নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,বই ও লিটলম্যাগ আলোচনা লিখে থাকি । ‘এবং মানুষ’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ব্লগারের অনুমতি ছাড়া কোন লেখা কপি করে অন্য কোথাও ছাপানো নিষেধ।
ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে পাড়ার ক্লাবের মাঠে নাটক দেখতে যেতাম। সেখানে নাটক শুরুর আগে কবিতা পাঠ হতো। আর ফি বছর ক্লাব থেকে পত্রিকা বের হতো। সেখানে বড়দের গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া থাকতো। যে বছর পত্রিকা বের হতো না, সে বছর দেয়ালিকা বের হতো। সুন্দর হাতের লেখায় আলপনা আঁকা বড় আর্ট পেপারে ছোটগল্প, কবিতা, ছড়া, কৌতুক লেখা হতো। আমি গভীর আগ্রহভরে দেখতাম। বাবা পত্রিকা বাসায় নিয়ে এলে আমি গোপনে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বইয়ের নিচ থেকে বের করে তা পড়তাম। বেশির ভাগই বুঝতাম না, তবে যেবার আমি এসএসসি পরীক্ষা দিলাম, সেবার মহল্লার এক বড় ভাই জাহিদ খানকে আমার কবিতার খাতাটা দেখানোর জন্য নিয়ে গেলাম। তিনি রংপুর বেতারের গীতিকার ছিলেন, এছাড়া তিনি কবিতা লিখতেন এবং সাংবাদিকতা করতেন। জাহিদ ভাই আমার কবিতার খাতা হাতে নিয়ে প্রথমেই আমার মুখের দিকে তীর্যকভাবে তাকালেন। তখনই আমার মুখ শুকিয়ে গেল। বুকের ভেতর দুরু দুরু কাঁপনতো ছিলোই। তিনি কবিতার খাতা খুলেই দু’একটি পাতা উল্টে-পাল্টে দেখে একটি কবিতাতে নিবিষ্ট মনোযোগ দিয়ে এক টানে দু’ লাইন কেটে দিয়ে বললেন- এসব লিখেছো কেন? কবে থেকে লেখো?
আমি বললা-আমার প্রতিটি লেখার উপরের দিকে তারিখ দেয়া আছে। তিনি পুরো খাতা দেখলেন, যতোই গভীরে যেতে থাকলেন, ততোই আমার প্রতি তার স্নেহ যেন একটু একটু করে বাড়তে লাগলো বলে মনে হলো। কিছু সংশোধন করে দিলেন।
জাহিদ ভায়ের কাছে থেকে ফিরে আমি বুঝতে পারলাম, আমার লেখা কিছু একটা হয়তো হয়েছে। কারণ, ঐ শহরের যে ক’জন নাম করা কবি ছিলেন, যাদের লেখা সংবাদপত্রে বা ম্যাগাজিনে ছাপা হতো, তাদের মধ্যে তিনিও যে একজন। এরপর কলেজে ভর্তি হলাম। ব্যাস মাথার মধ্যে চেপে বসলো দেয়ালিকা করার। এক বড় ভায়ের স্মরণাপন্ন হলাম, তিনি খুব ভালো আলপনা আঁকতে পারতেন। তার কাছ থেকে আলপনা এঁকে নিলাম। তারপর সুন্দর হাতের লেখা যার, তার কাছে লেখাগুলো নিয়ে হাজির হলাম। সেটা ছিল ১৯৭৮ সাল। দেয়ালিকার সম্পাদক হিসেবে নিচে বড় বড় হরফে নিল কালিতে আমার নাম লেখা হলো। অনেক কবিতা নিয়ে বাছাই করে কবিতাগুলো দেয়া হলো। আমার কবিতাটির শিরোনাম ছিলো ‘হে ফলবতি নারী’। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে ফিরে সেই দেয়াল পত্রিকার কাছে যেতাম আর ‘হে ফলবতি নারী’ পড়ে আসতাম। মেয়েদের কমনরুমের পাশেই স্ট্যান্ড বানিয়ে দেয়ালের সাথে খাড়া করে রাখাতে মেয়েরা সবাই ভিড় জমাতে থাকলো। পরদিন থেকেই আমার কদর খানিক বেড়ে গেলো। অনেকেই কবি বলে ডাকা শুরু করলো। সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। নিজের মধ্যে একটা পুলকিত ভাব অনুভূত হতে থাকলো। সেই আমার প্রথম সম্পাদিত দেয়াল পত্রিকা। সেখান থেকেই শুরু। পরবর্তীতে বিভিন্ন দিবসে সাহিত্য পত্রিকা বের করতাম। এগুলো ছিলো ভিন্ন নামে এক একটা এক এক বার। তারপর ভিন্ন নামে আরেকটি। কিন্তু প্রকৃত লিটলম্যাগের ধ্যান ধারণা নিয়ে পাকাপোক্তভাবে শুরু করেছিলাম ‘নোঙর’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা।
