নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার কামাল

আনোয়ার কামাল

আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।

আনোয়ার কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ আনন্দের প্রকারভেদ

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১১

ঈদ অর্থ-আনন্দ, ঈদ অর্থ খুশি, ঈদ অর্থ উৎসব। ঈদ অর্থ-পরম মমতায় মায়ের কাছে গাঁয়ে ফিরে যাওয়া। ঈদ মুসলমানদের এক বড় ধর্মীয় উৎসব। শেকড়ের সন্ধানে ফিকে হয়ে যাওয়া শৈশব-কৈশর উজ্জ্বল হয়ে উদ্ভাসিত হওয়া। সব ভেদাভেদ ভুলে সকল মুসলমান এক কাতারে সামিল হওয়া। কোলাকুলি- বুকে বুক মেলানো, আর সেমাই রুটি খাওয়া, বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-অনাত্মীয় সকলের জন্য দুয়ার খোলা।



ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা হলো সব’চে বেশি আনন্দের, সব’চে বেশি মধুর। কারণ, রোজার দিন ইফতার করেই দে দৌঁড় পশ্চিমাকাশে চাঁদ দেখা যায় কিনা। কে কার আগে চাঁদ দেখলো, আর কে কার আগে চাঁদকে সালাম দিল এ নিয়ে এক প্রতিযোগিতা হয়ে যেত। চাঁদ দেখা গেলে তাকে সালাম দেয়া। আর তার পর সেই ঐতিহাসিক গানের মূর্ছনা- রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। কী আবেগ রয়েছে এ গানে! নজরুলের এ গানটি বোধ হয় সব’চে বেশি শোনা হয়েছে। এ গানের সাথে মনে ঝিলিক দিয়ে ওঠে। আর তখনই মনে হয় ঈদ দুয়ারে দাঁড়িয়ে।



আসলে ঈদ আনন্দ যে কি তা লিখে শেষ করা যাবে না। ঈদের আনন্দ বড়দের চেয়ে ছোটদের কাছেই বেশি। সেই ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে ঈদগাহে যেয়ে নামায পড়তে হবে। কখন যাবো, কখন বড়দের সেলাম করবো, আর সেলামী পাবো। কে কত সেলামী পেলো তার হিসেব। ছোট বেলায় এটাই বেশি বড় মনে হতো। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নামাজের প্রস্তুতি। নতুন পাজামা পাঞ্জাবী পরে সুরমা আতর মেখে বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি। বাবা সাত সকালে উঠে গাছের নারকেল ভেঙ্গে দিতেন। তা কুরে কুরে সেমাইয়ে মিশিয়ে দেয়া হতো। নানা বাড়িতে খুব ছোট বেলায় দেখেছি, হাতে বানানো সেমাই। নানা বাড়ির সবাই মা -খালারা তা রোদে শুকিয়ে ঈদের আগেই তৈরি করে রাখতেন। আমি খালার পাশে বসে আশ্চর্য হয়ে দেখতাম কি সুন্দর ভাবে নরম ময়দা চিকন সুতার মত সিমাই হয়ে বেরুচ্ছে। ময়দা পানিতে নরম করে তা মেশিনের উপর দিয়ে চেপে হাত দিয়ে হ্যান্ডেল ঘুরালেই নিচ দিয়ে সেমাই কল কল করে বের হতো। আমি সেমাই বানানো মেশিনের হ্যান্ডেলটা ধরে সজোরে ঘুরাতাম আর এক অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি অনুভব করতাম। আবার রুটি বানানোর পিড়িতে হাতেও সেমাই বানানো হতো। হাতের ডলায় তা বেশ মোটা মোটা হয়ে সে সব সেমাই তৈরি হতো। এখন সে চলন আর গ্রামে নেই। সেই ঝক্কি ঝামেলা আর বউ বেটিরা করতে চায় না। দিন বদলে গেছে। রুচি বদলে গেছে। আর সাথে সাথে মানুষের সামর্থ্যরেও ধরণ পাল্টে গেছে। এখন প্যাকেট সেমাই, লাচ্ছা সেমাই।

