নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির !

নাভেদ

প্রোফাইল এ _ই -ডি -টি- ং কাজ চলিতেসে ।

নাভেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দা রেড ডায়রি !

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫১

১।


' অর্ক ! আমার মনে হয়না মার্ক্সবাদ , লেনিনবাদ দিয়ে কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব । আমি বাড়ি ফিরবো । ' ঠোঁটের কোণ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ল কমরেড নাওমি ।
অর্ক মিটমিট করে হাসছে । এই কি সেই মেয়ে যে এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে বিপ্লবের নেশায় স্টেন হাতে বেড়িয়ে পরেছিল আণ্ডারগ্রাউণ্ডের শ্বাপদসঙ্কুল পরিবেশে ! যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি । পুলিশ আর অতিবিপ্লবীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পালিয়ে বেড়ানো ।
' এ কথা পার্টি জানলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস ? ' গলাখাঁকারি দিয়ে বলল অর্ক ।
' হুম , খুব জানি । তোরা আমাকে মেরে ফেলবি । কিন্তু তারপরেও আমি বলব পার্টির এই গলাকাটা রাজনীতি থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে । আমাদের পার্টি যেভাবে এগুচ্ছে তাতে এর পরিনতি চারু মজুমদারের নকশাল কিবা সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টির মতই হবে । '
' হা হা । নাহ । তুই হয়তো ভুলে গেছিস মাওয়ের কম্যুনিস্ট পার্টি অফ চায়না বা লেনিনের বলশেভিক পার্টি ও কিন্তু এভাবেই উঠে এসেছিল । আর পার্টির গলাকাটা রাজনীতির কথা বলছিস ? কোন কম্যুনিস্ট পার্টিতে বিরোধিতা ছিলনা বলতো । বলশেভিক পার্টিতেও লেনিনের সাথে ট্রটস্কির বিরোধ ছিল । মতামতে ভিন্নতা থাকে বলেই তো পার্টি এগোয় । '
নাওমির চোখ জ্বলে উঠলো । ' মতামতের ভিন্নতার জের ধরে যখন ট্রটস্কিকে খুন করা হল , সেটা ? এও কি পার্টির উন্নতি ? আমাদের পার্টিতে কি কোন গনতন্ত্র আছে ? মতামত প্রকাশের কোন অধিকার রাখা হয়েছে ? না , হয়নি । নেতারা যা সিদ্ধান্ত নেন তাই আমাদের মানতে হয় । ভুল বা শুদ্ধ কোন মন্তব্য করার অধিকার আমাদের নেই । তাহলে আমরা কেন লড়বো ? কাদের জন্য লড়বো ? নেতাদের গুষ্ঠিস্বার্থের জন্য কি আমরা মার্সেনারিদের মতো লড়ে যাব ? রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লবের পর স্তালিন কতো মিলিয়ন মানুষ আর সেই মানুষদেরর স্বপ্নকে হত্যা করেছে তা কি ভুলে গেছিস ? চায়না গ্রেট লিফ ফরওয়ার্ড এ ৪৫ মিলিয়ন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে । পশ্চিম ইউরোপ , কম্বোডিয়া , কিউবা , ভেনেজুয়েলায় মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে মেরে সাফ করে দিয়েছি আমরা কেবল শ্রেণী শত্রু নিধনের নামে । এই কি আমাদের রাজনীতি ? আমরা কি ভবিষ্যতের কল্পিত স্বপ্নকে কিনতে যেয়ে বর্তমানের স্বপ্নকে হত্যা করছি না ? '
অর্ক উঠে দাঁড়ালো । ' নাওমি ! তুই কি জানিস তুই বুর্জুয়াদের মতো কথা বলছিস ! যেখানে কম্যুনিজম ব্যর্থ হয়েছে তার কারন পার্টির ভুল লাইন । সেটাকে মার্ক্সবাদের সীমাবদ্ধতা বললে ভুল করবি । আমরা একটা আদর্শের জন্য লড়াই করছি । আমরা লড়ছি সাম্যের জন্য , সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য । আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন একটা পৃথিবী উপহার দেয়ার জন্য যে পৃথিবীতে আমরা বাস করতে চেয়েছিলাম । এই যুদ্ধে আমি তোকে পাশে চেয়েছিলাম । তুই কি থাকবি আমার পাশে ? '
' অর্ক ! আমি তোর পাশে থাকতে চাই কিন্তু আদর্শের সাথে আমি আপোষ করতে পারবোনা । তুই ই শিখিয়েছিলি আদর্শের সাথে কখনো আপোষ চলেনা । '
অর্ক ক্লান্ত স্বরে বলল , ' তার মানে তুই পার্টি ছেড়ে দিচ্ছিস । ওকে । কিন্তু পার্টি কি তোকে ছাড়বে ? কখনোই না । তুই ভালো করেই জানিস তোর বিষয়ে পার্টি কি স্টেপ নিবে । তারপরেও ? '
নাওমি মৃদু হাসল । ' হুম , জানি । আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবেনা । আমি জানি আমাকে কি করতে হবে । তোকে একটা অনুরোধ করি ? রাখবি ? '
' বল । হয়তো রাখতেও পারি । '
' তুই পার্টির কিলিং স্কোয়াড থেকে বের হয়ে আসবি , প্লিজ ?'
অর্ক গম্ভীর গলায় বলল ,' না । সম্ভব না । অন্য কোন অনুরোধ কর রাখব । '
' নাহ । আর কিছু বলার নেই । আমি কাল ক্যাম্প ছাড়ছি । '