‘নোঙর’ পত্রিকাতে উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলফিকার মতিন, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী, কবি ওমর আলী, কবি প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ প্রমুখ। সে একটা নেশার মতো ছিলো। নেশা এ কারণেই বলছি যে, হাতে টাকা নেই, তাতে কি, বেতনের টাকা নিয়ে যেতাম পত্রিকা ছাপানোর সময়। ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনে চেপে রাজশাহীতে যেয়ে পত্রিকা ছাপানোর কাজ করতে হতো। বেতনের টাকা ফুরিয়ে গেলে আমার ব্যাংকে একটা অল্প টাকার স্থায়ী আমানত ছিলো। সেটা ব্যাংকে দায়বদ্ধ রেখে সেখান থেকে লোন নিয়ে পত্রিকা বের করতাম। এটা অবশ্য বউ জানতো না। জানতো আমার ঘনিষ্ট দু’জন বন্ধু, যারা পত্রিকার সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলো।
বর্তমানে ‘এবং মানুষ’ নামে একটি সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ সম্পাদনা করছি। যার দুটো সংখ্যা ইতোমধ্যে পাঠকের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। জানি না ভালো-মন্দ কি করতে পেরেছি। তবে এতে আমি নবীন-প্রবীণদের মিলন মেলার একটি প্লাটফর্ম হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কতদূর এগোতে পারবো তা সময়ই বলে দেবে। তবুও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, হোকনা কিছুটা পথ সাথীদের সাথে চলা, আর চলার আনন্দ ভাগাভাগি করা। সুখ-দুঃখে শরিক হয়ে এ আন্দোলনে নিজেকে একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে মনে করে কাজটিতে হাত দিয়েছি। সকলের সহযোগিতা পাচ্ছি, এটাইতো সবচে বড় পাওয়া। একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে এর চেয়ে ঢের বেশি কখনো আকাঙ্খা করিনি। একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে মনে করি কিছুটা হলেও লেখক হিসেবে আমারও যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা থেকেই কাজটি করছি। কাজটি করছি কোন নিরপেক্ষতার ভান করে নয়। আমি নিজেকে নিরপেক্ষ কখনো মনে করিনা। আমি পক্ষপাতে দুষ্ট, আর সেটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, প্রগতির পক্ষে, আর ধর্মান্ধ মৌলবাদের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আপনি আমাকে পছন্দ করলে করবেন, না করলে না করবেন। আমি আমার নীতি আদর্শ থেকে একচুলও নড়বো না। আপনার পছন্দ না হলে আমার পত্রিকায় লেখা দেবেন না। এই কমিটমেন্ট নিয়েই কাজ করতে চাই, কিছুটা হলেও সাহিত্যকর্মীদের সেবক হিসেবে তাদের কাতারে থাকতে চাই।
লিটলম্যাগ কেন করি? নাম ফুটানোর জন্য? নাকি নিজের লেখা ছাপানোর জন্য? নাকি বাতিক থেকে? দায়বদ্ধতা থেকে? শেষাংশটার কারণেই পত্রিকা বের করা হতো। বাতিক না থাকলে বা কোন ধরনের কমিটমেন্ট বা দায়বদ্ধতা না থাকলে এ ধরণের কাজ করা যায় না। শুধু শুধু নাম জাহির করার জন্য কেউ লিটলম্যাগ করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। আবার এটা করে লাভ করার জন্য বা জীবিকা নির্বাহের জন্য করেছেন, সফল হয়েছেন এর নজির নিকট অতীতে নজরে পড়ে না। লিটলম্যাগ করার ঝোঁক বেশি থাকে ছাত্রাবস্থায়। যাদের মননে প্রগতির বীজ অঙ্কুরিত হয়, চেতনায় আঘাত করে দেশ, জাতি, সমাজকে নিয়ে খানিক ভাববার খোরাক খুঁজে পায়, তারাই লিটলম্যাগ করতে আসে। তারা আসে দায়িত্ব নিয়ে, এক ধরণের লিটলম্যাগ সম্পাদক আছেন, যাদের চিন্তায় থাকে নতুন লেখকদের, প্রথাবিরোধী লেখকদের তুলে ধরবার তাগিদ থেকে পত্রিকা বের করার। সংবাদপত্রের সাহিত্য সম্পাদকরা যা পারেন না, একজন লিটলম্যাগ সম্পাদক তা করে থাকেন। সাহিত্য সম্পাদককে অনেক বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়। পাশাপাশি