নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার কামাল

আনোয়ার কামাল

আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।

আনোয়ার কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টিস্নাত রাতে

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২৮

বৃষ্টি, ঝুম বৃষ্টি, বলতে গেলে সেইরকম বৃষ্টি হচ্ছিল। মাঝে মধ্যে একটু ছাড় দিলেও ধেয়ে আসা বাতাসে সূদূর থেকে সুরের মূর্ছনার মতো ইলশে গুড়ি বৃষ্টি চোখে মুখে ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছিল। সেদিন বাসায় ফিরতে একটু রাতই হয়ে গেল। তা অবশ্য খুব একটা বেশি কী? ঢাকা শহরে যেখানে সারারাত মানুষজন আর গরু-ছাগল-ভেড়া রাজপথ চষে বেড়ায়, সেখানে রাত দশটা আর কী এমন রাত।

শাহবাগ থেকে বাসে চেপে সোজা কল্যাণপুর। সেখানে আমার নীশিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কল্যাণপুরে বাস থেকে নেমেই দেখি বৃষ্টিতে ফাঁকা কল্যাণপুরের প্রধান সড়ক। বৃষ্টি হচ্ছে ছাতা হাতে নেই, উপায় কী? হাতেগোনা দু’চারজন লোক দেখতে পেলাম। একটা রিক্সা আসতে না আসতেই ছো মেরে যে যার আগে উঠতে পারছে সেই উঠে পড়ছে। আমি কয়েকবার চেষ্টা করলাম, এই মামা তাজ লেইন যাবে? রিক্সা চালকের লা জবাব। তার এখন জবাব দেবার ইচ্ছে নেই। গায়েই নিচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেও কোন রিক্সায় উঠতে পারলাম না। মহাবিপদে পড়লাম।

পায়ের কাছে এক রিক্সা এসে দাঁড়ালো। রিক্সা আরোহী মহিলা। থেমেই বললো, ভাই আসেন, আপনি রিক্সা খুঁজে পাচ্ছেন না। আমার সাথে আসেন। আমিও ওদিকেই যাব। চমকে উঠলাম। বলে কী? মহিলা এত রাতে একা, আবার একজন অপরিচিত লোককে বৃষ্টিস্নাত রাতে যেচে নিজের পাশে বসাতে চাইছে। এটা আমার কাছে বিস্ময় বোধ হোল। কী করি, কী করি ভাবছি। মেয়েটি আবার ডেকে উঠলো, আসুন, দেখছেন না কোন রিক্সা নেই। কীভাবে যাবেন? বৃষ্টিতে ভিজবেন নাকী?

এবার একটু সংম্বিত ফিরে পেলাম। নয় ছয় না ভেবেই রিক্সায় উঠে পড়লাম। রিক্সা যাত্রা শুরু করলো। অপরিচিত মহিলা। কি বলবো ভেবে পেলাম না। তবুও কিছু বলতে হয়। তাই বললাম:

- আপা এত রাতে একা কোথা থেকে আসছিলেন?

- ভাই আমার ক্লাস ছিল। এআইইউবি ইউনিভার্সিটিতে আমার ক্লাস ছিল।

- এত রাতে ক্লাস?

- ও, আচ্ছা। আমি প্রাইভেট অফিসে জব করি। তাই ইভিনিং শিফ্ট এ এমবিএ ভর্তি হয়েছি। সন্ধ্যায় ক্লাস থাকে। আজ রাত একটু বেশি হয়েছে।

এবার বুঝলাম আসল ঘটনা। এখন একটু ফ্রি হলাম। তবে আমার ভেতরে অন্য জিনিষ কাজ করছে। পকেটে প্রায় দশ হাজার টাকা। মোবাইল ফোনটাও দামী। এ মহিলার অন্য কোন মতলব নেইতো। যদি আমায় ভয় দেখিয়ে বা অন্য কোন ভাবে টাকা, মোবাইল হাতিয়ে নেয়।

বৃষ্টিতেও ঘামতে লাগলাম। নিজের মনের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো। এ ধরনের ঘটনাতো জীবনে কখনো ঘটেনি। পরিচিত মহিলাদের সাথেওতো কখনো এমন করে রিক্সায় ওঠা হয়না। অথচ একজন চেনা নেই জানা নেই তার সাথে রিক্সায় চেপে বসলাম। তাও আবার বৃষ্টিস্নাত রাতে। মহিলার কথায় সম্বিত ফিরে পেলাম।

- ভাই আপনার বাসাটা এদিকে কোথায়? খুব সহজ সাবলিল ভাবে বলে যাচ্ছে। তার মধ্যে কোন জড়তা নেই। বিহবলতা নেই, উদ্বেগ নেই। পাশে বসে আছে। রিক্সাতো সরে বসতে চাইলেও দূরে যাওয়া যায় না। গায়ে গা ঠেকে মাঝে মধ্যে থাক্কা খাচ্ছি। কী আশ্চর্য সুন্দর বৃষ্টি ভেজা রাত।

- সামনে, তাজ লেইনে।

- ও, আচ্ছা। আমার বাসাটা আর একটু সামনে।

- তাই নাকী? তা কত দূর? বাসায় আপনার কে কে আছেন?

