নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার কামাল

আনোয়ার কামাল

আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।

আনোয়ার কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেম, দ্রোহ, দুঃখ, মাটি ও মানুষের রসায়ন ‘নৈঃশব্দ্যের রাত্রিদিন’

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭

১৬ জানুয়ারি বংলামেইল২৪.কম এ আমার কবিতাগ্রন্থ “নৈঃশব্দ্যের রাত্রিদিন” নিয়ে “বঙ্গ রাখাল” এর আলোচনা প্রকাশ করেছে। বন্ধুদের পড়ার সুবিধার্থে নিচে দেয়া হলো।

প্রেম, দ্রোহ, দুঃখ, মাটি ও মানুষের রসায়ন ‘নৈঃশব্দ্যের রাত্রিদিন’

বঙ্গ রাখাল

“কবি অপরাপর মানুষের চেয়ে অধিকতর সুন্দর বোধযুক্ত। বিশেষ একজন ব্যক্তি যার শক্তিশালী আবেগ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দাপিয়ে উঠে অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বাধ্য-” এ কথাগুলো কিন্তু আমার নয়। এ কথাগুলো ওয়ার্ডস ওয়ার্থের। কবিকে কোন গোণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায় না। কবি অবিনশ্বর। কোন কিছু দিয়ে কবিকে ধ্বংস করা যায় না। একজন আদর্শিক কবি বেঁচে থাকে, আদর্শ আর নৈতিকতার সাথে। কবিদের সীমা অসীম, কবি শৃঙ্খলমুক্ত, মুক্ত ডাহুক, রাতে জ্বলা জোনাকী; বেলেজোছনার রাত আবার রাতজাগা নিশাচর প্রাণী। যিশুখ্রিস্ট তার বারজন সঙ্গী নিয়ে চলতেন সব সময়। এঁদের কেউ কেউ কবি ছিল কিনা বাইবেলে তার কোন উল্লেখ নেই, কিন্তু তিনি নৈশভোজের আগে তার সঙ্গীদের নিয়ে একটা সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন এবং তিনি পৃথিবীতে আবার আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এই অবিনশ্বরতাই কবিতা। কবিতায় কোন লয় বা ক্ষয় নেই। জীবনানন্দ দাশও একে বলেছেন ‘মহাকালের ইশারা থেকে উৎসারিত সময় চেতনা’। পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্যের দিকে দৃষ্টি দিলেই আমরা দেখতে পাই কবিতা হতেই সমস্ত সাহিত্য সৃষ্টি। আবার কবিতার সাথে দ্বন্দ্ব সেই প্রাচীন যুগ থেকেই। রুশো বলতেন, ‘কবিতা মূলত কবির হৃদয়াবেগের বাহন’। একটা কবিতা ইস্পাতের চেয়েও শক্তিশালী আর বুলেটের চেয়েও গতিশীল। কবির স্বপ্ন থেকে সমাজ সংসারের সৃষ্টি হয়। কবি অজানাকে জানায় আর অচেনাকে চেনায়। পৃথিবীর একই বিশাল মৃত্যুর মধ্যে কবি জীবনের ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন। কবি আনোয়ার কামালও জীবনের ধারণা প্রতিষ্ঠা করার ধারণা নিয়েই হাত দিয়েছেন কবিতা রচনায়। প্রতিষ্ঠা করবেন মানবতার সমাজ। তাইতো তিনি তার কবিতায় বয়ান দিলেন-

১. কালের কলস থেকে

কবিতার নিখোঁজ শব্দগুলো

পথহারা পাখির ঝরা পালক হয়ে

ফেরি করে যত্রতত্র…

(ফেরারি)

২. কবির মৃত্যু নেই

কবিতার ধ্বংস নেই

(কবি ও কবিতা)

৩. কবিতায় জাগিয়ে তুলতে চাই প্রেম,

দ্রোহ, জীবনের জয়গান আর বিপ্লবের চেতনা…

( মাটির নিকটবর্তী মানুষের কাছে)

