নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির !

নাভেদ

প্রোফাইল এ _ই -ডি -টি- ং কাজ চলিতেসে ।

নাভেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা , বিষাদ এবং ভীতির কাব্যঃ নভেম্বর রেইন !

০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮

নভেম্বর রেইন গানটা এতো অসাধারণ লাগে কেন আমি জানিনা , হয়তো কেউ ই জানেনা । খুঁজে খুঁজে বুকের সবচাইতে সংবেদনশীল জায়গাটুকু কি করে যেনো আবিষ্কার করে ফেলে রোজের কণ্ঠ কিবা স্ল্যাসের সলো । পিয়ানোর যাদুকরী ধ্বনি অস্তিত্বের প্রবল মানবিক অনুভূতিগুলোকে যেনো উগড়ে দিতে চায় । খুব করে কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে , পুরনো বিষাদ গুলো ছুতে ইচ্ছে করে , ইচ্ছে হয় হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে যেতে । কে জানে এ জন্যেই হয়তো নভেম্বর রেইন আমাদের এতো প্রিয় । আমার কাছে নভেম্বর রেইন অডিটরি হেলুসিনেটিং ড্রাগের মতো । প্রায়ই ভাবি , এই গানটা আছে বলেই বেঁচে আছি ( পিঙ্ক ফ্লয়েডের উইস ইউ আর হেয়ার এবং পোয়েট অফ দা ফলের স্লিপ_ এই দুই গানের কথা না বললে অপরাধ হবে; দুঃসময়ে এরাই আমাকে বাচিয়ে রাখছে যে।)



নভেম্বরের রেইনের অসাধারণ লিরিক্স নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছুই নেই ।







“তোমার ওই চক্ষু পানে চাহিয়া দেখি



দেয়ালের ওপাশে আঁটকে পরা ভালোবাসা



যখন জড়িয়ে থাকি তোমায় , তবুও কি বোঝনা



প্রানে প্রানে কি স্পন্দন ?











সবকিছুই তো বয়ে চলে



হৃদয়ের বিবর্তন ও তো আমরা বুঝি !



তবুও এই ভালোবাসা ক্লান্তিকর



সময়টা যখন প্রবল বিষাদধারার !



------ "







অনুবাদে আমি একেবারেই অপরিপক্ক । কোথায় যেন নভেম্বর রেইনের একটা চমৎকার অনুবাদ পড়েছিলাম । সে এক দুর্দান্ত অনুভূতি ।







দা ইউনিক লিরিক্স







নভেম্বর রেইনের লিরিক পৃথিবীর সবচাইতে অসাধারণ লিরিক গুলোর একটি । সহজিয়া ভাষায় দুজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ , ভয় , বিষাদ , ভালোবাসা তথা এক ভয়ঙ্কর জটিল সময়কে তুলে ধরা হয়েছে । গানের শুরুতেই আমরা দেখি একজন মানুষের ভয়মিশ্রিত অনুভূতির কথা যেখানে সে তার প্রেমিকার ভালোবাসার অভাবে বিষাদগ্রস্থ । একদিকে মানুষটার তার প্রেমিকার প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা অন্যপাশে তার প্রতি প্রেমিকার নিঃস্পৃহতা মানুষটাকে ক্রমশ ভীত করে ফেলছে । সে কি হারাতে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষকে ?







গানে ‘নভেম্বর রেইন ‘ মূলত দুজন মানুষের জীবনের এক ক্রান্তিকাল কে রিপ্রেজেন্ট করে । ‘ক্যান্ডেল’ বলতে সম্ভবত ভালবাসাকে বোঝানো হয়েছে । এমন একটা সময় যখন ভালোবাসার সুন্দর স্মৃতি গুলোও বিষাদের চাপে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে ।কিন্তু তবুও প্রেমিক মানুষটা হাল ছাড়তে রাজি নয় সে চায় তার প্রেমিকা ‘সময়’ নিক , ভেবে দেখুক অতীতের সুন্দর অনুভূতিগুলোর কথা । যেহেতু কোন কিছুই চিরন্তন নয় তাই হয়তো প্রেমিকার ভুলও ভাঙবে কখনো , হয়তো সব অভিমান ভুলে ঝাপিয়ে পড়বে তার বাহুডোরে । গানের পরের লাইনগুলোতে সেই আশাবাদ ই যেন ব্যাক্ত হয়েছে বারংবার । এ দিক গানটিকে প্রবলভাবে অপটিমিষ্টক ও বলা চলে ।







অবিশ্বাস্য একটা মিউজিক ভিডিও !







