নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার কামাল

আনোয়ার কামাল

আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।

আনোয়ার কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৬

সেই মুখশ্রী এখন বিবর্ণ পাণ্ডুলিপি

আনোয়ার কামাল



কিশোর বয়সে প্রথম যার কাছ থেকে ভালোবাসার ছবক নিয়েছিলাম, তার মুখশ্রী আজ এতদিন পর আর স্মৃতি হাতড়িয়েও উদ্ধার করতে পারছিনে। স্মৃতির সেলুলয়েড়ের ফিতেয় তাকে বেধে রাখতে পারিনি। আজ এতটা দিন পেরিয়ে তার কথা কেন যেন বেশি মনে পড়ে। সেই দূরন্ত কিশোর আমি; পাড়া মাতিয়ে বেড়ানো দস্যি ছেলে। হঠাৎ করে কেন যেন আমার চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের বড় বেবী নামের সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ মেয়ে আমাকে খানিক স্নেহের পরশ বোলাতে লাগলো। আমাকে কাছে ডেকে এটা ওটা খেতে দিত, আর কেমন যেন উদাস ভঙ্গিতে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে আমি বেশ বিরক্ত হতাম। রেগে যেতাম। তবে বেবী কিন্তু রাগতো না। আমার হাত ধরে কাছে টানতো। আমি ভীষণ লজ্জা পেতাম আর আমার সারা মুখ কেন যেন লাল হয়ে যেত। শরীরের মধ্যে একটা শিরশিরে অনুভূতি পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিদ্যুতের মত শা শা করে ধেয়ে যেত। তখনো কিন্তু আমি ভালোলাগার, ভালোবাসার অনুভূতি যে কী তা ঠাহর করতে পারিনি।



আমি স্কুল জীবন থেকেই সিনেমা দেখার পোকা ছিলাম। কবে কোন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তার নায়ক নায়িকা কে? পরিচালক কে? এসব আমার মুখস্ত থাকতো। ভালো লাগলে দুই থেকে তিনবারও দেখা হয়ে যেত। বেশির ভাগ সিনেমা দেখেছি ম্যাটিনি শো। দুপুর তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা। বাসায় থেকে ফুটবল খেলার কথা বলে মার কাছ থেকে ছুটি নিতাম। আর ভোঁ দৌড় দিতাম সিনেমা হলের দিকে। মাঝে মাঝে মার কাছে ধরা পড়ে যেতাম কারণ সিনেমার অভিনয় দেখে হলের মধ্যেই অঝোরে কাঁদতাম, আর বার বার চোখ মুছে নিতাম। বাসায় যখন ফিরতাম তখন কাঁদার কারণে মা ধরে ফেলতেন,

-কীরে, তোর চোখ-মুখ ফোলা কেন? কারোর সাথে মারামারি করেছিস?

-না তো। আমি বলতাম।

মা ঠিকই ধরে ফেলতো।

-তাহলে তুই কেঁদেছিস কেন? ও বুঝতে পেরেছি। তুই বুঝি সিনেমা দেখে কেঁদেছিস?

কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। মার ঠাস করে এক চড় খেয়ে দৌড়ে কলপাড়ে যেয়ে হাত মুখ ধুয়ে সোজা পড়ার টেবিলে। জোরে জোরে পড়তাম। মা যেন পাশের ঘর থেকে শুনতে পায় যে, আমি মনোযোগ দিয়ে পড়া পড়ছি। আমার সিনেমা দেখার খবরটা বাবার কাছে ফাঁস হল সেদিনই যেদিন আমি সিনেমা দেখে সেঞ্চুরী করে ফেলেছি। আমি ছোট্ট একটা কাগজে ডায়েরি বানিয়ে তাতে কবে কোন সিনেমা দেখলাম, কতবার দেখলাম সব লিখে রাখতাম। বাবার ব্যক্তিগত বইয়ের লাইব্রেরি ছিল। সেখানে বইয়ের ফাঁকে আমার গোপন সিনেমা দেখার তালিকা সম্বলিত ডায়েরি লুকিয়ে রাখতাম। একদিন আব্বা তার বই গোছাতে যেয়ে আমার সাধের প্রিয় সিনেমা দেখার তালিকা পেয়ে গেলেন। ব্যাস, আর যায় কোথায়। সেদিন বাবার হাতে বেদম প্রহার ভোগ করতে হ’ল। তার পর বাবা মাঝে মাঝে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখাতে হলে নিয়ে যেতেন। বাবার সাথে সব শেষ দেখা বই হচ্ছে। অবুঝ মন। বোঝেন এবার।

অবুঝ মন দেখার পর থেকে বেবীর প্রতি আমি কেন যেন দূর্বল হয়ে পড়লাম। সেই থেকে বেবীর প্রতি কেমন যেন একটা টান পড়ে গেল। বেবীকে আমি আমার নায়িকার আসনে স্থান দিলাম। কারণে অকারণে বেবীর খোঁজ নিতাম স্কুল থেকে ফিরে পাড়ায় বেরুলেই বেবীর খোঁজ মনে মনে নিতাম। দেখা না পেলে মনটা ভীষণ আনচান করে উঠতো। আর দূর থেকে দেখা পেলেই কি যে খুশি লাগতো তা লিখে বোঝানো যাবে না। গরমকালে রাতের বেলা বেবীকে জানালার পাশে দেখতে পাবো এই আশায় অনেক রাত পর্যন্ত বাসার আশ পাশে ঘুরাঘুরি করতাম। সেই বেবীই আমার প্রথম ভালোলাগা, প্রথম ভালোবাসা।

বাবার চাকরি বদলীর সুবাদে আমারও বদলী। তাই একদিন হুট করে রকেট মেইল ট্রেনে চেপে অন্য আর এক শহরে পাড়ি দিতে হল। ষ্ট্রিম ইঞ্জিনের হিস্ হিস্ শব্দে খুব দ্রুত বেবীদের শহর ছেড়ে অন্য এক নতুন অচেনা শহরে পাড়ি জমাতে হ’ল। আর পেছনে পড়ে থাকলো আমার কিশোর জীবনের প্রথম প্রেমের অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.