আনোয়ার কামাল তরতাজা একজন তারুণ্যের কবি। ভালাবাসা আর প্রেম দিয়ে তিনি ছিনিয়ে আনতে চান বিজয়ের মুকুট। কোন বাধাকে বা শৃঙ্খলাকে তিনি জীবনের জন্য ক্ষতি বলে মনে করেন না। তিনি প্রেম, ভালোবাসার গোলাপ রোপনের মধ্য দিয়েই টিকে থাকবেন হাজার হাজার বছর। কবি আনোয়ার কামাল মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন অস্ত্র, গোলাবারুদ আর কামানের গর্জন দিয়ে সাময়িকভাবে ক্ষমতার মালিক হলেও টিকে থাকা যায় না। তাইতো তিনি ভালোবাসার পৃথিবী বানাতে চান, জয় করতে চান মানুষের মন। তাইতো তিনি দৃঢ়তার সাথে দীপ্ত কণ্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণ করলেন- ‘পৃথিবীতে পাপ বলে কিছু নেই, যা আছে তার নাম ভালোবাসা।’

এই ভালোবাসাই মানুষকে মহান করে তোলে। ভালোবাসার শান্তি সমগ্র শান্তির চেয়ে শত শত গুণ বেশি এবং চিরস্থায়ী। আনোয়ার কামালের কবিতায় প্রধান লক্ষণীয় বিষয় প্রাকৃত ও লোকজ শব্দের ব্যবহার। প্রান্তিক অঞ্চলের কাদাময় শব্দগুলো নান্দনিক আর শৈল্পিকতার মধ্য দিয়ে তিনি কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। এ শব্দগুলো যেন তার কবিতায় প্রাণ পায়।

১. জেগে ওঠে প্রাণ, জেগে ওঠে ঢাক ঢোল, বটতলায় জমে মেলা

( নব প্রাণের উচ্ছ্বাস)

১.ক. মাটির সোঁদা গন্ধে বেড়ে ওঠা কৃষকের মল্লভূমি…

১.খ. কাশফুলের ধবল মখমলে আচ্ছন্ন রাখালের শরীর

(মৃত্তিকা)

শব্দ ব্যবহারের দিক থেকে আনোয়ার কামাল সিদ্ধহস্ত। খুব সহজ আর সাবলীল কৌশলে লিখে যান একের পর এক কবিতা। আমরা পূর্ববর্তী কবিদের কবিতার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, রোমান্টিক কবিতায় প্রেম ছিল স্বর্গীয় যা ঐশী প্রেরণা মানব জীবনের শ্রেয়তম ও সুন্দরতম তারই নির্যাস। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে এই প্রেমানুভূতি পরিবর্তিত হয়ে বাঁক নেয় অন্য দিকে। অতীন্দ্রিয় বিশুদ্ধ প্রেমের স্থানে প্রাধান্য পায় দেহচেতনা বা শারীরিক কামনা। কবিগণ যে এই যৌনচেতনার দিকে ধাবিত হয়েছিলেন তার অন্তমূলে প্রবিষ্ট ছিল রোমান্টিক উদ্দামতার সঙ্গে ফ্রয়েডীয় প্রবৃত্তি শানিত প্রেমভাবনা। রবীন্দ্রনাথের স্নিগ্ধ যৌবনাবন্দনার বিপ্রতীপে মোহিত লাল পুনঃস্থাপন করেন মানবিক কামনা-বাসনা বিজড়িত দেহ আস্বাদনমূলক কবিতা। নজরুলের স্পর্শক্ষম কবিতাবলী পরবর্তীদের জন্য উন্মোচিত করে দিল যৌবন বাসনা দীপ্ত কবিতা চর্চার ধারা। লরেন্সের দেহচেতনার দ্বারা প্রভাবিত বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় সোচ্চার প্রেমের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে গেল বিরহকাতর প্রেমিকের অপ্রকাশ জনিত যন্ত্রণাকাতর হাহাকার। নর-নারীর যৌন চেতনার মধ্যে যে অস্পষ্ট রহস্যের অচেনা মধুরিমা আছে তার প্রতি এই সময়ের তরুণ কবিদের ও রয়েছে তীব্র আকর্ষণ। কবি আনোয়ার কামাল একজন চির তরুণ কবি। বয়সে কিছুটা প্রবীণ হলেও কিন্তু মনে বা লেখায় তা মোটেই নয়। তিনি লেখালেখির সংগে সম্পৃক্ত রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে। মনের দিক থেকে একে বারেই নবীন। যৌবন, প্রেম, ভালোবাসা তার কবিতায় উঠে এসেছে অনায়াসে। আধুনিক কবিতা লিখবেন অথচ যৌনতা, প্রেম, ভালোবাসা আসবে না তা হয়তো ভাবাই বোকামী। নিচের কবিতাগুলো পাঠে সহজেই আমরা তা উপলব্ধি করতে পারবো।