মিউজিক ভিডিওর ইতিহাসে এতোখানি মেটাফেরিকাল কোন ভিডিও আছে বলে আর মনে হয়না । ভিডিওর শুরুতেই আমরা দেখি রোজ ঘুমের ওষুধ খেয়ে খাটে শুয়ে পরে । এর পর হুট করেই লস এঞ্জেলসের আরফিয়াম থিয়েটারে গান্স এন্ড রোজেস বাহিনীর লাইভ কনসার্ট ! এই দৃশ্যে হুইস্কি সামনে নিয়া রোজ যেমনে পিয়ানো বাজায় এটা মোটামুটি পাগল করে ফেলে আমাকে । এর পরেই আমরা আবার দেখি একটা সাদা বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রোজ পিয়ানো বাজাইতাসে



। জিশুর মূর্তির সামনে থাকা মোমবাতি ধুপ করে নিভে যাওয়ার সাথে সাথেই আলোকোজ্জ্বল আকাশ কেমন যেন মেঘলা হয়ে আসে । তারপর আমরা দেখতে পাই , এক্সেল তার প্রেমিকা স্তেফানিকে বিয়ে করছে নিউ মেক্সিকোর কোন এক চার্চে । পরের দৃশ্যটা হৃদয়বিদারক ! আমরা আবার চার্চে ফিরে যাই কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন । স্তেফানির মৃত্যুতে ভেঙে পড়তে দেখা যায় রোজকে ।কিন্তু স্তেফানি কীভাবে মারা যায় এই বিষয়টা ভিডিওতে একেবারেই দেখানো হয়নি । গানপাগলাদের কাছে স্তেফানির মৃত্যু এখনো বিতর্কের বিষয় । তবে আমার মনে হয় , স্তেফানি আত্মহত্যা করে । চার্চে মধ্যে কফিনে শুইয়ে রাখা স্তেফানির মাথার অর্ধেক গ্লাসে ঢেকে রাখা হয় , এ থেকে ধারনা করা যায় তার মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছে স্তেফানি । অন্যদিকে ভিডিওর এক পর্যায়ে আমরা দেখি রোজ একটা গানশপের পাশ দিয়ে ধীর গতিতে হেঁটে যাচ্ছে । হয়তো এই গানশপ থেকেই অস্র কিনেছিল তার প্রেমিকা স্তেফানি ।মৃত্যু যে আত্মহত্যার মাধ্যমেই হয়েছিল সেটি অন্যভাবেও নিশ্চিত হওয়া যায় । গানের পুরো ভিডিও প্লটটি নেয়া হয়েছিল ডেল জেমসের ‘ উইথাউট ইউ ‘ নামক ছোটগল্প থেকে । সেখানেও আমরা দেখতে পাই নায়িকা মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করে ।







তবে মজার বিষয় হচ্ছে , ভিডিওতে হুট হাট করেই একঘটনা থেকে অন্যটায় যেভাবে টার্ন নিচ্ছিল ব্যাপারটা আমার কাছে অস্বস্তি লাগছিল । যেমন বিয়ের দৃশ্যয়ের পরে হুট করে দেখলাম রোজ এবং স্তেফানি লস এঞ্জেলেসের রেইনবো বার এন্ড গ্রিলে দুষ্টুমি করছে । কিন্তু সেই সময়ে স্তেফানির রিং ফিঙ্গারের ভিন্ন আংটি প্রমান করে যে তখন ও তাদের বিয়ে হয়নি । অথচ এর আগের দৃশ্যেই আমরা তাদের বিয়ে হতে দেখেছি ! এই অসামঞ্জস্যতা পরিকল্পিত বলেই বোধ করি ।একেবারে প্রথম দৃশ্যে আমরা দেখি রোজ রোজ ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে , তারপর একপর্যায়ে জিশুর চোখ থেকে বেরিয়ে আসে রক্তের ধারা , ঠিক তার পরের দৃশ্যেই দেখি রোজ ঘুমের মধ্যে হাস –ফাস করতে করতে এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে । শেষ দৃশ্যে দেখা যায় স্তেফানির হাত থেকে ছোড়া ফুল গুলো সাদা থকে ক্রমেই লাল হতে থাকে । এ থেকে একটা সুন্দর সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়াকেই বুঝে নিতে পারি আমরা । এরপরের মুহূর্তেই আতঙ্কিত- ঘর্মাক্ত অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠে রোজ । তাই আমার মনে হয় নভেম্বর রেইন গানটা পুরোটাই রোজের দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না ।তাই আমি বলি _ নভেম্বর রেইন না , আমি রোজের দুঃস্বপ্নের সঙ্গীত শুনি ।







শেষের দিকে রোজের পিয়ানো চুলকানো আর স্ল্যাসের সলো নিয়া কিছুই বলার নাই । গানটার আত্মা বলা যায় স্ল্যাসের সলোকে । রোজের যন্ত্রণা যেন স্ল্যাসের গিটারের কান্না হয়ে ঝরে পরছিল !







