নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী: যেমন দেখেছি ময়মনসিংহ নগরীকে

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪১



আমি যখন ছিলাম, তখন মৃতপ্রায় শুষ্ক ক্ষরাক্রান্ত ব্রহ্মপুত্র নদ। ব্রিজ থেকে তুলেছিলাম। (এ ছবিটাই শুধু আমার তোলা বাকিগুলো Flickr.com থেকে সংগৃহীত)











(পূর্ব প্রকাশের পর)
ময়মনসিংহ শহরে ব্যাটারি চালিত রিক্সার দারুণ প্রচলন। সর্বত্র সা সা করে বাতাসে শীষ কেটে চলেছে যান্ত্রীয় ত্রিচক্রযানগুলো। আমার তো মনে হয় শহরে প্যাডেল ও ব্যাটারি চালিত রিক্সার অনুপাত হবে সমান সমান, অর্থাৎ পঞ্চাশ পঞ্চাশ শতাংশ। বেশ ক’বারই এসব রিক্সায় চড়ে এদিক সেদিক গিয়েছিলাম। এগুলো প্যাডেল চালিত রিক্সার প্রায় দ্বিগুণ গতিতে চলে ।
শহরে ব্যাটারি চালিত ইঞ্জিনের রিক্সার এই তুলনামূলক আধিক্য আমার ভালো লেগেছে। এসব রিক্সা চালানোতে বিন্দুমাত্র পরিশ্রম হয় না। মেশিন টেনে নিয়ে চলে রিক্সাগুলো। রিক্সাওয়ালা শুধু বসে থাকে, আর প্রয়োজনানুসারে হ্যান্ডেল ঘোরায়, ব্রেক কসে। ব্যস, এই তো! এবড়োখেবড়ো সড়ক, উঁচু ব্রিজ, বৃষ্টি শেষে কাদামাটির ঝঞ্ঝাটে সড়ক সর্বত্রই মেশিন নির্বিঘ্নে টেনে নিয়ে চলে যন্ত্র বাহনগুলো। প্রাসঙ্গিক একটি মজার স্মৃতি এক্ষেত্রে সকলের সঙ্গে শেয়ার করবার লোভ কিছুতেই সংবরণ করতে পারছি না, একবার কুমিল্লা শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত ওয়ার সিমেট্রি দেখতে গিয়েছিলাম। বাহন ছিল এরকমই এক যান্ত্রিক রিক্সা। যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এ সময় দেখলাম, রিক্সাটা রীতিমতো একটা আস্ত চার চাকার ভারি যাত্রীবাহী ভারার সি এন জি’কে খালি রাস্তায় সা সা করে ওভারটেক করে এগিয়ে গেল। দারুণ বিস্মিত হয়েছিলাম দেখে, খুশিও বৈকি। হা হা হা! সেই বিস্ময় প্রকাশও করেছিলাম সেখানে। কিশোর রিক্সাওয়ালা তখন মুখাবয়বে কান অবধি স্ফীত হাসি নিয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে জানালো, রিক্সার ফুল স্পিড নাকি এখনও সে দেয়ইনি! বলে কী! বিস্ময়ের ’পর বিস্ময়। ফুল স্পিড দেয়নি, তাতেই সেই যান্ত্রিক রিক্সা সেখানে অনেকটা বাতাসে শিষ কেটে যাবার মতনই দ্রুতগতিতে চলছিল। এর ’পর আবার ফুল স্পিড দিলে কী জানি কী হতো- হয়তো সেদিন ওখানে শূন্যেই ভাসা শুরু করতাম! হা হা হা। আসলে রাস্তাটাও খুব ভালো ছিল। পিচঢালা মসৃণ পরিপাটি ঝকঝকে নির্জন একটি সড়ক। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভিতরে অবস্থিত এই ওয়ার সিমেট্রি। যাই হোক সেসব বিস্তারিত কুমিল্লা নিয়ে কখনও লিখলে নিশ্চয়ই বলা হবে। আপাতত যেখানে ছিলাম, অর্থাৎ ময়মনসিংহ শহরেই আবার ফিরে আসি।
ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষকে আমার খুব সহযোগিতাপরায়ণ ও মিশুক মনে হয়েছে। আসলে আমাদের দেশের আপামর মানুষেদেরই এটা ওটা নানান দোষের মাঝে এই একটা দারুণ গুণ রয়েছে, বাইরে থেকে কেউ এলে তাকে যথাসাধ্য অকৃপণ আতিথেয়তা দেয়া। এই ভীষণ একটা ভালো দিক আমাদের দেশের মানুষদের স্বভাবগত, যা নিয়ে আমরা নিঃসন্দেহে গর্বিত হতে পারি। আমরা বিদেশীদের (দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে আগতরাও) খুবই গুরুত্ব দেই। আমি আজ এখানে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলছি, ময়মনসিংহ শহরে যখন যেখানে যেমন- প্রয়োজনে বা অনেকক্ষেত্রে অপ্রয়োজনেও, আমি যেসব অচেনা সাধারণ স্থানীয় মানুষদের সংস্পর্শে এসেছি, মোটামুটি সকলের কাছ থেকেই নিটোল অকৃত্রিম ভালো ব্যবহার পেয়েছি, পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। যা সত্যি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সবাই যথাসাধ্য আন্তরিকতাপূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা সকলেই আন্তরিকভাবেই সচেষ্ট ছিলেন যে, আমি যেন তাদের এই দেশ বা অঞ্চল থেকে মধুর স্মৃতি নিয়ে যাই। এবং তা ফিরে যেয়ে ছড়িয়ে দেই আমার আপন বৃত্তে। কী সেই ব্রহ্মপুত্র নদ তীরের কুঁড়ে ঘর হোটেলের ন্যাড়া মাথার সহাস্যমুখ স্বত্বাধিকারী, রেল স্টেশন সংলগ্ন নাম ভুলে যাওয়া মার্কেটের সেই প্রবীণ ঝালমুড়িওয়ালা, তার অনতিদূরের একটি সরু সড়কের ছোট্ট চা দোকানের এক চৌকশ শিশু কর্মচারী, কয়েকটি চা’র দোকানের প্রাণোচ্ছল সাথী খদ্দের, সেই মাঝবয়সী সি এন জি ড্রাইভার- এরকম আরও-আরও অনেক, অগুনিত। শুধু এক শব্দে আমার একটি ‘ধন্যবাদ’ তাদের এই আকাশসম আন্তরিকতাপূর্ণ আতিথেয়তার বিনিময়ে ঠিক কতোটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, তা আমি জানি না। সত্যিই জানি না! না থাক, তাদের আমি আজ এখানে মোটেই ধন্যবাদ দিবো না। জানি, তাদের সে অপেক্ষাও নেই, কখনও ছিলোও না- না এখন, না তখন। আমি বরং তাদেরকে দুটি বাক্যে জানাই যে, ‘আপনাদের ময়মনসিংহ শহর আমার খুব ভালো লেগেছে। আবার যদি কখনও অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তবে আবার আমি দ্রুততম সময়েই যাবো আপনাদের শহরে।’
(চলবে)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ ময়মনসিংহের কিছু সুন্দর ছবি ও কিছু বেটারী চালিত রিক্সার কাহিনী শুনানোর জন্য । ময়মনসিংহের মানুষের আন্তরিক ব্যহারে মুগ্ধ হয়েছেন শুনে এলাকার মনুষজনের প্রতি শ্রদ্ধা রইল । পুরাতন ব্রম্মপুত্রে নদে পানিতে একসময় দেখা যেত প্রবল ঘুর্ণী , দুপারের কুল ভেঙ্গে আছরে পড়ত বালুর স্তুপ , বর্ষাকালে নদের দুকুল হতো প্লাবিত । শুকনো কালে কোথাও কোথাও হয়ে যেত হাটু জল । নদের পারের কৃষক, মাছচাষিরা এখন কেমন আছে তা জানতে ইচ্ছে করে , নদটি ভরাটের কারণে চর এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকায় পরিবর্তন কি কি ঘটেছে তাও জানতে ইচ্ছে করে । আগে বর্ষা মৌসুমে দুই কূল ভরে পানি আসত। সেই পানি নেমে গেলে চরের জমিতে কৃষকরা বাদাম, ডাল ও তেলের বীজ ছড়িয়ে দিত। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই সেসব ফসল ফলত। কিন্তু এখন সে সব দৃশ্য মনে হয় আর চোখে পড়ে না। নদের চরে চাষ করা মিষ্টি আলোর ক্ষেত দেখলে নয়ন জোড়াত , সে সমস্ত মিস্টি আলো স্বাদে গন্ধে ছিল অতুলনীয় যার জুরী দুনিয়াতে এখনো কোথাও মিলেনা ।