ছোটকালে যখন শহরে থাকতাম বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার প্রস্তুতিটাও থাকতো আমাদের কাছে ভিন্নরকমের। গ্রামের বাড়িতেই আসলে ঈদের আনন্দ বেশি বলে আমার কাছে মনে হয়। কারণ শহরে তেমন ঈদগাহ নেই বললেই চলে। মসজিদে মসজিদে ঈদের নামায আদায় করতে হয়। প্রায় শহরেই ঈদগাহ রয়েছে হাতে গোনা। বিশেষ করে মফস্বলের ছোট শহরে এক-দুই-তিনের মধ্যে। আর গ্রামে, প্রায় প্রতি গ্রামেই রয়েছে ঈদগাহ যেখানে ঈদের আগে ঈদগাহকে সাজানো হয়। রং-চং দেয়া হয়। রঙিন কাগজ কেটে তিন কোণা আকৃতির করে তা আঠা দিয়ে সুতলী দড়ির সাথে লাগিয়ে শুকোতে দেয়া হয়। তারপর ঈদগায়ের ঠিক মাঝখানে ইয়া লম্বা এক বাঁশ পুতে তাতে সুতলি জাড়ানো রঙিন কাগজ বেধে ঈদগাহের চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ইমাম সাহেব নামাজের সময় নিয়ে মাইকে বারংবার তাগাদা দিতে থাকেন। মানুষ পিঁপড়ের সারির মত দল বেধে ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে জড়ো হয়। বেশ দৃষ্টি নন্দন। আর শহুরে জীবনে এর ঘাটতি রয়েছে। মানুষ সবাই ব্যস্ত, যে যার মতো। কে কার খোঁজ রাখে। কে কার ধার ধারে। এক জটিল সমিকরণে শহুরে জীবন চলে । ঈদেও এর প্রভাব দেখা যায়। পথের পাশে নিরন্ন মানুষের সারিবদ্ধ আবাসন। ফুটপাতে কোন মতে মাথা গোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা। ঈদে তাদের নতুন কাপড় কেনা হয়না। উন্নত মানের খাবার জোটেনা। তাদের আবার ঈদ কী? ঈদ তাদের কাছে আর কোন আনন্দের বারতা বয়ে আনে না। বরং কষ্টের ধাক্কা আরো সজোরে দেয়। চোখের সামনে যখন অন্যদের ঈদ আনন্দ হৈ হুল্লোড় করতে দেখে তখন নিজের কাছে তাদের কোন প্রশ্নের উত্তর সমাধান হয়ে ধরা দেয় না।

নামায শেষে মাঠেই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করা রেওয়াজ। এর নাকি একটা তাৎপর্য রয়েছে। কোলাকুলিতে বুকে বুক লাগে। একের বুক অপরের বুকের সাথে ঠেকে, যেখানে হৃদয় নামক যন্ত্রটি ধুকপুক ধুকপুক করছে। এই ধুকপুকানী দুজনের হৃদয় এক স্থানে এলে তাতে অনেক মহব্বত বাড়ে বলে ধর্মে এক মিথ রয়েছে। এ কারণেই কোলাকুলির রেওয়াজ চালু। সত্য-মিথ্যা কখনো যাচাই করে দেখিনি। তবে গ্রামে অনেককে দেখেছি ঈদের দিন কোলাকুলি করে পরের দিন ঝগড়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হতে। সে এক ভিন্ন বিষয়। তবুও ঈদের ময়দানে কোলাকুলি করা ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে ক্ষণিকের জন্য হলেও এক কাতারে দাঁড়ানো। এ এক অপার বিস্ময়!

গ্রামে ভিন্ন চিত্র রয়েছে। গ্রামের কৃষক পরিবারে যাদের সামর্থ্য নেই তারা তো আর নতুন পাজামা পাঞ্জাবী পরে নিজেকে রঙিন রঙে আবির করে ঈদগাহে আসতে পারে না। নিতান্ত বাধ্য হয়েই তাদের পুরোনো মলিন কাপড় পরেই ঈদগাহে আসতে হয়। তাদের কাছে ঈদের আনন্দ কিন্তু ভিন্ন স্বাদের। তাদের কাছে ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ নয়। বরং অনেকটা নিরানন্দ। তবুও তারাও সাধ্যমত তাদের পরিবারকে ঈদের আনন্দ দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে।

আমাদের ঈদের আনন্দ তখনই সার্থক হতে পারে, যখন দেশের সকল মানুষের ঈদ উদযাপনের সামর্থ্য সুযোগ আসবে। পথের পথকলিরা একটি নতুন জামা পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হবে, হৃদয়ে নেচে উঠবে আনন্দের সুবাতাস। ঠিক তখনই ঈদ প্রকৃত ঈদআনন্দ হয়ে আসবে। অন্যথায় এই ঈদ বার বার কিছু মানুষের জন্য আনন্দের বারতা নিয়ে আসলেও ব্যাপক জনগোষ্ঠির কাছে তা অধরাই হয়ে থাকছে। ঈদের আনন্দ রঙিন না হয়ে ফিকে হয়ে থাকবে। তবুও ঈদ সকলের কাছে আনন্দের বারতা নিয়ে আসুক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.