লিটলম্যাগ সম্পাদককে এ সব যাঁতাকলে পড়তে হয় না। ফলে, স্বাধীনভাবে তার কাজ করার শক্তি ভেতর থেকে উত্থিত হয়। তাই তারা খুঁজে বের করেন তরুণ লেখকদের সৃষ্টি করার মানসে। অনেক লিটলম্যাগ সম্পাদকরা আজকের প্রতিষ্ঠিত অনেক লেখককে প্রোমোট করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তরুণ বয়সে আজকের প্রতিষ্ঠিত কবি লেখকরা এধরনের পরিবেশ না পেলে তারা অনেকেই কতদূর এগুতে পারতেন তা বলা দুস্কর। কারণ, অনেকেই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে হারিয়ে যেতেন। অনেকেই যে এ ধরনের সিঁড়ি না পেয়ে হারিয়ে যাননি তা কি আমরা হলফ করে বলতে পারি। লিটলম্যাগ করতে যেতে নানামুখি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি পড়তে হয়। প্রধান বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়ায় পত্রিকা বের করার রসদ। অর্থের যোগান ধার দেনা করে, বন্ধুদের কাছে হাত পেতে বা নিজেদের পকেট খালি না করে কি এটা করা সম্ভব! কারণ, লিটলম্যাগ প্রকাশ পাওয়ার পর তার বিক্রি করা টাকায় ধার দেনা শোধ হবার চিন্তা কেউ করতেই পারে না। তাহলে সহজ কথায় কি দাঁড়ালো? নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো ছাড়া আর কি! ঐ যে বললাম, বাতিক আর তার সাথে চিন্তার স্ফুরণ, সমাজ নিয়ে ভাবনার খোরাক থেকে। কেবলই চেতনায় আঘাত হানে, ভেতরে ভেতরে সংকল্প সৃষ্টি হয়, আর নিজের অজান্তেই মনের ভেতরের লুকানো বাসনা জেগে ওঠা, এ ছাড়া আর কি!
লিটলম্যাগ বলতে আসলে আমরা কী বুঝে থাকি? লিটলম্যাগ বা যাকে আমরা বাংলায় বলি ছোটকাগজ, সেই ছোটকাগজ কি কারণে ছোট? আর কোন সঙ্গায় ছোট? এর মাত্রা মাপক কোন যন্ত্র আছে কি? ছোটকাগজ বলা হচ্ছে এর আকার আকৃতির কারণে না কি অবজ্ঞা-অবহেলার কারণে, বা বোধশক্তির কারণে তাও ভাববার খোরাক যোগায়।
বাংলা কবিতায় লিটলম্যাগের প্রসঙ্গ এলেই সর্বাগ্রে আমরা বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকার কথা স্মরণে আনি। আবার অনেকে এ ‘কবিতা’ পত্রিকাটিকে লিটলম্যাগ মানতে চাননি। এটিকে একটা উৎকৃষ্টমানের সাহিত্য পত্রিকা বলেছেন। কিন্তু লিটলম্যাগ যে সমস্ত কমিটমেন্ট দাবি করে তা তাতে নাকি ছিল না। এ ধরনের বিস্তর আলোচনা হতেই পারে। ‘কবিতা’ পত্রিকাটি একটি উন্নমানের সাহিত্য পত্রিকা হিসাবে দীর্ঘদিন টিকে ছিলো। লিটলম্যাগকে কেবলমাত্র লেখার জন্যই না, একে একটি আন্দোলন হিসাবেও ধরা হয় যা এক শ্রেণীর বোদ্ধা পাঠকরা এ কথাই বিশ্বাস করে থাকেন। আবার আমরা যদি কবি শঙ্খ ঘোষের ভাষায় লিটলম্যাগ এর স্থায়ীত্বকালকে বিচার করতে যাই, তবে তিনি কি বলেছেন দেখি। তাঁর ভাষায়: ‘এক দশকেই সঙ্ঘ ভেঙে যায়। দশক যায় দশক আসে। সঙ্ঘ ভাঙে সঙ্ঘ গড়ে।’ এই ভাঙা-গড়ার মাঝেই নতুন নতুন লিটলম্যাগ জানান দেয়, আসে যায়, কেউ কেউ চেতনায় গেঁথে থাকে অনেকদিন ধরে। কাজের কাজ যে কিছুই হয় না তা কিন্তু নয়। অনেকেই আমৃত্যু লিটলম্যাগ সম্পাদনা করেছেন, বৈরাগ্য জীবন যাপন করেছেন। নিজের সাথে প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।
