নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির !

নাভেদ

প্রোফাইল এ _ই -ডি -টি- ং কাজ চলিতেসে ।

নাভেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দা পেইন্ট !

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০১

( লেখাটা পূর্বে সামুতে পোস্ট করেছিলাম । কিছুদিন পর দেখি আরও কিছু লেখার সাথে এটাও গায়েব ! ক্যামনে কি ! পুনরায় পোষ্টানোর জন্য দুঃখিত । )


এক ।।

অলিয়াজ ফ্রসেজ , বিকেল তিনটা ।
' পেইন্ট টা অসাধারন তাইনা ?'
পেছন ফিরে তাকালাম । শরীর ঘেঁষে অল্পবয়সী এক তরুণী দাড়িয়ে আছে । চোখে ভারী চশমা । গিটারের স্ট্রিঙের মতো টানটান হয়ে আছে শরীরটা । একটু টোকা দিলেই যেন ছিঁড়ে যাবে । উত্তেজনায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে । নিশ্বাসের সাথে সাথে ঋজু পথে কপাল বেয়ে নেমে আসছে ঘামের উষ্ণ নোনা ধারা ।
' হুম ! অসাধারন !অতুলনীয় ।' মৃদু স্বরে বললাম ।
তরুণী পেইন্টিংটার দিকে এগিয়ে গেলো । ' এই অংশটুকু দেখুন । দেখুন ছেলেটার চোখ কি চমৎকার করে আঁকা হয়েছে ।কি গভীর কালো চোখ ! এতো সুন্দর চোখ এই পৃথিবীর কারো হতে পারেনা , কখনো না । '
আমি ভালো করে পেইন্টিংটার দিকে তাকালাম । ছবিতে আবছা ভাবে একটা ছেলের অবয়ব আছে বটে , কিন্তু চোখ ' দেখা তো দুরের কথা মুখটা পর্যন্ত ভালো করে বোঝা যাচ্ছেনা । পেইন্টিংটার বা ' পাশের মেয়েটাকেই বরং অস্থির লাগছে । পারফেক্ট শেপ । রঙের কি অদ্ভুত সুন্দর কম্বিনেশন ! একবারের জন্য ও মনে হচ্ছেনা আমি একটা পেইন্টের সামনে দাড়িয়ে । এ যেন জীবন্ত কোন ক্যানভাস ! An Alive Paint !
' ছেলেটার হাতের দিকে দেখুন , এইযে , বা হাত । কব্জির একটু উপরে । দেখেছেন ? কাটা দাগ টা কি অদ্ভুত ভাবে আঁকা । গ্রে কালারটা কি চমৎকার ফুটেছে তাইনা ?'
আমি ইতস্ততবোধ করছি । কাটাদাগ -ফাগ কোন কিছুই আমার চোখে পরছেনা । মেয়েটা এসব পাচ্ছে কোথায় !
আমি বিব্রতকণ্ঠে বললাম , 'ইয়ে আসলে ছেলেটার ছবিটা আমার কাছে তেমন পরিষ্কার না । কিন্তু মেয়েটার ছবিটা সুন্দর । ভীষণ সুন্দর । '
তরুণী বিস্মিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল । ' আপনি ওখানে একটা মেয়েকে দেখতে পাচ্ছেন ! কই আমি তো তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। ছেলেটার পাশে দাঁড়ানো মানুষটা কেমন জেনো ঝাপসা । '
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি । তরুণীটি ও চুপচাপ দাড়িয়ে । চোখ দিয়ে বিস্ময় ঝড়ে পরছে ।
কেমন জেনো ঘুম ঘুম লাগছে । পাশে দাঁড়ানো তরুণীটি ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলছে ,' Someday death will take us to another Star ! .
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো পেইন্টে আঁকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি । কি অদ্ভুত হিউম্যান জিওমেট্রি !
আমি ক্ষীণস্বরে একবার বললাম _' I dream my paint and i paint my dream ! '
আমি জানিনা কথাটা হটাত কেন বললাম । ভ্যান গগ আপনি কি জানেন ?


