নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুম্বাই সিএসটির জন আহার হোটেলে একদিন

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৯



আমি আগামীকালও আসবো এখানে, পরশুও আসবো
যতোদিন আছি মুম্বাইয়ে প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায় আসবো।
আমার বড্ড ভালো লাগে এখানে এলে।
পুরো হোটেলটাই প্রায় শূন্য পড়ে থাকে এ সময়।
দু’চারজন এদিক সেদিক বিক্ষিপ্ত বসে থাকে চা-কফি বিস্কুট নিয়ে।
এ সময় এখানে চা কফি ও প্যাকেটজাত বিস্কুট ছাড়া বোধহয়
আর তেমন কিছু পাওয়াও যায় না, খেতে দেখিনি কাওকে।
(আমি অবশ্য সেভাবে খোঁজও করিনি)
আমি বরাবরই দুয়েক কাপ চা-কফি আর বিস্কুট নিয়ে বসেছি।
আমার ভীষণ ভালো লাগে সন্ধ্যায় এখানে এসে বসে থাকতে।
ভালো লাগে হোটেলের সাদা বাতির উজ্জ্বল আলোকসজ্জা,
পিনপতন নিস্তব্ধতা, আরও কিছু...আমি নিজেও ঠিক বুঝি না;
এখানে এলেই মন নিটোল শান্তি ও পবিত্রতায় ভরে ওঠে!
হোটেলের মধ্যবয়সী মারাঠি পরিচারিকা যথারীতি আজও স্ট্যাচুর
মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের পাশে- কী ভীষণ শান্ত সে!
কখনও কারও সাথে তাকে একটি কথাও বলতে দেখিনি!
কেবলই আপনমনে নিরবচ্ছিন্ন নিজের কাজ করে চলেছে;
টেবিল খালি হওয়া মাত্র তৎক্ষণাৎ এসে পরিষ্কার করে দেয়া
এঁটো বাসনকোসনগুলো চোখের পলকে সরিয়ে নিয়ে যেয়ে
ডাস্টবিনে ফেলা, তারপর আবার নিঃশব্দে যেয়ে দাঁড়ানো
কাউন্টারের পাশে, তারপর আবার...
তাকে হয়তো কোনওদিন আমি বলেই বসবো যে, ‘মাসি !
এতো তাড়া কীসের, থাক না ওগুলো ওভাবেই পরে কিছুক্ষণ,
যেমন আছে! আরও অনেক শূন্য টেবিলই তো পরে আছে
চারপাশে, খদ্দের এলে বসবে না হয়- ওসবেরই কোনও
একটিতে! আর তেমন কিছুই তো নয়- কয়েকটিমাত্র ওয়ান
টাইমার কাপ; দুয়েকটির ভিতরে ব্যবহৃত টি ব্যাগ, প্রিচ,
বন প্লেট, বিস্কুটের কিছু ছেড়া শুকনো প্যকেট- এই তো!
থাক না- ওগুলো ওভাবেই পরে থাক আরও কিছুক্ষণ,
তারচেয়ে আপনি নিজেই বরং দুদণ্ড বিশ্রাম করুন বসে।’
জানি, তা কোনওদিনও বলা হবে না তাকে। বললেও সে গ্রাহ্য
করবে না- চাবি দেয়া পুতুলের মতো, যথারীতি নিজের কাজ
করে যাবে আপনমনে- একইভাবে! তাই আমিও আগ বাড়িয়ে
কোনওদিন কিছু বলবো না তাকে।
ক্যাপ মাথায়,ব্যাগ কাঁধে লম্বা চুলের ওই গোফওয়ালা ছোটোখাটো
লোকটা নির্ঘাত এই হোটেলেরই কেউ। প্রায় প্রতিদিনই তাকে
দেখতে পাই, একাকী বসে আছে । মাঝেমাঝে সামনে এক
পেয়ালা চা, থেকে থেকে মন্থর চুমুক তাতে । কখনও টালি
খাতায় গভীর মনোযোগে লেখালিখি। প্রায়শই সে আমার কাছ
থেকে ইন্ডিয়া টুডে পেপারটি ঈষৎ হেসে চেয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ
পড়ে , তারপর আবার মনে করে ঠিক ঠিক ফিরিয়েও দেয়।
ভাবছি, আগামীকাল আমি আর পেপারটা ফেরত না নিয়েই
নিঃশব্দে পা টিপে টিপে- টুপ করে সটকে পরবো এখান থেকে।
সফল যে হবো না- সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত! হা হা হা।
‘শুনিয়ে, আপকা পেপার তো লেকে যাইয়ে’ বলে- নির্ঘাত সে
পিছন থেকে আমাকে ডেকে , প্রতিদিনের মতোই পেপারটি
ফিরিয়ে দিবে স্মিত মুখে। একটাই দরজা প্রকাণ্ড হোটেলটিতে!
ক’দিনেই হোটেলটা আমার দারুণ আপন হয়ে উঠেছে,আর এই
অচেনা মানুষগুলোও- যেন তারা আমার কতো জনমের চেনা!
হ্যা, আমি আগামীকালও আসবো এখানে, পরশুও আসবো
যতোদিন আছি মুম্বাইয়ে, প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায় আসবো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২৯

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: ভালো লাগলো, তবে হোটেলটির ছবি-টবি দিলে আরও ভালো লাগতো।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩৭

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। আসলে এটা একটা অত্যন্ত সাধারণ সরকারি হোটেল। ছবি তোলার মতো উল্লেখযোগ্য কোনও স্থান নয়। পুরোটাই আমার একেবারে ব্যক্তিগত উপলব্ধি। বিশেষভাবে চশমা পরা সেই মধ্যবয়সী মারাঠি ভদ্রমহিলা ব্যক্তিত্ব আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছিল! সত্যি, এখন মনে হয় ছবিটবি তুলে রাখা যেতো বৈকি!

শুভকামনা।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: নতুন সংস্করন টা বড্ড তাড়াহুড়া করে লিখেছেন?

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০০

অর্ক বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই। আরেকটু ঘষামাজা করলাম।
ধন্যবাদ ও নিরবচ্ছিন্ন শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.