব।
মেহবানটি পুলিশের বাড়াবাড়ি লইয়া আলোচনা উঠাইলে আমি কহিলাম পুলিশ নাকি জনগণের বন্ধু। আমার প্রশ্ন পুলিশকে যাহারা জোর করিয়া আমাদের বন্ধু বানাইয়াছে তাহাদেরকে বলুন, পুলিশকে আগে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা শিখান। তা না করে পুলিশকে কখনো জনগণের সেবক বলা হয়। পত্রিকায় শিরোনাম দেখিলাম -‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’। চমৎকার শিরোনামে আকৃষ্ট হইয়া পুরা সংবাদটা পড়িয়াছিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। পড়ার পর আকর্ষণীয় শিরোনামের চমকটা হতাশার আবরণে ম্লান হইয়া গিয়াছিল। মনে প্রশ্ন জাগিল, পুলিশকে রাজা বানাইল কারা? অনেকদিন আগের কথা এরুপ এক শাদির অনুষ্ঠানে এক পুলিশ সহিত একটি আমার পরিচয় হইয়াছিল। তাহার সহিত বেশ কতদিন দেখা হইয়াছিল কোন এক কারণে, তিনি আমাকে তাহার চাকুরি জীবনের নানা মজার ঘটনা কহিয়াছিলেন। যার সিংহ ভাগ জুড়িয়া থাকিত অন্যায়ভাবে মানুষের নিকট হইতে অর্থ আদায়ের ঘটনা। তিনি প্রায় কথায় কথায় কহিতেন- আকাশের যতো তারা, পুলিশের ততো ধারা। আর এখন পত্রিকাতে দেখিতেছি, নিরীহ পথিককে বেদম পেটাইতে পেটাইতে পুলিশ কহিতেছে-মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা হয়- ‘পুলিশ আপনার বন্ধু’। এই বন্ধুর সংজ্ঞা সাধারণের জানা নেই। শুধু জানি বাঘের এক ঘা পুলিশের সাত ঘা। বলা হয় পুলিশ যার বন্ধু, তার আর শত্রুর দরকার পড়েনা। কথায় বলে ‘পুলিশের কোন শ্বশুর বাড়ি থাকেনা। আমি এই উপমহাদেশে সবচাইতে বেশি অসভ্য আর অল্পশিক্ষিত পুলিশ দেখিয়াছি পাকিস্তান আর বাংলাদেশে। অপরাধ দমনের জন্য কাজ করিতে গিয়া নিজেরাই যেন অপরাধের সঙ্গে জড়াইয়া পড়িয়াছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার এস আই মাসুদ শিকদার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে মারধর করিয়া হত্যার হুমকি দিয়া চাঁদাবাজি করিয়াছে বলিয়া তদন্তে প্রমাণিত হইয়াছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে বেধড়ক পেটানোর সময় জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’বলিয়া যে ভয়ানক উক্তি করিয়াছে তাহা অত্যান্ত ভয়াবহ। এইভাবে সাধারন মানুষকে পেটানো সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি ও আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। অসাধু পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অহরহ অভিযোগ জমা পড়িতেছে পুলিশ সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এইসব অভিযোগের মধ্যে আছে জনসাধারণের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া অর্থ উপার্জন, ঘুষ আদায়, চাঁদাবাজি, নারী কেলেঙ্কারি, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্টতার কারণে ১৪ হাজার ৫০০ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় পুলিশ সদর দফতর। লেকিন ইহাতে অপরাধ প্রবণতা কমেনি। উল্টো ২০১৪ সালে এ সংখ্যা বাড়িয়া দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৫০০ জনে। অর্থাৎ ১ বছরে সাজাপ্রাপ্ত পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়াছে ১ হাজার। আর ২০১৫’র প্রথম পাঁচ মাসে এ সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০-এর বেশি বলিয়া জানা গিয়াছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মসুচী গুলিতেও পুলিশের বিতর্কিত ভুমিকা দেখিয়া থাকি। বিএনপি’র আমলে কোহিনুর এর নাম জানেনা এমন লোক খুব কম আছে। পুলিশদেরকে যখন সরকারি পেটুয়া বাহিনী বানানো হয়, তখন পুলিশ আর সাধারণের বন্ধু থাকেনা। পুলিশের চাঁদাবাজি, টোকেন ব্যাবসা, টোল আদায় ও নানা অনৈতিক কর্মকান্ড আজ পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে। হাজার