দুই ।।


'ওমা আপনার রুমের অতো সব ছবি কোথায় গেলো ?'
' আপনি নিজেই একসময় জেনে যাবেন ! '
' তাই ! ঠিক আছে ।আজ কিসের ছবি আঁকছেন ? ' গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করল নাওমি ।
'যন্ত্রদায়ী এক নারীর ছবি ! the portrait of a painful lady !হাসতে হাসতে বলল অর্ক ।
ভ্রূ কুচকে , চোখ ছোট করে অর্কের দিকে তাকাল নাওমি । 'তা সেই ভাগ্যবতীটি কে শুনি ! '
'উহু আপনি নন । ' ক্যানভাসে তুলির দুটো টান দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো অর্ক । ' এ সেই মানবী যার গাল আর্টিস্টের দুঃখ বোঝেনা । যার ঠোঁট রঙের কনসেন্ট্রেশন বোঝেনা ,চোখ বোঝেনা Abstract Geometry !এটা তার পোর্ট্রেট । '
নাওমি মিটিমিটি হাসছে । ' আপনার কথায় কেমন যেন সুররিয়ালিজমের গন্ধ পাচ্ছি ।বিংশ শতকের শুরুতে কিছু পাগল পেইন্টার উল্টা পাল্টা কি সব একে গেছে তা নিয়ে এতো মাতামাতির কি আছে বুঝিনা মশাই ! আপনারা পেইন্টাররা সব কয়জন উন্মাদ ! '
অর্ক চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো । জানলার পাশে সরে দাড়াতেই সূর্যের আলো চোখে মুখে পড়লো । নাওমি অর্কের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ।লম্বা চুল , খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি , কোটরের গভীরে থাকা লাল চোখ সবকিছু মিলিয়ে প্রথম দেখাতেই মানুষটাকে একজন আর্টিস্ট মনে হয় । একেবারে খাটি আর্টিস্ট ।
অর্ক হাঁটতে হাঁটতে বলল , ' নাওমি !দুটো কথা ! প্রথমত সুররিয়ালিস্ত আর্টিস্টরা একটু পাগলই হয় । সুররিয়ালিজম মানে কি জানেন নিশ্চয়ই । Surrealism creates somthing more real than the reality itself .হা হা । পাগলামি ছাড়া আরকি ! '
নাওমি বলল ,' আর দ্বিতীয়ত ?'
'দ্বিতীয়ত _ আমি কোন রংমেস্ত্রি না । আমি একজন আর্টিস্ট । Artist explores from soul while painter do it with hands !কাজেই আমাকে পেইন্টার না বললেই ভালো লাগবে । '
'রাগ করলেন ? ' মুখ অন্ধকার করে জিজ্ঞেস করল নাওমি ।
' আরে ধুর ' অর্ক হাসতে হাসতে বলল , 'সুররিয়ালিজম হল বিমূর্ত ব্যাপার । আপনাকে অনুভব করতে হবে । সাল্ভাদর দালির The persistence of Memory আমার দেখা শ্রেষ্ঠতম সুররিয়ালিস্তিক আর্ট ! '
'ওই অনুভবের ব্যাপারটা আমাকে দিয়ে হবেনা, মশাই । দালির Sleep ,Crucifixion , Geopliticus এর মতো চিত্রকর্ম গুলোও আমাকে তেমন টানেনা ।তবে ছবি গুলো দেখে মজা পাই । কেমন যেন হাসি হাসি লাগে । '
অর্ক অবাক হয়ে তাকাল , ' বলেন কি ! লি মিলার , রোসা রোনালডা অথবা ফ্রিডা কাহলো তাদের চিত্র কর্ম কেমন লাগে ? আফটার অল মার্কিন সুররিয়ালিজমের এরাই পথিকৃৎ তার উপর তিন জনেই নারী ! '
নাওমি হাসল । ঘন চুল গুলো আঙ্গুল দিয়ে চিরে দিতে দিতে বলল , মেক্সিকান আর মার্কিন নারী সুররিয়ালিস্তদের চিত্রের মধ্যে একটা বিমূর্ত ভয় ,আকাঙ্ক্ষা ,প্রত্যাশাকে চক্কর খেতে দেখি । Abstract Art হয়েও রিয়ালিটির শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করতে পারেনি ফ্রিডা বা রোসা _ রা । এটা আমাকে কষ্ট দেয় । তবে এদের মধ্যে ফ্রিডার চিত্রকর্মগুলো আমার ভালো লাগে । বিশেষ করে ১৯৩৯ এ আঁকা তৈলচিত্র Los dos fridas .
এছাড়া হেলেন লিনডারবারগের সেলফ পোর্ট্রেট টাও অস্থির ! তবে যাই বলুন না কেন , সুররিয়ালিজমকে আমার কাছে পাগলামি ই মনে হয় । আর দালি ছিল সবচে বড় সুররিয়ালিস্তিক পাগল ! হা হা হা । '
অর্ক একটা সিগারেট ধরাল । তারপর ডান পায়ের উপর বা' পা টা রেখে সাহেবি কেতায় বসল । ' Dada Movement এর কথা শুনেছেন ?'
নাওমি আলতো করে মাথা নাড়লো । সে শোনেনি ।