১.ক. নারীর শরীরের ভাঁজে ভাঁজে অন্য রকম আচ্ছাদন

ভেসে আসে ফুলেল সম্ভাষণে…

খ. আমি তোমার নগ্নময় কবোষ্ণ শরীরের প্রতিটি লোমকূপে

হাতের ছোঁয়ায় সুড়সুড়ি দেই, মিশে যাই সাগর সঙ্গমে…

(শব্দেরা ঝরে পড়ে)

২. নিড়ানো হয়নি আজো বিস্তৃর্ণ উদোম জমিন

তোমার ক্লান্ত দেহ নুয়ে পড়ে ঘুমহীন বৃষ্টিস্নাত রাতে…

(উদোম জমিনে অনুভবে তুমি)

৩. তবুও প্রেমময় জোড় শালিক, দোয়েল লেজ তুলে আবেদন সৃষ্টি করে

আমাকে আনন্দ দেয় ক্ষণিক বিরতিতে…

(সময়ের ঘোড়দৌড়ে এ কোন ব্যর্থতা নয়)

৪. আমার নগ্ন যৌবনের ফসল পুঁতে রাখি

সোঁদা মাটির বুকে অথবা তৃষ্ণার্ত কবুতরের নরম মাংসে…

(গোপন ব্যারিকেট)

৫. মন বলে একদিন পরম উচ্ছ্বাসে

চুম্বনে ভরে দেবো টোল পড়া গাল…

(একদিন যুগলমূর্তি হবো)

৬. তোমার শরীরের ছায়া, বুকের ওড়না, ঘামের গন্ধ,

মুখের লালা আমায় লেপ্টে রাখে…

(বাংলা ‘দ’ এর মতো)

৭. জেগে ওঠে কামুক শরীর …

(মৃত্তিকা)

আনোয়ার কামালের কবিতায় প্রধান প্রবনা হচ্ছে ব্যক্তি আত্মময়তা, ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি আর নিজেকে আবিস্কারের প্রাণান্তকর চেষ্টা, যার মধ্য দিয়ে সামাজিক বিরোধ, আপন অস্তিত্বের কথা উঠে এসেছে অবিরলভাবে। কবি আপাদমস্তক অস্তিত্বচেতনায় বলিয়ান হলেও সচেতনভাবেই চিনে নিয়েছেন প্রেমের নাড়ী নক্ষত্র। প্রগাঢ় ভাবে তুলে ধরেছেন নারী প্রেম, যৌবন আশ্রিত নানা স্মৃতিময় বেদনার কবিতাও। কবিতা কবির মগ্নচেতনার চর্চাকেন্দ্রে এবং বুকের মৃদু মৃদু কম্পন। তিনি কিন্তু সব জায়গায় প্রেম, নারী, যৌবন নিয়েই মেতে থাকেননি। কিছু কিছু কবিতায় বিপ্লবী, বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন। সমকালের শ্রমজীবী মানুষ, তার জীবন ও জীবিকার সঙ্গে তিনি অনুভব করেছেন যন্ত্রণা বোধের লবণাক্ত জল। কবি বিদ্রোহী হয়েছেন ঈশ্বর নামের মহাশক্তিটিরও বিরুদ্ধে। কূট পরায়ণ ঈশ্বরকে ধরাধমে নামিয়ে আনতেও দ্বিধাবোধ করেননি। মানবতার বিপর্যয় দেখে কোন কবিই সচেতনভাবে বসে থাকতে পারেন না। ক্ষণিকেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন-

১. নগ্নবাতাস মৃত্যুর হোলি খেলা ধূসর গদ্যময় দুপুর…

২. ঈশ্বর তুমি নেমে এসে দেখে যাও-

গাছতলা, ফুটপাত, রেলস্টেশন, রাজপথ, ফেরিঘাট

দেখে যাও অনিশ্চিত জীবন।

(নগ্ন বাতাসে মৃত্যুর হোলি)

৩. সময়ের চড়ুই পাখি ঠেঁটে জমিয়ে রাখে দুঃসহ যন্ত্রণা

(সময়ের ঘোড়দৌড়ে এ কোন ব্যর্থতা নয়)