- ঐ যে লাল দেয়াল আছে না। ওটার পাশেই। মেয়েকে রেখে এসেছি। ওর বাবা হয়তো এতক্ষণে বাসায় এসে গেছে।

- ভাই কী জব করেন?

- হ্যা। উনি প্রাইভেট জব করেন। আর আমিও একটি ফার্মে একাউন্টসে কাজ করি।

- এক্সিকিউটিভ এমবিএটা করার জন্য টানা ছয় মাস ধরে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। আরো ছয় মাস লাগবে। অফিস

সেরে ভার্সিটিতে যাই।

- তা বেশ ভালো। একসাথে দু’টোই হচ্ছে। পড়া আর চাকরী।

- ঠিকই বলেছেন ভাই; তবে জীবনের উপর বেশ ধকল যাচ্ছে। কুলিয়ে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

- দেখতে দেখতে হয়ে যাবে। অর্ধেকতো সেরেই ফেলেছেন।

- হ্যা। বলেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রূপা (আসল নাম গোপন রাখা হলো) ।

রিক্সার চাকা যেন আস্তে আস্তে ঘুরছে। আমি মনে মনে অস্থিরতা বোধ করছি। রাস্তা ফুরায়না কেন! জীবনে তো এধরনের কোন মহিলার খপ্পরে পড়িনি। তবে মহিলাকে দেখে ভদ্র এবং রূচিশীল বলেই মনে হচ্ছে। কথা বলার ধরণে একটা আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে। তবে কী মহিলা একা একা এ পথ পাড়ি দিতে ভয় পেয়ে নিছক আমাকে তার পথের সাথী হিসেবে বেছে নিয়েছে। হতে পারে, এতো রাতে একা একা আসতে তার ভয় হচ্ছিল। সে কারণেই আমাকে তার সাথে তুলে নিয়েছে। অপরিচিত হলেও পুরুষ বলে কথা। বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়ায়ে দেবে এটা ভেবেই সে আমাকে তার পাশে বসিয়ে ভয় দূর করেছে। এটাই হবে। তাছাড়া বেশ অনেকক্ষণতো হলো একসাথে পাশে বসে যাচ্ছি। মহিলাকে তো খারাপ ভাবার কোন কারণ খুঁজে পেলাম না। আমার ভেতর থেকে অপচিন্তা ক্রমশঃ দূর হতে লাগলো।

- ভাই আপনার সম্বন্ধে বলেন।

- আমি মতিঝিলে একটি অফিসে চাকরী করি। বিবাহিত। আপনার এক মেয়ে, আর আমার দুই মেয়ে। স্ত্রী গৃহিনী। এক নিঃশ্বাসে ঝেড়ে দিলাম।

এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। ভয় দূর হয়ে গেছে। মহিলাকে ভালোই লাগছে। হালকা বৃষ্টির ঝাপটা চোখে মুখে এসে লাগছে। রিক্সা তাজ লেইন এর কাছে এসে পড়েছে। আমি নামার জন্য থামতে বললাম। রিক্সা থামালে হিপ পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে ভাড়া দিতে গেলাম। মহিলা চরম আপত্তি করলো। বাধা দিল, ভাড়া পরিশোধে। বাধ্য হয়ে মানিব্যাগ যথাস্থানে রেখে দিলাম। এবার বারবার তাকে ধন্যবাদ দিতে থাকলাম। মহিলা মিষ্টি হেসে, ওয়েলকাম জানালো।

আমি নেমে একঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। কী এক আশ্চর্য অনুভূতি আমার ভেতর তখন কাজ করছিল। গুরুঠাকুর রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ে গেল। মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাস হারানো পাপ। এ কথাটা বারংবার কানে বাজতে লাগলো। যতই বাতাসের হিস হিস শব্দ কানের পাশ গলে যাচ্ছে, ততই বেশি বেশি মনে হতে লাগলো মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে। মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাস কখনো হারানো যাবে না। মহিলা যদি এত রাতে অপরিচিত এক পুরুষকে তার রিক্সায় তুলে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে, তবে পুরুষ হয়ে আমি কেন অহেতুক মহিলাকে সন্দেহ করলাম। একেই বলে যেচে কেউ উপকার করতে চাইলে আমরা তার দূর্বলতা খুঁজি। দেখতে দেখতে রিক্সাটা বাঁক নিয়ে বাম পাশের গলির ভেতর হারিয়ে গেল। আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.