নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার কামাল

আনোয়ার কামাল

আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।

আনোয়ার কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি কিশোর সুকান্ত ও তার কবিভাবনা

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২৯

কবি কিশোর সুকান্ত এর জন্ম হয়েছিল বাংলা ১৩৩৩ সালের ৩১শে শ্রাবণ, ইংরেজী ১৯২৫ সালের ১৪ আগষ্ট মাতামহ সতীশচন্দ্র ভট্রাচার্যের কালীঘাট অঞ্চলের ৪২নং মহিম হালদার ষ্ট্রীটের বাড়ির দোতলার ছোট্ট একটি ঘরে। পিতা নিবারণচন্দ্র ভট্্রাচার্যের দ্বিতীয়া স্ত্রীর দ্বিতীয় পুত্র তিনি। সুকান্তের মায়ের নাম সুনীতি দেবী। সুকান্তের মৃত্যু বাংলা ১৩৫৪ সালের ২৯ বৈশাখ , ইংরেজী ২৪ মে ১৯৪৬। তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ২১ বৎসর।



সুকান্তকে অনেকেই কিশোর কবি বলে থাকেন। কিশোর কবি নন তিঁনি ছিলেন কবি কিশোর। কারণ সুকান্ত কৈশর থেকেই যা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তা অনেকের পক্ষেই পরিপক্ক বা পরিণত বয়সের বোধদয় হয়নি। তাই তিঁনি কিশোর কবি নন তিঁনি আমাদের কবি কিশোর। সুকান্তের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন। প্রথমে তাঁদের বাস ছিল মাদারীপুরের কোটালীপাড়ায়। তারপর কয়েক পুরুষ এসে বাস করেন মাদারীপুরে। এই মাদারীপুরেই সুকান্তের পিতা নিবারণচন্দ্র বাস করেছেন তাঁর শৈশব ও প্রথম যৌবনে।



সুকান্তের শৈশব কেটেছে একান্নবর্তী একটি পরিবারে। সুকান্ত যার কোলে মানুষ হয়েছেন তিনি ছিলেন সুকান্তের চাচাতো বোন রাণী। সুকান্তের এই চাচাতো বোন ছোট বেলায় তাকে কোলে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করতেন। বাল্যকালে হঠাৎ করেই একদিন রাণীদি মারা যান। অন্য দিকে মাকে ক্যান্সার রোগে হারিয়ে সুকান্ত একেবারে একা হয়ে পড়েন। এর পরের জীবন নিঃসঙ্গ, ধূসর, নির্জন এবং চরম একাকিত্ব।



সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন তাঁর ছোট মামা ও তার মামাতো ভাই ভূপেন। এই তিনজনে মিলে রান্নাঘরে ষ্টেজ বেঁধে নাট্যাভিনয়ও করতেন। সুকান্তের পরিবারের সবাই ছিলেন সুশিক্ষিত, সাহিত্যানুরাগী, শৈল্পিক মননের অধিকারী, ফলে সুকান্তর শৈশবকাল সাহিত্যিক আবহাওয়ায় লালিত হয়েছিল বলে মনে করবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সুকান্ত নয় দশ বছর বয়স থেকেই ছড়া লিখতে শুরু করেন। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া অবস্থাতেই তাঁর ছড়া হাত লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়’ এবং সেকালের শিশু পত্রিকা ‘শিখা’য় তাঁর কিছু গল্প,কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।



ছাত্র অবস্থাতেই সুকান্ত রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে দিন রাত সমানে কাজ করতে থাকেন। তিনি কমিউনিষ্ট আদর্শে বিশ্বাস করতেন। তিনি পড়াশোনার ব্যাপারে উদাসীন না হলেও পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেন নি। দুবার প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেও অংকে পাশ করতে না পারার কারনে তাঁর প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করা হয়নি।



সুকান্তের সৎভাই মনোমোহন ভট্রাচার্যের ছিল একটি বইয়ের দোকান। সেই সূত্রে যোগীন সরকার ও সুনির্মল বসু প্রমুখ লেখকদের বই এর সাথে তিনি নিজেকে পরিচিত করতে পেরেছিলেন।



সুকান্তের ছোট বেলা থেকেই ন্যায় অন্যায়ের প্রতি বোধ ছিল খুবই প্রবল। ছোট বেলা থেকেই তাঁর গঠনমূলক কাজের দিকে ঝোঁক ছিল বেশি। অগ্রজদের সাথে তাঁর যোগাযোগ থাকায় তখনকার ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। কিশোর কবি সুকান্ত নানা দ্বিধা-দ্বন্ধের মধ্য দিয়ে পরিণত হলেন স্বচ্ছ চিন্তা ধারার অধিকারী সাম্যবাদী কর্মীতে। সুকান্তের কৈশরকালে পৃথিবী জুড়ে চলছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের তান্ডব পৈশাচিক নৃত্য। চীনাদের উপর জাপানীদের বর্বর অভিযান শুরু হয়েছে,অন্যদিকে ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলোকে গ্রাস করছে হিটলারের ফ্যাসিষ্ট বাহিনী। ঠিক এ সময়ে কর্মী ও কবি হিসাবে আবির্ভূত হলেন সুকান্ত। পাক ভারত উপমহাদেশে তখনও যুদ্ধের দোলা লাগে নি বটে,কিন্তু চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল দিক থেকে দিগন্তে। ১৯৪০-৪২ সালের মধ্যেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে সুকান্ত ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৪২ সালের পর তাঁর রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক জীবন একাকার হয়ে যায়।



যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ খুব কাছে থেকে দেখেছেন সুকান্ত। জাপানীরা যখন চট্ট্রগ্রামে বোমা ফেলে তখন মানুষ দলে দলে ছুটতে থাকে কোলকাতার পথে। তখন তিঁনি চট্ট্রগ্রাম অস্ত্রগার লুণ্ঠনের বীর ও শহীদদের উদ্দেশ্যে লেখেনঃ-



চট্ট্রগ্রামঃ বীর চট্ট্রগ্রাম

এখনও নিস্তব্ধ তুমি

তাই আজও পাশবিকতার

দুঃসহ মহড়া চলে

তাই আজও শত্রুরা সাহসী।



ফ্যাসিস্ট শত্রু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উচ্চারণ করলেন পবিত্রতম ঘোষণা:



বন্ধু, তোমার ছাড়ো উদ্বেগ সুতীক্ষ্ণ করো চিত্ত,

বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝেনিক দুব্বৃত্ত।

মূঢ় শত্রুকে হানো স্রোত রুখে তন্দ্রাকে করো ছিন্ন,

একাগ্র দেশে শতত্রুরা এসে হয়ে যাক নিশ্চিহ্ন।



ফ্যাসিস্ট বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে সুকান্ত পোষ্টার লেখেন আর পোষ্টারের উপর তার দুটি কবিতা ‘শত্রু এক’ এবং ‘উদ্বীক্ষণ’ লিখে তা দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়।



‘শত্রু এক’

এদেশ বিপন্ন আজ; জানি আজ নিরন্ন জীবন-

মৃত্যুরা প্রত্যহ সঙ্গী, নিয়ত শত্রুর আক্রমণ

রক্তের আল্পনা আঁকে, কানে বাজে আর্তনাদ সুর;

তবুও সুদৃঢ় আমি, আমি এক ক্ষুধিত মজুর।



‘উদ্বীক্ষণ’

নগরে ও গ্রামে জমেছে ভীড়

ভগ্ন-নীড়,-

ক্ষুধিত জনতা আজ নিবিড়।

সমুদ্রে জাগে বাড়বানল,

কী উচ্ছ্বল,

তীর- সন্ধানী ব্যাকুল জল।

কখনো হিংস্র নিবিড় শোকে,

দাঁতে ও ন’খে-

জাগে প্রতিজ্ঞা অন্ধ চোখে।

...............(সংক্ষেপিত)



ফ্যাসিস্ট বিরোধী প্রচারণার হাতিয়ার হিসাবে সুকান্ত একাধিক প্রচার মূলক নাটিকা লিখে দিয়েছেন গণনাট্য সংঘকে। প্রাত্যহিক কাজের রুটিন হিসেবে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করতেন ‘জনযুদ্ধ‌‌‍’ পত্রিকা। ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে সমানে কাজ করেছেন তিঁনি।



দুর্ভিক্ষের করুণ বিষন্ন দিনগুলোতে তিনি নির্ভিক ঘোষনায় বললেন:-

শোনরে মালিক শোনরে মজুতদার

তোদের প্রাসাদে জমা হলো কত মৃত মানুষের হাড়

হিসাব দিবি কি তার ?



তারপর প্রতিশোধ গ্রহণের কথা বললেনঃ-



আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই

স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের

চিতা আমি তুলবোই।



কবি সুকান্তে আর কর্মী সুকান্তে এক পর্যায়ে আর কোন পার্থক্য থাকেনি। তিঁনি গড়ে তুলেছিলেন ‘কিশোর বাহিনী’। সুকান্তের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রবীণ সাহিত্যিক যোগেনন্দ্রনাথ গুপ্ত ও খগেন্দ্রনাথ মিত্র।

সুকান্ত সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণ করেছেন, যা তার কবিতায় সুষ্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে।



‘সিঁড়ি’



আমরা সিঁড়ি

তোমরা আমাদের মাড়িয়ে

প্রতিদিন অনেক উঁচুতে উঠে যাও,

তারপর ফিরেও তাকাও না পিছনের দিকে ;

তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুকে

পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।



‘দেশলাইয়ের কাঠি’



আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি

এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না ঃ

তবু জেনো

মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ-

বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস ;

আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।



‘একটি মোরগের কাহিনী’



একটি মোরগ হঠাৎ আশ্রয় পেয়ে গেল

বিরাট প্রাসাদের ছোট্ট এক কোণে,

ভাঙা প্যাকিং বাক্সের গাদায়

আরো দু’তিনটি মুরগীর সঙ্গে।



আশ্রয় যদিও মিলল,

উপযুক্ত আহার মিলল না।

সুতীব্র চিৎকারে প্রতিবাদ জানিয়ে

গলা ফাটাল সেই মোরগ

ভোর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত

তবুও সহানুভূতি জানাল না সেই বিরাট শক্ত ইমারত।



‘প্রার্থী’



হে সূর্য !