গলা খাঁকারি দিয়ে অর্ক বলতে শুরু করল , ' দাদা আর সুররিয়ালিজম প্রায় একই সময়ের আন্দোলন । সুররিয়ালিস্তিক আন্দোলন ছিল বুর্জুয়াদের বিরুদ্ধে । আন্দোলনকারীদের অনেকেই ছিলেন কম্যুনিস্ট । আবার অনেকেই ছিলেন ফ্রয়েডপন্থী অর্থাৎ Omnipotence Of Dream in the Undirected play of thought . অন্যদিকে Dada Movement ছিল অত্যন্ত কিম্ভূতকিমাকার গোছের আন্দোলন । সুইজারল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই আন্দোলনের সূচনা । পুরো আন্দোলনটা ছিল মূলত An organized insulting of European civilization by its Middle class young . এই ইন্টেলেকচুয়াল আন্দোলন
আমার কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । ইউরোপ জুড়ে মধ্যবিত্ত তরুণরা তাদের পাতি বুর্জুয়া মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে পেরেছিল এটা কিছুটা হলেও একটা চমৎকার ঘটনা ।'
অর্ক কথা বন্ধ করে নাওমির দিকে তাকাল । ' চা খাবেন ?'
নাওমি মাথা নেড়ে বলল ,' হুম । খুব খাওয়া যায় । '
চা হাঁতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো অর্ক । সামনে তুলির আঁচড়ের অপেক্ষায় পড়ে আছে খালি ক্যানভাস । একটু দূরেই খাটের উপর কিশোরীর মতো পা তুলে বসে আছে নাওমি ।
অর্ক ভ্রূ কুচকে জিজ্ঞেস করল , ' চা কেমন হয়েছে ?পাশ হবেতো ? '
নাওমি ফিক করে হেসে ফেলল । ' সেই হয়েছে । এক্কেবারে লেটার গ্রেড ! ও '' দাদা আন্দোলনের কথা বলছিলেন । আমার মনে হয় এই আন্দোলনকারীদের উপর ১ম বিশ্বযুদ্ধের প্রবল প্রভাব ছিল । সে সময়কার অর্থনৈতিক দুরাবস্থা অনেকের মধ্যে হতাশার তৈরি করেছিলো । যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নে বলশেভিকরা কামিয়াব হয়েছিল । বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ইতালি জুড়েও কম্যুনিস্ট আন্দোলন ছড়িয়ে পরে । এছাড়া ব্রিটেন , জার্মানি , ফ্রাঞ্চ সহ পুরো ইউরোপ জুড়েই একটা পরিবর্তনের সুর ছিল । মনে হয় Dada Movement তারই সাইড ইফেক্ট । '
অর্ক চোখ বড় বড় করে নাওমির দিকে তাকাল । ' চমৎকার ! আপনার অনুমান এক্কেবারে ঠিক । Dada ছিল মূলত নিহিলিস্ট ইন্টেলেকচুয়ালদের আন্দোলন ।এর দার্শনিক ভিত্তি ছিল Philosophy of negation ! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী Absurd Writtings এর সাথে Dada Writtings and Paintings এর একটা সামঞ্জস্য আছে ।
