নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার কামাল

আনোয়ার কামাল

আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।

আনোয়ার কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহিত্যের কাগজ : “কবিতার রাজপথ”- ফিলিস্তিন সংখ্যা

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৭

মানস-ঔপনিবেশিকতামুক্ত তারুণ্যের মুখপত্র ‘কবিতার রাজপথ’ নবম-দ্বাদশ সংখ্যা, সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ২০১৪ বের হয়েছে। ফিলিস্তিন : অধিকৃত ভূখণ্ডের জন্য শোকগাথা। প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকায় স্মরণকালের মানবিক বিপর্যয় নিয়ে কবিতার রাজপথ চলতি সংখ্যাটি বের করা হয়েছে। ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সরূপ সম্পাদক মনির ইউসুফ এ সংখ্যাটি বের করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

চলতি সংখ্যায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে ‘বর্তমান বিশ্বযুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন’ নিয়ে লিখেছেন আসাদুল্লাহ। প্রবন্ধ লিখেছেন, ‘সম্রাট টাইটাস ও জেরুজালেম : রোমান হামলা’ শিরোনামে সাইমন সেবাগ মন্টোফিওরি, মূল লেখাটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ হাসান শরীফ ও মাসুম বিল্লাহ। প্রবন্ধে বলা হয়েছে কিভাবে মৃত্যুফাঁদ থেকে পালানো আর টিকে থাকার লড়াই হয়েছিল। সে সময় কেউ ছিল চরম ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্য, কেউ বেপোরোয়া দস্যু, তবে বেশিরভাগ নিরপরাধ সাধারণ মানুষ পালিয়ে বেঁচেছিল। শুধু তাই নয় জেরুজালেম থেকে পালানোর সময় তাদের মুদ্রাগুলো লুকানোর জন্য জায়গা না পেয়ে তা গিলে ফেলতেন। এটা জানার পর পলায়নপর লোকদের হত্যা করে পেট চিরে লুকানো মুদ্রা খোঁজা হতো। যথেষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ একটি পুরানো ঘটনাবহুল ইতিহাস ভিত্তিক বর্ণনা এ নিবন্ধে বেশ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে।

হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, ‘মাহমুদ দারবিশ আরবের ভূমি ফুঁড়ে উঠে আসা ফিলিস্তিনি কবি’। তিনি ফিলিস্তিন অঞ্চলের তিন হাজার বছরের ইতিহাস বাইবেল থেকে ‘পুরাতন নিয়মে’ অর্থাৎ ওল্ড টেস্টামেন্টর মাধ্যমে এ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, নানা প্রসঙ্গে ও নানা অনুষঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্যের গল্পগাথা চুঁইয়ে এসেছে যেভাবে বাংলা পুঁথিসাহিত্যে সেটুকুর ভেতরেও আমরা নামটি ছোট থেকেই জেনে গেছি; কেনান। শত শত বৎসর পরিক্রমায় নাম পাল্টেছে যে কতভাবে! ফিলিস্তিয়, ফিলিস্তিয়া, ফিলিস্তিন, প্যালেস্টাইন, জুডিয়া, ইসরায়েল ইত্যাদি। ভূখণ্ডের সীমানাও অবশ্য থাকেনি, রদবদল হয়েছে বারংবার। এ সবই তুলে ধরেছেন হায়াৎ মামুদ তার তথ্যবহুল পরিচ্ছন্ন এ লেখাটিতে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘এডওয়ার্ড সাঈদ কেন গুরুত্বপূর্ণ’ এ বিষয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন। এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ (১৯৩৫-২০০৩) গুরুত্বপূর্ণ একাধিক কারণে। তিনি একাধারে সফল অধ্যাপক, অত্যন্ত উঁচু ও মৌলিক মানের সাহিত্যসমালোচক এবং সেই সঙ্গে লেখক। সাঈদ কেবল সাহিত্য সমালোচনা করেননি, তাঁর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সঙ্গীত, আত্মজীবনী এমনকি ভ্রমণবিষয়েও তিনি অনবদ্য। প্রাচ্যকে সাঈদ সংজ্ঞায়িত করেছেন, ‘সৌন্দর্যতাত্ত্বিক, বিদ্যাভিত্তিক, অর্থনৈতিক, সমাজতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায়, প্রাচ্য সংক্রান্ত ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার বিবরণ বলে। ব্যাপারটা সাংস্কৃতিক, কিন্তু সাংস্কৃতিক নয় আদর্শিকও বটে এবং অতি অবশ্যই রাজনৈতিক। কেননা প্রাচ্যবাদের সঙ্গে ক্ষমতার প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কযুক্ত।

