নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাল থাকেন সব সময়।

ক খ ত্রিমোহনী

আমি নগন্য একজন মানুষ। চাল চুলো কিছুই নেই । খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে চলে যাচ্ছে । এই আর কি।

ক খ ত্রিমোহনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ক খ এর পড়াশুনা ||

২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:১৫



শুনুন স্যার, পড়া না পারলে ওদের ইচ্ছামতো পিটাবেন || গোশত আপনার হাড্ডি আমার || পড়শোনা না করলে পিটিয়ে হাড্ডি ভেঙ্গে দিবেন || আমার কোনো আফসোস নাই স্যার || অনুমতি দিয়ে দিলাম || আপনি মারেন কাটেন যা খুশি করেন || শুধু ওদের একটু ভালো করে পড়াবেন ||

প্রচন্ড রাগ নিয়ে আমি কথাগুলো বলছিলাম ক খ এর গৃহ শিক্ষক আজিজ স্যার কে || এদিকে আমার জমজ দুই ছেলে ক আর খ ভয়ে চুপ করে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে || তাদের চোখ গুলো ছলছল করছে ||
স্যার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন "ঠিক আছে ভাই || অনুমতির জন্য ধন্যবাদ || এখন আর কোন সমস্যা নেই ||

আজিজ স্যার ক খ এর কাঁধে স্কেল দিয়ে একটু স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করলেন "বাবা কি বলেছে শুনেছো তোমরা ? এখন থেকে পড়াশোনা না করলে গোশত রেখে হাড্ডি তোমার বাবাকে দিতে বলেছে || ভালোমতো পড়বে নাহলে এই কাঠের স্কেলটা তোমাদের পিঠে ভাঙ্গবো || পড়া বের করো ||

ক খ বাধ্য ছাত্রের মতো বই বের করে পড়তে লাগলো ||

স্যার চলে যাবার পর নিজের রুমে এসে ক খ বসে আছে || তাদের মনটা ভীষনরকমের খারাপ || বাসায় মায়ের কাছে মার খেতে হয়, এদিকে গৃহশিক্ষককেও বাবা বলে দিয়েছে, ঠিকমতো না পড়লে তিনিও মারবেন || ক খ টেবিলে রাখা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে আর ভাবে যদি মুক্তি পেতাম ||
এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে || ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা ৭:০৫ বাজে || ঐ বুঝি আরেক স্যার চলে এলো || ক খ তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে দরজা খুলতে চলে যায় ||
তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র ক খ || স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী সকাল ১১টায় স্কুলে যেতে হলে তাকে ঘুম থেকে উঠতে হয় ভোর ৭টায় কারন সকালে আবার আরেক স্যার আসেন || পড়া শেষ করে তৈরি হয়ে কোনরকম খেয়েই দৌড় দিতে হয় স্কুলে || বিকেল ৫ টা পর্যন্ত স্কুল শেষে বাসায় এসে একটু খাওয়া দাওয়া করে আবার শুরু হয় গৃহ শিক্ষকদের কাছে পড়ার পালা || আমি এলাকার সবচেয়ে ভালো শিক্ষক ঠিক করেছি ছেলে দুটোকে পড়ানোর জন্য || যেকোন মূল্যে ভালো রেজাল্ট চাই তাদের ||

তবুও আমার মনে হয় কোথায় যেন কমতি হচ্ছে || ক খ এর প্রতি আরও চাপ সৃষ্টি করতে হবে || দিন রাত বই নিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে || ভালো রেজাল্ট ছাড়া আজকাল কোন দাম আছে নাকি ?

এইতো পাশের বাড়ির নাফিস আর আহাদ সারাদিন বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে রাখে || ক্লাশে সবথেকে ভালো নম্বর পেয়ে প্রতিবার তারা ভাল করে || অথচ তারা ক খ এর চেয়ে ১ বছরের ছোট || আরেহ্ নাফিস আর আহাদ ছোট হয়েও যদি ক্লাশে ভাল করতে পারে, তাহলে ক খ পারবেনা কেন ?

এই জেদ মনের মধ্যে সারাদিন ঘুরপাক খায় আমার || পাশের বাড়ির নাফিস আর আহাদ হতে হবে ক খ কে।

ক খ হাঁপিয়ে ওঠে || একবিন্দু বিশ্রাম নেয়ার সময়টুকুও নেই তাদের || আয়নার সামনে দাড়িয়ে কাঁধটাকে বড্ড ভারি মনে হতে থাকে ক খ এর || বাসার সামনের ফাঁকা জায়গাটাতে মাহাদি আর ভিবানকে খেলতে দেখে রোজ জানালার গ্রিল ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে ক খ ||

ক খ পড়তে বসো ||
ক খ এখন সময় নষ্ট করার সময় নয় ||
ক খ সারাদিনে তো একবারও দেখলামনা বই নিয়ে বসতে ||
ক খ তোমাদের নাফিস ও আহাদের মতো হতে হবে ||
ক খ তোমরা পারো না কেন ?
ক খ এই ------ ক খ -------- সেই আরও কত কি ||

সেদিনের সেই হাসিখুশি ক খ বড্ড চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে || এতটুকু বয়সে তাদের যে এত ভার বইবার ক্ষমতা নেই || তাদের ব্রেন তো রোবটের ইঞ্জিন নয় যে চাবি দিলেই কাজ শুরু করবে || ক খ রা ছোট্ট, কোমল বাচ্চা ছেলে || যাদের এই বয়সে হেসে খেলে বেড়ানোর কথা || আনন্দ নিয়ে রং পেন্সিল ধরার কথা || অথচ এতটুকু বয়সেই তাদের বয়ে বেড়াতে হয় এক গাদা বইয়ের ভার || এত ছোট্ট মাথায় এতগুলো বইয়ের ভার কি করে সইবে ?