দুটো ধারাই মূলত Meaningless as well as Hopeless ! Dada Movement এর সময়কার একটা কবিতার দুটো লাইন ছিল এরকম _ _ And the fountain sings the same song , the lady has lost her smile in the woods .কোন অর্থ হয়না । বড্ড ননসেনসিকাল কথা বার্তা । এই সময়ের চিত্রকর্মের মধ্যে মার্চেল ডুসেমের To be looked at এবং পল লির Twittering Machine বেশ ভালো । ভালো মানে আতেলেকচুয়াল টাইপের আরকি ।
Dada Movement নিয়ে অনেক কথা বললাম । এতো কথা কেন বললাম জানেন ? আমার দাদা । মানে আমার বাবাব বাবা ছিলেন একজন অত্যন্ত নাম করা আর্টিস্ট । বিংশ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটেনে চলে যান । সেখান থেকে জুরিখে । তখন জুরিখ ছিল আর্টিস্টদের বিশেষে করে বিপ্লবী আর্টিস্টদের তীর্থভুমি । সেখানে তিনি Dada MOvement এর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন । তারপর বহুবছর নানান ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট করেছেন , জেল খেটেছেন । শেষ মেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাকিস্তানে ফিরে এলেন । তারপর ও বছর পনের বেঁচে ছিলেন ।
শেষের বছর গুলোতে তিনি নিজের ঘর ছাড়া আর কোথাও বেরুতেন না । এমন কি এক সাথে খাবার পর্যন্ত খেতেন না । ছাদের উপরের চিলেকোঠায় পিগমেন্ত আর পেইন্টিং এর মধ্যে ডুবে থাকতেন । কোন কোন দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় তার চিলেকোঠায় আমার ডাক পড়তো । তখন আমিও টুকটাক
ছবি আঁকি । দাদা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে এক সন্ধ্যায় তার চিলেকোঠায় ডাক পড়লো আমার । রুমে ঢুকতেই আমার চক্ষু চরাকগাছ ! তার আঁকা অসাধারন সব পেইন্টিংগুলো ছিঁড়ে কুচিকুচি হয়ে মেঝেতে পরে আছে । দাদা গভীর মমতায় ক্যানভাসের টুকরোগুলোর উপর হাত বোলালেন ।
দাদা আমার হাঁতে একটা ছবি তুলে দিলেন । আমি ছবিটার দিকে একনজর তাকালাম । অর্থহীন ছবি । উদ্ভট আঁকিবুঁকি আর রঙ্গের কেরামতি বাদে দেখার কিছু নাই ছবিটায় । দাদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন । বললেন , অর্ক ! একটা কথা মনে রাখিস একজন অসাধারন পেইন্টারের তার জীবনে কেবল একটাই অসাধারণ ছবি আঁকা উচিৎ । আর বাদ বাকি ছবি গুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে । Afterall Destruction is the most beautiful Art of the Universe !'
অর্ক জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে । নাওমি অর্কের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো , ' আপনার দাদা তো দেখি কট্টর Lemarchist ছিলেন মনে হয় ! বিবর্তনের ক্ষেত্রে তেমনটা শুনেছি । কিন্তু তাই বলে আর্টের জগতে লেমারকিজম ! আনবিলিবেবল ! '

