নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষ

সোনালী ঈগল২৭৪

সোনালী ঈগল২৭৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইয়ের ফেরিওয়ালা এক নিভৃতচারী পরমাণুবিজ্ঞানী

২৯ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮


পরমাণুবিজ্ঞানী ড . ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকের নাম হয়তো ইতিমধ্যেই আমরা সবাই জেনে গিয়েছি ফেসবুক , ইউটুব এবং টেলিভিশনের কল্যানে । বিশেষ করে সদ্যসমাপ্ত একুশে বইমেলায় তার বই ফেরি করে নিয়ে বেড়ানো , প্রায় প্রতিটা বুকস্টলে তার বই নিয়ে একটু রাখার অনুরোধ আমাদের সবার মনেই দাগ কেটেছে । অবশেষে অনেক প্রকাশকই তার বই প্রকাশ করতে রাজি হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আশা করা যায় বই নিয়ে তাকে আর কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না । ব্লগে ড . ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকি কে নিয়ে কোনো লেখা প্রকাশিত হয়েছে কিনা জানিনা , তবে আমার মনে হয় উনার সম্পর্কে আমারদের জানা দরকার অন্তত একজন অসাধারণ মেধাবী মানুষের স্বরূপ আপনাদের সামনে ফুটে উঠবে ।

বিজ্ঞানী ফয়জুর রহমান আল্ সিদ্দিক ১৯৩২ খৃষ্টাব্দে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আগলা ইউনিয়নে অবস্থিত চরমধুচারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৫৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে আইএসসি পাশ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬০ সালে রসায়নে সম্মান শ্রেণীতে বিএসসি এবং ১৯৬১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে থিসিস গ্রুপে এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীনে অ্যাসিস্ট্যান্ট কেমিক্যাল একজামিনার এবং পরবর্তী সময় ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের (পরবর্তীতে বুয়েট ) রসায়ন শাস্ত্রের লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে একজন বিজ্ঞানী যোগদান করেন এবং উক্ত পদে বহাল থাকা অবস্থায় তিনি প্রেষণে যুক্তরাজ্য গমন করেন এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে নিউক্লিয়ার কেমিস্ট্রি তে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন । স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে উর্ধতন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন এবং দেশে পরমাণু বিজ্ঞান চর্চাকে ঢেলে সাজানোর পেছনে নিরলস ভূমিকা পালন করে । বাংলাদেশের আরেকজন প্রখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন উনার সহকর্মী , তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় পরবর্তীকালে সাভারে বিশাল এলাকা জুড়ে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এ ই আর ই ) গড়ে উঠে , যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচাইতে বড় গবেষণা স্থাপনা । তিনি সেখানকার ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার সাইন্স এন্ড টেকনোলজির নিউক্লিয়ার কেমিস্ট্রি ডিভিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । পরবর্তীকালে একই ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯২ সালে অবসর গ্রহণ করেন । চাকুরী জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ বৎসর, তেহরানের সেন্টো ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্সে পৌণে দুই বছর এবং সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পরমাণু চুল্লি গবেষণা ইন্সটিটিউটে ১৩ মাস যাবৎ পোষ্ট ডক্টরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।