কিছু তথ্য _







১। নভেম্বর রেইন GnR এর Use your Illusion 1 এ্যালবামের দশম ট্র্যাক । এ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ১৯৯২ এঁর জুনে ।







২।গানস এন্ড রোজেস এঁর বিখ্যাত ট্রিলজির একটি নভেম্বর রেইন । অন্য দুটি হলো _ Don’t Cry এবং Estranged .







৩। ব্যান্ডের পূর্বের সদস্য গান এঁর এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় _ এক্সেল রোজ গানটি প্রথম লিখতে শুরু করে ১৯৮৩



সালের দিকে !







৪। শুরুর দিকে স্ল্যাস এবং অন্যান্য ব্যান্ড মেম্বাররা নভেম্বর রেইন কে এ্যালবামে রাখতেই চায়নি ! পরে এক্সেল ব্যান্ড ছাড়ার হুমকি দিলে বাধ্য হয় । ভাগ্যিস হুমকি



দিছিল !







৫ । এ্যালবামে নভেম্বর রেইন সংযুক্ত করার আগে রোজ টানা আটদিন একলা একটা রুমের মধ্যে কাটায় । আট দিন পর ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরা দেখে রুমের এককোনায় রোজ উলটো হয়ে ঘুমুচ্ছে । রুম ভর্তি খালি পিজ্জার বাক্স আর মল – মূত্র !!







৬। মিউজিক ভিডিওতে নায়িকা চরিত্রে থাকা স্তেফানি সত্যিকার অর্থেই রোজের গার্লফ্রেন্ড ছিল । যদিও পরে তাদের ব্রেক আপ হয়ে যায় ।







৭। পৃথিবীর সবচাইতে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওর একটি । পুরো ভিডিওটি বানাতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় !( Estranged গানের মিউজিক ভিডিও করতে খরচ এঁর চাইতে বেশী পরছে ! প্রায় চার মিলিয়ন ডলারের মতো ! )







৮। মিউজিক ভিডিওটা সিনেমাটোগ্রাফির জন্য MTV এ্যাওয়ার্ড পায় রিলিজের পরপরই ।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: খুব প্রিয় একটা গান নিয়ে চমৎকার একটা লেখা।

০১ লা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪১

নাভেদ বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । শুভকামনা রইলো ।

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:০৪

পথের বাঁকে বলেছেন: চমৎকার হয়েছে আপনার অনুভূতির প্রকাশটা....

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০২

নাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৫

আহসানের ব্লগ বলেছেন: গানটা খুব প্রিয় ।

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪

নাভেদ বলেছেন: প্রিয় না হয়ে উপায় আছে মশাই ? :)

৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪৩

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: গান নিয়ে এতো সুন্দর রিভিউ আগে পড়ি নি :D অনেক প্রিয় একটা গান।

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

নাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নাহিদ ।

৫| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩৩

সোহান ফয়সাল খান বলেছেন: সত্যি অনেক কিছু জানলাম আজকে। ধন্যবাদ আপনাকে

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

নাভেদ বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।

৬| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:৩৮

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আপনার রিভিউ পড়ে গানটা আবার শুনে নূতন করে অনুভব করলাম, যা আগে হয়তো করি নি। মিউজিক ভিডিও এর উপর আগে কখনো কোন রিভিউ পড়ি নাই। আপনারটাই প্রথম। চমৎকার লিখেছেন। গানটা শুনে নিজেই থ লেগে গেলাম, কী দারুণভাবে 'নভেম্বর রেইন'কে মেটাফোরিক হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। খুব ভালো লাগলো নাভেদ। অনেক দিন পর আপনার পোস্ট পেলাম। শুভ কামনা রইলো।

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮

নাভেদ বলেছেন: বাঙালি ভাই যেঁ ! ভালো আছেন নিশ্চয়ই ।। সামুতে মিউজিকের উপর চমৎকার কিছু রিভিউ আর ইন্টারপ্রেটেশন আছে । সময় করে ওগুলাও পরে দেখতে পারেন ।

আপনার জন্য ও শুভকামনা ।

৭| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

গান নিয়ে এত চমৎকার রিভিউ।

ভাল লাগল খুব।

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯

নাভেদ বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ।
ভালো থাকুন সবসময় ।

৮| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৩

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: গানটা শুনেছিলাম কিন্তু এতটা অনুভব করি নি। ভালো লাগল।

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০০

নাভেদ বলেছেন: অনুভব করতে আমারও বহুদিন লেগেছে । কোন এক শ্রাবণের সন্ধ্যায় হুট করে ঢুকে গেলো বুকে :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.