লিটলম্যাগ শব্দটির সাথে আরো একটি শব্দ জড়িত। সেই শব্দটি হলো আন্দোলন। কী সামাজিক আন্দোলন কী শিল্প-সাহিত্যের আন্দোলন। সামাজিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতেও লিটলম্যাগ আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে। কারণ, সামাজিক আন্দোলনগুলোও কখনো কখনো সাহিত্যের স্্েরাতধারায় প্রবাহিত হয়। সামাজিক আন্দোলনগুলো লেখকদের কাছে টানে, তাদের বলে দিতে হয়না কি করতে হবে। লিটলম্যাগ এর প্রধান কাজই হচ্ছে নতুনের কেতন উড়ানো। আর তাদের তুলে আনা, সমাজের অলি-গলি থেকে সাহিত্যকর্মীরা বেরিয়ে এসে প্রথার বিরুদ্ধে নতুন ধরনের ষ্ট্যান্ড নেয়া; কর্পোরেট বাণিজ্যের যাঁতাকল থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন মত প্রকাশের প্লাটফর্ম তৈরি করে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। লিটলম্যাগগুলো ঝরে যেতে পারে, আর্থিক দৈন্যতার করাল গ্রাসে কিংবা কর্পোরেট বাণিজ্যের সাথে প্রতিযোগিতার দৌড়ে তাকে কচ্ছপ গতিতে দৌড় দিতে হয়, তার পরেও বলবো লিটলম্যাগ কর্মীরা ভেঙ্গে গেলেও মচকায় না। যার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে কি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে, কিংবা দেশের ভেতরের অন্যায়ের প্রতিবাদে কিংবা বর্হিবিশ্বে কোন আগ্রাসী শক্তির অন্যায় পদক্ষেপের প্রতিবাদে, এই লিটলম্যাগ কর্মীরা পিছপা হয়নি। তারা এসব ছোটকাগজে প্রথমে মিউ মিউ করে বললেও আসল সময়ে প্রবল প্রতিবাদে উদ্দীপ্ত হয়েছে। তারা প্রয়োজনে রাজপথে নামতে পিছপা হয় নাই। আবার এক শ্রেণীর বিপথগামী তরুণকে লিটলম্যাগে সম্পৃক্ত করে তাদের সঠিক পথের দিক নির্দেশনাও এসব মিটলম্যাগ কর্মীদের মাধ্যমে দেয়া সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি এসেছে আদর্শিক চিন্তা-চেতনার স্ফুরণ বিকাশ করাতে লিটলম্যাগ হাতিয়ার হয়ে কাজ করেছে। যা পারেনা কোন কর্পোরেট বাণিজ্যিক কাগজের সাহিত্য সম্পাদক। তাকে অনেক দায়বদ্ধতার নাগপাশে আবদ্ধ থাকতে হয়। তাকে কেবলই নিছক সাহিত্য ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হয়। মালিকের দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক গোষ্ঠির বা বলয়ের ভেতরের লোকদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে কাজের কাজটি কাজীকে দিয়ে বেশিরভাগ সময় করানো যায় না। তার পরে পাতায় জায়গার অপ্রতুলতার দোহাইতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে বলতে গেলে লিটলম্যাগ কর্মীরা স্বাধীনভাবে মত ও পথের দিশা দেখাতে পারে। তার পত্রিকায় যে কোন ধরনের লেখা বা মতামত প্রতিফলন করানো যায়। লিটলম্যাগ মফস্বলের অবহেলিত লেখককে তুলে আনতে পারে অবলীলায় এবং তারা সে কাজটি নিপুণভাবে করে যাচ্ছে। যা কোন দৈনিকের সাহিত্য পাতার জন্য প্রয়োজন পড়ে না। বা তারা সে কাজটি করবার জন্য বস্তুত প্রস্তুতও নয়।
লিটলম্যাগ সম্পাদকদের নানাজনের নানান রকম চিন্তার খোরাক রয়েছে। কিন্তু সেই চিন্তার খোরাকগুলো প্রকৃত বিচারে আমরা যদি এক কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে পারি। আবার অনেক ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয়গত দিক মিলেও যায়, ফলে সামগ্রিক চিন্তাগুলো প্রগতিশীল চিন্তার কেন্দ্র বিন্দুতে সামিল হয়। সেই সব চিন্তা চেতনার ফলাফলে আশির দশকে এবং নব্বই এর দশকে অনেক কাগজ বেরিয়েছে। মাঝে আবার বেশ অনেক দিন তাদের মুখ দেখা যায়নি। বলতে গেলে ভাটা পড়েছিল। সুখের বিষয় হলো আবার তাদের মধ্যে অনেককেই গা ঝাড়া দিয়ে খাড়া হতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে এ প্রজন্মের তরুণরাও কাগজ করছেন। এটি যেমন আনন্দের বিষয় পাশাপাশি গৌরব করবার মতোও বটে। লিটলম্যাগ আন্দোলন এগিয়ে যাক। রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে জেলা-উপজেলায় লিটলম্যাগ ছড়িয়ে পড়ুক। প্রতি জেলা-উপজেলায় লিটলম্যাগ কর্ণার গড়ে তোলা হোক এ দাবি আমরা করতেই পারি।
©somewhere in net ltd.