একজন নিউক্লিয়ার কেমিস্ট হিসেবে তিনি প্রথম দেশে নিউক্লিও রসায়নের গবেষণা শুরু করেছিলেন , এছাড়াও রাবার কেমিস্ট্রি এবং এখন যে পাট নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে তার শুরুটাও তিনি করেছিলেন । অত্যন্ত মেধাবী এই মানুষ অবসর গ্রহণের পর বসে ছিলেন না । পরবর্তীকালে তিনি গবেষণা কাজে তার পূর্বতন গবেষণা প্রতিষ্টানের সাথে সযুক্ত থাকা ছাড়াও , বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন এবং সাম্মানিক অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন এবং সবশেষে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস , এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি থেকে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন । এরপরেও তিনি থেমে থাকেননি লিখে গেছেন অবিরাম দেশ ও মানুষের কল্যাণার্থে । তার চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করতে চেয়েছেন এব অশীতিপর বয়সে এখনো প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছেন । লেখালেখিতে স্যারের অন্যতম একটি গবেষণার বিষয়বস্তু হচ্ছে বাংলা ব্রাহ্ম সমাজ । বাংলার প্রাচীন ব্রাম্ম সমাজ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি । ব্রাহ্ম সমাজকে হিন্দু সমাজের অন্তর্গত ধরা হলেও প্রচলিত হিন্দু সমাজের নীতি আদর্শ ও বিশ্বাসের সাথে এদের ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায় । ব্রাহ্ম সমাজে মূলত একেশ্বরবাদ প্রচলিত ছিল এবং এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে রাজা রামমোহন রায় । উপমহাদেশের বিখ্যাত অনেক ব্যাক্তি যারা বাঙালি সমাজের মান মর্যাদা অনেক দূর বাড়িয়ে দিয়েছিলো যেমন রবীদ্রনাথ ঠাকুর , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , এদের সকলের সাথেই ব্রাহ্ম সমাজের যোগ ছিল । ড . ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিক ব্রাহ্ম সমাজ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন এবং এর উপর বেশ কিছু বই লিখেছেন , তার বিশ্বাস ব্রাহ্ম সমাজের ব্যাপক সম্প্রসারণ এ দেশে থাকলে হয়তো আমরা অনেক মেধাবী ব্যাক্তি পেতাম যা জাতির জন্য গর্বের বিষয় হতো । আপনারা বাংলা নামের সংক্ষেপরুপের ক্ষেত্রে কমা'র পরিবর্তে ডট লিখেন এই মানুষটির কল্যাণেই। তিনিই প্রথম তার নাম লিখেন ফ. র. আল্ সিদ্দিক হিসেবে যা পরবর্তীতে গৃহীত হয়। আমাদের দেশে প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন হয়না , বইমেলায় কত নাম না জানা লেখকের কত চটুল ধরণের বই প্রকাশিত হয় , কিন্তু দেশবরেণ্য একজন বিজ্ঞানীকে তার বই নিয়ে ফেরি করে বেড়াতে হয় , আরো কত নিভৃতচারী মেধাবী প্রকৃত মূল্যায়ন না পেয়ে আড়ালে চলে গেছে কিংবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তার হিসাব আমরা কয়জনই বা রেখেছি , একটি দেশে মেধাবীদের মূল্যায়ন না করলে সে দেশে মেধাবী জন্ম গ্রহণ করে না , তাই হয়তো আমরা দেশে মেধাহীন লোকদের এক দুর্দমনীয় দাপট দেখতে পাচ্ছি ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: উনাকে আজই প্রথম চিনলাম। জানলাম।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০১

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য , উনাকে আমাদের অনেক আগেই চেনা ও জানার দরকার ছিল , কিন্তু আমরা উনার যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারিনি

২| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৩৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: দুঃখের বিষয় গুণী লোকের মূল্য নাই। বই নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন উনি। আর চটি বই বিক্রির শীর্ষে ।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০২

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ,এবারের বইমেলা নামসর্বস্য লেখকদের বই দ্বারা ভরপুর ছিল

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:২০

আর. হোসাইন বলেছেন: ভালো করে চিনতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০৩

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই পড়বার জন্য

৪| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ২:১৯

ইফতি সৌরভ বলেছেন: লেখক বলেছেন "আরো কত নিভৃতচারী মেধাবী প্রকৃত মূল্যায়ন না পেয়ে আড়ালে চলে গেছে কিংবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তার হিসাব আমরা কয়জনই বা রেখেছি , একটি দেশে মেধাবীদের মূল্যায়ন না করলে সে দেশে মেধাবী জন্ম গ্রহণ করে না , তাই হয়তো আমরা দেশে মেধাহীন লোকদের এক দুর্দমনীয় দাপট দেখতে পাচ্ছি ।" - সত্যি, আমরা জাতি হিসেবে দুর্ভাগা।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০৫

সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনার যথাযথ মন্তব্যের জন্য , বাঙ্গালী যে জাতি হিসেবে দুর্ভাগা তার প্রমান তো শত শত বছর ধরেই পাচ্ছি , দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাঙালি তাদের ভুলগুলো বুঝতে পারেনি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.