নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে কদাকার মানুষের একটি গল্প

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৭



রহস্য রোমাঞ্চ সাহিত্যের প্রতি আমার আশৈশব ছেলেমানুষি ভালবাসা। রহস্য পত্রিকা, সেবার বই পড়েছি অনেক। পরবর্তীতে কয়েকটি ছোট রহস্য গল্প লিখেছিও রহস্য পত্রিকায়। সেখানে পরিচয় হয় আমাদের দেশের রহস্য রোমাঞ্চ সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ শেখ আব্দুল হাকিম'র সাথে। তাঁর স্নেহ ও অনুপ্রেরণা আমি আমৃত্যু শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবো। এটা একটা প্রায় উপন্যাসের মতো বড় গল্প। গল্পটা অনেক আগে লিখেছিলাম। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত ব্যস্ততার দরুন রহস্য পত্রিকায় আর পাঠানো হয়নি। অনেকদিন পর পুরনো খাতায় লেখাটা পেয়ে এ পর্যন্ত কম্পোজ করে বসলাম। যতোটুকু প্রকাশ হলো এটা বলতে গেলে সূচনাই। হয়তো আগামীতে কখনও বাকি অংশও প্রকাশ করবো। ধন্যবাদ।

ধারাবাহিক বড় রহস্য গল্প
পৃথিবীর সবচেয়ে কদাকার মানুষের একটি গল্প

'দেখ দেখ কী কুৎসিত লোকটার চেহারা! মুখ বিকৃত করে বলে উঠলো সুন্দরি মেয়েটি। চোখেমুখে ঘৃণা ও আতঙ্ক।
'হ্যা সত্যি কী ভয়ঙ্কর দেখতে লোকটা!' শীতল গলায় বললো ওর পাশে বসা মেয়েটি। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। 'এমন কুৎসিত চেহারার মানুষ আগে কখনও দেখিনিরে বাবা, উফ! আসলে লোকটাকে আমার মানুষ বলেই মনে হচ্ছে না। কে জানে হতে পারে ভীনগ্রহের কোনও কিম্ভুতকিমাকার প্রাণী টানি কিনা, ভুল করে পৃথিবীতে এসে পড়েছে! হা হা হা।' বেশ জোরেই হেসে উঠলো মেয়েটি। 'এই লোকটার মুখোমুখি বসে অচিনপুর পর্যন্ত যেতে হবে নাকি, তাহলে সত্যি সত্যি কিন্তু বমি করে ফেলবো বলে দিচ্ছি।' ওয়াক শব্দ করে ঘৃণা প্রকাশ করলো মেয়েটি।
'আহ কাবেরি থামবি তোরা!' এসময় বললো তৃতীয় মেয়েটি। কণ্ঠস্বরে কাঠিন্য সুস্পষ্ট। চেহারাতেও বিরক্তিভাব। 'লোকটা হয়তো শুনতে পাচ্ছে সব। শুনলে কী ভাববে বল তো! কেন শুধু শুধু ওর পিছনে লাগছিস!'
'তুই কি ওই কালো ভুতটাকে বিয়ে করবি নাকি। হা হা হা।' অট্টহাসিতে মেতে উঠলো মেয়েটি। ওর সাথে যোগ দিলো কাবেরি নামের অপর মেয়েটিও। দুজনেই সশব্দে হাসতে লাগলো। হাসির গমকে আরেকটু হলে সিট থেকে গড়িয়ে পড়ে আরকি।
'ধ্যাত তোদের সবসময় শুধু বাজে ইয়ার্কি!' শ্রাগ করে হতাশ গলায় বলে উঠলো তৃতীয়জন। 'তোদের সাথে আসাই ভুল
হয়েছে আমার।'
চুপ কর তো মনিকা।' বিরক্তির সাথে বললো কাবেরি নামের মেয়েটি। 'না এলেই পারতি। কেউ তোকে জোর করেবি আমাদের সাথে আসতে। আর ফার্স্ট গার্ল হয়েছিস বলে সবসময় এমন হামবড়া ভাব নিয়ে থাকবি নাতো, বিরক্তি লাগে।'