শুনেছি ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের খননের জোর দাবি উঠেছে এর অববাহিকার জনপদ ময়মনসিংহবাসীর পক্ষ থেকে। নৌকা মিছিল, সমাবেশ, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে তারা অনেকদিন ধরে । এ নদকে বাঁচাতেই হবে, নইলে এ অঞ্চলের কৃষিসহ মানুষের জীবন-জীবিকায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে ।

কামনা করি আপনার এই ধারাবাহিক ভ্রমন কাহিনীতে বিষয়টি আরো জুড়ালো ভাবে উঠে আসুক । তাহলে শুধু ময়মনসিংহ শহরই নয় , মানুষের জীবন জীবিকায় ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন আসবে পুরা বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১

অর্ক বলেছেন: বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২৭

শায়মা বলেছেন: ময়মনসিংহে আমিও গিয়েছিলাম। কিছু ভালোলাগার স্মৃতি আমারও রয়েছে।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ শায়মা আপু।

৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১২

মাহবুব উল হাসান নাফি বলেছেন: ময়মনসিংহের ত্রিশালে আমার গ্রামের বাড়ি । ময়মনসিংহ নিয়ে যখন কেউ লেখে—বিশেষ করে অন্য এলাকার কেউ—ভালো হোক, বা মন্দ—আমি খুব মনোযোগ সহকারে তা পড়ি । নিজের এলাকাকে আরো ভালোভাবে চেনার সুযোগ করে দেয় এই লেখাগুলো । আপনার লেখাটিও অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছি । নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মেলানোর চেষ্টা করেছি । আপনার লেখার পরবর্তী পর্বগুলো নজরে পড়বে কিনা জানি না, কিন্তু ময়মনসিংহে আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখছেন দেখে ভালো লাগলো ।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২

অর্ক বলেছেন: জি জি জি। অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর। ঢাকা মহানগর এলাকায় এসব যন্ত্রচালিত রিকশা চালানো নিষিদ্ধ।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪

অর্ক বলেছেন: হ্যা তাই হবে! ধন্যবাদ।

৫| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: যন্ত্রচালিত রিকশা চালানো হয়তো দরিদ্র বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চলাফেরায় গতি এনেছে, কিন্তু এটাকে মাঝে মাঝে আমার খুব দুর্ঘটনাপ্রবণ মনে হয়েছে। আরেকটা বিষয়ে আমি শঙ্কিত যে এই যান্ত্রিক রিক্সাগুলো চালাচ্ছে সেইসব রিক্সাওয়ালাই, যারা একসময় পায়ের পেশীর জোরে ঘাম ঝরিয়ে রিক্সা চালাতো। এখন এরা পা তুলে বসে থাকে, রিক্সা আপন গতিতে ছুটে চলে; এরা শুধু হাত দিয়ে রিক্সার দিক পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে কঠোর পরিশ্রমে অভ্যস্ত শরীর হঠাৎ আলস্যের কারণে ডায়েবেটিজ এ আক্রান্ত হতে পারে, পায়ের পেশীতে দেখা দিতে পারে 'ভেরিকোজ ভেইন'।
আপনার তোলা ছবিটা সুন্দর হয়েছে। ময়মনসিংহের আপামোর জনসাধারণকে আমারও ভাল লেগেছে।

০৪ ঠা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:০১

অর্ক বলেছেন: রিক্সা থেকে ওঠানামা, হাটাচলা, যাত্রীদের মালপত্র টানাহেঁচড়া পরিশ্রম তো আছেই খায়রুল ভাই। একেবারে শুধু বসেই তো থাকে না! পরিশ্রম নির্ঘাত আছে।

অজস্র ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি। শুভকামনা সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.