তুমি আমাদের উত্তাপ দিও-

শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড,

তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে

একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ডে

পরিণত হব।

তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,

তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারব

রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।

আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।।



বিপ্লবী কবি সুকান্ত মার্শাল টিটোকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন:-



‘মার্শাল তিতোর প্রতি’



কমরেড,তুমি পাঠালে ঘোষণা দেশান্তরে,

কুটিরে কুটিরে প্রতিধ্বনি,

তুলেছে মুক্তি দারুন তুফান প্রাণের ঝড়ে

তুমি শক্তির অটুট খনি।



সুকান্তের এসব কবিতা থেকেই অনুমান করা যায় তিঁনি বিপ্লবী চেতনায় প্রতিভাত হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন আপন মহিমায়। কবি আপন মনে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন বিপ্লবের হাতিয়ারে। কখনো তিঁনি সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থেকেছেন কখনো কবিতায় ঝেড়েছেন রাজনৈতিক সংলাপ। এখনেই সুকান্ত সার্থক বিপ্লবী কবি; তাঁর সমকালীন অন্যান্য কবিদের থেকে।



১৯৪৪ সালে ২য় বারের মত কাশী যেয়ে দুবার ভুগতে হয় ম্যালেরিয়াতে। ১৯৪৫ সালের নভেম্বর মাসে কোলকাতায় শূরু হয় ইংরেজ বিরোধী গণ-অভ্যুত্থান। ১৯৪৫ ও ৪৬ সালে কোলকাতায় যত বড় বড় গণ-আন্দোলন হয়েছে সুকান্ত তার সবটাতেই অংশগ্রহণ করেছে।

এরপর সুকান্ত অসুস্থ হয়ে রেড-এইড্ কিওর হোমে ভর্তি হলেন। এ সময় কোলকাতায় শুরু হ’ল আত্মঘাতী দাঙ্গা। রোগশয্যায় শুয়েও তাঁর মনে শান্তি ছিল না। একটু সুস্থ হলে বাড়ি ফিরে যান। বিছানায় শুয়ে শুয়ে জ্বরে আক্রান্ত কবি বিষন্নতায় কাটালেও তার কবিতা লেখা থেমে থাকেনি। অসুস্থ অবস্থায় নিজের বাড়ির সিঁড়ি দেখে লেখেন সিঁড়ি কবিতাটি। সাধারণ আর অতি তুচ্ছ বস্তুকেও কবি তার কবিতায় বিপ্লবী চেতনায় উপস্থাপন করেন পাঠকের সামনে। যেমন ‘চিল’, ‘সিগারেট’, ‘চারাগাছ’, ‘একটি মোরগের কাহিনী’ ও ‘প্রার্থী’ কবিতা এসময় লেখা হয়েছে।



‘চিল’

পথ চলতে চলতে হঠাৎ দেখলামঃ

ফুটপাতে এক মরা চিল !

চমকে উঠলাম ওর করুণ বীভৎস মূর্তি দেখে।

অনেক উঁচু থেকে যে এই পৃথিবীটাকে দেখেছে,

লুণ্ঠনের অবাধ উপনিবেশ ;

যার শ্যেণ দৃষ্টিতে কেবল ছিল

তীব্র লোভ আর ছোঁ মারার দস্যু প্রবৃত্তি

তাকে দেখলাম,ফুটপাতে মুখ গুঁজে প’ড়ে।

...............(সংক্ষেপিত)



‘সিগারেট’

আমরা সিগারেট।

তোমরা আমাদের বাঁচতে দাও না কেন ?

আমাদের কেন নিঃশেষ করো পুড়িয়ে ?

কেন এত স্বল্প-স্থায়ী আমাদের আয়ু ?

মানবতার কোন্ দোহাই তোমরা পাড়বে ?



আমাদের দাম বড়ো কম এই পৃথিবীতে।

তাই কি তোমরা আমাদের শোষণ করো ?

বিলাসের সামগ্রী হিসাবে ফেলো পুড়িয়ে ?

তোমাদের শোষণের টানে আমরা ছাই হইঃ

তোমরা নিবিড় হও আরামের উত্তাপে।

...............(সংক্ষেপিত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩৪

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সুন্দর পোস্ট , কবির প্রতি অক্রিতিম শ্রদ্ধা ।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:২৩

আনোয়ার কামাল বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.