নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিলেট কিন ব্রিজের স্মৃতি

১৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩



সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে রেল স্টেশন থেকে সামান্য দূরে সুরমা নদীর ওপর একটা বেশ বড়সড় ব্রিজ আছে, যা স্থানীয়ভাবে পুরাতন ব্রিজ নামে পরিচিত কিন্তু এর আনুষ্ঠানিক নাম হলো ‘কিন ব্রিজ’। যদিও স্থানীয়রা এই কিন ব্রিজ নাম সম্পর্কে মোটেই তেমন অবগত বা সচেতন কোনওটাই নন। এরকমও হয়েছে যে, একবার এক ভদ্রলোকের কাছে কোথাও বাস থেকে নেমে জানতে চেয়েছিলাম, ‘কিন ব্রিজ কতদূরে? কী করে যেতে পারি?’ শুরুতে সেই ভদ্রলোক কিছুতেই ব্রিজটি শনাক্ত করতে পারলেন না। তারপর তাকে নানাভাবে ব্রিজটি সম্পর্কে বুঝিয়ে বলার পর, অবশেষে শনাক্ত করতে পারলেন। ‘ও পুরাতন ব্রিজ!’ ব্রিজ শনাক্ত করতে পেরে তৎক্ষণাৎ তার সরল শান্ত বিস্ময় প্রকাশ। তারপর আমাকে বুঝিয়ে বললেন, ‘কিন ব্রিজ বললে কেউ বুঝতে পারবে না, আপনাকে বলতে হবে পুরাতন ব্রিজ।’ পুরাতন ব্রিজ বলেছিও। তারপর থেকে দরকারে অদরকারে স্থানীয়দের কাছে আমিও ব্রিজটিকে পুরাতন ব্রিজ বলেই উল্লেখ করেছিলাম, যে দু তিনদিন ছিলাম সিলেটে। হা হা হা।

বিরাট ব্রিজ। ঐতিহাসিক একটি ব্রিজ। ব্রিটিশ আমলে তৈরি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সমরাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তারপর পুনরায় মেরামত করা হয় ইত্যাদি। ব্রিজের সামনের সাইনবোর্ডে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আছে। নানান ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই কিন ব্রিজ। ব্রিজটি আয়তনে বেশ দীর্ঘ। এক মাথা থেকে আরেক মাথা সাধারণভাবে হেটে যেতে প্রায় দশ থেকে বারো মিনিট লেগে যায়। অনতিদূরে সিলেট সার্কিট হাউস, ব্রিজ থেকে স্পষ্ট দৃশ্যমান । ব্রিজটির একটি বিশেষত্ব আছে, যা আমাদের দেশ, উপমহাদেশ বা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ঢালু থেকে ব্রিজের সড়ক ক্রমান্বয়ে ওপরে ওঠার কারণে এখানে রিক্সা ও ভ্যানচালকেরা তাদের বাহন নিজেরা আর টেনে নিয়ে যেতে পারেন না, রিক্সা ভ্যান ঠেলে ব্রিজ পাড় করিয়ে দেবার জন্য এসময় তাদের আরেকজন ব্যক্তির সহযোগিতার দরকার হয়। তাদের স্থানীয়ভাবে পুশম্যান বা এরকম কিছু একটা বলা হয়ে থাকে। পুশম্যান’ই বলি। ব্রিজের দু প্রান্তে এরা দাঁড়িয়ে থাকে, রিক্সা বা ভ্যান ব্রিজে ওঠা শুরু করলেই পুশম্যানরা ঠেলে নিয়ে যেয়ে রিক্সা ভ্যান ব্রিজ পাড় করিয়ে দেয়। প্রতিটি পুশিংয়ের বিনিময়ে তারা পাঁচ টাকা করে পায়। এটাই তাদের পেষা। ভারি যানবাহন এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ, বোধহয় মোটরসাইকেলও নিষিদ্ধের আওতাভুক্ত। সঠিক মনে পড়ছে না। আমার স্মৃতিতে ব্রিজের ওপর কোনও চলন্ত মোটরসাইকেল আসছেও না! সম্ভবত শুধু পথচারী পারাপার ও রিক্সা ভ্যান ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্যেই এই ব্রিজ উন্মুক্ত। খানিক দূরে নতুন আরেকটি ব্রিজ হয়েছে, সেটা বোধকরি সবরকম যানবাহন পারাপারের। আমি অবশ্য কোনওদিন যাইনি। কিন ব্রিজ থেকে দেখা যায় পাশের ব্রিজটা। বেশ খানিকটা দূরে।

কিন ব্রিজের ওপর দিয়ে আনমনে হাটতে আমার খুব ভালো লাগতো। বিশেষ করে সন্ধ্যা ও রাতে দারুণ মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জা হতো ব্রিজে; লাল নীল সবুজ হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন রঙবেরঙের বাতি জ্বলে উঠতো ল্যাম্পপোস্টগুলোতে। রাতভর জ্বলতো। সত্যিই অপূর্ব এর সৌন্দর্য। কেমন যেন স্বপ্নিল মোহনিয়া আবহ তৈরি হতো ব্রিজের ওপর এই নয়নাভিরাম বর্ণিল আলোকছটায়। পাশাপাশি সুরমা নদীতীরবর্তী এলাকাজুড়েও একইরকম মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জা। ব্রিজ থেকে পরিষ্কার দেখা যায় সব। আসলে এই নদী, ব্রিজ ও নদীতীরবর্তী এলাকার সন্ধ্যাকালীন এই অপরূপ সৌন্দর্য ভাষায় ব্যক্ত করবার নয়! অন্তত আমার মতো এক অর্বাচীনের জন্য তো নয়ই। এজন্য শ্রদ্ধেয় বিদগ্ধ পাঠকের কাছে করজোড়ে অনুকম্পা প্রার্থনা করছি।

(ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪

সঞ্জীব ব্যানার্জী বলেছেন: পোস্টটি ভালো। ছবিটি কি সিলেট ব্রিজের?

১৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ। হ্যা ব্রিজের।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৫

তারেক ফাহিম বলেছেন: স্থানীয়রা আনুষ্ঠানিক নাম কমই চিনে, আমারও এমনটি ঘটেছিল, ৩৮তম বিসিএস কেন্দ্র খুঁজতে B-)

১৮ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭

অর্ক বলেছেন: জি ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: কিন ব্রিজে দাঁড়িয়ে আমি---কিন ব্রিজে দাঁড়িয়ে আমি---

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪১

অর্ক বলেছেন: ঠিকই তো। দারুণ! ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.