হাজার আনফিট গাড়ি পুলিশকে টাকা দিয়া (টোকেন নিয়ে) বিনা বাধায় চলিতেছে। প্রতিটি ইট বালি ও পশু বহনকারী ট্রাক হইতে ইচ্ছামাফিক হারে চাঁদা আদায় করে শাহী ফকিরের খেতাব জিতিয়াছে। নাম্বার প্লেটবিহীন সি এন জি চলিতেছে পুলিশের টোকেন এর তেলেসমাতিতে। এই টোকেন ব্যবসা হইতে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করিয়া থাকে পুলিশ বিভাগ। পুলিশের একটি অংশ এই ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত আছে। নৈতিকতা শৃঙ্খলাবোধ বলিতে ইহাদের নিকট কিছু নাই। এই লেখা যখন লেখিতেছি, তখন বাবুল মাতব্বর নামের এক চায়ের দোকানদারকে চাঁদা না দেওয়ার অপরাধে আগুনে পুড়িয়া মারিয়াছে বলিয়া সংবাদে জানিতে পারিলাম।
আমাদের আলোচনায় ছেদ পড়িল। আচানক মেহমানদের জোয়ার যেন ঢুকিয়া পড়িল শাদী হলের পেন্ডালে। কণের বাবা আসিয়া এইবার একপ্রকার জোর করিয়াই আমাদেরকে ভাতের টেবিলে বসাইয়া দিলে আমরা বন্ধু হায়দার’র কথা জিজ্ঞাসা করিতেই দেখি বরযাত্রীর জোয়ারে হায়দারও ভাসিতে ভাসিতে আমাদের টেবিলে আসিয়া বসিল। যুবকদ্বয় বেহদ মজা পাইয়াছে বলিয়া আন্দাজ করিতেছি। কারণ ভাতের টেবিলে আমাদের প্রতি তাহাদের মনোযোগ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয়া মনে হইল। খাবারের টেবিলে টুকরো টুকরো আলাপ চলিতেছে। হায়দার আমাদের আড্ডায় ছিলনা, মাগার তড়িৎ বুঝিয়া ফেলিয়াছে কী বিষয় লইয়া আমরা এতক্ষণ আলোচনা করিয়াছি। যুবকদ্বয়ের একজন কহিল-ডাক্তার গণ কী আরম্ভ করিয়াছে দেখিয়াছেন? ভাবিলাম ইহাও ভাবনার বিষয়। ডাক্তারগণ ভুল চিকিৎসা করিবে, আর মানুষ তাহার প্রতিবাদ করিতে পারিবেনা ইহা নিতান্ত অন্যায্য। আমার প্রতিবেশী আরেক বন্ধুর ছোট বোনের ব্রাস্ট ক্যান্সার হইয়াছিল। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারনে বন্ধুর বোনটি অকাল মৃত্যু হইয়াছে। এই ছুরতে হামেশা ডাক্তারদের ভুলের কারনে বিমার আদমি মরিতেছে। কোথাও প্রতিবাদ হইলে, হাঙ্গামা হইলে ডাক্তারেরা একাট্টা হইয়া যায়। ইনসান গলতিও কা পুতলা। ইনসান ভুল করিয়া থাকে। ডাক্তারগণও ইনসান। তাহারা অন্য গ্রহ হইতে আসে নাই। তাহাদের হরতাল অমানবিক। কারণ তাহারা এলাজ করিয়া মানুষদেরকে যমের হাত হইতে সাময়িক নিষ্কৃতি দেয়। জান বাঁচানো ফরজ ইয়ানে আওয়াল নাম্বারে। অথচ ডাক্তারগণ ভালো-মন্দ বিচার না করিয়া কর্মবিরতিতে গিয়া লবেজান রোগীদেরকে বেকায়দায় নয় শুধু, রীতিমত জানের খতরায় ঠেলিয়া দিয়াছে। যাহা আদৌ ইনসানিয়াতের আন্দরে পড়ে না। আমাদের মাস্টার সাহেব ডাক্তারদেরকে কসাই বলিয়া থাকেন। লেকিন সকল ডাক্তার তো আর কসাই না। কেউ কেউ কসাই। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার চরম অভিযোগ আছে। প্রাইভেট চেম্বার তো আছে। মাস্টারদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। এই মানুষ গড়ার কারিগর বলিয়া কথিত মহারথীরাও প্রাইভেট টিউশন, কোচিং সেন্টার ব্যাবসায় মশগুল হইয়া গিয়াছে। কোথাও কোথাও ন্যায়-নীতি জলাঞ্জলি দিয়া অতিরিক্ত ফিসহ বিভিন্ন নামে অর্থ আদায় করিয়া ……..বাণিজ্যে রূপ দিয়েছে। একবার ভাবিয়া দেখুন, মানুষ গড়ার কারিগরদের যদি এই দশা হয়, তবে ভবিষ্যতের মানুষদের কি হাল হইবে। আমার বড় বোনটা আজকালকার শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যাবস্থাকে বিলকুল পছন্দ করে না। আগে মুরুব্বীদের জবানে শুনিয়াছি, আদালতের দেওয়ালে নাকি পয়সা খায়। এখন দেখি সর্বত্রই পয়সা গেলার মেশিন। আল্লাহ্ আমাদের সকলের ঈমান-আমল সুন্দর ও হেফাজত করুন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০৫

বিজন রয় বলেছেন: বাহ! ভাল লিখেছেন।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.