ঔপনিবেশিক শাসকেরা চেয়েছে বৃদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক ক্ষমতা, যার সাথে ঔপনিবেশিক রাজনীতি অবিচ্ছেদ্যরূপে জড়িত। এডওয়ার্ড সাঈদ দৃষ্টান্ত হিসেবে তাঁর নিজের কথাও বলেছেন, তিনি নিজেও প্রাচ্যবাদের যে প্রবর্তক তার অধীনেই ছিলেন। কারণ, তিনি জন্মগত সূত্রে আরব আর ধর্মে খ্রিস্টান কিন্তু জন্মেছিলেন ফিলিস্তিনি পরিবারে। নারীবাদ বা ঔপনিবেশবাদের মতো প্রাচ্যবাদও একটি ডিসকোর্স। বুদ্ধিজীবীর কাজ ও ভূমিকা সম্পর্কে সাঈদের ধারণা সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত বিষয়। বিশেষভাবে ১৯৯৩ সালে দেয়া বিবিসি’র রীথ বক্তৃতামালাতে। এখানে তিনি ‘রিপ্রেজেনটেশন অব ইনটেলেকচুয়ালস’ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিনিধিত্ব করা, তিনি বিশেষ করে প্রতিনিধিত্ব করবেন তাদের, সমাজে যারা দরিদ্র, সুযোগ বঞ্চিত, মূক, যাদের পক্ষে বলার মতো কেউ নেই, যারা চিরকালই ক্ষমতাহীন। আবার বুদ্ধিজীবীদের হতে হবে সবসময় প্রথাবিরোধী। এডওয়ার্ড সাঈদ সারা জীবন তাই করেছেন।

ইউরোপীয় সাহিত্যে প্রাচ্যবাদী মনোভাবের প্রতিফলন কিভাবে ঘটেছে তার বিস্তৃত বিবরণ সাঈদ তাঁর বইতে তুলে ধরেছেন। তিনি একজন অসাধারণ সাহিত্য সমালোচকও বটে। তাঁর সাহিত্য সমালোচনা হৃদয়গ্রাহী যুক্তি দিয়ে লেখেন, কখনোই উত্তেজিত হন না। এডওয়ার্ড সাঈদ গ্রামসির কাছাকাছি ছিলেন, কিন্তু গ্রামসির রাজনৈতিক পথ ধরে নয়। সাঈদের সংস্কৃতি চিন্তার অসুবিধার একটি দিক হচ্ছে পরিধি অপরটি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির। সাঈদ উপনিবেশবাদকে জানেন, জানেন সাম্রাজ্যবাদকেও। প্রাচ্যবাদ-এ তিনি উপনিবেশবাদের তৎপরতা দেখেছেন, কিন্তু সেই দেখাকে পর্যাপ্ত মনে করেন নি, যে জন্য সাম্রাজ্যবাদকে বিবেচনার মধ্যে এনে তাঁকে পরবর্তী ‘কালচার এ্যান্ড ইমপিরিয়ালিজম’ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি রচনা করতে হয়েছে। এডওয়ার্ড সাঈদ আমাদের জন্য উদারনীতির সীমা নতুন করে চিহ্নিত করেছেন। তিনি তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ও সাহিত্যিক ক্ষমতাকে আমাদের জন্য অধিগম্য উত্তরাধিকার হিসাবে রেখে গেছেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এডওয়ার্ড সাঈদের চিন্তা চেতনা এবং তার প্রতিফলন এর যে প্রয়াস তাই তুলে এনেছেন এ নিবন্ধে।

‘মহাজাতির জনক’ শিরোনামে এম ঈদ্রিস আলী, ইহুদি জগত, খ্রিস্টান জগত, ইসলামের জগত এভাবে কালপরিক্রমায় ধর্মীয় দর্শন প্রসার লাভসহ নানাবিধ বিষয়াদি নিয়ে ধর্মীয় ইতিহাসের প্রামাণ্য লেখা পাঠককে উপহার দিয়েছেন। যা থেকে পাঠক ফিলিস্তিনিদের পূর্ব পূরুষ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ঘনীভুত ধর্মীয় ও গোত্রদের সংকটের ইতিহাস জানতে পারেন। সুন্দর একটি তথ্যসমৃদ্ধ এ লেখা থেকে পাঠক তার ভাবনার খোরাক পাবে।