ক খ কাঁদে || ঘুমোতে গেলেই তারা লাফিয়ে ওঠে ||
স্বপ্নে ঘুমের ঘোরেই বলে ওঠে- "আমার পড়তে ভালো লাগেনা বাবা || এতগুলো বইয়ের ভার আমরা আর সইতে পারছিনা || আমাদের ওদের সাথে খেলতে ইচ্ছে করে || প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করে || আমাদের হাসতে ইচ্ছে করে || আমরা আর পারছিনা বাবা || আমরা যে বড্ড হাঁপিয়ে গেছি বাবা || আমাদের মুক্তি দাও ||

মাঝরাতে ক খ এর ঘুম ভেঙ্গে যায় || আশেপাশে কেউ নেই || তবুও যেন তারা কানের কাছে সারাদিনের রিক্ততা শুনতে পায় || ক খ দু কান চেপে ধরে চিৎকার দিয়ে ওঠে || ওপাশের রুমের দরজাটা বন্ধ || ক খ এর চিৎকার আমার কান পর্যন্ত পৌঁছায় না ||

আমাদের চারপাশেই রয়েছে এমন অসংখ্য ছোট্ট ক খ || যাদের একটু বোঝার মত জ্ঞান হতে না হতেই কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয় বই ভর্তি বিশাল একটা ব্যাগ || বাচ্চাটি পড়া বুঝুক চাই না বুঝুক তার দিকে ছুড়ে দেয়া হয় ক্লাশে ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হবার চ্যালেঞ্জ || ইচ্ছে না থাকলেও অভিভাবককে খুশি করতে নামতে হয় প্রতিযোগীতায় || যে প্রতিযোগিতার শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই ||

আচ্ছা আমরা কি কখনো ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, ওরা ঠিক কি চায় ? বইটাই কি বাচ্চাদের সব ? ইচ্ছে না হলেও আমরা চাই ওরা ঔষধের মতো নিয়ম করে তিন বেলা বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে রাখুক || কিন্তু একবারও ভাবিনা, ওদেরও ইচ্ছে করে খোলা হাওয়ায় নিশ্বাস নিতে || ছোটাছুটি করে খেলতে ||

বইয়ের বাইরেও একটা জীবন আছে, সেটা আমরা অনেক অভিভাবকরাই ভুলে যাই || কিন্ত আমি ভুলি না || আমি আমার ক খ এর সাথে বন্ধুর মত মেলামেশা করি -- ঘুরে বেড়াই -- প্রচুর খেলতে দেই || হওক আমার ক খ কৃষক -- আমার ক খ এর এত পড়াশুনার দরকার নেই || আমার ক খ বড় হবে -- বড় হয়ে ভাল মানুষ হবে শুধু এটুকুই চাই ||

ভয় দেখিয়ে হয়তো ভালো রেজাল্ট করানো যায় || কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান অর্জন কি হয় ?
পড়াশোনা কোন জোর করার বিষয় না || মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি একটা বাচ্চার বুদ্ধি ও ধারণক্ষমতাকে অকেজো করে দেয় ||
আমাদের উচিত বাচ্চাদের ইচ্ছা, শখ, চাওয়াগুলোকে প্রাধান্য দেয়া || সারাক্ষণ "বই পড়ো" কথাটার বাইরে যেয়ে "এসো একটু বন্ধুত্বপূর্ণ সময় কাটাই" কথাটাও উচ্চারণ করা ||
বাচ্চারা রোবট নয় || তাদের ছোট্ট স্মৃতিভাণ্ডারে প্রয়োজনের বেশি চাপ সৃষ্টি করা একেবারেই উচিত নয় আমি মনে করি ||

বাচ্চারা আনন্দপ্রিয় || তাই তাদেরকে আনন্দ নিয়েই পড়তে দিন || চাপ সৃষ্টি করে বা ভয় দেখিয়ে নয় ||

আরিফুল ইসলাম টিটু

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


ডবল দাঁড়ি ( ।।) দেয়াতে লেখাটা বেশ ফরমে আছে, নড়াচড়া করার সুযোগ পাচ্ছে না

২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৫৩

ক খ ত্রিমোহনী বলেছেন: || নড়াচড়া না করাই ভাল || গরমের দিন চলে আসছে নড়াচড়া তাই যতই কম করা যায় ততই ভাল ||

২| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৩৮

রাফা বলেছেন: সময় উপোযোগি চমৎকার লেখা,সচেতন হতে সহায়তা করতে পারে এই লেখা।এখন লেখা-পড়াটা আর মেধার যাচাইয়ের জন্য করা হয়না।শুধু সার্টিফিকেট আর জিপি-এর কালচারে পরিণত হয়েছে।যা কোনভাবেই কাম্য নয়।এত এত বই দেওয়া হোচ্ছে যার ভারে কুজো হয়ে পরে বাচ্চারা অথচ জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে কোন সুফলই দেখছিনা।

এই বহুমুখি শিক্ষা বৈসম্যের সৃস্টি করে যাচ্ছে সমাজে।এর আোশু সমাধান খুব জরুরী।

ধন্যবাদ,লেখক`কে।

২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৫১

ক খ ত্রিমোহনী বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ||

৩| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৫:৪৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আমাদের শিক্ষা শেষ। জীবন ও শেষ। মানুষ এখন রোবট।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫১

তার ছিড়া আমি বলেছেন: লেখাটি যুগপোযোগী। তবে সকল বাবা-মা মানতে নারাজ। সচেতন বাবা-মার খুব অভাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.