'আচ্ছা সত্যি সত্যি কি এই লোকটার মুখ দেখতে দেখতেই অচিনপুর অব্দি যেতে হবে নাকি! বললো প্রথম মেয়েটি। দারুণ বিরক্তি চেহারায়। 'এই কেউ বল না ওকে অন্য কোথাও যেয়ে বসতে। এই কামরায় তো আরও দুয়েকটি সিট এখনও খালি আছে। লোকটা ওর কোনও একটিতে যেয়ে বসুক না! মেয়ে মানুষ আর তিনজন একসাথে না হলে আমি কখন অন্য জায়গায় গিয়ে বসতাম।' ঘৃণা ও কিঞ্চিত ভয়েও মুখ বিকৃত হয়ে উঠলো ওর। 'আমার একদম ভাল লাগছে না। খুব অস্বস্তি হচ্ছে।'
'হ্যারে রূপা একদম ঠিক বলেছিস। লোকটাকে দেখার পর থেকেই আমার শরীরও কেমন যেন ঘিনঘিন করছে। কী ভয়ানক বিদঘুটে চেহারা বাবা!' বলতে লাগলো কাবেরি। চেহারায় আতঙ্ক। 'পৃথিবীতে যে এমন কুৎসিত চেহারার মানুষ আছে একে না দেখলে জানতাম না কোনদিন। সাক্ষাত ইবলিশ যেন, দোযখ থেকে নেমে এসেছে।'
লোকটা ভাবলেশহীন মুখে শুনছিল মেয়েগুলোর কথোপকথন। থেকেথেকে কেমন যেন এক রহস্যময় স্মিত হাসি খেলে যাচ্ছে তার অবয়বে। দেখে মনে হতে পারে বোধহয় সে উপভোগ করছে তাকে ঘিরে মেয়েগুলোর এই তির্যক কথোপকথন। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। তবে এসবে সে অনেকটাই অভ্যস্ত। মানে তার চেহারা দেখে মানুষের এই আঁতকে ওঠাটা। এসব মোটেও নতুন কিছু নয় তার জীবনে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেই অনেক সময় নিজের কদাকার চেহারা দেখে আঁতকে ওঠে সে। উচ্চতায় মাত্র চার ফিট পাঁচ ইঞ্চি। প্রায় বনমানুষই বলা যায়। বেটত্বের সাথে বেমানান বেঢপ শরীর তাকে কিম্ভুতকিমাকার করে তুলেছে। সাথে যোগ হয়েছে বড়সড় চাল কুমড়োর আকৃতির বিরাট এক মাথা। মাথার ঠিক মাঝখানে সরলরৈখিক চকচকে একটা টাক, যা অনেকটা ক্রিকেট মাঠের পিচের মতো দেখায়। দুদিকে অল্প কিছু চুল ছড়ানো ছিটানো। থ্যাবড়া একটা নাক মুখের বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে রেখেছে। মানুষের নাক সাধারণত এতো বড় হয় না। তারটা খুব দৃষ্টিকটু একটি ব্যতিক্রম। দাঁতগুলোতেও কণামাত্র শ্রী নেই; বেশ বড় ও উঁচু। এসবের সাথে গোদের ওপর বিঁষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছে আলকাৎরার মতো কুচকুচে কাল রং। তার মতো কাল গাত্র বর্ণের মানুষ এই বঙ্গ দেশে তেমন একটা দেখা যায় না। একেবারে আবলুস কাঠের মতো কুচকুচে কালো।
তাকে দেখে আঁতকে ওঠে মানুষ। শিশুরা ভয়ে মায়ের আচলে মুখ লুকায়; অনেকে কেঁদেও ফেলে। অবশ্য ওরা নিতান্তই শিশু, অবুঝ। ভাবলো সে। ওদের সবকিছুই হাসি মুখে সহ্য করা যায়। কিন্তু বড়, পরিণত বয়সের কেউ যদি প্রকাশ্যেই তার চেহারা নিয়ে এমন কদর্য হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে তখন তা মেনে নেয়া কষ্টকরই বৈকি। ওরা তো আর অবুঝ নয়! ফের সেই রহস্যময় মৃদু হাসিতে ভরে উঠলো লোকটার মুখ। বছর দুয়েক আগে একবার এক পুচকে ছোকরাও এই মেয়ে দুটোর মতো ভুল করে বসেছিল। একদিন একটি রেস্টুরেন্টে সবান্ধব খেতে বসে তাকে দেখতে পেয়ে, মুখ বিকৃত করে প্রকাশ্যেই সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে যা তা বলে নোংরা রসিকতা করতে লাগলো। এরকম কয়লার মতো কালো মানুষ নাকি এখন আর খোদ আফ্রিকাতেও পাওয়া যাবে না, আমেরিকায় নিগ্রোরাও আস্তে আস্তে শাদা হয়ে যাচ্ছে, মাথার দুদিকে সবুজ রঙ করে দিলেই ওটা মিনি ক্রিকেট মাঠ হয়ে যাবে, আর তার নাকটা নাকি ওর তিনটে নাকের সমান বড় ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও কতো লম্ফঝম্প, কদর্য হাসি মসকারা তার চেহারা নিয়ে।
ছেলেটার কথা ভেবে পুলকিত হলো সে। এই মেয়েগুলোরই বয়সী, বা কিছুটা বড় হবে। সুদর্শন। দীর্ঘ পেটানো ব্যায়াম করা শরীর। সুশ্রী মুখাবয়ব। দেখলেই মডেল বা অভিনেতা, মানে সিনেমা নাটকের নায়ক টায়ক বলে মনে হয়। এতো সুন্দর, সুদর্শন ছেলেটা অথচ মন তার কতো অপবিত্র, রাজ্যের কলুষতায় ভরা! আপনমনে মুচকি হাসতে লাগলো লোকটা।
'দেখ দেখ জানোয়ারটা হাসছে কীভাবে! বিড়বিড় করে বললো রূপা নামের মেয়েটি। গলায় আতঙ্ক। 'কেউ ওকে অমন কুৎসিতভাবে হাসতে নিষেধ করবি প্লিজ। নইলে আমি সত্যি কিন্তু বমি করে বসবো। বারবার ওভাবে হাসছে কেন ও! হাসির কি হয়েছে এখানে!'
'ঠিক বলেছিস রূপা।' বলল কাবেরি। তীক্ষ্ণ চোখে রাজ্যের ঘৃণা নিয়ে দেখতে লাগলো লোকটাকে। 'মানুষের হাসি যে এতো কুৎসিত হতে পারে একে না দেখলে জানতাম না কোনদিন। সাক্ষাত শয়তান একটা। দোযখ থেকে নেমে এসেছে যেন।'
'দয়া করে তোরা এবার চুপ কর তো।' বিরক্তির সাথে বললো মনিকা। 'সেই কখন থেকে দেখছি তোরা শুধু শুধু ভদ্রলোকের পিছনে লেগে আছিস! এবার অন্য বিষয়ে কথা বল প্লিজ। উনি নির্ঘাত তোদের কথা শুনতে পাচ্ছে। বেচারা নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে এতে। সেও তো মানুষ আমাদের মতো। আর সবচেয়ে বড় কথা সে তো আমাদের কোনও ক্ষতি করেনি। নিজের মতো বসে আছে, একবার ফিরেও তাকায়নি আমাদের দিকে। তোরা কেন শুধু শুধু তাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস।'
(চলবে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লাগলো।
শুভকামনা রেখে গেলাম

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪২

অর্ক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন। শুভকামনা অবিরাম।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: একটানে পড়ে গেলাম।। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে, তার কুৎসিতত্বের বর্ননা এবং মেয়েদের উপহাসের পরিমানটা একটু বেশীই হহয়ে গেল না ?? হয়তো আমারও ভুলও হতে পারে।।।

২১ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুভকামনা অনেক।

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৪৯

ওমেরা বলেছেন: লিখতে থাকুন সাথে আছি !

২১ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ ওমেরা। শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.