এন্টি-পোয়ের্টিক আন্দোলনের পুরোধা মিলোস্লাব হোবুব বলেছিলেন, ‘কবিতা লেখাকে জীবনের অন্য কোন কাজের মতোই সহজ করে ফেলতে হবে, যেভাবে আমরা খবরের কাগজ পড়ি বা ফুটবল খেলতে যাই সেরকমই সহজ। কবিতা হতে হবে এমন; যা প্রত্যেকটি মানুষই বুঝতে পারে। জনারণ্যে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে পড়লেও তার মানে বোঝা যাবে।’ মনে হয় এ কথাটি মেনে নিয়েই আনোয়ার কামাল কবিতা লেখতে এসেছেন। তিনি কখনো বিদ্রোহী হয়েছেন রাষ্ট্রযন্ত্র যাদের হাতে তাদের বিরুদ্ধে কখনো গার্মেন্টস মালিকের বিরুদ্ধে, কখনো রাজাকার বা মানবতাবিরোধী পাকিস্তানী দালালদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বিদ্রোহের ভাষাগুলো কত সহজ আর সাবলীলভাবে তিনি বলে গিয়েছেন, একের পর এক কবিতায়। যে কবি সময়কে ধারণ করে না, তাকে আমরা আর যায়ই বলিনা কেন কবি বলতে পারি না। কবি আনোয়ার কামাল একজন সচেতন এবং বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানবিক কবি। যার প্রতিটি কবিতার পাতায় পাতায় মানুষ, মানবিক জয়জয়কার। শাহবাগে যে প্রজন্ম চত্বর হলো তাও কিন্তু অতি সহজ ব্যাপার নয়। এ কবিদের জীবন ও কম হুমকিময় নয়, কিন্তু কবি কি কারও রক্তচক্ষুর ভয়ে ঘরের কোণে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন। যিনি রাখেন তিনি কবি নয়। সে শুধুমাত্র লোভী আর মানুষের পা চাটা লকলকে লালাধারী চাটুকার। কবি আনোয়ার কামাল সব কিছুকে পায়ে পিষে গাইতে চান মানুষ আর মানবতার গান। তার কিছু কবিতাংশ নিচে তুলে ধরা হলো:

১. দখল বাড়তে থাকে হাত বদল হয় জমিন শুষে নেয়

লোনা ঘাম আর ভেজা রক্ত; সেই সাথে মানুষের

রক্ত শুষে জমির কামজ্বর বেড়ে যায়…

(মৃত্তিকা)

২. বাতাসে ধীরে ধীরে লাশের গন্ধ মিলে যায়

বুকের ভেতরের দগদগে ক্ষত শুকায় না…

(পোশাক কন্যা)

৩. সুন্দরের বিশাল বনরাজি নিভৃতে কাঁদে…

(আকাশে বাতাসে এখন)

৪. আমার চার পাশে হাহাকার বিষণ্ন সকাল মুষড়ে পড়া একদল শুকর

চারদিকে কান্না, হাহাকার, না পাবার বেদনা…

(ফিরে দেখা)

৫. বিশ্ব মোড়লরা তামাক কাটছে আমার ভায়ের রক্ত পান

করে ইহুদী- জায়নবাদী…

(দানবটাকে থামাতে হবে)

৬. হাসপাতালের বার্ন ইউনিটগুলো জ্বলছে-

জ্বলছে হৃদয়ের খ- খ- সঞ্চিত আশা আকাক্সক্ষা।

(পেট্রোল বোমায় ঝলসানো স্বদেশ)

৭. যেন স্বজন হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারে না…

(ডেটলাইন ১৭ মে ১৯৭১ সোমবার)

৮. হায়েনার কুটিল দৃষ্টি ঘুরে ফিরে-

ল্যাটিন আমেরিকা রাশিয়া ভারত…

(বালিহাঁসের পাখার মতো ধূসর চারদিক)

কবি আনোয়ার কামালের কবিতা নিজের গণ্ডি পরিত্যাগ করে আর্ন্তজাতিকতাকে স্পর্শ করতে পেরেছে। কী নেই আনোয়ার কামালের কবিতায়। প্রেম ভালোবাসা, লোকজ ঐতিহ্য, মায়ের মমতা, নাড়িছেঁড়া সম্পর্ক, হতাশা, উদ্দীপনা, বিপ্লব, বিদ্রোহ সবকিছুর সন্ধান যেন আমরা পাই এই কবির কবিতায়। তিনি দুঃখ শোক ভুলে মুখ তুলে দাঁড়াতে বলেছেন-- ‘মুছে ফেল মুখের সোনালী প্রলেপ ধুয়ে ফেল দেহের পাপ।’ কবি গদ্যময় দুপুরে অভিসারে একাকী নির্জনে বাগানে ঘুরে ঘুরে দেখে বেড়ান বেদনার্ত মানুষের দুঃখ। অস্ত্র তুলে নিতে চান ঐ পশু জানোয়ারদের খতম করার জন্য।