অর্ক নরম স্বরে বলল , হা অনেকটা সেরকমই বলতে পারেন । শেষের দিকে ওনার মাথায় গণ্ডগোল দেখা দেয় । ওই ঘটনার পরের দিনই তিনি মারা যান । তার শেষ ছবিটা এখন ল্যুভর মিউজিয়ামে আছে । দাদার জীবনে আঁকা ৪৭ টা ছবির সারসংক্ষেপ হল তার আঁকা শেষ ছবি ' Mirror 47। কোন পেইন্ট ই মরে না নাওমি ! বেঁচে থাকার ভঙ্গিটা কেবল বদলায় ! '
'পেইন্টিং হয়তো মরেনা , বেঁচে থাকে , কিন্তু পেইন্টার ? তাদের তো মরতে হয় । অর্ক ! Mirror 47 এর পেইন্টার কি স্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়েছিল নাকি _ ?'
অর্ক মৃদু হাসল । ' ধরে ফেলেছেন তাহলে ! বেনজোয়েল মেথিল একগোনাইন _ সোজা ভাষায় কোকেন ! ছয় গ্রাম প্রতিদিন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় অভ্যাস করেছিলেন । জাঙ্কিদের কথা হয়তো শুনে থাকবেন । মার্কিন মুল্লকের বিখ্যাত নেশার দল । এরা পানির সাথে কোকেন মিশিয়ে সিরিঞ্জে ভরে শরীরে পুস করতো ।ওদের সাথে থেকেই এই কোকেন নিতে শুরু করেছিলেন । শুনেছিলাম সিগমুণ্ড ফ্রয়েড আর দাদা নাকি খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলেন যদিও ফ্রয়েড দাদার চাইতে বয়সে বেশ বড় ছিলেন । দু জন নাকি একসাথে কোকেন ও নিতেন ।যাই হোক সেদিন ছিল শুক্রবার FA থেকে ফিরে
তার রুমে ঢুকেছিলাম ।যেয়ে দেখি __ । আট গ্রাম ছিল ওই দিন । পরিকল্পিত । ' 'আচ্ছা দাদা যে স্বাভাবিক ভাবে মারা যাননি সেটা বুঝলেন কি করে ? '
'ওই যে । নিজের আঁকা সব ছবি নষ্ট করে দিলেন । নতুন আঁকা শেষ ছবিটার কাজ ও শেষ । আপনাকে সেই ছবির দায়িত্ত ও বুঝিয়ে দিলেন । তারপরের দিনই মারা গেলেন । কেমন যেন গোছানো মনে হচ্ছিল সব কিছু । '
' Excellent !আপনি সত্যিই অত্যন্ত বুদ্ধিমতি মেয়ে ! তা বুদ্ধিমতি নাওমি এখন কি আপনি অনুমান করতে পারেন আমার ঘরে কেন আমার আঁকা কোন পেইন্ট নেই ? এখন কি বুঝতে পারছেন কেন আমার Waste বাস্কেটের ঢাকনা লাগানো যাচ্ছেনা ? '
নাওমি চমকে উঠে দাঁড়ালো । দৌড়ে অর্কের হাত দুটো জড়িয়ে ধরল । ' তার মানে আপনিও ? আপনার সব ছবি নষ্ট করে ফেলেছেন ? আপনিও আজ _ ?'
অর্ক দৃঢ় স্বরে বলল , ' না নাওমি ! আমি মরবনা । দাদা বলতেন পেইন্ট কখনো মরেনা স্রেফ বেঁচে থাকার ভঙ্গিটা বদলায় আমি দেখাব পেইন্টের সৃষ্টিকর্তা ও কখনো মরেনা স্রেফ বেঁচে থাকার ভঙ্গিটা বদলায় ! নাওমি ! আমার একটা জীবন্ত ক্যানভাস প্রয়োজন । যেখানে আমি তৈলচিত্র বা ফ্রেসকো নয় রক্ত দিয়ে ছবি আকব । যে ক্যানভাস কথা বলবে , সাড়া দেবে , চাপ দিবে , উত্তাপ ছড়াবে । আর আর যে ক্যানভাসটা বেঁচে থাকবে চিরদিন ! আপনি আমার সেই ক্যানভাস হবেন , নাওমি ? আমার জীবন্ত ক্যানভাস ? '
নাওমি নামের মেয়েটা কাঁদছে । ' আমাকে কি শুধু এই ক্যানভাসটার জন্নই প্রয়োজন , অর্ক ?'
আমি দেখতে পাচ্ছিনা , সম্ভবত অর্কের চোখের এককোনে ও জল জমেছে । অর্ক নাওমি কে জড়িয়ে ধরে আছে । বাতাসে ফিসফিসিয়ে একটা কণ্ঠ শোনা গেলো , ' নাওমি ! উহু ! আপনার ক্যানভাস এ আঁকা ওই রং , পরাবাস্তব দৃশ্যকল্প , তুলির একটা একটা টান এর চাইতে বেশি কিছু আমার আর চাওয়ার নেই । নাওমি ! আমি আপনাকে ভালোবাসি এবং ভালোবাসি । '
নাওমির ক্ষীণ কণ্ঠ শোনা গেলো , ' Someday Death will take us to another Star ! '
ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম ভাঙল অর্কের । চোখ খুলতেই দেয়ালের গায়ে ঝোলানো পেইন্টিংটার দিকে চোখ পরল । অদ্ভুত একটা ছবি । ছবিটা অস্পষ্ট । ছবির ডান দিকে আঁকা মেয়েটার ছবিই কেবল পরিষ্কার বোঝা যায় । কি অদ্ভুত সুন্দর মেয়ে । মনে হয় মানুষটাকে সে চিনে । ছবির নিচে ঝুলানো একটা কাগজ দেখতে পেল অর্ক । কাগজটা হাঁতে নিতেই বা হাতের কব্জির ঠিক উপরের কাটা জায়গাটা বেথা করতে শুরু করল । প্রচণ্ড বেথায় অজ্ঞান হওয়ার পূর্বমুহূর্তে চিরকুটের লেখাটা বিড়বিড় করে পড়ল অর্ক , ' I Dream my painting and I paint my dream .'