২ ।


ভোর ৫ টা ।চামড়া ছড়ে যাওয়া একটা ডায়রি হাতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অর্ক । নাওমির স্যুটকেসের তলার সেফটি স্পেসে রেখে দিল ডায়রিটা । লাল রঙ্গের প্রিয় ডায়রিটার শেষ পাতাটাও আজ লিখা হয়ে গেছে । একসময় ডায়রির পাতা জুড়ে থাকতো অতীতের কথা , স্বপ্নের কথা । শুধু শেষ পাতাদুটোতে লিখা আছে খুব কাছাকাছি একটা সময়ের কথা । অর্কদের ফুরিয়ে যাওয়ার কথা । এই মুহূর্তটুকু একদিন আসতোই অর্ক জানে ।
সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে অর্ক । আজ বিকেলের অপারেশনটার কথা ভাবছে । দেশের বারো জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পবুর্জুয়াকে খুন করার প্ল্যান করা হয়েছে । এদের খুন করার সাথে সাথেই শ্রমিক ইউনিয়নের আণ্ডারগ্রাঊণ্ড এর নেতারা কারখানা দখল করে নিবে । একটা ইণ্ডাসট্রিয়াল প্যারালাল গভমেন্ট পরিচালনা করাই আমাদের পরিকল্পনা । এভাবেই এক এক করে দেশের সমস্ত কারখানা আর উৎপাদনযন্ত্রে দখল নিয়ে কম্যুনিস্ট সমাজ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন আমাদের ।
হাহ । অর্কের মুখ থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো । দরজার সামনে নাওমি দাড়িয়ে আছে । ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুঁজছে ।
' তুমি তাহলে অপারেশনে যাচ্ছ ?' যান্ত্রিক কণ্ঠে বলল নাওমি ।
' হুম । যাচ্ছি । ' শান্ত স্বরে জবাব দিল অর্ক ।
ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে এলো নাওমি । ' তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরি ?' কেপে কেঁপে উঠলো ওর কণ্ঠ ।
অর্ক হেসে বলল, ধর ।
' অর্ক ! আমি সবসময় তোমার ই থাকবো । আমায় ক্ষমা কর ।'
ঘ্যাঁচ করে পর পর তিনটে মৃদু শব্দ হল । অর্কের মুখ কুঁচকে উঠলো যন্ত্রণায় । নাওমির চোখ ভর্তি পানি গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে । অর্ক সে চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । কি সুন্দর ! কি সুন্দর !
নাওমির পেটের উপর একবার হাত রাখল অর্ক । বিড়বিড় করে বলল ,' বাবা , সরি । '


৩।


ছেলেটার বয়স আটবছর । এই বয়সের ছেলেরা ভীষণ রকমের ছটফটে স্বভাবের হয় । কিন্তু এই ছেলেটা কেমন যেন চুপচাপ । গম্ভীর স্বভাবের । কথা খুব কম বলে । সে অবসর সময় কাটায় ছবি একে । তার বেডরুমের দেয়ালে তারই আঁকা বিশাল একটা ছবি টানানো আছে । ছবিটার দৃশ্যে একটা লাল ডায়রির দিকে তাক করে রাখা পিস্তল থেকে একটা বুলেট ছোটার দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর করে আঁকা !
কখনো কখনো ছেলেটার মা ক্যানভাসটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে আর ভাবে এ পেইণ্টটা কে এতো পরিচিত লাগে কেন !


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৩

ডি মুন বলেছেন: ঘ্যাঁচ করে পর পর তিনটে মৃদু শব্দ হল । অর্কের মুখ কুঁচকে উঠলো যন্ত্রণায় । নাওমির চোখ ভর্তি পানি গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে । অর্ক সে চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । কি সুন্দর ! কি সুন্দর !
নাওমির পেটের উপর একবার হাত রাখল অর্ক । বিড়বিড় করে বলল ,' বাবা , সরি । '


এই যায়গাটা বুঝতে আমাকে কয়েকবার পড়তে হয়েছে। দুএকটা বাক্য বেশী যোগ করে ব্যাপারটা আরেকটু পাঠকবান্ধব করা যেত বোধহয়।


গল্পটা দারুণ লেগেছে।
গতিশীল। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায় +++++

শুভকামনা রইলো।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৬

নাভেদ বলেছেন: টুইস্ট রাখার জন্যই এই সংক্ষেপণ ।

আপনার জন্যও শুভকামনা রইল ।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৮

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ভাল লাগল গল্পটা।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৬

নাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ । শুভকামনা রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.