নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি গোয়ালা

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৩৬



কনকনে হিম শীতের এক রাত। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা। মধ্য ডিসেম্বর। ২০১২ সাল। স্থান, কোলকাতা শহরের জাকারিয়া স্ট্রিট সংলগ্ন কোথাও। শো শো শব্দ করে শীতের ধূমল শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে উপভোগ করে চলেছি ভারের চা। ভ্রাম্যমাণ একটি দোকান, মোটামুটি বেশ বড়সড়। প্রায় মাঝ রাত তখন, খদ্দের আমি একাই। বিভিন্ন আকৃতির ভাড়, ওয়ান টাইমার কাপ ইত্যাদি নিয়ে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ চা দোকানদার। তার পরনে নোংরা একটি ধূতি ও চাদর। হিন্দিভাষী অবাঙালি। বোধকরি বিহার থেকে ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে একদিন এসেছিল বাঙালির শহরে, তারপর থেকে গেছে। হয়তো জিজ্ঞেস করে জেনেও নিয়েছিলাম কোনও এক ফাঁকে। বেশ ক’বছর আগের কথা, অতো বিস্তারিত আজ আর আমার মনে নেই। হিন্দিতেই কথা হয়েছিল। এটা ওটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম দুজন। সহজসরল হাসিখুশি ষাট ছুঁই ছুঁই একজন মানুষ (যতটা বৃদ্ধ দেখাচ্ছিল, সম্ভবত বয়স তার থেকে বেশ কমই হবে)। গায়ের রঙ কালো।
আমার মুখে অনর্গল শুদ্ধ হিন্দি শুনে, আমাকেও নির্ঘাত ভারতীয় ভেবে ভুল করে বসেছিল। হয়তো তারই মতো বহিরাগত ভেবেছিল। গল্পে গল্পে বেশ আনন্দে কেটে গিয়েছিল সময়। চা পান শেষে যখন ফিরে আসবার প্রস্তুতি নিচ্ছি, হঠাৎ এ সময় আচানক আমার পুরনো দুষ্টু ছেলেমানুষি কৌতূহলোদ্রেকের বাতিকটা মাথা চারা দিয়ে উঠলো, সরাসরি তাকে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করে বসলাম, ‘চাচা, আপনি কোন জাতের হিন্দু?’ প্রশ্নটা সেদিন ঠিক কেন যে ওভাবে তাকে আচমকা করে বসেছিলাম? আমি আজও এর উত্তর পাইনি! সে কোন্ জাতের হিন্দু সেটা জানা আমার জন্য সেখানে মোটেই জরুরি কিছু ছিল না। বেমক্কা জিজ্ঞেস করে বসেছিলাম। এখন মনে পড়লে, নিজের মানসিক সুস্থতা নিয়ে নিজেই খানিকটা সন্দিহান হয়ে পড়ি বৈকি! হা হা হা।
‘আমি গোয়ালা।’ তৎক্ষণাৎ উত্তর তার।
‘গোয়ালা কোন জাত- ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, ক্ষত্রিয়, শুদ্র?’ পাল্টা প্রশ্ন আমার।
‘আমি গোয়ালা।’ নিরুত্তেজ শীতল গলায় আবারও বললো সে।
আমি চা পান শেষে ফিরে আসতে লাগলাম। অহেতুক একটা প্রশ্ন, সেই লোকটা ও তার সেই শীতল উত্তর, সেদিন কি আমাকে জীবনের একটি সারসত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল? চা’র দোকান ছেড়ে সড়কে নেমে হাঁটতে লাগলাম। বিপন্ন, অসহায় মানুষের আদৌ দেশ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় বলে কিছু কি আছে? ছিল কোনওদিন? যেতে যেতে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তো এই আমরা মানুষেরাই তৈরী করেছি।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:১৩

অর্ক বলেছেন: গোয়ালা হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ শাখা। আমাদের দেশেও আছে। গাভী পালন, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার বিক্রি যাদের পেষা। এখন এদেশে সেভাবে গোয়ালা নেই। ভারতে রয়ে গেছে।

ঠিকই বলেছেন, সব আমরা মানুষেরাই তৈরী করেছি।

অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:১৭

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: আমিও মাঝে মাঝে আপনার মতই ভাবি,কারা মানুষে মানুষে বিবেধ মানুষই সৃষ্টি করেছে। কিছু মানুষ নিজের প্রয়োজনে এইসব বিভেদ তৈরি করেছে।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫

অর্ক বলেছেন: আপনি সত্যটাই তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯

সৈয়দ তাজুল বলেছেন:
গোয়ালা আমাদের দেশে এখনো রয়েছেন, তবে তা অতি স্বল্প। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেক গোয়ালা এ বাংলায় ছিলেন।


হ্যা, এ পার্থক্য, মানুষে মানুষে এ ব্যবধান খৃষ্টপূর্ব যুগেরই সৃষ্ট। তবে বর্তমানে ও আগামীতে তা আরও প্রকট হয়ে উঠবে।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬

অর্ক বলেছেন: হ্যা। চমৎকার গঠনমূলক মন্তব্য। আমার ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৫২

কামরুননাহার কলি বলেছেন: নিজের মানসিক সুস্থতা নিয়ে নিজেই খানিকটা সন্দিহান হয়ে পড়ি বৈকি! কথাটি ভালো লেগেছে।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭

অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৯

শামচুল হক বলেছেন: এই জাত পাত নিয়েই পৃথিবীতে এখন সমস্যা। জাত পাতের কারণে মানুষ মানুষের মর্যাদা পায় না।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৮

অর্ক বলেছেন: এখন আমাদের উপমহাদেশ দু জায়গায় এসে ঠেকেছে, ছোটলোক বড়লোক! ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.