তিন ।।

la tristesse dursea to jours !
'নাওমি ! কি রে এর মানে কি ? প্রতিদিন একই কথা শুনি । ' আম্মু হাউ মাউ করে জিজ্ঞেস করল ।
আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে হাসলাম । বললাম , তুমি বুঝবেনা । ''আচ্ছা আম্মু একটা কথা বলতো আমার ঘরে যে ছবিটা টাঙ্গানো আছে ওটা কার ছবি ?'
' ওটা আবার কার ছবি হবে ! লতা ঝোপ ঝাড়ের ছবি । '
''আরে ধুর ! বলছি যে ছবিটা কে একেছে ?'
'বাব্বাহ ! আমি কি আর্ট বিশেষজ্ঞ নাকিরে ! কে একেছে কে জানে ! তোর দাদার আমল থেকেই নাকি ছবিটা এ বাড়িতে । কেন রে ? '
' না এমনি । ' ঝটপট জবাব দিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম ।
সবাই বলে ছবিটা নাকি শুধু লতা পাতার । কিন্তু আমি সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি । একটা ছেলে ছবির বা পাশে দাড়িয়ে আছে । ছেলেটার চোখ কি চমৎকার করে আঁকা হয়েছে ।কি গভীর কালো চোখ ! এতো সুন্দর চোখ এই পৃথিবীর কারো হতে পারেনা , কখনো না । 'ছেলেটার বা ' হাতের কব্জির উপরে একটা কাটা দাগ । কাটা দাগ টা অদ্ভুত সুন্দর ! গ্রে কালার কে এতো চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছে যে অসাধারণ না বলে উপায় নেই !
নাওমি রহস্যময়ির মতো ছবিটার দিকে এগিয়ে গেলো । রুমের মধ্যে ভাঙ্গা ভাঙ্গা একটা কণ্ঠ শোনা গেলো _ Someday death will take us to another Star !

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪১

সকাল রয় বলেছেন:
ইংলিশ গুলো বাংলা হলে আরো ভালো হতো লেখাটা। শুভকামনা।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫০

নাভেদ বলেছেন: হা আমার ও তাই মনে হয়েছে ।
এটাকে লেখকের সীমাবদ্ধতা ধরে নিতে পারেন । :)
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।ভালো থাকবেন ।

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

এনামুল রেজা বলেছেন: সব মিলিয়ে চমৎকার গল্প। +++

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৭

নাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৮

মহান অতন্দ্র বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর লেখা । কোন পেইন্ট ই মরে না নাওমি ! বেঁচে থাকার ভঙ্গিটা কেবল বদলায় ! '

প্রিয়তে নিচ্ছি ।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৮

নাভেদ বলেছেন: মহান অতন্দ্র ! ধন্যবাদ । :P

৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৭

ডি মুন বলেছেন:
গল্পটা আগেই পড়া ছিল। এবং প্রিয়তেও নিয়েছিলাম।
এক গল্পে চিত্রকলার সাতসতের।

++++

ভালো থাকুন

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১১

নাভেদ বলেছেন: আবার ও পড়িয়ে দিলাম দেখছি ! :P

শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ।

৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৪২

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: পুনরায় পোস্ট দিয়েছেন বলেই এতো সুন্দর একটা গল্প পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। গল্পটা প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৩

নাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

ভালো থাকুন ।

৬| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪২

জলমেঘ বলেছেন: দারুন লাগলো ভিন্ন প্রেক্ষাপটের গল্পটা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫০

নাভেদ বলেছেন: কষ্ট করে পরে ফেলার জন্য ধন্যবাদ ।
ভালো থাকবেন ।

৭| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অসাধারণ লেখা । গল্পে গল্পে পেইন্ট সম্পর্কে অনেক সুন্দর সুন্দর তথ্যও দিয়ে দিলেন ।

+++++++

৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫২

নাভেদ বলেছেন: রিপ্লাই অপশন টা কাজ করছেনা কেন যেন ।
কলমের কালি শেষ _ ভাই আপনাকে ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য ।
ভালো থাকবেন ।

৯| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩২

ইলুসন বলেছেন: অসাধারণ। পড়তে পড়তে অন্য জগতে চলে গিয়েছিলাম।


Lemarchist মানে কী?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.