কবি আনোয়ার কামাল অনেক কিছুই সচেতনভাবে এড়িয়ে চললেও আমাদের পূর্ববর্তী কবি জীবনানন্দ ও রবীন্দ্রনাথকে এড়িয়ে চলতে পারেন নি। তার কিছু কিছু কবিতায় আমরা দেখতে পাই জীবনানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতার ছাপ বিদ্যমান।

১. হয়তো একদিন আবার আসবো আমি তোমাদের মাঝে

কোন এক সন্ধ্যায় বালুকাবেলায় সাঁঝের পাখিরা যখন…

(শিরোনামহীন)

২. আমার বেতফলের মত ঘোলাটে চোখে

তুমিও ঝাপসা দেখাও।

(শিশিরে শীতের কান্না)

৩. যেদিন তুমি দেখবে নেই আর এই আমি

ফিরবে সেদিন আমার মাঝে সেই তুমি…

(অনুকবিতা)

আমাদের দেশটা সম্প্রীতির দেশ হলেও ধর্মান্ধদের জ্বালায় জ্বলতে হয়েছে বারংবার। দিতে হয়েছে আয়ের উৎস, সন্তানসহ নিজের জীবন। বলি হয়েছে মসজিদ, মন্দির, মন্টু, নাসিমা, মুকুল, গাজীর মত রাজনীতি করে না এমন মানুষদেরও। তাইতো কবি এ অন্যায় আর অসাম্যতা দেখে যুদ্ধে নেমে পড়েন। হাতে তুলে নেন, লাল বিপ্লবী পতাকা আর হাতে স্টেনগান নিয়ে শামিল হন শ্রমিকের মিছিলে। কিন্তু এ কবি একদিন ছিলেন নাদান, আলাভোলা গ্রাম্য বালক, সে একদিন মায়ের মমতা আর বাবার স্নেহ ছেড়ে পাড়ি জমান ইটবালির শহরে শুধুমাত্র পেটের দায়ে। এখন সেই বাল্য নাদান বালকের নস্টালিয়া কবিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় তার ঈশ্বরদীর কোন এক পল্লীতে।

কবি শুধু হতাশাগ্রস্থ নয়। স্বপ্নও দেখতে জানেন। দেখেছেনও অনেক স্বপ্ন। দেখে যেতে চান মানবতার জয় আর মনুষ্যত্বের বিজয়। এখন কবির গোপন মনে জন্ম নিচ্ছে দিকচক্রবাল ভালোবাসা। হতাশার জায়গা আজ বাস্তবতার চরাচরে ভীড় জমেছে। কবির চোখে আজ শুধু স্বপ্ন হাসির ঝিলিক।

কবি পুরাতন ভালোবাসাকে আজ আর বুকে জড়িয়ে বাঁচতে চান না। তিনি নতুন চোখে পৃথিবীকে দেখতে চান। সাজাতে চান পৃথিবীকে নতুন সাজে। বেঁচে থাকতে চান তিনি প্রেমিকার ভালোবাসা আর মায়ের চুম্বন গায়ে মেখে। এ চুম্বন তাকে দীর্ঘজীবী করে তুলবে। তাইতো তিনি কবিতায় বলেছেন, ‘ মুছে ফেল চোখের লবণজল।’

কবি আনোয়ার কামালের কবিতায় স্থান পেয়েছে পাপ, দুঃখ, অমঙ্গলবোধ, নৈরাশ্য, যৌনচেতনা, আত্মজৈবনিক, স্বীকারোক্তি মূলক ভঙ্গিমা, দেহাত্মবাদ, জীবনযাপনের তীব্রবোধ, দেশকালের নানা সংকটময় মুহূর্ত। এ বৈশিষ্ট্যগুলো একজন কবির প্রধান গুণ। কবিতা আন্তর্জাতিক মানের হতে হলে এ গুণগুলো কবির কবিতায় থাকতে হয়। এসব গুণগুলোই আনোয়ার কামালের কবিতায় বিদ্যমান যা কবিকে একদিন আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করি। কবির দীর্ঘ আয়ু কামনা করি এবং তার এ কবিতাগ্রন্থ যেন পাঠকপ্রিয়তা পায় সে প্রত্যাশাই রইল।

লেখক: বঙ্গ রাখাল, কবি ও প্রাবন্ধিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.