তুহিন তৌহিদ লিখেছেন, ‘সক্রেটিসের হেমলক, আরাফাতের পলোনিয়াম-২১০’ শিরোনামে। ইয়াসির আরাফাত যার পুরো নাম মুহাম্মদ ইয়াসের আবদেল রহমান আবদেল রউফ আরাফাত আল-কুদোয়া আল হোসেইনি আকা আবু আম্মর। তিনি ২০০৪ সালের ১২ অক্টোবর ফিলিস্তিনের রামাল্লায় নিজ বাসভবনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার জন্য তিউনিসিয়া, জর্ডান, মিসর থেকে বিখ্যাত সব চিকিৎসকরা ছুটে আসেন। ৩ নভেম্বর কোমায় চলে যান তিনি এবং ১১ নভেম্বর সেই হাসপাতালেই মারা যান। আরাফতের এ ধরনের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেনি তার খ্রিস্টান স্ত্রী সোহা। সুইজারল্যান্ডের লুসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জামা কাপড় পরীক্ষা করে দেখা যায় কাপড়ে ‘পলোনিয়াম-২১০’ তেজষ্ক্রিয় রয়েছে। পরে তার মৃতদেহ থেকে হাড় নিয়ে পরীক্ষা করলে গবেষকরা তেজষ্ক্রিয়তার প্রমাণ পান। এতে বোঝা যায় তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয়।

‘আধুনিক ফিলিস্তিনি সাহিত্য শিরোনামে’ লিখেছেন, নাজিব ওয়াদুদ। লেখাটি ‘ফিলিস্তিনি সাহিত্য’ সম্বন্ধে আমাদের অনেক নতুন ধারণা দেয়। ফিলিস্তিনি সাহিত্য নামে আলাদা কোন সাহিত্য বিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকের আগে ছিল না। সুতরাং দেখা যায় ফিলিস্তিনি সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ ফিলিস্তিনি জাতিগঠনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। ফিলিস্তিনি কবি ও কথাশিল্পীরা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায় অবিচারের সাক্ষ্য তাদের লেখায় সাফল্যের সঙ্গে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এ ধরনের একটি লেখার জন্য নাজিব ওয়াদুদ অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

ফিলিস্তিনি গবেষক লেখক নাসার ইবরাহিম এর ’জুতা’ শিরোনামের গল্পটিও অনুবাদ করেছেন নাজিব ওয়াদুদ। গল্পে রামাল্লায় ফিলিস্তিনি শিশুদের সাথে বর্বর ইসরাইলী সৈন্যদের নির্মম আচরণের প্রকাশ ভিন্ন মাত্রায় নাসার ইবরাহিম তুলে ধরেছেন।

অধিকৃত ভূখণ্ডের কবিতা শিরোনামে মাহমুদ দারবিশ এর কবিতা অনুবাদ করেছেন, হায়াৎ মামুদ ও রহমান হেনরী। এবং অধিকৃত ভূখণ্ডের জন্য শোকগাথা নামে বাংলাদেশের একঝাঁক কবির প্রতিবাদী কবিতা এতে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। এরা হলেন, মুহম্মদ নুরুল হুদা, খালেদ হামিদী, আনোয়ার কামাল, আসাদুল্লাহ্, মুহাম্মদ আমানুল্লাহ, মনির ইউসুফ, আবু সাঈদ তুলু, মুশাররাফ করিম, সেলিম মাহমুদ, গোলাম শফিক, হরিদাস ঠাকুর, পিয়াস মজিদ, কালাম আজাদ, ভাগ্যধন বড়ুয়া, মনজুরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, নজমুল হেলাল, আশরাফ জুয়েল, জেবুননাহার জনি, বিষাদ আব্দুল্লাহ।
মাসুদ খান’র ‘নদীকূলে করি বাস : দেহ হারানো জামা’ শিরোনামে দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ আলোচনা করেছেন আমীর খসরু স্বপন। মাসুদ খান আশির দশকের কবি। এ গ্রন্থে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় দিকেই গভীর নজর দেন।

সংখ্যাটি সুন্দর আঙ্গিকে করা হয়েছে। কিছু মুদ্রণত্রুটি চোখে পড়ে। পরবর্তীতে সম্পাদনা পরিষদ নিশ্চয় এ বিষয়টি আরো সতর্কতার সাথে দেখবেন। কবিতার রাজপথ সমগ্র আর্টের কাগজ। পত্রিকাটির পাঠকপ্রিয়তা ও দীর্ঘযাত্রা কামনা করি।

উপদেষ্টা সম্পাদক: আসাদুল্লাহ
সম্পাদক: মনির ইউসুফ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: বিষাদ আব্দুল্লাহ
অলঙ্করণ: নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
দাম: ত্রিশ টাকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.